ওয়া আলাইকুমুস-সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
গর্ভ থেকে
ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন উপায়ে গর্ভপাত ঘটানোকে এবোরশন বলে (Abortion)
বলে।
এটি জন্মনিয়ন্ত্রণের
বহু পুরাতন একটি পদ্ধতি। জন্মনিয়ন্ত্রণের (Contraceptives) উপায়-উপাদানের অনেক উন্নতি সত্ত্বেও আজ অবধি দুনিয়ার
বিভিন্ন স্থানে এপদ্ধতি চালু আছে। এ পদ্ধতি নাজায়েয।
তবে যদি মহিলা
অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম
হয়। তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক গর্ভপাত বৈধ হবে। মেয়াদ চার মাসের অধিক
হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা।
বর্তমান সমাজে
গর্ভপাত বা ভ্রুণহত্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্লিনিক আঙিনায় ভিড় করছে অসংখ্য
তরুণী। ক্লিনিকগুলো যেন হয়ে উঠেছে মানব হত্যার কেন্দ্রস্থল। কারও কারও যৌক্তিক কারণ
থাকলেও অধিকাংশ গর্ভপাতই নষ্ট চরিত্রের ফসল। কেউ করে দরিদ্রতার ভয়ে। ক্রমবর্ধমান এ সমস্যাটি হয়ে উঠেছে একটি সামাজিক ব্যাধি।
শরীয়তের বিধান
হলো যদি মহিলা অত্যাধিক দুর্বল হয়,
যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক
হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক
গর্ভপাত বৈধ হবে। মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা।
খাদ্য,
চিকিৎসা,
বাসস্থান ইত্যাদির অভাবের কারণে সংসারকে
সচ্ছল করার নিয়তে, দৈহিক সৌন্দর্য বা ফিগার ঠিক রাখার উদ্দেশ্যে ,কন্যাসন্তান জন্ম নেয়ার ভয়ে (যাতে পরবর্তীতে এদের
বিয়ে শাদীর ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়),অধিক সন্তান নেয়াকে লজ্জার বিষয় মনে করে গর্ভপাত
বিশেষত অভাবের কারণে সংসারকে সচ্ছল করার নিয়তে গর্ভপাত করলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও
ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা রিজিকের মালিক আল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
ولا
تقتلوا أولادكم خشية إملاق، نحن نرزقهم وإيّاكم إنّ قتلهم كان خطأ كبيراً.
‘’দারিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই
খাদ্য প্রদান করে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ…’’(সূরা ইসরা, আয়াত-৩১)
অন্যত্র তিনি
বলেন, الشَّيْطَانُ
يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ . “শয়তান তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়।” (সূরা আল-বাক্বারা)
★এ ব্যাধি সম্পর্কে বিস্তারিতঃ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, ভ্রুণের বয়স যখন হয় তেতাল্লিশ দিনের কম,
তখন ভ্রুণ একটি রক্তপিন্ড হিসেবে মায়ের
গর্ভে অবস্থান করে। এ সময় পর্যন্ত তার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায় না। এ অবস্থায়
ভ্রুনটিকে মানুষের
শরীরের একটা
অঙ্গ হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। আর মানুষের প্রতিটি অংশের মালিক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। অতএব শরীরের
অন্যান্য অঙ্গের মতো এই অঙ্গটিও নষ্ট করা নাজায়েজ। তবে
যদি স্তন্যদানকারিনী গর্ভবতী হয়ে দুধ
বন্ধ হওয়া এবং বাচ্চা মারা যাওয়ার আশঙ্কা হয়, এ অবস্থায় গর্ভে বীর্য জমাট রক্ত কিংবা গোশতের টুকরাকারে
থাকলে এবং কোনো অঙ্গ প্রকাশ না পেলে চিকিৎসার মাধ্যমে
গর্ভপাত করানো জায়েজ আছে। (ফতওয়ায়ে
কাজিখান : ৩/৪১০)।
★
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
চার মাসের পূর্বে বিশেষ কিছু কারণে
শরীয়ত গর্ভপাতকে অনুমোদন প্রদান করে থাকে।
(ক) বর্তমানে কোলে দুধের একটি শিশু রয়েছে, অপরদিকে উক্ত মহিলার গর্ভাশয়ে নতুন সন্তানও উৎপাদিত
হচ্ছে। গর্ভের দরুন দুধ একেবারে শুকিয়ে গেছে।অপরদিকে উক্ত সন্তানকে অন্যকোনো উপায়ে
লালনপালন করা যাচ্ছেনা। মায়ের দুধ ব্যতীত অন্যকিছুতে সে মূখই দিচ্ছে না।এমতাবস্থায়
চারমাস হয়নি এমন গর্ভকে গর্ভপাত করা বৈধ রয়েছে।
(খ)কোনো মুসলমান বিজ্ঞ ডাক্তার উক্ত গর্ভবতী মহিলাকে পরিদর্শন করে বলে যে,
গর্ভপাত না করলে মহিলার জান বা কোনো
অঙ্গ বিনাশের আশঙ্কা রয়েছে।
আরো জানুনঃ
https://ifatwa.info/4441/
https://ifatwa.info/446/
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার জন্য একজন
দ্বীনদার চিকৎসকের সাথে পরামর্শ করার পর উপরে উল্লেখিত কারণ পাওয়া যাওয়ার শর্তে গর্ভপাত
করা জায়েজ হবে। অন্যথায় শর্ত পাওয়া না গেলে জায়েয হবে না। আরো জানুনঃ
https://www.ifatwa.info/446