ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন
করা সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে,
حَدَّثَنَا
مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ
جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه
وسلم قَالَ " لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ " . - صحيح
জুবাইর ইবনু মুত্বঈম
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক
ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
.(বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ১৯-(২৫৫৫),
আবূ দাঊদ ১৬৯৬, তিরমিযী ১৯০৯,
সহীহুল জামি‘ ৭৬৭১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫৪০ সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০২৩৪, মুসনাদুল বাযযার ৩৪০৫,
আহমাদ ১৬৭৩২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৩৯২,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫৪, শু‘আবুল ঈমান ৭৯৫২,
‘ত্ববারানী’র
আল মু‘জামুল কাবীর ১৪৯১, আর মু‘জামুল আওসাত্ব ৯২৮৭।)
حَدَّثَنَا
ابْنُ أَبِي عُمَرَ، وَنَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ، وَسَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ
الْمَخْزُومِيُّ، قَالُوا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ
مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ " .
قَالَ ابْنُ أَبِي عُمَرَ قَالَ سُفْيَانُ يَعْنِي قَاطِعَ رَحِمٍ . قَالَ أَبُو
عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
মুহাম্মাদ ইবনু জুবাইর
(রাহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে,
তিনি (জুবাইর) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কর্তনকারী (আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী) জান্নাতে
যেতে পারবে না।
(সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪০৮),
সহীহ আবূ দাউদ (১৪৮৮), বুখারী, মুসলিম। ইবনু আবী উমার বলেন,
সুফিয়ান বলেছেন, অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী। আবূ ঈসা বলেন,
এ হাদীসটি হাসান সহীহ।(তিরমিজি
১৯০৯)
এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে
সম্পর্ক ছিন্ন করাই হলো মূল দোষ। সম্পর্ক ছিন্ন না করে
এমনিতেই যদি দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার কারনে কথা না হয়,এটা কোনো সমস্যা নয়।
★★★ নারীরা তাদের মাহরাম আত্মীয়দের সাথে সরাসরি বা ফোনে কথা বলবে। শরয়ী সীমারেখার আওতায় থেকে তাদের বাসাতেও যেতে পারবে। যথাসম্ভব
তাদের খোজ খবর নিবে। উপরে উল্লেখিত হক আদায়ের
চেষ্টা করবে। গায়রে মাহরাম পুরুষ আত্মীয়দের সাথে আত্মীয়তা রক্ষাও আবশ্যক।
সেই হিসেবে আত্মীয় স্বজনের
সাথে দেখা হলে যদিও তারা গায়রে মাহরাম হয়,
তাহলেও তাদের সাথে পর্দার মাঝে থেকে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলবে। যেমন কেমন আছে? পরিবারের অন্য সদস্যারা কেমন আছে? ইত্যাদি।
ফিতনার আশংকা থাকলে প্রয়োজনীয়
কথা দ্রুত সংক্ষেপ করে চলে আসা কর্তব্য।
অপ্রয়োজনীয় কথা কোনোভাবেই
বলা যাবেনা।
মোটকথা, একজন আত্মীয় হিসেবে যতটুকু সৌজন্যতা রক্ষা করা যায় পর্দা রক্ষা
করে এবং ফিতনায় না জড়িয়ে ততটুকু করবে।
يَا
نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا
تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا
مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ
الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা
অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে
কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}
উক্ত সমূহে পরিস্কার ভাষায়
মেয়েদের গায়রে মাহরামদের সামনে নিজেকে প্রকাশ
করতে, অপ্রয়োজনে কথা বলতে,
আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা
বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
দ্বীনী কোন বিষয় থাকলে
কম কথায় শেষ করে নিবে। অযথা কথা বলা হারাম।
وَإِذَا
سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ
أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
অর্থ : আর তোমরা তাঁর
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার
আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার
কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}
বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম
কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন,
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার
আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও
উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা
বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে
হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।
★★দেবর,খালু গায়রে মাহরাম। তাই
তার সামনে যাওয়া,কথা বলা শরয়ী কোন অনুমোদন
ছাড়া কখনোই জায়েজ নয়।
হ্যাঁ প্রয়োজনীয় কথা বলা
শরয়ী সীমারেখার আওতায় থেকে জায়েজ আছে।
قُلْ
لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ
أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠]
وَقُلْ
لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا
يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ
عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ
آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ
بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي
أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ
التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ
الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ
بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى
اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে।
এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত
করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান,
তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য
প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের
স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র,
স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত
বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ,
ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা
না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে
তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনি আপনার দায়িত্ববোধের
জায়গা থেকে শশুর পরিবারের লোকজন যেমন শাশুড়ি ননদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায়ের
উদ্দেশ্যে কথা বলার চেষ্টা করবেন। তাদের খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনার পক্ষ থেকে যেন কোন ত্রুটি না থাকে। তবে তারা যদি নিজেদের থেকেই আপনার সাথে কথা না বলে
এক্ষেত্রে আপনার গুনাহ হবে না। মোটকথা, আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান না, বিধায় তাদের সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা
করেন। এমতাবস্থায় তারা যদি আপনার সাথে কথা
না বলে এতে আপনার কোন গুনাহ হবে না।