আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
45 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (9 points)
আস সালামু আলাইকুম। ইসলামে মুজাদ্দিদ কারা? আমি বইতে পাইছি যে মুজাদ্দিদ রাও নাকি মাযহাবী ছিলেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত দলিল সহ জানতে চাই? ওনারাও কি মাযহাব মানতেন? বইতে একটা হাদিস আছে আল্লাহ নাকি প্রতি ১০০ না কত লেখা হাদীস টা মুখস্ত নেই, ওখানে লিখা যে আল্লাহ নাকি কিছু বছর পর পর মুজাদ্দিদ পাঠান এবং ওনারাও মাযহাব মানতেন।

হাদীস টা সম্ভবতঃ

আল্লাহ তা'আলা এ উম্মাতের (কল্যাণের) জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর শেষে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন যিনি তাদের দ্বীনকে সংস্কার করবেন।"


— মিশকাতুল মাসাবিহ ২৪৭[৩], আবু দাউদ ৪২৯১ (সহীহ)[৪

1 Answer

0 votes
by (547,020 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মুজাদ্দিদ (مجدد) শব্দের অর্থ সংস্কারক। প্রতি হিজরী শতাব্দিতে মুসলিম সমাজ সংস্কার, মুসলমানদের মধ্যে অনুপ্রবেশকৃত অনৈসলামিক রীতির মূলোৎপাটন এবং ইসলামের প্রকৃত আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য আবির্ভূত হন।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ الْمَهْرِيُّ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ أَبِي أَيُّوبَ، عَنْ شَرَاحِيلَ بْنِ يَزِيدَ الْمَعَافِرِيِّ، عَنْ أَبِي عَلْقَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، فِيمَا أَعْلَمُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا "

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অবগত হয়েছি যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতের (কল্যাণের) জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর শেষে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন যিনি তাদের দীনকে সংস্কার করবেন।
সহীহ : আবূ দাঊদ ৪২৯১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৯৯,মিশকাতুল মাসাবিহ ১৪৭)

 এ হাদীসটি হাকিম মুসতাদরাকে বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ বলেছেন। সহীহ বলার ব্যাপারে ইমাম যাহাবীও একমত হয়েছেন।

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ
প্রত্যেক হিজরী শতাব্দীর শেষ লগ্নে আল্লাহ এমন ব্যক্তি পাঠাবেন যিনি কিতাব এবং সুন্নাহ এর ‘আমাল ও এগুলোর দাবী অনুপাতে যে সমস্ত নির্দেশ রয়েছে তা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পর সেগুলো জীবিত করবে; নতুন আবিষ্কৃত জিনিসগুলোর মূলোৎপাটন করে। বক্তব্য লিখনী পাঠদান বা অন্যান্য পদ্ধতিতে বিদ্‘আতকারীদেরকে প্রতিহত করবে। 

তবে এ মুজাদ্দিদ ব্যক্তিকে তাঁর সমসাময়িক যুগের ‘আলিমগণ তার বিভিন্ন অবস্থা ও তার ‘ইলম কর্তৃক মানুষের উপকৃত হওয়ার পরিমাণ দেখে কেবল ব্যাপক ধারণার ভিত্তিতে জানতে পারবে। কেননা মুজাদ্দিদ ব্যক্তির প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য দীনে শারী‘আহ্ সম্পর্কে জ্ঞানবান হওয়া আবশ্যক এবং সুন্নাতের সাহায্যকারী, বিদ্‘আতের মূলোৎপাটনকারী, তার ‘ইলম তার যুগের লোকেদের মাঝে ব্যাপকতা লাভ করা আবশ্যক। আর দীনের সংস্কার কেবল প্রত্যেক শতাব্দীর শেষে হবে। সে সময় সুন্নাতের বিলুপ্তি ঘটবে, বিদ্‘আত প্রকাশ পাবে। ফলে তখন দীনের সংস্কারের প্রয়োজনে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি হতে পরবর্তী প্রজন্ম হতে এক বা একাধিক মুজাদ্দিদ নিয়ে আসবেন। কারণ দীনের সংস্কারের জন্য বিভিন্ন গুণাবলীর ‘আলিম লাগবে।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
মুজাদ্দিদদের মধ্যে যারা মুজতাহিদ,তারা নির্দিষ্ট আকারে তাদের চার মাযহাবের কোনো মাযহাব মানতে হবেনা।
কেননা তারা নিজেরাই কুরআন হাদীস হতে মাসয়ালা বের করতে সক্ষম।

