আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
68 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আমি একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে অধ্যায়ণরত একজন ছাত্রী।। এখানে সহশিক্ষা এবং ফ্রি মিক্সিং এর পরিবেশ বিরাজমান। আমি পর্দা করে চলি এবং খুব প্রয়োজন ব্যাতিত কোনো ছেলের সাথে কথা বলি না ।

১.এধরনের সহশিক্ষা এবং ফ্রি মিক্সিং এর পরিবেশে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত?.

২.আমার চোখ আর হাত ব্যাতিত সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা থাকে এবং আমি ফ্রি মিক্সিং এড়িয়ে চলি।এরপরেও কিছু ছেলে আমার প্রতি ফিতনায় পড়ে। এতে কি আমার গুণাহ হবে ??

৩.মেডিকেল এ প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় পরপুরুষের শরীরে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়। হসপিটালের অধীনে বিভিন্ন পুরুষকে চিকিৎসা প্রদান করতে হয়। এক্ষেত্রে তাদেরকে ছোঁয়া প্রয়োজন পড়ে।বিষয়টা আমার খুবই খারাপ লাগে।এমনিতে পরপুরুষকে ছোঁয়া তো হারাম । তবে, মেডিকেল এ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে পরপুরুষকে স্পর্শ করার বিধান কি?

৪.ডাক্তার হয়ে যাওয়ার পরে একজন মুসলিম মেয়ে চিকিৎসক হিসেবে আমার কি শুধু শিশু বা মহিলাদের চিকিৎসা করা উচিত হবে নাকি আমি চাইলে পুরুষদেরও চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারবো? শুনেছি,সাহাবীদের যুগে যুদ্ধক্ষেত্রে পুরুষ সাহাবী আহত হলে, নারীরা তাদের চিকিৎসা সেবা দিতেন। আমি ফিকহ অফ মেডিকেল সাইন্স সম্পর্কে জানতে চাই।

৫.বোনস কেনা বেচা তো হারাম।বাধ্য হয়ে কেনা গেলেও বিক্রি সম্পূর্ণ হারাম। এখন আমি একটা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বোনস কিনেছিলাম। পারিবারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় বোনাস গুলো আমার বিক্রি করা জরুরি। এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কি হবে?

৬.একজন পর্দানশীল মুসলিম মেয়ের জন্য চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত?কারণ এই পেশা সয়ংসম্পূর্ণ নয়। চিকিৎসার বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাকে বিভিন্ন হসপিটাল, ক্লিনিক, পরপুরুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে। বাংলাদেশের মেডিকেল সিস্টেম ই এমন। এক্ষেত্রে মুসলিম পর্দাশীল মেয়েদের কি এই পেশায় নিয়োজিত হওয়া উচিত হবে?

1 Answer

0 votes
by (546,690 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/39894/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ  
পর্দা রক্ষা করা ফরজ। 

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

★অসুস্থ্য মানুষদের সেবা করাও সওয়াবের কাজ। যেহেতু মহিলাদের  জন্য মহিলা ডাক্তারের প্রয়োজন। 
তাই মহিলাদের জন্য পর্দার বিধান পুরোপুরি ভাবে পালনের শর্তে ডাক্তারী শিক্ষা অর্জন করা,ডাক্তারী করা জায়েজ আছে।  
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৪/২৫৬)

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
ইসলামি স্কলারগন  মুসলিম মহিলাদের মেডিকেল পড়াকে ফরযে কিফায়া বলেছেন। অর্থাৎ মুসলিমদের মধ্যে অবশ্যই কিছু মহিলার এ পেশায় আসা আবশ্যক যেন মহিলা সংক্রান্ত অসুখ-বিসুখ, সিজার, সন্তান ডেলিভারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদেরকে পর পুরুষ বা অমুসলিমদের শরণাপন্ন না হতে হয়।

সুতরাং সমাজের অর্থশালী ও উদ্যোগী ব্যক্তিদের জন্য মহিলাদের জন্য স্বতন্ত্র মেডিকেল কলেজ/ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা ফরজ- যেন আমাদের দ্বীনদার বোনেরা পর পুরুষ থেকে আলাদা থেকে নির্বিঘ্নে এ বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে পারে।

তবে স্বতন্ত্র ব্যবস্থা না থাকলেও দীনী কিছু বোনেরা পূর্ণ পর্দা ও শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে প্রচলিত সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল বা নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা করবেন এবং ভবিষ্যতে মহিলাদের জন্য আলাদা মেডিক্যাল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন।

আরো জানুনঃ 

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা (আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটি)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে,
قد تجد الطبيبة حرجا وصعوبات في تغطية وجهها عن غير المحارم أثناء عملها، فهل هذا يعتبر من الضرورة لكشفه؟
মহিলা ডাক্তার তার কর্মস্থলে ডিউটি করার সময় পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখতে সমস্যা ও কষ্ট হয়। সুতরাং চেহারা খোলা রাখার জন্য এটাকে জরুরত হিসেবে গণ্য করা যাবে কিনা?

