ওয়া
আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم
الله الرحمن الرحيم
জবাব,
হালাল-হারাম
সম্পর্কিত কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রণীত মূলনীতি অনুসারে যেসব পশু পাখির গোশত খাওয়া
হালাল তা হলো- উট, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হরিণ, খরগোশ, গরু (বন্য গরুসহ), বন্য গাধা, হাঁস,
মুরগী, তিতির, হুদহুদ, রাজহাঁস, বক, সারস, উটপাখি, ময়ুর, চড়ই, কোয়েল, ঘুঘু, কবুতর,
পানকৌড়ী এবং মাছ (চিংড়িসহ), ইত্যাদি।
এর বাইরে
যেসব পশু-পাখির মাংস খাওয়া হারাম তা হলো- শুকর, হায়না, নেকড়ে কুকুর, বিড়াল, বানর,
চিতা, সিংহ, বাঘ, জারবয়া, ভাল্লুক, সাপ, কাঠ বিড়ালী, কচ্ছপ, বেজী, শিয়াল, গৃহপালিত
গাধা, হাতি। (রাদ্দুল মুহ্তার, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩০৬)।
যে সকল
পশু-পাখির গোশত খাওয়া বৈধ, ওগুলোও যেন-তেনভাবে মেরে খাওয়া যাবে না। বরং এমনভাবে জবাই
করে খেতে হবে, যেন নাপাক রক্ত পশুর শরীর থেকে বের হয়ে যায় এবং জন্তুরও কষ্ট কম হয়।
তাই ইসলামের
বিধান হচ্ছে, জবাই করার সময় মূল চারটা রগের কমপক্ষে তিনটা কাটতে হবে। এতে নাপাক রক্ত
বেশি বের হবে এবং সহজে পশুর জান বের হয়ে যাবে। সুস্থ সবল প্রাণী সহজেই জবাই করে খাওয়া
যায়, তবে অনেক সময় দেখা যায় কিছু কিছু প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তা জবাই করে খাওয়া।
অসুস্থ
প্রাণী জবাই করে খাওয়া নিয়ে আমাদের সমাজে একটা কথা প্রসিদ্ধ আছে যে, যখন কোনো পশু খুব
অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন এমন পশু জবাই করা ও খাওয়া ঠিক নয়। বিশেষত যখন এমন মনে হয় যে, পশুটি
হয়তো বেশিদিন বাঁচবে না।
কাআব
বিন মালিক রা. বর্ণনা করেন, তার কতকগুলো ছাগল-ভেড়া ছিল, যা সালআ নামক স্থানে চরে বেড়াত।
একদিন আমাদের এক দাসী দেখল আমাদের ছাগল-ভেড়ার মধ্যে একটি মারা যাচ্ছে।
তখন সে
একটি পাথর ভেঙে তা দিয়ে ছাগলটাকে জবাই করে দিল। কাআব তাদের বললেন, তোমরা এটা খেয়ো না,
যে পর্যন্ত না আমি নবী সা.-কে জিজ্ঞাসা করে আসি অথবা কাউকে নবী সা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা
করতে পাঠাই। তিনি নিজেই নবী সা.-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন অথবা কাউকে পাঠিয়েছিলেন।
তখন নবী সা. তা খাওয়ার হুকুম দিয়েছিলেন।
উবায়দুল্লাহ
বলেন, এ কথাটা আমার কাছে খুব ভালো লাগল যে দাসী হয়েও সে ছাগলটাকে জবাই করল। (সহিহ বুখারি,
হাদিস : ২৩০৪)
উল্লিখিত
হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, মরণাপন্ন পশু-পাখি জবাই করে খাওয়া দোষের নয়। কেননা ইসলাম
মানুষকে সম্পদ রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। যদি পশু বা পাখি মারা যায় তা খাওয়া হারাম হয়ে
যায়, সম্পদটি নষ্ট হয়।
(আলফাতাওয়া
মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ৪৬৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫৫; ফাতাওয়া
হিন্দিয়া ৫/২৮৬; আদ্দুররুর মুখতার ৬/৩০৮)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
১. প্রাণীর অসুস্থতা
দুই ধরনের হতে পারে।
এক. এমন
অসুস্থতা, যার কারণে পশুর গোশত খেলে মানব শরীরে এর বিরূপ প্রভাব পড়া এবং ক্ষতি হওয়ার
সমূহ আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে এমন প্রাণীর গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
এবং কোনো বিক্রেতা রোগের বিষয়টির সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য ঘোষণা ছাড়া এধরনের প্রাণী বা
এর গোশত বিক্রি করতে পারবে না। এটি শরীয়তে নিষিদ্ধ ‘আলগারার’ ও ‘আলখিদা’-এর শামিল হবে।
দুই.
কোনো প্রাণীর এমন সাধারণ অসুস্থতা, যা তার গোশতে তেমন প্রভাব ফেলে না এবং তা মানব শরীরের
জন্য তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি করে বলেও প্রমাণিত নয়। সে ধরনের অসুস্থ প্রাণীর
গোশত খেতে কোনো অসুবিধা নেই। এবং সে প্রাণী বা এর গোশত বিক্রি করতেও বাধা নেই।
২. যদি
প্রকাশ্য কোন নাপাকি না দেখা যায়, তাহলে উক্ত স্থানে নামাজ পড়া যাবে। তবে পরামর্শ
থাকবে যে, জায়নামাজ বা পবিত্র কোন কাপড় বিছিয়ে তার উপরে সালাত আদায় করা।