ওয়া আলাইকুমুস-সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
জুমার দিন
একটি বিশেষ সময় আছে বান্দা তখন যে দুআ করবে আল্লাহ তাআলা তা-ই কবুল করবেন। মুমিন ব্যক্তি
আল্লাহর কাছে যা চাইবে, আল্লাহ
তাআলা তা-ই দান করবেন। অনেক হাদীসে এই সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. বলেন-
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন জুমার দিনের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন বলেছেন, এইদিন একটা সময় আছে, কোনো
মুসলিম যদি ঐ সময়ে নামায আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায় আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা
দান করবেন।
(আবু হুরায়রা
রা. বলেন,) এরপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দিয়ে ইশারা করেছেন যে, ঐ
মুহূর্তটা অতি অল্প সময়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৩
মুসলিম শরীফের
এক বর্ণনায় স্পষ্ট এসেছে-
وَهِيَ
سَاعَةٌ خَفِيفَةٌ.
সে মুহূর্তটি
খুব সামান্য সময়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫২
জাবের ইবনে
আবদুল্লাহ রা. বলেন, রাসূলে
কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
يَوْمُ
الْجُمُعَةِ اثْنَتَا عَشْرَةَ سَاعَةً، وَلَا يُوجَدُ عَبْدٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ
اللهَ شَيْئًا إِلَّا آتَاهُ اللهُ...فَالْتَمِسُوهَا آخِرَ السَّاعَةِ بَعْدَ
الْعَصْرِ.
জুমার দিনের
বারো ভাগ। (এর মধ্যে একটি সময় আছে, যাতে) মুসলিম বান্দা আল্লাহ তাআলার কাছে যা প্রার্থনা করবে আল্লাহ
তাআলা তাকে তা-ই দান করবেন। সুতরাং তোমরা সে সময়টি অনুসন্ধান করো আসরের পর দিনের শেষ
অংশটিতে। -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ১০৩২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৪৮; সুনানে
নাসায়ী, হাদীস ১৩৮৯
জুমার দিনের
যে সময়টিতে দুআ কবুলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে সেটা কোন্ সময়? ওপরের হাদীসটিতে আসরের পরের কথা বিবৃত হয়েছে।
তবে অন্যান্য হাদীস ও আছার থেকে আরো বিভিন্ন সময়ের কথা জানা যায়। এসব হাদীস ও আছারের
ভিত্তিতে ওলামায়ে কেরাম থেকে জুমার দিনের দুআ কবুলের সময় সম্পর্কে অনেক মত বর্ণিত হয়েছে।
হাফেয ইবনে হাজার রাহ. ৪৩টি মত উল্লেখ করেছেন। দ্রষ্টব্য : ফতহুল বারী ২/৪১৬-৪২১
সবগুলো মত
উল্লেখ করার পর হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেন-
وَلَا
شَكَّ أَنَّ أَرْجَحَ الْأَقْوَالِ الْمَذْكُورَةِ حَدِيثُ أَبِي مُوسَى وَحَدِيثُ
عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ كَمَا تَقَدَّمَ قَالَ الْمُحِبُّ الطَّبَرِيُّ أَصَحُّ
الْأَحَادِيثِ فِيهَا حَدِيثُ أَبِي مُوسَى وَأَشْهَرُ الْأَقْوَالِ فِيهَا قَوْلُ
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَامٍ
এখানে হাফেয
ইবনে হাজার রাহ. যা বলেছেন এর সারমর্ম হল- এই সব মতের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধতম মত দুইটি
:
১. খতীব খুতবা
দেওয়ার জন্য মিম্বরে ওঠার পর থেকে নামায শেষ করা পর্যন্ত। এ সময়ের কথা আবু মূসা আশআরী
রা.-এর হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।্রু্রু
২. আসরের নামাযের
পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। এ সময়ের কথা আবদুল্লাহ ইবনে সালাম
রা.-এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
মুহিব্বুদ্দীন
আবুল আব্বাস তবারী রাহ. বলেছেন, আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসটি সবচে’ বিশুদ্ধ আর আবদুল্লাহ ইবনে সালাম
রা. থেকে বর্ণিত মতটি সবচে’ প্রসিদ্ধ। (দ্রষ্টব্য : ফতহুল বারী ২/৪২১)
সুতরাং উচিত
হল, জুমার দিন উক্ত দুই
সময়েই দুআর এহতেমাম করা। ইমাম আবু উমর ইবনে
আবদুল বার রাহ. বলেছেন- প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, তার দ্বীন-দুনিয়ার
যাবতীয় বিষয়ের জন্য কবুলের আশা নিয়ে এই দুই সময়ে গুরুত্বের সাথে দুআ করা। তাহলে ইনশাআল্লাহ
সে আশাহত হবে না। -আততামহীদ ১৯/২৪
হাদিস শরিফে
দিনরাতের যেকোনো সময় কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لا
حَسَدَ إلَّا في اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ عَلَّمَهُ اللَّهُ القُرْآنَ، فَهو يَتْلُوهُ
آناءَ اللَّيْلِ، وآناءَ النَّهارِ، فَسَمِعَهُ جارٌ له، فقالَ: لَيْتَنِي
أُوتِيتُ مِثْلَ ما أُوتِيَ فُلانٌ، فَعَمِلْتُ مِثْلَ ما يَعْمَلُ، ورَجُلٌ آتاهُ
اللَّهُ مالًا فَهو يُهْلِكُهُ في الحَقِّ، فقالَ رَجُلٌ: لَيْتَنِي أُوتِيتُ
مِثْلَ ما أُوتِيَ فُلانٌ، فَعَمِلْتُ مِثْلَ ما يَعْمَلُ
দুই ব্যক্তি
ছাড়া অন্য কারো সাথে ঈর্ষা করা যায় না। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তায়ালা কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত
করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশী তাকে বলে, হায়! আমাকে যদি এমন
জ্ঞান দেয়া হতো, যেমন অমুককে দেয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মতো আমল করতাম। অন্য আর এক ব্যক্তি, যাকে
আল্লাহ্ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সম্পদ সত্য ও ন্যায়ের পথে খরচ করে। এ অবস্থা দেখে
অন্য এক ব্যক্তি বলে, হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মত সম্পদ
দেয়া হত, তাহলে সে যেমন ব্যয় করছে, আমিও
তেমন ব্যয় করতাম। (বুখারি, হাদিস, ৫০২৬)
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
জুমার দিন
আসরের পর থেকে মাগরিবের পূর্ব মহূর্ত পর্যন্ত
দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়, এই মর্মে একাধিক হাদিস বর্ণিত আছে। কয়েকটি হাদিস
উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এজাতীয় হাদিসের
উপর ভিত্তি করে সাধারণত অনেক কওমি মাদ্রাসায় জুমার দিন আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ছাত্ররা
বিভিন্ন দোয়া, জিকির-আজগার ও তেলাওয়াতে মশগুল
থাকেন। এছাড়া দিনের যে কোন সময় দোয়া, জিকির-আজগার, তেলাওয়াত করতে কোন ধরনের নিষেধ
নেই। বিধায় যারা আছর ও মাগরিবের মধ্যবতি সময়ে
দোয়া, জিকির ও তেলাওয়াতসহ বিভিন্ন নফল ইবাদতের মধ্যে লিপ্ত থাকেন তাদের ব্যাপারে
সুধারণা পোষণ করা উচিত। তবে হ্যাঁ যদি কেউ
উক্ত সময়ে দোয়া করাকে বাধ্যতামূলক মনে করেন তাহলে তা বেদআত হবে ।