তাঁরা উত্তর দিয়েছেন,
يحرم على المرأة كشف وجهها لغير محارمها، وليس هناك ضرورة لكشف الوجه في العمل
নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা হারাম। আর ডিউটি করার সময় প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চেহারা খুলে রাখার জরুরত বিদ্যমান নেই। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১৭/২৭৭)

বিস্তারিত জানুনঃ  

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
নারীদের নার্স হওয়া জায়েজ আছে।
তবে পরিপূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করতে হবে।
ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে।    
শুধুমাত্র নারীদের সেবা করতে হবে।  
সহকর্মীদের সাথে পর্দা মেইনটেইন করে কথা বলবে,অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে হেফাজতে থাকবে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য যদি বেপর্দা হতে হয়,শরীয়াহ বিরোধী কাজ করতে হয়,সেক্ষেত্রে বেপর্দা হওয়া এবং শরীয়াহ বিরোধী কাজ করার গুনাহ তো অবশ্যই হবে।

তদুপরি উলামায়ে কেরামগন বিশেষ জরুরতের স্বার্থে কিছু মুসলিমদেরকে ডাক্তার হওয়ার প্রতি উদ্ভুদ্ধ করেছেন,যাতে সমাজে পুরুষরা পুরুষের চিকিৎসা দিতে পারে, নারীরা নারীদের চিকিৎসা দিতে পারে, তদুপরি শিক্ষা অর্জন করতে গিয়ে শরীয়াহ বিরোধী কাজ হয়ে গেলে সেই কাজ করার গুনাহ তো অবশ্যই হবে।

তবে কোনো ভাবেই গুনাহ হতে বাঁচা সম্ভব না হলে মেডিক্যাল শিক্ষার পাশাপাশি ইস্তেগফার পাঠ করে যাওয়ারও পরামর্শ উলামায়ে কেরামগন দিয়ে থাকেন।

★সুতরাং আপনি সহ শিক্ষার শর্তাবলি মেনে জেনারেল লাইনে পড়তে পারলে আপনার প্রতি জেনারেল লাইনে পড়ারই পরামর্শ থাকবে। 

সহ শিক্ষার বিধান জানুনঃ- 

আরো জানুনঃ 

উপরোক্ত শর্তগুলি পূর্ণ রুপে মেনে পুরো শরীর,চেহারা,হাতা পা ঢেকে পর্দা করে মহিলাদের জন্য মেডিকেলে লেখাপড়া করা জায়েজ হবে।   

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
উম্মাহ এর খিদমাহ এর স্বার্থে,পর্দানশীন নারী রোগী দের পর্দা রক্ষার্থে সার্জারিতে দ্বীনদার মহিলা ডাক্তারদের ক্যারিয়ার করা জায়েজই শুধু নয়,বরং এটি
বর্তমান সময়ে অতিব প্রয়োজন।

আপনি যদি মেডিক্যালে পড়ালেখা চলাকালীন পূর্ণ ঈমান ও আমল ধরে রাখতে পারেন,গুনাহ ও ফিতনাহ মুক্ত চলতে পারেন,সেক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে মেডিক্যালে পড়াশোনা করার।

তবে সর্বক্ষেত্রে পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলবেন,গায়রে মাহরাম পুরুষদের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে থেকে বিরত থাকবেন।   

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
আপনি সহ শিক্ষার শর্তাবলি মেনে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারলে পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন।

সহ শিক্ষার শর্তাবলি মেনে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে না পারলে আপনার গুনাহ হবে।

(০২)
এক্ষেত্রে হাত মোজা পড়তে হবে।
পুরুষদের সাথে কথা বলা যাবেনা।
নিজের কন্ঠস্বর যেনো তারা না শুনতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তারপরেও কেহ ফিতনায় পড়লে আশা করি আপনার গুনাহ হবেনা।

(০৩)
জায়েজ নেই। 
এতে গুনাহ হবে।

(০৪)
এক্ষেত্রে আপনি শুধুমাত্র শিশু বা মহিলাদের চিকিৎসা করবেন।

(০৫)
এটা বিক্রয় করা জায়েজ হবেনা। 

বিস্তারিত জানুনঃ- 

(০৬)
বিষয়টি বিস্তারিত আকারে উপরে উল্লেখ রয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...