জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলাম মানুষের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। মানুষের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে মানুষকে জীবন যাপনের জন্যে তিনি যে জীবন ব্যবস্থা প্রদান করেছেন তারই নাম ‘ইসলাম’। ইসলাম মানুষের জন্যে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
যে দেশে ইসলামের শাসন আছে সেই দেশে মুসলিম নারীদের পাশাপাশি অমুসলিম নারীদেরকেও সম্পূর্ন পর্দা করতে হবে,এমন বিধান আবশ্যিক ভাবে শরীয়তে পাইনি।
তবে কোনো ইসলামী রাষ্ট্র দেশের শান্তি শৃঙ্খলা, বজায় রাখা ও অশ্লীলতা বেহায়াপনা দূর করার স্বার্থে সেটা আইনে পরিনত করলে সেটা রাষ্ট্রীয় আইন হিসেবে বিবেচিত হবে।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ইসলাম এসেছে সমগ্র মানবজাতির অধিকার সংরক্ষণ করার জন্য। ইসলাম শুধু মুসলিমদের অধিকার সংরক্ষণের কথা বলে না, ইসলাম মুসলিমদের অধিকারের কথাও বলে। অমুসলিমদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত, এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীস আমাদেরকে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছে। নবীজি ও সাহাবা কিরামের আচরণে এর বিস্তর উদাহরণ রয়েছে।
অমুসলিমদের সঙ্গে সহাবস্থান: যে মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রে অমুসলিমরাও বসবাস করে, যে মুসলিম রাষ্ট্র মুসলিম-অমুসলিম সবাইকে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করে— সেই রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিককে কুরআন-সুন্নাহর ভাষায় যিম্মী, মুসতামান-সহ বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়। এই ধরনের অমুসলিমদের ব্যপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে বলেছেন, দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।
(সূরা মুমতাহিনা, আয়াত ৮)
এই আয়াত থেকে বোঝা গেল, ইসলাম মুসলিমদেরকে অমুসলিমের সাথে সুন্দর, সদয় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে নির্দেশ দেয়। এমনকি পশুপাখি, পোকা-মাকড় ইত্যাদির অধিকারও নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়। রাসূল (সা.) একবার পুড়িয়ে দেওয়া একটা পিঁপড়ার টিবি দেখতে পেয়ে বললেন, ‘কে এগুলো পুড়িয়েছে?’ সাহাবা কিরাম বললেন, ‘আমরা পুড়িয়েছি।’ তখন তিনি বললেন, আগুনের রব ব্যতীত আগুন দিয়ে কিছুকে শাস্তি দেওয়া কারো জন্য সমীচীন নয়।
(সুনান আবু দাঊদ, হাদীস ২৬৭৫)
এজন্যই আমাদের নবী রাহমাতুল লিল-আলামীন—সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত। তিনি মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানবজাতির এবং অন্য সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য দয়া ও অনুকম্পা হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন।
মুসলিম ভূখণ্ডে বসবাসরত অমুসলিমদের নিরাপত্তা প্রদান: যেসব অমুসলিম মুসলিম দেশের শাসনব্যবস্থা মেনে নিয়ে মুসলিম ভূখণ্ডে বসবাস করে, তাদের নিরাপত্তার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিপ্রাপ্ত কোনো লোককে হত্যা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৯১৪)
