আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
125 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
reshown by
আমার বয়স ২৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ। স্নায়বিক দুর্বলতা, ভিটামিন-ডি ঘাটতি, পিসিওএস এবং মাইগ্রেন এই কয়টা রোগ ধরা পড়েছে, তবে চিকিৎসা সত্ত্বেও সুস্থ হচ্ছি না পুরোপুরি। বেশিরভাগ সময়ই দুর্বল আর শরীর ভারী লাগে। বেশি কাজ করতে পারি না। ভালোভাবে ইবাদাতও করতে পারি না। অসুস্থ হওয়ার আগে, ২০২০ সাল থেকে পরিবার বিয়ের জন্য চেষ্টা করছে। অসুস্থ হওয়ার পর চেষ্টা বাদ দিয়েছিলো। এখন অসুস্থতা একটু কমায় আবার চেষ্টা করছে। (চেষ্টা বলতে, কেউ দেখতে আসতে চাইলে বলে আসেন, এতোটুকুই। মানুষ তো আগে চেহারা দেখতে চায়। পছন্দ হলে তারপর পরিচয়-সমাচার জানতে চায়।) আমার প্রশ্ন হলো:

১. এমন অসুস্থ অবস্থায় কি বিয়ে করা ঠিক হবে? অনেক বলে অসুস্থ অবস্থায় বিয়ে দিয়ে মানুষকে সাথে মেয়েকেও বিপদে ফেলবেন না। মাঝে মধ্যে খুব হতাশ লাগে। মনে হয় আমি তো বিয়ের অবস্থায় নেই। বিয়ের পর যদি এ নিয়ে অশান্তি হয়? আবার পরিবারের সবাই পাশে থাকার পরেও খুব একাকীত্ব বোধ করি। মনটা কেমন বিষণ্ন হয়ে থাকে। যুবক ছেলেদের প্রতি তীব্র আকর্ষণও আছে। ভার্সিটিতে ছেলে-মেয়ে এতো কাছাকাছি থাকতে বাধ্য করা হয় যে অন্তর পবিত্র রাখা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো উস্তাদ। ভিতরে এতোটা যুদ্ধ করতে হচ্ছিলো প্রতি মুহূর্তে যে মনে হচ্ছিলো আমি বুঝি পাগলই হয়ে যাব। এজন্য ঈমান বাঁচাতে, চরিত্র বাঁচাতে ভার্সিটির পড়াশোনা ছেড়ে বাসায় চলে এসেছি। ওখানে থাকলে জান দিয়ে চেষ্টা করলেও গুনাহের আশঙ্কা প্রবল। (এগুলো বললাম আমার হালত বুঝানোর জন্য।)
২. আমি তো অসুস্থ। বিয়ের পর স্বামীর খেদমত, রান্নাবান্না, ঘরের কাজকর্ম যেভাবে করার ইচ্ছা আছে, সেভাবে হয়তো করতে পারব না। এতে কি স্বামীর হক নষ্ট হবে? যদিও আমার সত্যিই ওযর আছে, কিন্তু মানুষ তো তা বুঝবে না। মানুষের অনেক এক্সপেকটেশন থাকে, যেগুলো পূরণ না করতে পারলে তারা অসন্তুষ্ট হয়। স্বামীও হয়তো অসন্তুষ্ট হবে। ওস্তাদ, এক্ষত্রে আমার কী করণীয়? আমি বিয়ে করে জীবনটাকে আরো বেশি জটিলতায় ফেলে দিব না তো? খুব দুশ্চিন্তায় আছি উস্তাদ।
৩. মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন আসে, আমার নিয়তে কি ত্রুটি আছে? আমি তো ইবাদাত করছি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তাহলে বিয়ে হোক বা না হোক, আমার তো এতো বিষণ্ন, ডিপ্রেসড লাগে কেন? আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকলেই মন খুশি থাকার কথা। নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি রাখতে ইচ্ছে করে না। শুধু মনে হয়, কী লাভ? কে দেখবে? দেখার মানুষ তো নেই। অথচ আমার তো উচিত ছিলো আল্লাহ সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন, এজন্য সুন্দর থাকা। কিন্তু আমি সেটা পারছি না উস্তাদ। নরমাল একটা কাজ করতেও নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। নিজের অপরিপাটি অবস্থা দেখে নিজেকেই ঘৃণা লাগে। মনে হয়, তোমার আসল অবস্থা যদি মানুষ দেখে, কোনো মা-ই নিজের ছেলের জন্য তোমাকে পছন্দ করবে না। এমতাবস্থায় আমার কী করণীয়?

