আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
124 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (42 points)
আসসালামু আলাইকুম

শরিয়াতের গন্ডির মাঝে স্বামীর হুকুম স্ত্রীর পালন করা কি? ফরজ?

শ্বাশুড় শ্বাশুড়ির খেদমত করা বউয়ের দায়িত্ব না বিধায় কোন বউ করতে না চাইলে জোর করা যাবে না বা বলা যাবে না এমন জানতাম।

কিন্তু স্বামী কি স্ত্রীকে হুকুম করতে পারবে যে স্বামীর মা বাবাকে যেন নিয়মিত কল করে খুজ খবর নেয়। এটা কি শরীয়াতের বাইরে পড়বে? আর স্ত্রী কি বলতে পারবে কল করা বা খুজ খবর নেয়া আমার কর্তব্য না। আমাকে এ কাজে হুকুম করলেও মানতে পারব না। স্ত্রীর এমন বক্তব্য কি সঠিক?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

স্ত্রী তার স্বামীর আনুগত্য করবে যদি সে হারাম এবং সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কাজের আদেশ না করে। সেই সাথে যথাসাধ্য তার সেবা করবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

عَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «الْمَرْأَةُ إِذَا صَلَّتْ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَأَحْصَنَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا فَلْتَدْخُلْ مِنْ أَىِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ»

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করে, রমাযানের সিয়াম পালন করে, গুপ্তাঙ্গের হিফাযাত করে, স্বামীর একান্ত অনুগত হয়। তার জন্য জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশের সুযোগ থাকবে। (মিশকাত ৩২৫৪.হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/৩০৮।)

أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ قَالَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ ابْنِ عَجْلَانَ عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ قَالَ الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ وَلَا تُخَالِفُهُ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ

কুতায়বা (রহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন মহিলা উত্তম? তিনি বললেনঃ যে মহিলার প্রতি দৃষ্টিপাত স্বামীকে সন্তুষ্ট করে। সে আদেশ করলে তা সম্পন্ন করে, এবং তার বাড়ীর ও তার মালের ব্যাপারে যা অপছন্দ করে, সে তার বিরোধিতা করে। (সুনানে নাসায়ী ৩২৩৪.মিশকাত ৩২৭২, সহীহাহ ১৮৩৮।)

আরো জানুনঃ https://ifatwa.info/13963/

চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ 'আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায়' রয়েছে,

" ﻃﺎﻋﺔ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻗﻴﻦ - ﻣﻤّﻦ ﺗﺠﺐ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ – ﻛﺎﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ، ﻭﺍﻟﺰّﻭﺝ ، ﻭﻭﻻﺓ ﺍﻷﻣﺮ : ﻓﺈﻥّ ﻭﺟﻮﺏ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ ﻣﻘﻴّﺪ ﺑﺄﻥ ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ، ﺇﺫ ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻟﻤﺨﻠﻮﻕ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﺨﺎﻟﻖ " ﺍﻧﺘﻬﻰ

যাদের আদেশ-নিষেধ এর অনুসরণ শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব।যেমন-মাতাপিতা,স্বামী,সরকারী বিধিনিষেধ,এর অনুসরণ ওয়াজিব।

এ হুকুম ব্যাপক হারে প্রযোজ্য হবে না বরং ঐ সময়-ই প্রযোজ্য হবে যখন তা গুনাহের কাজ হবে না।কেননা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(২৮/৩২৭)

মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা মূলত তিনটি মূলনীতির আলোকে হয়ে থাকে।

(১) আদেশ কোনো মুবাহ বিষয়ে হতে হবে। কোনো ওয়াজিব তরকের ব্যাপারে হতে পারবে না। এবং কোন হারাম কাজের জড়িত হওয়ার জন্যও হতে পারবে না।

(২) যে কাজের আদেশ স্বামী দিবেন, এতে তার ফায়দা থাকতে হবে বা শরীয়তের পছন্দসই কাজ হতে হবে।

(৩) যে কাজের আদেশ স্বামী দিবে, তা তাদের স্ত্রীর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারবে না।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/1707  

