আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
95 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (23 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ...
১.ছেলের নাম মিরহান বাবার নাম হাফিজ, এখন নাম মিরহান ইবনে হাফিজ না রেখে মিরহান আল হাফিজ রাখা যাবে কি?

২.বিয়ের পর স্বামীসহ আমি ঢাকায় থাকি, শ্বশুরবাড়ি সিরাজগঞ্জ এবং বাবার বাড়ি বগুড়া। সমাজের কিছু কুসংস্কার(আমার ভাসুরের আগে আমার স্বামীর বিয়ে করা)  এর ভয়ে আমার শ্বশুরবাড়ি যাওয়া আপাতত নিষেধ। এখন যখন আমরা ঈদে বাড়ি যাই সেক্ষেত্রে আমার স্বামী তার পরিবারের কথা মতো সিরাজগঞ্জে নেমে যায় এবং বাকি রাস্তা একাই আমার বাবার বাড়ি যেতে হয়।আবার ঢাকায় ফেরার সময়ও তারা চায় (বিশেষ করে আমার শাশুড়ী) যে আমি একা বগুড়া থেকে ঢাকা যাই। কিন্তু মাহরাম ছাড়া একাকী আমি সফর করতে না চাওয়ায় আমার স্বামী আমাকে নিতে বগুড়া আসলে আমার শাশুড়ী কান্নাকাটি করে। গত ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এই দুইবারই বিয়ের পর বাড়ি যাই এবং এই একই কাহিনি হয়।
এখন এখানে আমার করণীয় কি এবং আমার স্বামীর করণীয় কি জানতে চাই?

1 Answer

0 votes
by (59,040 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

https://ifatwa.info/52469/  নং ফাতওয়াতে আমরা বলেছি যে, সফর কমপক্ষে ৪৮ মাইলের (যা প্রায়  ৭৮ কিলোমিটার মত)  চেয়ে কম হলে মহিলাগণ পর্দার সাথে একা একা সফর করতে পারবেন । আর ৪৮ মাইলের চেয়ে বেশি হলে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া কারো সাথে বা একা সফর করা জায়েজ নয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ (সূরা আহযাব ৩৩)

রাসূলুল্লাহ বলেন,

الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا

নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে উঁকি মেরে দেখে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)

বিশুদ্ধ মতানুযায়ী মাহরাম না থাকলে মহিলার উপর হজ্বও ফরয হবে না। হাদীস শরীফে এসেছে-

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِاِمْرَأَةٍ وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ. فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ اكْتُتِبْتُ فِىْ غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا وَخَرَجَتِ امْرَأَتِىْ حَاجَّةً قَالَ: اِذْهَبْ فَاحْجُجْ مَعَ اِمْرَأَتِكَ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

 [‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন পুরুষ যেন কক্ষনো কোন স্ত্রীলোকের সাথে এক জায়গায় নির্জনে একত্র না হয়, আর কোন স্ত্রীলোক যেন কক্ষনো আপন কোন মাহরাম ব্যতীত একাকিনী সফর না করে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম লেখানো হয়েছে। আর আমার স্ত্রী একাকিনী হজের উদ্দেশে বের হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যাও তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ/হজ করো। সহীহ : বুখারী ৩০০৬, মুসলিম ১৩৪১, আহমাদ ১৯৩৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৫২৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০১৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৭৫৭।

ইমাম নববী রাহ বলেন,

"فَالْحَاصِل أَنَّ كُلّ مَا يُسَمَّى سَفَرًا تُنْهَى عَنْهُ الْمَرْأَة بِغَيْرِ زَوْج أَوْ مَحْرَم " انتهى

মোটকথাঃ স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ব্যতীত যেকোনো প্রকার সফর থেকে মহিলাকে বাধা প্রদান করা হবে।

সফরের ধর্তব্য হল দূরত্ব। কত সময়ে উক্ত স্থানে পৌঁছতে পারছে সেটা ধর্তব্য নয়। উদাহরণতঃ ঢাকার থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব চারশত কিলোমিটার। কিন্তু বিমানে যেতে লাগে ৩০মিনিট। এক্ষেত্রে বিমানে সফর করলেও মহিলাদের জন্য স্বামী বা মাহরাম থাকা আবশ্যক। একা সফর করা জায়েজ নয়। মহিলাদের মাহরাম ঐ সকল ব্যক্তিদের বলা হয়, যাদের সাথে আজীবন বিবাহ নিষিদ্ধ। যেমন- পিতা, দাদা, ছেলে, নাতি, ভাগিনা, মামা, ভাই, ভাতিজা, শ্বশুর, চাচা, মেয়ের জামাই প্রমূখ।

আরো জানুন- https://ifatwa.info/26113/

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. যে আপনার ছেলের নাম “মিরহান আল হাফিজ” রাখা যাবে।  তবে নিয়মনুসারে বাবার নামের দিকে নিসবত দিয়ে উত্তম হবে, “মিরহান বিন / ইবনে হাফিজ” নাম রাখা।  বি:দ্র: ইবন/বিন অর্থ ছেলে। অর্থাৎ হাফিজের ছেলে মিরহান। 

২. সফর কমপক্ষে ৪৮ মাইলের ( যা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার মত)  চেয়ে কম হলে মহিলাগণ পর্দার সাথে একা একা সফর করতে পারবেন । আর ৪৮ মাইলের চেয়ে বেশি হলে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া কারো সাথে বা একা সফর করা জায়েজ নয়। তাই আপনার স্বামী ও আপনার পরিবারকে বিষয়টা আরো বুঝানোর চেষ্টা করবেন এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে দুআ করতে থাকবেন।

তবে আপনি আপনার স্বামীর সাথে সফর করবেন। আপনার শ্বশুর বাড়ির লোক তারা যেটি করছে এটা সম্পূর্ণ শরীয়তে গর্হিত কাজ এবং কুসংস্কার।  আপনার স্বামীর উচিত স্থানীয় কোন একজন আলেমের মাধ্যমে অথবা দ্বীনদার ব্যক্তি মাধ্যমে তার পরিবারের ভুল ধারণা নিরসন করা এবং তাদের নিকট সঠিক বিষয়টি তুলে ধরা।  যেন তারা তাদের সেই কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন এবং দিনের সঠিক বুঝ লাভ করতে পারেন।  তবে তাদেরকে বোঝানোর ক্ষেত্রে কঠোরতা পরিহার করে হেকমত অবলম্বন করায় উত্তম  ও ফলপ্রসু হবে ইনশাআল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...