আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
50 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।আমার বেশ‌কিছু প্রশ্ন আছে।

১) আমি বিবাহিত।দেড় বছর ধরে।যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি নিজেকে গুনাহ থেকে দূরে রাখতে।গীবত পরনিন্দা পরচর্চা করা থেকে অনেক অনেক দূরে থাকার চেষ্টা করি।আমার শাশুড়ি গ্রামে থাকে।আসে কয়দিন পরপর।যতদিন থাকেন,আমি তাকে কোনো কাজ করতে দেইনা।যথাসম্ভব চেষ্টা করি সেবা করার। কিন্তু দিন দিন আমার জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে।উনি প্রচুর গীবত করে।মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলে।এ‌কথায় যে মানুষ কষ্ট পাবে সেটা বুঝতেও চায়না।এতো কষ্ট করে রান্না করি ঘর গুছাই,সবকিছুতে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম ভুল ও মুখের উপর খুব ব্যঙ্গ ভাবে বলে দেয়া।আল্লাহ সাক্ষী আমি কষ্ট পাওয়ার পরেও কখনো‌মুখের উপর উত্তর দেইনি। কিন্তু এসব আমাকে হতাশায় ফেলে দিচ্ছে।উনি যতক্ষণ আমার আশে পাশে থাকে আতংকে থাকি।কখন কি বলে ফেলে।আর একটু অসুস্থ হলে সেটাকেও ব্যঙ্গ করেন।আমাকে এসব হতাশায় ফেলে দিয়েছে।আমি কি করতে পারি।সংসার টা আমার না।আমার ভাসুরের। উনি ডিভোর্সড।আমি‌তাও নিজের মতো করে করি সব।আমার হাসবেন্ড স্টুডেন্ট।আর আমার শাশুড়ি এতো গিবত করে উনার সাথে ১ মিনিট বসে কথাও বলা যায়না।মুখের উপর কিছু যদি বলিও তখন‌ও দোষ করবে।আমি যাবো টা কোথায়।আবার কথা না বললেও দোষ ধরেন।যে আমি মিশি না।বললেও বুঝেননা।গিবত যে হচ্ছে।আমাকে নাসিহা করুন।

২)আমি শারীরিক ভাবে বেশ দুর্বল।কিছু সমস্যা আছে তাই।এসব হতাশার কারণে আমি আরো বেশি দুর্বল হয়ে যাই।অতিরিক্ত‌আবেগী ও বটে।তবে কখনো কারো সাথে বেয়াদবি করিনি। আলহামদুলিল্লাহ।আমি শুধু আমার জন্য নাসিহা চাইছি।কিভাবে এসবের মধ্যেও নিজেকে শক্ত রাখবো?ইবাদাতে আরো মন দিবো?

৩)আমি পরিপূর্ণ নিকাব করি।চোখ ঢেকে।এসব জেনে শুনে আমার স্বামী আমাকে বিয়ে করেছেন।উনার মা এর অভ্যাস আছে অনেক ছবি তোলা।এবং সবাইকে দেখানো।আমার হাসবেন্ড এতো হাজার বার বলার পরেও আমার গোপনে‌গোপনে‌ছবি তুলে আমার সব নন মাহরাম কে দেখিয়েছেন।আমি তাও উনার সাথে কোনোদিন বেয়াদবি করিনি। কিন্তু এ কষ্ট আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। নিজেকে স্বস্তা মনে হচ্ছে।উনাকে দেখলেই যখন এ কথা মনে পড়ে নিজেকে সামলাতে পারিনা।এসব কারণে আরো হতাশায় ডুবে যাচ্ছি।

এতোভাবে এতো সেক্রিফাইস করছি। সবাইকে মানিয়ে সবার পছন্দ কে উর্ধ্বে রেখে সবকিছু করছি। কিন্তু তারাই আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।বিনা দোষে বিনা অপরাধে সারাক্ষণ ভুল ধরে।তাদের মন মতো না হলেই।

আমি কি করবো?উস্তাদ?সবাই তো বলেই সবর করো।সবর করো।করছি উস্তাদ। কিন্তু এভাবে কি সবাই আমি আদবের ভিতর থাকি দেখে আমাকে আঘাত করেই যাবে?

আমি কিভাবে এসবের মাঝেও নিজেকে দ্বীনের ভিতর আরো বে্শি করে অটল রাখবো?

1 Answer

0 votes
by (566,400 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
আপনার শাশুড়ীর এহেন ব্যবহারের কথা আপনার স্বামীকে বলে তার মাধ্যমে শাশুড়ীকে বুঝাবেন,গীবতের ভয়াবহতার কথা জানাবেন,মহান আল্লাহর শাস্তির কথা জানাবেন,এতে ইনশাআল্লাহ সমাধান মিলবে।

এতেও কাজ না হলে শাশুড়ীর সাথে কম কথা বলবেন,গীবত করা শুরু করলে স্থান ত্যাগ করে অন্য রুমে চলে যাবেন।

(০২)
নিম্নে কিছু আমলের কথা উল্লেখ করছি,সেগুলো মেনে চলুনঃ-

আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, 

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ 

হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।

আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)

★সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করবেন।

রাসূলুল্লাহ্ ﷺ দোয়া করতেন,

اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَن زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا

হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক। (মুসলিম ২৭২২)
সুতরাং আপনিও দোয়াটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

নেককারদের সোহবত গ্রহণ করুন। তাদের সাথে বেশি উঠাবসা করুন।
আপনার এলাকায় দাওয়াত ও তাবলিগের সাথী নারীদের তা'লিম হলে সেখানে তা'লিমে নিয়মিত যাবেন।  

এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা আপনার জন্য সহজ হবে। 

 আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

অধিকহারে ইস্তেগফার করুন। প্রয়োজনে এর জন্য প্রত্যেক নামাজের পর একটা নিয়ম করে নিন। যেমন, প্রত্যেক নামাজের পর ৫০/১০০/২০০ বার أسْتَغْفِرُ اللهَ   অথবা أسْتَغْفِرُ اللهَ وَأتُوبُ إلَيهِ অথবা  اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي পড়ার নিয়ম করে নিতে পারেন। 

★কখনো একাকী নিভৃতে থাকবেন না। কেননা একাকীত্ব গোনাহ চিন্তা করার কারণ হতে পারে। আপনার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হোন। ঈমান ও ইসলামের পরিবেশে সময় ব্যয় করুন।

আপনাকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)

অনুরূপভাবে আমরা আপনাকে বুঝে বুঝে নবীদের কাহিনী, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। 

★অধিকহারে আল্লাহর যিকির করুন। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর যিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ ২৮)

হক্কানী শায়েখদের ইবাদাত সংক্রান্ত নসিহত,  জাহান্নামের শাস্তি সম্বলিত ওয়াজ শুনুন,ও এ সংক্রান্ত গ্রন্থাবলী পড়ুন।

নামাজে মনোযোগী হওয়ার পদ্ধতি জানুনঃ- 

(০৩)
নিজ পরিবারের মুরব্বি এবং আপনার স্বামীর পরিবারের মুরব্বিদের নিয়ে একটি বৈঠক এর ব্যবস্থা করুন।

সেই বৈঠকে আপনার শাশুড়ীর উপস্থিতিতে বিষয় গুলি তুলে সকলেই মিলে তাকে বুঝাবেন।

ইনশাআল্লাহ এতে সমাধান মিলবে।

পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া চালিয়ে যাবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...