ওয়া
আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم
الله الرحمن الرحيم
জবাব,
ইসলামের মূল থিউরী হল স্বামী স্ত্রীর
মাঝে বিচ্ছেদ না হোক। তারা মিলেমিশে থাকুক। সমস্যা হলে উভয়ে বসে তা সমাধানের চেষ্টা
করা উচিত। তাতে সমস্যার সমাধান না হলে পারিবারিক মুরুব্বীদের পরামর্শের আলোকে সমাধান
করা উচিত। তারপরও যদি সমাধান না আসে। তাহলে নিরূপায় অবস্থায় ইসলাম এক তালাক দেবার অধিকার
দিয়েছে স্বামীকে।
হাদীস শরীফে এসেছে
عن ابن عمر رضي اللّٰہ عنہما أن رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم قال: أبغض الحلال إلی اللّٰہ عزوجل الطلاق۔ (سنن أبي داؤد ۱؍۳۰۳، المستدرک للحاکم ۲؍۲۱۸ رقم: ۲۸۰۹، السنن الکبریٰ ۷؍۳۱۶)
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন যে আল্লাহর নিকট
সবচেয়ে নিকৃষ্টতম হালাল হলো তালাক প্রদান করা।
'তোমাকে ছেড়ে দিলাম' ‘তোমাকে মুক্ত করে
দিলাম’ বা ‘স্বাধীন করে
দিলাম’ শব্দগুলো প্রচলনে
সারীহ বা স্পষ্ট তালাকের স্থলে ব্যবহার হয়ে থাকে।
আর সারীহ তালাকের ক্ষেত্রে নিয়তের প্রয়োজন
হয় না। বরং যদি কেউ স্ত্রীকে কেবল ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যেও এজাতীয় কথা বলে তাহলেও এর
দ্বারা তালাক হয়ে যায়। (জামিউল ফাতাওয়া ১০/১২০ কিতাবুন নাওয়াযিল ৯/২৯৩, ২৯৬, ২৯৯, ৩০০)
★সুতরাং স্বামী যদি স্ত্রীকে
বলে,ছেড়ে দিলাম। তাহলে তালাক পতিত হবে। ছেড়ে দিলাম শব্দটি যদিও কেনায়া কিন্তু ব্যাপক
প্রচলনের কারণে এটা সরিহ তালাকের স্থলাভিষিক্ত হয়ে গেছে।তাই নিয়ত ব্যতীত তালাক পতিত
হয়ে যাবে।
আরো জানুনঃ https://ifatwa.info/6970/
শর্ত যুক্ত করে তালাক দিলে কি সেই তালাক
পতিত হবে কি না? এ সম্পর্কে কিছুটা মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে- জুমহুর বা অধিকাংশ উলামায়ে
কেরাম বলেন,তালাক পতিত হবে।
শুধুমাত্র ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ বলেন,
শর্তের সাথে তালাক দেয়ার উদ্দেশ্য যদি হুমকি-ধামকি হয়,তাহলে তালাক পতিত হবে না।তবে
যদি তালাকের নিয়তে এগুলো কেউ বলে,তাহলে অবশ্যই তালাক পতিত হবে। জুমুহুর উলামায়ে কেরামের
সিদ্ধান্তই এক্ষেত্রে চুড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
সুতরাং প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যদি কেউ
রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে বলে, তুমি যদি বাবার বাড়ি যাও, তাহলে তোমার সাথে আমার তালাক
হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় স্ত্রী যদি কখনো তার বাবার বাড়ি যায় তাহলে শর্ত অনুযায়ী তালাক
পতিত হয়ে যাবে।
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
وَزَوَالُ الْمِلْكِ بَعْدَ الْيَمِينِ بِأَنْ طَلَّقَهَا وَاحِدَةً أَوْ ثِنْتَيْنِ لَا يُبْطِلُهَا فَإِنْ وُجِدَ الشَّرْطُ فِي الْمِلْكِ انْحَلَّتْ الْيَمِينُ بِأَنْ قَالَ لِامْرَأَتِهِ: إنْ دَخَلْت الدَّارَ فَأَنْت طَالِقٌ فَدَخَلَتْ وَهِيَ امْرَأَتُهُ وَقَعَ الطَّلَاقُ وَلَمْ تَبْقَ الْيَمِينُ وَإِنْ وُجِدَ فِي غَيْرِ الْمِلْكِ انْحَلَّتْ الْيَمِينُ بِأَنْ قَالَ لِامْرَأَتِهِ: إنْ دَخَلْت الدَّارَ فَأَنْت طَالِقٌ فَطَلَّقَهَا قَبْلَ وُجُودِ الشَّرْطِ وَمَضَتْ الْعِدَّةُ ثُمَّ دَخَلَتْ الدَّارَ تَنْحَلُّ الْيَمِينُ وَلَمْ يَقَعْ شَيْءٌ كَذَا فِي الْكَافِي.