অর্থাৎ এরূপ ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। এ থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, ইসলাম অমুসলিমদের অধিকারও সংরক্ষণ করে। ইসলাম তাদেরকে স্বাধীনভাবে বসবাসের সুযোগ দেয়। উপরন্তু মুসলিমদেরকে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করার আদেশ করে। এজন্যই আমরা ইতিহাসে দেখি, ইসলামের প্রথম যুগে সাহাবা কিরামের আচরণে মুগ্ধ হয়ে বহু অমুসলিম ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
আমরা সবাই ঐতিহাসিক মদীনা সনদের কথা জানি। রাসূল (সা.) যখন মক্কা থেকে মুশরিকদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে মদীনায় হিজরত করলেন, তখন মাদীনায় ইহুদি, পৌত্তলিক, অগ্নিপূজকসহ বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের মানুষ ছিল। নবীজি মদীনায় এসে সর্বপ্রথম তাদের সাথে সহাবস্থানের চুক্তি করেছিলেন। সেই চুক্তিটাকেই আমরা মদীনা সনদ হিসেবে জানি। চৌদ্দশ বছর আগের মদীনা সনদ আজও পৃথিবীতে প্রাসঙ্গিক। এখনো পৃথিবীর রাষ্ট্রতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক ও ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ নবী কারীম (সা.) প্রবর্তিত ঐতিহাসিক মদীনা সনদের ধারাগুলো নিয়ে গবেষণা করেন এবং প্রশংসা করতে বাধ্য হন। মদীনা সনদের একটি ধারা ছিল— প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এবং মদীনা রাষ্ট্রকে হেফাজত করবার জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করবে। মুসলমানদের ওপর বহিঃশত্রু আক্রমণ করলে মুসলমানদের পক্ষ হয়ে ইহুদিরা লড়বে, ইহুদিদের ওপর আক্রমণ হলে মুসলমানরা মদীনা রাষ্ট্রকে হেফাজত করবার জন্য ইহুদিদের পক্ষ হয়ে বহিঃশত্রুর মোকাবেলা করবে। এরকম আরো অনেক চুক্তি ছিল, যেগুলো থেকে বোঝা যায়, যে ভূখণ্ডে বিভিন্ন ধর্ম-গোত্রের মানুষ একত্রে বসবাস করে, সেখানে নিরাপত্তার ক্ষেতে একে অন্যের সহযোগী হবে।
যুদ্ধাবস্থায়ও অমুসলিমদের উপাসনালয়ে হামলা করা নিষিদ্ধ: ইসলামের বিধান হলো, ভিন্ন ধর্মের উপসনালয়ে সাধারণ অবস্থায় তো বটেই, যুদ্ধাবস্থায়ও হামলা করা যাবে না। কোনো ধর্মীয় পুরোহিতের প্রতি অস্ত্র তাক করা যাবে না। কোনো উপসনালয় জ্বালিয়ে দেওয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো জনপদে সৈন্যদল প্রেরণকালে বলতেন, আমি তোমাদের (কয়েকটি উপদেশ দিয়ে) প্রেরণ করছি: (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, কারো চেহারা বিকৃত করবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোনো গাছ উৎপাটন করবে না।
(মুসান্নাফ আবদির রাযযাক, হাদীস ৯৪৩০)
যে ধর্ম যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের সঙ্গে এরূপ আচরণের নির্দেশ দেয়, সেই ধর্ম সাধারণ অবস্থায় এবং স্বাভাবিক পরিবেশে অমুসলিমের সঙ্গে কী ধরনের আচরণের আদেশ করে, তা সহজেই অনুমেয়। এজন্য আমরা দেখতে পাই, মুসলমানদের সোনালি যুগে কোনো দেশে মুসলিম সৈন্য প্রবেশ করলে সাধারণ মানুষ স্বপ্রণোদিত হয়ে ইসলামধর্ম গ্রহণ করত। যুদ্ধ হতো শুধু সৈন্যদের সঙ্গে, বেসামরিক নাগরিকদের কিছুই বলা হতো না। তবু তারা ইসলাম গ্রহণ করত। কারণ তারা এর আগে দেখেছে, যুদ্ধ শুধু ধ্বংসযজ্ঞ বয়ে আনে। কোনো জনপদে বিদেশি সৈন্য এলে তারা সেখানকার পরিবেশ ধ্বংস করে দিত। একমাত্র মুসলিম সৈন্যরাই ছিলেন ব্যতিক্রম। মুসলিমদের অনুপম চরিত্র দেখে ইসলামের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় নিত।
অমুসলিমদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করা বৈধ: ইসলাম কখনোই কোনো অমুসলিমের অধিকার হরণ করার কথা বলে না। বরং মুসলমান অমুসলিমের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে এবং তার থেকে বৈধ, হালাল খাবারও গ্রহণ করতে পারবে। রাসূল (সা.) নিজে অমুসলিমদের ঘরে খাবার খেয়েছেন এবং অমুসলিমকে তিনি নিজে খাইয়েছেন। হাদীসে বর্ণিত আছে, আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, এক ইহুদি মহিলা নবী (সা.)-এর কাছে বিষ মিশ্রিত বকরী নিয়ে এলো। সেখান থেকে কিছু অংশ তিনি খেয়েছেন।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪৭৪)
অমুসলিমদের সঙ্গে সামাজিক কাজকর্ম করা যাবে: অনেক সাহাবা কিরাম অমুসলিমের অধীনে কাজ করেছেন এবং অমুসলিমকে দিয়ে নিজেদের কাজ করিয়েছেন। আলী (রা.) কূপ থেকে প্রতি বালতি পানি উত্তোলনের বিনিময়ে একটি করে খেজুর দেবে, এই শর্ত ইহুদির কাজ করেছেন।
(সুনান তিরমিযী, হাদীস ২৪৭৩)
রাসূল (সা.) এক ইহুদির কাছে বর্ম বন্ধক দিয়ে কিছু ঋণ এনেছিলেন।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৮৬)
আম্মাজান আয়েশা, আলী, ও উমর (রা.) প্রমুখ অমুসলিম প্রতিবেশীর বাসায় খাবার আদান-প্রদান করতেন।
(সুনান আবু দাঊদ, হাদীস ৫১৫২)
বুঝা গেল, বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে অমুসলিমদের সঙ্গে সামাজিক কাজকর্ম করা যাবে।
ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না: ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। কুরআন-সুন্নাহ কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করার নির্দেশ দেয় না। সাম্য, শান্তি ও ন্যায়ের ধর্ম ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণের শাশ্বত আহ্বান সবসময় বিরাজমান ছিল এবং থাকবে। কিন্তু ইসলাম গ্রহণে কাউকে বাধ্য করে না। কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন, দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই।
(সূরা বাকারা, হাদীস ২৫৬)
অমুসলিমদের সঙ্গে কেমন ছিল নবীজির আচরণ
অমুসলিমদের কেমন আচরণ করতে ইসলাম নির্দেশ দেয়, এ ব্যাপারে আমরা নবীজির ব্যক্তিগত আচরণের মধ্য দিয়েও আমরা জানতে পারি। সুন্নাহ ও ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, রাসূলুল্লাহ (সা.) ভিন্ন ধর্মের মানুষকে মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য সম্মান দিতেন। অমুসলিম প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচার করতেন। অমুসলিমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহণ করেছে প্রিয়নবী (সা.)-এর চারিত্রিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে।
একজন কাফের নেতাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে এনে মসজিদে নববীর খুটির সাথে বেঁধে রাখা হলো। রাসূল (সা.) এসে দেখেন, তার হাত খুব শক্ত করে বাঁধা, এতে তার কষ্ট হচ্ছে। এটি দেখে নবী কারীম (সা.) বললেন, তার বাঁধনটা একটু আলগা করে দাও। সাহাবারা তা-ই করলেন।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ২২৯১)