৪. এখন অবস্থাটা এমন হয়েছে, বিয়ে, পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কিছু শুনলেই খুব অসহ্য লাগতে থাকে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করি। যেমন মারছুছ উস্তাদের ফ্যামিলি প্ল্যানিং ক্লাসটা করার পর থেকে আমি প্রচণ্ড মাথাব্যথা আর ক্ষুব্ধ বোধ করছি। উস্তাদের ক্লাসই আমার আর করতে ইচ্ছে করছে না। সম্ভবত প্রস্তাব নিয়ে আসা লোকজনের নানারকম অপছন্দনীয়, অসম্মানজনক এবং আন্তরিকতাহীন কথা, আচরণ আমার মাঝে বিয়ে বিষয়টার প্রতিই ক্ষোভ তৈরি করেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কী করতে পারি?

৫. পিসিওএস-এর কারণে সন্তান যদি না হয় তাহলে কি স্বামীর হক নষ্ট হবে? তাকে কি দ্বিতীয় বিবাহ করাতে হবে? তার জীবন নষ্টের জন্য কি আমি দায়ী হব? হীনমন্য লাগে উস্তাদ, নিজের রোগের জন্য নিজেকেই দায়ী মনে হয়। কী করতে পারি?

বেশি বড়ো হয়ে গেছে। এজন্য ক্ষমা চাই। একটু বিস্তারিত পরামর্শ দিবেন দয়া করে।

1 Answer

0 votes
by (575,640 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
https://ifatwa.info/64966/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ-
বিবাহের পূর্ব পাত্র পাত্রীর এমন রোগ যাহা তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে একে অপরের হক আদায়ে ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে,বা যার চিকিৎসা খুবই কঠিন। 
তাহলে এক্ষেত্রে উক্ত রোগ গোপন করা যাবেনা।
এক্ষেত্রে রোগটি গোপন করলে এটি ধোকা দেওয়া হবে,যাহা জায়েজ নেই। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا»

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৩১৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৮৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৯০৫}

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ মুসলমানগণ তার শর্তের উপর থাকবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২৮৯০, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪০৩৯}

★আর যদি রোগটি হালকা হয়,সেক্ষেত্রে সেই রোগ গোপন করা যাবে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে এই রোগ যেহেতু আপনার নিয়মিত জীবনযাপনে কোনো প্রভাব রাখে না এবং নিয়মিত চিকিৎসাও চলছে,আশা করা যায় দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন,ইনশাআল্লাহ। 
,
এক্ষেত্রে আপনার যদি প্রবল ধারনা হয় যে এই রোগের কারনে স্বামীর হক আদায়ে কোনো ত্রুটি হবেনা, সেক্ষেত্রে রোগটি গোপন করতে পারবেন।

সর্বাবস্থায় এমন অসুস্থ অবস্থায় বিয়ে করতে শরীয়তের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
আপনি বিবাহ করতে পারেন।

(২.৩)
বিয়ের পর স্বামীর খেদমত, রান্নাবান্না, ঘরের স্বাভাবিক কাজকর্ম আপনি করতে পারবেন,ইনশাআল্লাহ কোনো সমস্যা হবেনা।
পাশাপাশি চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন।

সুতরাং অতিরিক্ত টেনশন না করার পরামর্শ থাকবে। 

এমনও তো হতে পারে যে যেই পরিবারে বিবাহ হলো,সেখানে আপনাকে তেমন কোনো কাজ কর্মই করতে হবেনা।
এমনও তো আল্লাহ তায়ালা মিলিয়ে দিতে পারেন।

(০৪)
সব ক্ষোভ মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা করুন,পজিটিভ চিন্তা করুন,নেগেটিভ নয়,পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া চালিয়ে যান,ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে।

(০৫)
আপনার কারনেই যদি বাচ্চা না হয়,তবুও
এতে স্বামীর হক নষ্ট হবেনা। তবে সেক্ষেত্রে সে ২য় বিবাহ করতে চাইলে আপনি দ্বিতীয় বিবাহ করতে অনুমতি দিবেন।

তার জীবন নষ্টের জন্য আপনি দায়ী হবেননা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

No related questions found

...