শর্তের সাথে তালাক প্রদাণের পর যদি স্ত্রীর
উপর স্বামীর কর্তৃত্ব ছুটে যায়,যেমন শর্তের সাথে তালাক প্রদাণের পর স্বামী যদি স্ত্রীকে
এক তালাক বা দুই তালাক দিয়ে দেয়,অতঃপর উক্ত স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকাবস্থায়
যদি শর্ত পাওয়া যায়,তাহলে শর্ত অনুযায়ী তালাক পতিত হবে।যেমন কেউ একজন তার স্ত্রীকে
বলল,যদি তুমি ঘরে প্রবেশ করো,তাহলে তুমি তালাক।ঐ মহিলা উক্ত ব্যক্তির স্ত্রী থাকাবস্থায়
ঘরে প্রবেশ করল,তাহলে তালাক পতিত হয়ে যাবে,এবং শর্তও নিঃশেষ হয়ে যাবে।
আর যদি স্ত্রী না থাকাবস্থায় ঐ শর্ত
পাওয়া যায়,তাহলে শর্ত নিঃশেষ হয়ে যাবে,তবে তালাক পতিত হবে না।যেমন কেউ তার স্ত্রীকে
বলল,তুমি যদি ঐ ঘরে প্রবেশ করো তাহলে তালাক।অতঃপর ঐ ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান
করল,এবং ইদ্দতও শেষ হয়ে গেল।অতঃপর ঐ মহিলা সেই ঘরে প্রবেশ করল,তাহলে শর্ত নিঃশেষ হয়ে
যাবে ঠিকই,কিন্তু তালাক পতিত হবে না।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৪১৬)
এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, যদি কেউ এমন
শর্ত যুক্ত তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে এত্থেকে উত্তোরণের উপায় কি?
জবাবে বলা হবে, কেউ শর্তের সাথে তালাক
দিলে,সেই শর্ত প্রথম বার পাওয়া যাওয়ার সময়েই মূলত তালাকের সম্পর্ক থাকে।দ্বিতয়বার পাওয়া
গেলে সেই শর্তের আলোকে আর তালাক পতিত হবে না।সুতরাং কেউ যদি তার স্ত্রীকে এমন তালাক
দিয়ে দেয় তাহলে প্রথমবার এক তালাক পতিত হওয়ার পর আর তালাক পতিত হবে না।কিন্তু যদি কেউ
বলে,"যখনই তুমি তোমার বাবার বাড়ি যাবে,তখনই তালাক" তাহলে এমন কথা দ্বারা
দ্বিতয়বার তৃতীয়বারও তালাক পতিত হবে।
★সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
কোন
ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে বলে যে, তোমাকে তালাক দিব তাহলে উক্ত কথা বলার দ্বারা তালাক পতিত হবে না। কারণ,
এটি ভবিষ্যৎ কালের সাথে সম্পৃক্ত বাক্য। ভবিষ্যৎ সূচক কোন শব্দ
বা বাক্যের দ্বারা তালাক পতিত হয় না। তবে
হ্যাঁ, যদি কেউ শর্ত যুক্ত তালাক প্রদান করে এই মর্মে যে, যদি তুমি অমুক কাজ করো
তখন তুমি তালাক এমতাবস্তায় শর্ত পাওয়া গেলেই তালাক পতিত হবে।
শর্তযুক্ত তালাক সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।