আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
71 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুৃম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতাহু,
হুজুর আমার প্রশ্নটি হলো তালাক সম্পর্কে,
আমার স্ত্রী একদিন আমার অনুপস্থিতে আত্মীয়র বাড়ীতে যায় এবং সেখান থেকে বাপের বাড়িতে চলে যায়,যদিও বিষয়টি আমাকে জানায়।
কিন্তু আমার মতের বিরুদ্ধেই সে বাবার বাড়িতে যায়।
এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে এবং আমার স্ত্রী ফোন বন্ধ করে রাখে।
বাবার বাড়িতে যাওয়ার ১০-১২ দিনের মধ্যে আমার একটি বাচ্চা আছে আমি তার খোঁজ নিতে যাই এবং আমার স্ত্রীকে আমার নিজের বাড়িতে ফিরে আসতে বলি।
___কিন্তু আমার স্ত্রী আমাকে বলে যে,সে নাকি আমার বাড়িতে আর ফিরে আসবেনা।
বেশ কয়েকবার আমার বাড়িতে আসার কথা বললেও সে একই কথা বলে যে,সে আমার বাড়িতে ফিরে আসবেনা।

এবং আমি আমার বউকে বলি যদি আমার বাড়িতে না যাও তাহলে লোকজন ডাকো না যাওয়ার মতো কথা বলো (মানে আমাকে ডিভোর্স দাও এই কথাটা ইঙ্গিত করি)

যেহেতু সে বারবার বলতেছে সে ফিরে আসবেনা,
তাই আমি মনে করি যদি সে সত্যিই ফিরে না আসে তাহলে বাচ্চাটার কি হবে।
যদিও আমি বলিনি যে তাকে তালাক দিলাম।

কিন্তু সে ফিরে আসবেনা অনুমান করে আমি তাকে কিছু প্রশ্ন করি,
১) তুমি আমার বাড়িতে না গেলে বাচ্চাটা কে নিবে?
___আমার বউ নিবে বলেছে।

২)মেয়েটাকে আমরা কেউ দেখতে আমার বউয়ের বাপের বাড়ি আসতে পারবো কিনা,
___আমার বউয়ের উত্তর: দেখতে আসতে পারবে,দেখে চলে যাবা।

৩)মেয়েটাকে দেখার জন্য ভিডিও কল দিতে পারবো কিনা
___আমার বউ বলে ভিডিও কল দিতে পারবো মেয়েকে দেখার জন্য।

৪)মাঝে মাঝে আমি বাবা তাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবো কিনা,
___আমার বউ বলেছে,আমাদেরকে নিয়ে যেতে দিবে।

৫)আমার বাচ্চাটার জন্ম নিবন্ধন হয়নি, যদি ফিরে না আসে তাহলে আমার বউয়ের জন্ম নিবন্ধন টা চাই আমার বাচ্চাটার জন্ম নিবন্ধন করে নেওয়ার জন্য।
___সে (আমার বউ) বলেছে, সেই ব্যবস্থা করে দিবে।
এই ৫টি বিষয়ের উত্তর আমার বউ আমাকে দিয়েছে।

(যদি সে স্বামীর ঘরে না আসে তাহলে কি হবে এই অনুমানের উপর প্রশ্নগুলো করা হয়েছিলো,যেহেতু সে নিজেই বলেতেছে সে আর স্বামীর ঘরে আসবেনা।

এবং এর আগেও সে আমার বাড়িতে বলেছিলো, সে আমার বাড়িতে থাকতে চায় না।
আমি তখন তাকে বলেছিলাম তোমার বাবা মাকে ডাকো, থাকতে চাও কি চাও না সেটা তোমার বাবা-মা আসলে সবার সিদ্ধান্তে সেটা করা যাবে।
সেটা তোমার বাবা মাকে ডেকে হবে তোমার কোথায় হবে না।
কিন্তু আমার শশুর শাশুড়ি আসেনি।
হুজুর উপরিুক্ত বর্ণনামতে,তালাক হয়েছে কিনা কিংবা কেনায়া তালাক হয়েছে কিনা দয়া করে উত্তর দিলে খুব উপকৃত হব।

1 Answer

0 votes
by (59,040 points)

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

https://ifatwa.info/37078/?show=37078#q37078 নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তালাক খুবই জঘন্য একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যেআল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক। (আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।)

এ ভয়ানক শব্দটি নিয়ত থাকুক বা না থাকুক রাগে বলুক আর ভালবেসে বলুক স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ বের হলেই তালাক পতিত হয়ে যায়।

হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}

*****প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই   

তালাক স্পষ্ট বাক্য দ্বারাও হতে পারে,আবার কেনায়া শব্দ,ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারাও হতে পারে। কেনায়া তালাক বলা হয় স্পষ্ট তালাক শব্দ না বলে বরং তালাকের ইঙ্গিতসূচক শব্দ বলে তালাক দেওয়া।

★★শরিয়তের পরিভাষায় প্রশ্নে উল্লেখিত জাতীয় শব্দে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ

وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.

احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت

برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية

সারমর্মঃ  কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে তোমাকে আমি ছেড়ে  দিলাম, যা খুশি তাই করো, তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন, তুমি স্বামী খুজো,বা স্বামী তালাশ করো,তাহলে এটিও কেনায়া তালাক। কেনায়া তালাক হলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা যেটা হয়। কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,

وفي حالة الغضب يصدق في جميع ذلك لاحتمال الرد والسب إلا فيما يصلح للطلاق ولا يصلح للرد والشتم كقوله اعتدي واختاري وأمرك بيدك فإنه لا يصدق فيها كذا في الهداية...............  وفي الينابيع ألحق أبو يوسف - رحمه الله تعالى - بالخمسة ستة أخرى وهي الأربعة المتقدمة وزاد خالعتك والحقي بأهلك هكذا في غاية السروجي.

রাগের অবস্থাঃ- রাগের অবস্থায় স্বামী তালাকের নিয়তকে অস্বীকার করলে স্বামীর উক্ত বক্তব্য-কে সত্যায়ন করা হবে।কেননা সেই শব্দ সমূহে গালিগালাজ ও স্ত্রীর তালাকের আবেদন-কে  ফিরিয়ে দেয়ার অর্থ বিদ্যমান রয়েছে।

তবে যেই সমস্ত শব্দাবলীতে শুধুমাত্র তালাকের অর্থ বিদ্যমান রয়েছে। গালিগালাজ বা (স্ত্রীর তালাকের আবেদন) ফিরিয়ে দেয়ার অর্থ বিদ্যমান না থাকে,তাহলে সেই সমস্ত শব্দাবলীর বেলায় স্বামীর অস্বীকার-কে সত্যায়ন করা হবে না। বরং তালাক পতিত হবে।

যেমন- তুমি ইদ্দত গণনা করো, তুমি পছন্দ করো, তোমার বিষয় তোমার হাতে, ইত্যাদি। সুতরাং এমন শব্দাবলীর বেলায় স্বামীর অস্বীকারকে সত্যায়ন করা যাবে না,বরং তালাক পতিত হবে। (হেদায়া) ইমাম আবু ইউসুফ রাহ পূর্ববর্তী পাঁচের সাথে আরো দুইটি শব্দ সংযোগ করেন, তখন সর্বমোট ছয়টি শব্দ হয়। সেই দুইটি হল, আমি তোমার সাথে খোলা করলাম, তুমি তোমার পরিবারবর্গের সাথে মিলিত হয়ে যাও। (গায়াতুস-সুরুজী) (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৩৭৫)

কেনায়া বাক্যের উদাহরণ অনেক রয়েছেঃ তোমাকে আমি ছেড়ে দিলাম,যা খুশি তাই করো, তুমি মুক্ত, তুমি খালি, তুমি স্বাধীন, তুমি ইদ্দত গণনা করো, তুমি পছন্দ করো, তোমার বিষয় তোমার হাতে, তুমি স্বামী খুজো, তুমি স্বামী তালাশ করো, তোমার রশি তোমার ঘাড়ে, তুমি তোমার পরিবারের সাথে যুক্ত হও, আমি তোমার পরিবারের কাছে তোমাকে দিয়ে দিলাম, আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম, তুমি আমার সামনে পর্দা করো, তুমি আমার সামনে খিমার পরিধান করো, চেহারা ঢাকো, ইত্যাদি ইত্যাদি।  

আরো জানুনঃ

 https://ifatwa.info/7162/

https://ifatwa.info/7406/

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

প্রশ্নেল্লিখিত বিবরণ মতে উক্ত কথাগুলো বলার দ্বারা কোন তালাক পতিত হবে না। কেননা, আপনি তালাক প্রদাণ করেছেন মর্মে স্পষ্ট কোন বাক্য উচ্চারণ করেননি এবং কেনায়া তালাকের কোন বাক্যও আপনার থেকে পাওয়া যায়নি। তবে সতর্কতা মূলক এমন কথা বার্তা থেকে দূরে থাকায় শ্রেয়। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...