আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
89 views
in সালাত(Prayer) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম, হুজুর।

১. আমি বর্তমানে ফরজ ইলম ভালোভাবে অর্জন করায় বুঝতে পেরেছি-

*আমার পূর্বে অনেক সূরায় ভুল ছিলো(অর্থের বিকৃতি ঘটেছে এমন)

*আমার নামাজের সতর ঢাকায় ও ভুল ছিলো।

এমতাবস্থায় এখন যেহেতু জানতে পেরেছি,নামাজ ফরজ হওয়া পর থেকে যত নামাজ পড়েছি একটা খসড়া হিসাব করে সব কি আবার দোহরাতে হবে? নাকি তওবা করে নিলেই হয়ে যাবে?


২. একবার একটা ইচ্ছা পূরন নিয়ে মানত করেছিলাম -দুই মাস রোজা রাখব। এক্ষেত্রে দুই মাস টানা রাখব এমন কিছু বলিনি। শুধু বলেছিলাম,দুই মাস প্রত্যেকদিন রোজা রাখব।

সেগুলো পরে রাখা হয়নি।
এখন এই মানতের রোজা গুলো আমি কিভাবে পূরন করব? টানা রাখতে হবে ৬০ টা রোযা? নাকি  কাযার মত যেকোনো দিন রেখে ৬০ টা রোযা পূরন করলেই হবে?

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

ইসলামে মানত করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, হাদীস শরীফে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেছেন-

أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَوْمًا يَنْهَانَا عَنِ النَّذْرِ وَيَقُولُ إِنَّهُ لاَ يَرُدُّ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الشَّحِيحِ

রাসূলুল্লাহ (সা.) একদিন আমাদের মান্নত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, মান্নত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। তবে মান্নতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৪৩২৫)।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মান্নত এমন কোনো কিছুকে আদম সন্তানের নিকটবর্তী করে দিতে পারে না যা আল্লাহ তাআলা তার জন্য তাকদীরে নির্দিষ্ট করেননি। তবে মান্নত কখনো তাকদীরের সাথে মিলে যায়। এর মাধ্যমে কৃপণের নিকট হতে ঐ সম্পদ বের করে নিয়ে আসা হয় যা কৃপণ (এমনিতে) বের করতে চায় না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৪০

মান্নত শরিয়তে পছন্দনীয় নয়। শরিয়ত উদ্বুদ্ধ করে নফল সদকার প্রতি; মান্নতের প্রতি নয়।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন-

 بَاكِرُوا بِالصَّدَقَةِ ؛ فَإِنَّ الْبَلَاءَ لَا يَتَخَطَّى الصَّدَقَةَ

“তোমরা দানের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবে। কেননা বিপদাপদ তাকে অতিক্রম করতে পারে না”। (বাইহাকী ৭৩৭৪)।

মান্নত করার পর তা থেকে রুজু করার কোন সুযোগ নেই। তাই মান্নতকৃত ইবাদতটি করা আবশ্যক।

وَلْيُوفُوا نُذُورَهُمْ [٢٢:٢٩]

তাদের মানত পূর্ণ করে [সূরা হজ্জ-২৯]

https://ifatwa.info/9551/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

জামিয়া বিন নুরি পাকিস্তানের 144004200948 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ

যদি কোনো ব্যক্তি এক বছর ধরে রোজা রাখার মান্নত করে, তাহলে তাকে এক বছরের জন্য রোজা রাখতে হবে এবং যতক্ষণ তার রোজা রাখার শক্তি রয়েছে ততক্ষণ রোজার জন্য মুক্তির কোনও সুযোগ থাকবে না।

 যদি তার দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বা চরম রোগ হয়, বা বার্ধক্য হওয়ার কারনে যদি রোজা রাখতে না পারে, এবং ভবিষ্যতে আবার রোজা রাখার আশা না থাকে তাহলে প্রতিটি রোযার জন্য একটি ফিদাহ (সাদাকা আল-ফিতরের পরিমাণ) প্রদান করা প্রয়োজন এবং যদি জীবনে কোন কারণেই কোন ফিদিয়া  দিয়ে যেতে না পারে,তাহলে সে অছিয়ত করে যাবে।

 তার উত্তরাধিকারীরা তার সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগ থেকে তার এই অছিয়ত পূরন করবে।

الفتاوى الهندية (2/ 65):

"من نذر نذراً مطلقاً فعليه الوفاء به، كذا في الهداية.

ولو جعل عليه حجةً أو عمرةً أو صوماً أو صلاةً أو صدقةً أو ما أشبه ذلك مما هو طاعة إن فعل كذا ففعل لزمه ذلك الذي جعله على نفسه ولم تجب كفارة اليمين فيه في ظاهر الرواية عندنا.

وقد روي عن محمد - رحمه الله تعالى - قال: إن علق النذر بشرط يريد كونه كقوله: إن شفى الله مريضي أو رد غائبي لايخرج عنه بالكفارة كذا في المبسوط .

ويلزمه عين ما سمى، كذا في فتاوى قاضي خان".

