ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
https://ifatwa.info/5338/
নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রয়োজন, অপরাগতা
কিংবা ঠেকায় পড়ার পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ অবস্থায় নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ
দেয়া হয়েছে। শরীয়ত তাদের ওপর এমন দায়িত্ব আরোপ করে নি, যার কারণে তাদের ঘরের বাইরে
যেতে হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে
প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ সূরা আহযাব, আয়াত নং- ৩৩
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا
নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তার দিকে উঁকি
দেয়। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’
তাবরানী, হাদীস নং- ২৯৭৪
নারী মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ ‘তাদের জন্য তাদের ঘর
উত্তম।’ আবু দাউদ, হাদীস- ৫৬৭
নারী চাকরির খাতিরে ঘর থেকে বের হতে পারবে। তবে এর জন্য কিছু
নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। নিয়ম ও শর্তগুলো মেনে চললে নারীর জন্য ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয হবে;
অন্যথায় নয়।
যেমন,
– যদি সত্যিকারে তার চাকরি করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তার জন্য
চাকরি করা জায়েয হবে।
– চাকরিটা তার দৈহিক, মানসিক স্বভাব ও রুচির সঙ্গে সামন্জস্যশীল
হতে হবে। যেমন, ডাক্তারি, নার্সিং, শিক্ষা, সেলাই কিংবা এ জাতীয় পেশা হতে হবে।
– কর্মক্ষেত্রে পর্দার পরিপূর্ণ পরিবেশ থাকতে হবে। অন্যথায় জায়েয
হবে না।
– চাকরির কারণে যাতে পরপুরুষের সঙ্গে সফর করতে না হয়।
– কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে যাতে কোন হারাম কাজ করতে না হয়।
যেমন, ড্রাইভারের সঙ্গে একাকী যাওয়া, পারফিউম ব্যবহার করা ইত্যাদি।
– নারীর প্রধান কাজ ও দায়িত্ব হচ্ছে স্বামীর খেদমত করা, তার সন্তুষ্টি
অন্বেষণ করা ও মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করা। যদি চাকরি করতে গিয়ে এসব দায়িত্ব পালনে
ব্যাপক অসুবিধা হয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হবে না। (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ
২/৯৮১ ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৫৯)
মহিলাদের জন্য পর্দা রক্ষা করে ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকুরী করা
জায়েজ আছে। তবে এক্ষেত্রে যেন পর্দা লঙ্ঘণ না হয়, সেই সাথে শরয়ী অন্য কোন বিধান লঙ্ঘিত
না হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
হ্যাঁ, যদি উপার্জন সক্ষম কোন মাহরাম আত্মীয় থাকে, বা অভিভাবক
থাকে, তাহলে মহিলাদের জন্য ব্যবসা ও চাকরীর জন্য বাহিরে যাওয়া উচিত নয়।
শরয়ী পর্দা ও বিধান অনুসরণ করে মহিলাদের ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকুরী
করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি। তা’ই শরয়ী কোন কারণ ছাড়া মহিলাদের ব্যবসা করা ও চাকুরী
করাকে হারাম বলার সুযোগ নেই। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১১৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৫; আলবাহরুর
রায়েক ১/২০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮, ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৫৯)
তবে যদি পর্দা লঙ্ঘণ হয়, পুরুষদের মিলে একসাথে কাজ করতে হয়,
সেই সাথে ফিতনার আশংকা হয়, তাহলে জায়েজ নেই।
দ্বীনি শিক্ষা হোক,বা দুনিয়াবি শিক্ষা হোক,ইসলামের বিধান হলো
ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে
এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ
আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর
ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি।(বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)
ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,
فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك
সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা
জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না
তাকে এর অনুমতি দেয়া। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা
১২/১৫৬)
★ একান্ত অপারগ অবস্থায়
বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা, الضرورات تبيح المحظورات জরুরত
নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। (আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ১/৭৮)
তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা
আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।
কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُم
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি
ভাই বোন,
যতদিন পর্যন্ত এই দেশে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে
,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে উলামায়ে কেরামগন কলেজ-ভার্সিটিতে
শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
১.শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।
২.চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার
দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা
যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। (ফাতাওয়া
উসমানী ১/১৬০-১৭১)
★★এ শর্ত পুরোপুরি ভাবে
মেনে মহিলাদের জন্য ভার্সিটিতে মেডিকেল ছাড়াও
অন্যান্য সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করা জায়েজ আছে। যদি উক্ত শর্ত পুরোপুরি মানা সম্ভব না হয়, তাহলে এ সহ শিক্ষা জায়েজ নেই। সহ শিক্ষা
সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ https://www.ifatwa.info/434
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি
ভাই/বোন!
১. আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব (উপকরণের জগত) বানিয়েছেন।
এখানে মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রয়োজনগুলো পূরণের জন্য এবং অর্পিত দায়িত্ব
সঠিকভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মানুষকে দান করা হয়েছে পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও জ্ঞান-বুদ্ধি।
এগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য ইসলাম পূর্ণমাত্রায় গুরুত্ব দিয়েছে।
জাগতিক জ্ঞান অর্জনের হুকুম প্রসঙ্গে ইমাম গাযালী রাহ.বলেন,
অনুমোদিত জাগতিক জ্ঞান দুই ভাগে বিভক্ত : ১. যা চর্চা করা অপরিহার্য ২. যা চর্চা করা
উত্তম।
প্রথমটি হচ্ছে ওই সব জ্ঞান যা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য।
যেমন চিকিৎসা বিদ্যা। কেননা, স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য এই জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
তদ্রূপ গণিত। কেননা, লেনদেন, মিরাছ বন্টন ইত্যাদি বিষয়ে তা প্রয়োজন। গোটা জনপদে যদি
এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে তাহলে সকলেই কষ্টে পতিত হবে। একইভাবে কৃষি, বয়ন,
রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও অপরিহার্য।-ইহইয়াউ উলূমিদ দ্বীন ১/২৯-৩০
মোটকথা, ইসলামে দ্বীনী শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি জাগতিক
শিক্ষারও গুরত্ব রয়েছে। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্য ঠিক
রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা অতীব জরুরি। উপরন্তু বহু দ্বীনী কাজের জন্যও জাগতিক শিক্ষার
প্রয়োজন পড়ে।
২. আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের সাইট থেকে এজাতীয় প্রশ্নের উত্তরে নারীদেরকে ফ্রিমিক্সিং ফেতনাময় পরিবেশে পর্দাহীনতার সাথে পড়াশোনা
করতে বা চাকুরী করতে কখনোই উৎসাহ প্রদান করা হয়নি বরং হারাম বলা
হয়েছে। এতদাসত্বেও যদি কেউ ভার্সিটিতে বা কলেজে পড়াশোনা
করতেই চাই তাহলে আবশ্যকীয় ভাবে উপরে উল্লেখিত শর্তসাপেক্ষে পড়াশোনা করার রুখসত রয়েছে।
যদি কোন প্রতিষ্ঠানে উপরে উল্লেখিত শর্তসমূহ না পাওয়া যায় তাহলে এরকম পরিবেশে
বা এমন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েজ নেই। আর এ কথা সকলেরই জানা
যে, আমাদের দেশে চলমান প্রেক্ষাপটে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে উপরে উল্লেখিত শর্ত সমূহ মেনে
প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। সুতরাং যেই বোন শরীয়তের শর্ত সমূহ উপেক্ষা করে ফ্রিমিক্সিং ফেতনাময় পরিবেশে পদার্পণ করবে এত দায়ভার
তাদের উপরই বর্তাবে। আমার জানামতে যে সকল মুফতিয়ানে কেরাম নারীর জন্য সহশিক্ষাযুক্ত
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হারাম বলেন, সাধারণতত উল্লেখিত শর্ত
সমূহ না পাওয়ার কারণে তারা হারাম বলে থাকেন। সুতরাং তাদের মাঝে আর আমাদের মাঝে বড় কোন ব্যবধান আছে বলে মনে হয় না। কারণ, আমরা শর্ত পাওয়া গেলে জায়েজ বলি, অন্যথায় নাজায়েজ বলি। আর তারা
শর্ত না পাওয়ার কারণে নাজায়েয বলেন।
সর্বোপরি দ্বীনি শিক্ষা হোক বা
দুনিয়াবি শিক্ষা হোক, ইসলামের বিধান হলো ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের
প্রতিষ্ঠানে পড়বে। আমাদের সকলেরই প্রত্যাশা যে, আল্লাহ তায়ালা যেন এ দেশে এমন পরিবেশ কায়েম করে দেন।