তবে মুজাদ্দিদ দের মধ্যে যারা মুজতাহিদ নন,তারা ঠিকই মুকাল্লিদ ছিলেন,নির্দিষ্ট মাযহাব মানতেন।

ইসলামি আইনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ইজতিহাদের প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইজতিহাদে সক্ষম ব্যক্তিকে মুজতাহিদ বলা হয়। 

“ইজতিহাদ করার জন্য বেশ কিছু কঠিন শর্ত রয়েছে। 
(যাহা বর্তমান যামানায় কাহারো মধ্যে পাওয়া খুবই দুস্কর।)

সেগুলো হলোঃ-
১. কুরআন-সুন্নাহ’র নস (মূল বক্তব্য) সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। সে যদি কেবল একটি সম্পর্কে অবগত থাকে, তাহলে সে মুজতাহিদ নয়। তার জন্য ইজতিহাদ করা বৈধ নয়।
২. ইজমা‘র মাসআলাহসমূহ জানা থাকতে হবে। যেন সে ইজমা‘ বিরোধী ফাতওয়া না দেয়।
৩. আরবি ভাষা সম্পর্কে জানা থাকতে হবে, যেন সে কুরআন-সুন্নাহ’য় বর্ণিত অপরিচিত শব্দের ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়।
৪. তার উসূলে ফিক্বহ সম্পর্কে জানা থাকতে হবে, যেহেতু তা অত্যন্ত জরুরি (‘ইলমী) বিষয়কে শামিল করে। তার উচিত এই বিষয়ে বিশেষ (‘ইলমী) যোগ্যতা অর্জন করা।
৫. তার নাসিখ (রহিতকারী) ও মানসূখ (রহিত) সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। যেন এ সংক্রান্ত কোনো মাসআলাহই তার অজানা না থাকে। আর তা একারণে যে, এর অন্যথা হলে সে হয়তো মানসূখ বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করে বসবে।” (সংক্ষেপিত)

“ইজতিহাদের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যথা:
১. শার‘ঈ দলিল থেকে যা তার ইজতিহাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে তা জানা থাকা। যেমন: বিধিবিধানের আয়াত ও হাদীসসমূহ।
২. হাদীসের বিশুদ্ধতা ও দুর্বলতার সাথে যা সংশ্লিষ্ট তা জানা থাকা। যেমন: সনদ ও তার বর্ণনাকারীদের সম্পর্কে জানা।
৩. নাসিখ (রহিতকারী) মানসূখ (রহিত), ইজমা‘ (মতৈক্য) সংঘটিত হওয়ার স্থান সম্পর্কে জানা থাকা। যাতে করে সে মানসূখ বিধান বা ইজমা‘ বিরোধী বিধান অনুযায়ী ফায়সালা না দেয়।
৪. দলিলসমূহ থেকে যার কারণে বিধান ভিন্নতর হয় তথা খাসকরণ (নির্দিষ্ট), মুক্বাইয়্যাদকরণ (শর্তযুক্ত) প্রভৃতি সম্পর্কে জানা থাকা। যাতে করে সে এগুলোর বিরোধী বিষয়ের দ্বারা ফায়সালা না দেয়।
৫. ভাষা ও ফিক্বহের মূলনীতি থেকে যা কিছু শব্দের মর্মার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট তা জানা থাকা। যেমন: ‘আম (ব্যাপক), খাস (নির্দিষ্ট), মুত্বলাক্ব (শর্তহীন), মুক্বাইয়্যাদ (শর্তযুক্ত), মুজমাল (সংক্ষিপ্ত), মুবাইয়্যান (বিস্তৃত) প্রভৃতি। যাতে করে সে ওই মর্মার্থের দাবি অনুযায়ী ফায়সালা দেয়।
৬. তার কাছে এমন সক্ষমতা থাকা, যার দ্বারা সে দলিল থেকে (শার‘ঈ) বিধান উদ্ঘাটন করতে পারে।”

মুজতাহিদ হওয়ার শর্ত সমুহ সম্পর্কে আরো জানুনঃ


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...