আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
64 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (25 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ
জি আমার নাম আলিফুল ইসলাম এলমান, জি আমি একজন ছাত্র আমার বাবা একজন ইউপি মেম্বার খুব সাধারণ মানুষ স্বতন্ত্র মেম্বার কোন দলের সাথে সম্পর্ক নাই। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের দিন । কিছু মানুষ বিএনপির সমর্থক কিছু লোক বাহিনী আমাদের অফিসে হামলা করে আমাদের অনুপস্থিতি পেয়ে অফিসের সবকিছু যাবতীয় জিনিসপত্র ধ্বংস করে দেয়। এই ঘটনার পরে সামাজিক কিছু দায়িত্ববান লোক বিষয়টা জেনে বিচারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয়। বিচারে আমার বাবার উপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয় এবং কিছু পাতি লোক আমার বাবার উপর বেয়াদবি মূলক আচরণ করা হয়। ওই স্থানে আমি ছেলে হিসেবে উপস্থিত ছিলাম কিন্তু আল্লাহর ভয় ,নিয়মকানুন জ্ঞান না থাকায় আমি তাদের উপর কোন হামলা করিনি তবে আমার সেই ক্ষেত্রে কি করা উচিত??

অর্থাৎ আমার প্রশ্নটা হলো অন্যায় ভাবে যদি আমার বাবাকে কেউ অপমান করে অপদস্থ করে। তাহলে সন্তান হিসেবে ঐ সময় আমার কি করনীয়?? আমি একটা বিষয় বলে নেই প্রশাসন নেই বা বিচার ব্যবস্থা নেই। এখন যতটুক প্রতিবাদ করবো সেটা আমার নিজেকেই করতে হবে। সুতরাং কেউ যদি অন্যায় ভাবে আমার বাবার উপর জুলুম করে, অপমান অপদস্ত করে তাহলে ছেলে হিসেবে আমার দায়িত্ব কতটুকু? বা আমার প্রতিবাদের স্বরুপ টা কি রকম হবে?? আমি আগেই বলেছি যেহেতু প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থা নেই, সেহেতু প্রশাসন বা বিচারের মাধ্যমে কিছু করা সম্ভব না। আমাকেই প্রতিবাদ করতে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তোর আমার প্রতিবাদের মাত্রাটা কতটুকু হবে? যদি আমার সামর্থ্য থাকে তাহলে আমি কি ওদেরকে মারতে পারবো??

1 Answer

0 votes
by (59,040 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

রাসুল (সা.) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)

আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।

(সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)

মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।

 

পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে। (সুরা : শুআরা, আয়াত : ২২৭)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না। (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৭)

জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)

সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ। (সুরা : রুম, আয়াত : ৪১)

মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)

রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।  (বুখারি, হাদিস : ১৪৯৬)

 

পরিশেষে, মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিসম্পাত থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

যদি অন্যায় ভাবে আপনার বাবার উপর জুলুম করা হয়ে থাকে এবং আপনার বাবার কোন অপরাধ না থাকে এমতাবস্থায় আপনি সন্তান হিসেবে আপনার দায়িত্ব হবে আপনার বাবাকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা এবং জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।  তবে আপনার পক্ষ থেকে যেন কোন অতিরঞ্জন না পাওয়া যায়।  আপনি শুধু জুলুমকে প্রতিহত করতে পারবেন কিন্তু আপনার দ্বারা যেন কেউ মজলুম না হয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...