ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
নাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত
হাদিসে এসেছে তিনি বলেন, একবার আমরা রাসুল (সা.)-এর
সঙ্গে ছিলাম; তখন আমাদের বৃষ্টি পেল। তখন রাসুল
(সা.) তার গায়ের পোশাকের কিছু অংশ সরিয়ে নিলেন— যাতে করে গায়ে বৃষ্টি
লাগে। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি
কেন এমনটি করলেন? তিনি বললেন, ‘কারণ বৃষ্টি তার প্রতিপালকের কাছ থেকে সদ্য আগত।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮৯৮)
বৃষ্টি সাধারণত আল্লাহর
পক্ষ থেকে কল্যাণ বয়ে আনে। আবার কখনো অকল্যাণ ও মন্দ কিছুও থাকতে পারে। তাই কল্যাণকর
বৃষ্টির দোয়া করা সুন্নত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.) যখন বৃষ্টি দেখতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিআ।’ [হে আল্লাহ, কল্যাণকর বৃষ্টি বর্ষণ করুন]। (বুখারি, হাদিস : ১০৩২)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘আল্লাহুম্মা,
সায়্যিবান হানিআ।’ [হে
আল্লাহ, এ যেন তৃপ্তিদায়ক বৃষ্টি হয়]। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৯৯)
প্রয়োজনমাফিক বৃষ্টি কল্যাণকর।
কিন্তু অতিবৃষ্টি ও বন্যা অবশ্যই খারাপ। যখন প্রবল বৃষ্টি হতো— তখন নবী (সা.) বলতেন,
اللَّهُمَّ
حَوَالَيْنَا ولَا عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ علَى الآكَامِ والظِّرَابِ، وبُطُونِ
الأوْدِيَةِ، ومَنَابِتِ الشَّجَرِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা
হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার। (বুখারি, হাদিস : ১০১৪)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের
আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ!
পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে
বৃষ্টি দিন।
আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর
(রা.) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বজ্রপাতের সময় কথা
বন্ধ রাখতেন। আর বলতেন—
وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ
مِنْ خِيفَتِهِ
উচ্চারণ : ওয়া য়ুসাব্বিহুর
রা’দু বিহামদিহি, ওয়াল মালাইকাতু মিন খিয়ফাতিহি।
(সুরা রাদ, আয়াত : ১৩)
অর্থ : বজ্র ও সব ফেরেশতা
সন্ত্রস্ত হয়ে তার প্রশংসা পাঠ করে।
এরপর বলেন, এটি দুনিয়াবাসীর জন্য চরম হুমকি। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৭২৩;
মুয়াত্তা মালেক, হাদিস : ৩৬৪১;
আল-আজকার, হাদিস : ২৩৫)
প্রসঙ্গত, বৃষ্টিপাতের সময় বান্দাদের ওপর আল্লাহর রহমত, করুণা ও সম্পদে প্রাচুর্য নেমে আসার সময়; তাই এটি দোয়া কবুলের উপযুক্ত সুযোগ। সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে
বর্ণিত হাদিসে এসেছে- নবী (সা.) বলেন,
‘দুইটি দোয়া
প্রত্যাখ্যান করা হয় না। আজানের সময়ের দোয়া ও বৃষ্টির সময়ের দোয়া।’ (মুস্তাদরাক, হাদিস : ২৫৩৪;
তাবারানি, হাদিস : ৫৭৫৬;
সহিহুল জামে, হাদিস : ৩০৭৮)
জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি
বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) হুদাইবিয়ায় রাতে বৃষ্টির পর আমাদের নিয়ে নামাজ
পড়লেন। নামাজ শেষে তিনি লোকজনের মুখোমুখি হলেন। তিনি বললেন, ‘তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন? তারা বললেন,
আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো
জানেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার বান্দাদের কেউ আমার
প্রতি ঈমান নিয়ে আর কেউ কেউ আমাকে অস্বীকার করে প্রভাতে উপনীত হয়েছে। যে বলেছে, বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহি তথা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমরা
বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। ফলে সে আমার প্রতি ঈমান আর তারকার প্রতি কুফরি দেখিয়েছে। আর যে
বলেছে, অমুক অমুক তারকার কারণে,
সে আমার প্রতি অস্বীকারকারী
এবং তারকার প্রতি ঈমানদার।’ (বুখারি,
হাদিস : ৮৪৬; মুসলিম, হাদিস : ১৫)
বৃষ্টি শেষে রাসুল (সা.)
সাহাবায়ে কেরামকে একটি বিশেষ দোয়া পড়ার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন, দোয়াটি হলো—‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহ’।
অর্থ : আল্লাহর অনুগ্রহ
ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে। (বুখারি,
হাদিস : ১০৩৮)সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী
ভাই/বোন!
তবে প্রশ্নের উল্লেখিত আমলটি কোরআন ও সুন্নাহের দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত
নয়। এছাড়া উপরে উল্লেখিত আমল গুলো হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত।