ওয়া আলাইকুমুস-সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
রাসুল (সা.) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা
করে বলেন, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা
হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না।’
(মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন।
কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে,
‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন
এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।
’ (সুরা : নাহল, আয়াত
: ৯০)
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ
করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি
ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের
প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে
নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত
করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়,
আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’
(মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের
ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের
প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত
: ২২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো
সফলকাম হয় না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৭)
জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি
অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের
দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও
দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’
(তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)
সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার
মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর
এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা
দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’
(সুরা : রুম, আয়াত : ৪১)
মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না।
তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে
আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুল
(সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময়
রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের
দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন,
আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’
(তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার
ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৯৬)
পরিশেষে, মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি
যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিসম্পাত থেকে বাঁচিয়ে
রাখেন। আমিন।
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
যদি অন্যায় ভাবে আপনার বাবার উপর জুলুম করা হয়ে থাকে এবং আপনার
বাবার কোন অপরাধ না থাকে এমতাবস্থায় আপনি সন্তান হিসেবে আপনার দায়িত্ব হবে আপনার
বাবাকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা এবং জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। তবে আপনার পক্ষ থেকে যেন কোন অতিরঞ্জন না পাওয়া
যায়। আপনি শুধু জুলুমকে প্রতিহত করতে পারবেন
কিন্তু আপনার দ্বারা যেন কেউ মজলুম না হয়।