আবদুল্লাহ বিন সালাম ইহুদিদের পণ্ডিত ছিলেন। তিনি নবী কারীম (সা.)-এরর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা ও মহানুভবতা দেখে প্রকাশ্যে কালিমা শাহাদাহ পাঠ করে ইসলামে দিক্ষীত হন। এভাবে দলে দলে মানুষ ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছে মহানবী (সা.)-এর চারিত্রিক মাধুর্যে বিমুগ্ধ হয়ে।
মক্কা বিজয়ের সময় মক্কার চৌকাঠে হাত দিয়ে বললেন, মক্কার লোকেরা, তোমরা আমার কাছে কী আশা কর? তারা বলল, আমরা তোমাকে ভ্রাতুষ্পুত্র হিসেবে আশা করি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করবে। তখন তিনি বললেন, ইউসুফ (আ.) যেভাবে তার ভাইদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বলেছিলেন ‘আজ তোমাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়া হবে না’, তদ্রূপ আমিও তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম।
(সুনান বায়হাকী, হাদীস ১৮২৭৫)
★কোনো কারণে যদি তাদের কোনো লোক বন্দি হিসেবে মুসলমানদের অধীনে আসে তখন তাদের বন্দিদের সঙ্গে সদাচার করত হবে। তাদের আহার করাতেও সদকার পুণ্য রয়েছে। বরং যেকোনো প্রাণীকে আহার করাতে সদকা রয়েছে।
কারণ প্রত্যেক প্রাণীর প্রাণ মর্যাদাবান। তাই তাদের অনর্থক নষ্ট করা নিষেধ।
কাতাদাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত,
عَنْ قَتَادَةَ، قَوْلُهُ: {وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا} [الإنسان: 8] قَالَ: لَقَدْ أَمَرَ اللَّهُ بِالْأُسَرَاءِ أَنْ يُحْسَنَ إِلَيْهِمْ، وَإِنَّ أَسْرَاهُمْ يَوْمَئِذٍ لِأَهْلُ الشِّرْكِ
‘তারা আহার করায় আল্লাহর মুহাব্বাতে মিসকিন ইয়াতিম ও বন্দিদের। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা এখানে বন্দিদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার জন্য বলেছেন। আর তখনকার বন্দিরা মুশরিকই ছিল।’ (তাফসীরে তাবারী : ২৪/৯৭,২৩/৫৪৪)
বন্দিদের সঙ্গে ভালো আচরণের একটি দৃষ্টান্ত বুখারী শরীফে এভাবে এসেছে,
أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: بَعَثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْلًا قِبَلَ نَجْدٍ، فَجَاءَتْ بِرَجُلٍ مِنْ بَنِي حَنِيفَةَ يُقَالُ لَهُ ثُمَامَةُ بْنُ أُثَالٍ، فَرَبَطُوهُ بِسَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي المَسْجِدِ، فَخَرَجَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ؟» فَقَالَ: عِنْدِي خَيْرٌ يَا مُحَمَّدُ، إِنْ تَقْتُلْنِي تَقْتُلْ ذَا دَمٍ، وَإِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ، وَإِنْ كُنْتَ تُرِيدُ المَالَ فَسَلْ مِنْهُ مَا شِئْتَ، فَتُرِكَ حَتَّى كَانَ الغَدُ، ثُمَّ قَالَ لَهُ: «مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ؟» قَالَ: مَا قُلْتُ لَكَ: إِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ، فَتَرَكَهُ حَتَّى كَانَ بَعْدَ الغَدِ، فَقَالَ: «مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ؟» فَقَالَ: عِنْدِي مَا قُلْتُ لَكَ، فَقَالَ: «أَطْلِقُوا ثُمَامَةَ» فَانْطَلَقَ إِلَى نَجْلٍ قَرِيبٍ مِنَ المَسْجِدِ، فَاغْتَسَلَ ثُمَّ دَخَلَ المَسْجِدَ، فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، يَا