সারমর্মঃ কেহ যদি মান্নত করে, যেমন নামাজ, ছদকাহ ইত্যাদি তাহলে তার পূরন করা ওয়াজিব।    

الفتاوى الهندية (1/ 210):

"ولو قال: لله علي صوم سنة، ولم يعين يصوم سنة بالأهلة ويقضي خمسة وثلاثين يوماً ثلاثين يوماً لرمضان وخمسة أيام قضاء عن يوم الفطر والنحر، وأيام التشريق".

 

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (2/ 437):

"(ولو قال مريض: لله علي أن أصوم شهرا فمات قبل أن يصح لا شيء عليه، وإن صح) ولو (يوما) ولم يصمه (لزمه الوصية بجميعه) على الصحيح، كالصحيح إذا نذر ذلك ومات قبل تمام الشهر لزمه الوصية بالجميع بالإجماع كما في الخبازية، بخلاف القضاء فإن سببه إدراك العدة".

সারমর্মঃ কেহ যদি এক মাস রোযা রাখার মান্নত  করে,এবং এক মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যায়,তাহলে তার উপর অছিয়ত করে যাওয়া জরুরি।   

فتاوی ہندیہ  : وإذا نذر أن یصوم کل خمیس یأتي علیہ فأفطر خمیسًا واحدًا فعلیہ قضاوٴہ کذا في المحید ولو أخر القضاء حتی صار شیخًا فانیًا أو کان النذر بصیام الأبد فعجز لذلک أو باشتغالہ بالمعیشة لکون صناعتہ شاقة فلہ أن یفطر ویطعم لکل یوم مسکینًا إلخ (۱/۳۰۲، ط: زکریا) نیز دیکھیں: فتاوی دارالعلوم ۱۲ (۷۷، ط: کراچی، سوال: ۲۳، کتاب النذور)

সারমর্মঃ যদি রোযা রাখতে একেবারে অক্ষম হয়ে যায়,তাহলে সে প্রত্যেক রোযার জন্য ছদকায়ে ফিতর সমপরিমাণ আদায় করবে।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তওবা করার সাথে সাথে আপনি বালেগাহ হওয়ার পর থেকে অতিতের যতগুলি নামাজ সহিহ ভাবে আদায় করেননি বা ফরজ সতর রক্ষা করে সালাত পড়েননি বলে আপনার নিকট নিশ্চিত ভাবে মনে হয়, প্রবল ধারণানুপাতে বিতরসহ উক্ত নামাজগুলোর কাজা আদায় করতে হবে।

২. যদি কেউ নির্দিষ্ট কোন দিনে রোজা রাখার মানত করে এবং ঐ নির্দিষ্ট দিনই তার রোজা রাখা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। তাহলে মানত পুরা করার জন্য সে দিনই রোজা রাখতে হবে। যদি না সে দিন রোজা রাখার ব্যপারে শরীয়তের কোন নিষেধাজ্ঞা থেকে থাকে। যেমন দুই ঈদের দিন ও আইয়ামে তাশরিকের তিন দিন। এ পাঁচ দিনের কোন একদিনে রোজা রাখার মনত করলেও রোজা রাখা যাবে না। বরং পরবর্তিতে যে কোন সময় তার কাযা আদায় করে নিতে হবে।

কারণ ওয়াজিব রোজা দু’প্রকার-

১। নির্দিষ্ট মানতের রোজা যেমনঃ- কেউ মানত করল আমি অমুক দিন রোজা রাখার মানত করলাম। এ মানত রোজা নির্দিষ্ট দিনে আদায় করা ওয়াজিব।

২। অনির্দিষ্ট মানতের রোজা। কেউ মানত করলো, আমি এ রোগ থেকে মুক্তি পেলে একটি রোজা রাখব।এ রোজা যে কোনদিনে রাখলে তা আদায় হয়ে যাবে।

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার জন্য যেকোন দুই মাসের মান্নতের রোযা রাখতেই হবে। যদি কোনো গুরত্বর অসুস্থাতা বা ভিন্ন ওজরের কারনে না রাখতে পারেন, তাহলে পরবর্তীতে তার কাজা আদায় করে নিবেন। জীবনের কোনো এক সময়ে তা অবশ্যই আদায় করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। তবে জীবনে যদি একেবারেই ২মাস রোযা রাখতে সক্ষম না হয়, তাহলে প্রত্যেক রোযার জন্য ছদকায়ে ফিতর সমপরিমাণ ছদকাহ করবেন।

জীবদ্দশায় যদি কিছু আদায় করেন ও কিছু বাকি থেকে যায় , তাহলে মারা যাওয়ার আগ দিয়ে অছিয়ত করে যাবেন, যাতে আপনার উত্তরাধিকার গন ফিদিয়া আদায় করতে পারে।

ফিদিয়াহঃ প্রত্যেক রোযার জন্য পৌনে দুই সের গম বা আটা অথবা এর বাজার মূল্য গরীব মিসকিনকে মালিক বানিয়ে দান করে দিতে হবে। অথবা প্রতি রোযার বদলে একজন গরীবকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে। যা সদকায়ে ফিতির এর টাকা পরিমাণ হয়। (ফতাওয়া শামী-২/৭২)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by
হুজুর,এখানে স্পষ্ট হয়নি,আমাকে কি টানা দুই মাস মানতের রোজা গুলো রাখতে হবে? নাকি মাঝখানে গ্যাপ হলেও মোট ৬০টা রোযা পূরন হয়ে গেলেই হবে?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...