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/1722

স্বামীর মা-বাবার খেদমতের প্রয়োজন হলে তারই কর্তব্য তাদের দেখভাল ও সেবা-যত্ন করা। স্ত্রী তাদের সেবা করতে আইনত বাধ্য নয়। তবে স্ত্রী সন্তুষ্টচিত্তে তাদের সেবাযত্ন করলে তা হবে তার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। এর বিনিময়ে সে পরকালে সওয়াব পাবে। আর এটা কাম্যও যেস্ত্রী স্বামীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান ও সমীহের চোখে দেখবে। তাদেরকে মনেপ্রাণে ভালোবাসবে এবং তাদের সেবা করতে পারাকে নিজের জন্য সৌভাগ্য মনে করবে। অপরদিকে শ্বশুর-শাশুড়িরও করণীয় হলোপুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদরযত্ন করা। তার সুখ-সুবিধা ও আরাম-আয়েশের প্রতি খেয়াল রাখা। মূলত যৌথ পরিবারে সদস্যদের পারষ্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা দ্বারাই শান্তি ও শৃঙ্খলা কায়েম হয়। শুধু একপক্ষের শ্রম ও মেহনত দ্বারা তা কখনও হতে পারে না। এজন্য সমাজের রীতি অনুযায়ী পরিবারে পুত্রবধূ যেমন শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্ন করেতেমনি শ্বশুর-শাশুড়িও পুত্রবধূর অনেক কাজে তাকে সহযোগিতা করে থাকে। পুত্রবধূর কোনো সন্তান জন্ম নিলে দাদা-দাদী বৃদ্ধ বয়সেও নাতি-নাতনিদের জন্য অনেক শ্রম ব্যয় করেন। আদর-যত্নে তাদের লালনপালন করেন। এটা কিন্তু তাদের আইনত দায়িত্ব নয়। তবুও তারা সানন্দে এ দায়িত্ব পালন করেন। আসলে বিষয়টি নৈতিকতা ও মানবতাবোধের সাথে জড়িত। এ ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধের দাবি হলোস্ত্রীর উপর শরীয়ত কর্তৃক আরোপিত যতটুকু দায়িত্ব আছেস্বামী তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে। এর অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব জোর করে তার উপর চাপাবে না। তবে স্ত্রী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অতিরিক্ত কোনো কাজ আঞ্জাম দিলে সেটা ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর উক্ত কাজটি তার নৈতিকতাবোধের পরিচায়ক হবে। স্ত্রী তার নৈতিকতার ভিত্তিতে শ্বশুর-শাশুড়ির যতটুকু সেবা করবেতাকে স্বতন্ত্র মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখতে হবে এবং তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে নিতে হবে এবং সে জন্য তাকে প্রশংসার দাবিদার মনে করতে হবে। আমাদের সমাজে অনেক পুত্রবধূ নিজের সুখ নিশ্চিত করতে যেয়ে শ্বশুর-শাশুড়ীকে জীবন্ত অভিশাপ ভেবে থাকে। এটি একটি জঘন্য চিন্তাধারা। পুত্রবধূ শ্বশুর-শাশুড়ীকে নিজের পিতা-মাতার আসনে আসীন করলে তারাও তাকে আপন মেয়ের জায়গায় স্থান দিতে বাধ্য থাকবেন। কম বুদ্ধিমতি স্ত্রীরাই মাতৃতুল্য শাশুড়ী এবং পিতৃতুল্য শ্বশুরের সাথে সম্মান ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণ প্রদর্শন করতে পারে না। স্বামীর ছোট্ট ভাই-বোনকে নিজের ভাই-বোন বলে ভাবতে পারে না। তাদের সাথে সুন্দর ও ভালো আচরণ করতে পারে না। তাদের দ্বারা পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। অনেক উচ্চশিক্ষিত পুত্রবধূ শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করা আইনের দৃষ্টিতে তার ওপর বর্তায় না বলে এড়িয়ে যেতে চায়। তারা ভুলে যায় যেআইনের শুষ্ক-রুক্ষ পথে সুখের সংসার রচিত হয় না। এর জন্য প্রয়োজন ত্যাগশ্রদ্ধা-ভালবাসাঅন্যকে প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা ইত্যাদি মহৎ গুণাবলীর চর্চা। তাই সুখের নীড় রচনা করতে পুত্রবধূর উচিত স্বতঃস্ফূর্তভাবে যতটুকু সম্ভব শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করা। একে নিজের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় মনে করা।আর স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই সতর্ক থাকতে হবেযাতে একজনের দ্বারা আরেকজনের হক নষ্ট না হয় এবং কারো প্রতি জুলুম না হয়। মাতৃভক্তিতে তাড়িত হয়ে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করা কিংবা স্ত্রীর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে মা-বাবার দিলে আঘাত দেয়া কোনটাই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আচরণ এমন হওয়া উচিতযেন দাম্পত্য জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন আরেকজনকে উত্তম স্বামী ও উত্তম স্ত্রী মনে করে। দাম্পত্যজীবন সুখময় হওয়ার জন্য শুধু পুরুষের প্রচেষ্টা ও সচেতনতাই যথেষ্ট নয়নারীরও সদিচ্ছা ও সচেতনতা অতি প্রয়োজন। এ বিষয়ে তারও আছে অনেক দায়িত্ব। [কিফায়াতুল মুফতী ৫/২৩০; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৮/৪৪৭; কিতাবুল ফাতাওয়া ৪/৪০৮; কিতাবুন নাওয়াযিল ৮/৫৪৭]

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

শরীয়তের খেলাফ স্বামীর কোনো আদেশ মান্য করা জরুরি নয়। সে হিসেবে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্ত্রীর উচিত স্বামীর উক্ত আদেশ মানা । কারণ, এটি হারাম বা শরিয়তে বিরোধী কোন আদেশ নয়। আপনার প্রশ্নের অবশিষ্ট অংশের উত্তর জানতে ভিজিট করুন:  https://ifatwa.info/88897/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...