مُحَمَّدُ، وَاللَّهِ مَا كَانَ عَلَى الأَرْضِ وَجْهٌ أَبْغَضَ إِلَيَّ مِنْ وَجْهِكَ، فَقَدْ أَصْبَحَ وَجْهُكَ أَحَبَّ الوُجُوهِ إِلَيَّ، وَاللَّهِ مَا كَانَ مِنْ دِينٍ أَبْغَضَ إِلَيَّ مِنْ دِينِكَ، فَأَصْبَحَ دِينُكَ أَحَبَّ الدِّينِ إِلَيَّ، وَاللَّهِ مَا كَانَ مِنْ بَلَدٍ أَبْغَضُ إِلَيَّ مِنْ بَلَدِكَ، فَأَصْبَحَ بَلَدُكَ أَحَبَّ البِلاَدِ إِلَيَّ، وَإِنَّ خَيْلَكَ أَخَذَتْنِي وَأَنَا أُرِيدُ العُمْرَةَ، فَمَاذَا تَرَى؟ فَبَشَّرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَهُ أَنْ يَعْتَمِرَ، فَلَمَّا قَدِمَ مَكَّةَ قَالَ لَهُ قَائِلٌ: صَبَوْتَ، قَالَ: لاَ، وَلَكِنْ أَسْلَمْتُ مَعَ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلاَ وَاللَّهِ، لاَ يَأْتِيكُمْ مِنَ اليَمَامَةِ حَبَّةُ حِنْطَةٍ، حَتَّى يَأْذَنَ فِيهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) নজদের দিকে অশ্বারোহী একটি দল পাঠালেন, তখন বনী হানীফার ছুমামা ইবনে উছাল নামক ব্যক্তিকে তাঁরা আটক করলেন। তাঁরা তাকে মসজিদের একটি স্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে রাখলেন।
নবী (সা.) তার কাছে গেলেন এবং বললেন, তোমার কী ধারণা, হে ছুমামা? তখন সে বলল, হে মুহাম্মদ! আমার ভালো ধারণা রয়েছে। যদি আপনি হত্যা করেন, তাহলে একজন হত্যার উপযুক্তকে হত্যা করবেন। আর যদি ইহসান করেন, তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে মুক্তি দেবেন। যদি আপনি মাল চান, তাহলে যা ইচ্ছা চান।
এভাবে দ্বিতীয় দিন অতিক্রম হলো।
মহানবী (সা.) তাকে বললেন, তোমার কী ধারণা ছুমামা! তখন সে বলল, কথা তো আমি আগেই বলেছি, যদি মুক্তি দেন, তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে মুক্তি দেবেন। মহানবী (সা.) তাকে রেখে গেলেন। পরবর্তী দিন তিনি তাকে বললেন, ছুমামা তোমার কী ধারণা? তখন সে বলল, আগেই তো বলেছি।
তখন তিনি বললেন, তাকে মুক্তি দাও। মুক্তি পাওয়ার পর সে মসজিদের একটি নিকটবর্তী খেজুর বাগানে গিয়ে গোসল করল, তারপর আবার মসজিদে প্রবেশ করল। আর সাক্ষ্য দিল আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই ও মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।
অতঃপর বলল, হে মুহাম্মদ! আল্লাহর কসম আমার কাছে পৃথিবীর বুকে আপনার চেহারার চেয়ে ঘৃণিত চেহারা দ্বিতীয়টি ছিল না। এখন আমার কাছে আপনার চেহারা সবচেয়ে প্রিয় হয়ে গেল। আমার কাছে পৃথিবীতে আপনার ধর্মের চেয়ে ঘৃণিত ধর্ম ছিল না। এখন আপনার ধর্ম আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ধর্মে পরিণত হলো। আল্লাহর কসম! আপনার শহরের চেয়ে ঘৃণিত শহর ছিল না। এখন আপনার শহরের চেয়ে প্রিয় শহর নেই। নিশ্চয়ই আপনার অশ্বারোহী দলের হাতে আমি পাকড়াও হয়েছি এখন আমি ওমরা করার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছি। আপনি কী বলেন? তখন নবী (সা.) তাকে সুসংবাদ দিলেন এবং তাকে ওমরার অনুমতি দিলেন।
যখন সে মক্কায় এল, একজন তাকে বলল, তুমি তো পথভ্রষ্ট হয়েছ। তখন সে বলল,না, বরং আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি মুহাম্মদের হাতে, আল্লাহর কসম! ইয়ামামা থেকে একটি গমের দানাও রাসূল (সা.)-এর অনুমতি ছাড়া তোমরা পাবে না।’ (বুখারী, হাদীস : ৪৩৭২)
