আমার বয়স ২৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ। স্নায়বিক দুর্বলতা, ভিটামিন-ডি ঘাটতি, পিসিওএস এবং মাইগ্রেন এই কয়টা রোগ ধরা পড়েছে, তবে চিকিৎসা সত্ত্বেও সুস্থ হচ্ছি না পুরোপুরি। বেশিরভাগ সময়ই দুর্বল আর শরীর ভারী লাগে। বেশি কাজ করতে পারি না। ভালোভাবে ইবাদাতও করতে পারি না। অসুস্থ হওয়ার আগে, ২০২০ সাল থেকে পরিবার বিয়ের জন্য চেষ্টা করছে। অসুস্থ হওয়ার পর চেষ্টা বাদ দিয়েছিলো। এখন অসুস্থতা একটু কমায় আবার চেষ্টা করছে। (চেষ্টা বলতে, কেউ দেখতে আসতে চাইলে বলে আসেন, এতোটুকুই। মানুষ তো আগে চেহারা দেখতে চায়। পছন্দ হলে তারপর পরিচয়-সমাচার জানতে চায়।) আমার প্রশ্ন হলো:
১. এমন অসুস্থ অবস্থায় কি বিয়ে করা ঠিক হবে? অনেক বলে অসুস্থ অবস্থায় বিয়ে দিয়ে মানুষকে সাথে মেয়েকেও বিপদে ফেলবেন না। মাঝে মধ্যে খুব হতাশ লাগে। মনে হয় আমি তো বিয়ের অবস্থায় নেই। বিয়ের পর যদি এ নিয়ে অশান্তি হয়? আবার পরিবারের সবাই পাশে থাকার পরেও খুব একাকীত্ব বোধ করি। মনটা কেমন বিষণ্ন হয়ে থাকে। যুবক ছেলেদের প্রতি তীব্র আকর্ষণও আছে। ভার্সিটিতে ছেলে-মেয়ে এতো কাছাকাছি থাকতে বাধ্য করা হয় যে অন্তর পবিত্র রাখা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো উস্তাদ। ভিতরে এতোটা যুদ্ধ করতে হচ্ছিলো প্রতি মুহূর্তে যে মনে হচ্ছিলো আমি বুঝি পাগলই হয়ে যাব। এজন্য ঈমান বাঁচাতে, চরিত্র বাঁচাতে ভার্সিটির পড়াশোনা ছেড়ে বাসায় চলে এসেছি। ওখানে থাকলে জান দিয়ে চেষ্টা করলেও গুনাহের আশঙ্কা প্রবল। (এগুলো বললাম আমার হালত বুঝানোর জন্য।)
২. আমি তো অসুস্থ। বিয়ের পর স্বামীর খেদমত, রান্নাবান্না, ঘরের কাজকর্ম যেভাবে করার ইচ্ছা আছে, সেভাবে হয়তো করতে পারব না। এতে কি স্বামীর হক নষ্ট হবে? যদিও আমার সত্যিই ওযর আছে, কিন্তু মানুষ তো তা বুঝবে না। মানুষের অনেক এক্সপেকটেশন থাকে, যেগুলো পূরণ না করতে পারলে তারা অসন্তুষ্ট হয়। স্বামীও হয়তো অসন্তুষ্ট হবে। ওস্তাদ, এক্ষত্রে আমার কী করণীয়? আমি বিয়ে করে জীবনটাকে আরো বেশি জটিলতায় ফেলে দিব না তো? খুব দুশ্চিন্তায় আছি উস্তাদ।
৩. মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন আসে, আমার নিয়তে কি ত্রুটি আছে? আমি তো ইবাদাত করছি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তাহলে বিয়ে হোক বা না হোক, আমার তো এতো বিষণ্ন, ডিপ্রেসড লাগে কেন? আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকলেই মন খুশি থাকার কথা। নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি রাখতে ইচ্ছে করে না। শুধু মনে হয়, কী লাভ? কে দেখবে? দেখার মানুষ তো নেই। অথচ আমার তো উচিত ছিলো আল্লাহ সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন, এজন্য সুন্দর থাকা। কিন্তু আমি সেটা পারছি না উস্তাদ। নরমাল একটা কাজ করতেও নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। নিজের অপরিপাটি অবস্থা দেখে নিজেকেই ঘৃণা লাগে। মনে হয়, তোমার আসল অবস্থা যদি মানুষ দেখে, কোনো মা-ই নিজের ছেলের জন্য তোমাকে পছন্দ করবে না। এমতাবস্থায় আমার কী করণীয়?
৪. এখন অবস্থাটা এমন হয়েছে, বিয়ে, পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কিছু শুনলেই খুব অসহ্য লাগতে থাকে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করি। যেমন মারছুছ উস্তাদের ফ্যামিলি প্ল্যানিং ক্লাসটা করার পর থেকে আমি প্রচণ্ড মাথাব্যথা আর ক্ষুব্ধ বোধ করছি। উস্তাদের ক্লাসই আমার আর করতে ইচ্ছে করছে না। সম্ভবত প্রস্তাব নিয়ে আসা লোকজনের নানারকম অপছন্দনীয়, অসম্মানজনক এবং আন্তরিকতাহীন কথা, আচরণ আমার মাঝে বিয়ে বিষয়টার প্রতিই ক্ষোভ তৈরি করেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কী করতে পারি?
৫. পিসিওএস-এর কারণে সন্তান যদি না হয় তাহলে কি স্বামীর হক নষ্ট হবে? তাকে কি দ্বিতীয় বিবাহ করাতে হবে? তার জীবন নষ্টের জন্য কি আমি দায়ী হব? হীনমন্য লাগে উস্তাদ, নিজের রোগের জন্য নিজেকেই দায়ী মনে হয়। কী করতে পারি?
বেশি বড়ো হয়ে গেছে। এজন্য ক্ষমা চাই। একটু বিস্তারিত পরামর্শ দিবেন দয়া করে।