হুনাইন যুদ্ধে হাওয়াজিন ও সাকিফ গোত্রের কয়েকজন সরদার মারা যায়। কেউ কেউ পালিয়ে যায়। তাদের পরিবার-পরিজন বন্দিরূপে এবং মালামাল গনিমত হিসেবে মুসলমানদের আয়ত্তে আসে। এর মধ্যে ছিল ছয় হাজার বন্দি, ২৪ হাজার উট, ৪০ হাজারেরও বেশি বকরি এবং প্রায় চার মণ রুপা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু সুফিয়ান বিন হারবকে গনিমতের এসব মালামালের ওপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন। তার পরও হাওয়াজিন ও সাকিফ গোত্রদ্বয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়; কিন্তু সব জায়গায় তারা পরাজিত হয়।
শেষ পর্যন্ত তায়েফের এক মজবুত দুর্গে তারা আশ্রয় গ্রহণ করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ১০ থেকে ২০ দিন এই দুর্গ অবরোধ করে রাখেন। ওরা দুর্গ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বাণ নিক্ষেপ করতে থাকে। কিন্তু সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সাহস তাদের ছিল না।
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এদের বদদু’আ দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এদের হেদায়েতের জন্য দু’আ করেন। তারপর তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।
প্রথমে তিনি মক্কা গিয়ে ওমরা পালন, তারপর মদিনা প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা মহানবী (সা.)-এর দু’আ কবুল করে তাদের হেদায়েত দান করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন জি’রানা নামক স্থানে পৌঁছেন তখন বহু অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে।
ঐতিহাসিক হুনাইনের যুদ্ধের পর নজিরবিহীন এ ঘটনা সংঘটিত হয়। যুদ্ধের পরই হাওয়াজিন গোত্রের অবশিষ্ট লোকেরা সদলবলে ইসলামের পতাকাতলে শামিল হয়।
সত্য, ন্যায় ও হেদায়েতের এই মিছিলে দলনেতা মালিক বিন আউফও যোগ দেন।
যুদ্ধের প্রায় ২০ দিন পর এই ঘটনা ঘটে।
ইতিমধ্যেই তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ-সম্পদ গনিমত হিসেবে মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়।
এখানে নতুন সংকট দেখা দেয়, মুসলমান হয়ে যাওয়ার পর তারা তাদের সম্পদের দাবি জানায়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের দুটি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো একটি পথ বেছে নিতে বলেন। হয়তো তারা তাদের ওই সম্পদ ফিরিয়ে নিয়ে যাবে অথবা সম্পদের পরিবর্তে তাদের ছয় হাজার যুদ্ধবন্দিকে ফেরত নিয়ে যাবে।
তারা তাদের বন্দিদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সম্মত হয়।
মুজাহিদদের ছাড়াও এই বিপুল সম্পদ থেকে সেসব নওমুসলিমদেরও একটা বিশেষ অংশ দেওয়া হয়, মক্কা বিজয়ের পর যারা মুসলমান হয়েছিল। তাদের অনেককে রাসূলুল্লাহ (সা.) ১০০ করে উট দান করেছেন।
হাওয়াজিন গোত্রের নেতা মালিক বিন আউফকেও ১০০ উট দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে নিজ গোত্রের সরদারও বানিয়ে দেন। আগেও তিনি সেই গোত্রের সরদার ছিলেন, তবে সেটা ছিল অমুসলিম হিসেবে। এবার তিনি একই গোত্রের সরদার হয়েছেন মুসলমানদের নেতা হিসেবে (ইবনে কাছীর, তাফসীরে মুনীর)।
(অনেক তথ্য সংগৃহীত)