আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
61 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (14 points)
১।কুরআন বোঝার ক্ষেত্রে কেন আলেমের প্রয়োজন??আলেম ছাড়া কি নিজে নিজে একা একা কুরআন বোঝা যাবে না??

২।আমি একটা হাদীস পড়েছিলাম যেইখানে কোরআন বোঝার ক্ষেত্রে যেন আলেমের সহযোগিতা নেয়া হয়।একজন সাহাবী ও তার স্ত্রী নিজে নিজে ঘরে কুরআন পড়ত ও বোঝার চেষ্টা করত  এটা শুনে রাসুল(সা) কিছুটা রাগান্বিত হয়েছিলেন।তারপর তাদেরকে যে কুরআন বুঝে তার সহযোগিতা নিতে বলা হয়।এই হাদীসটা কি পুরোপুরি পাওয়া যাবে??

1 Answer

0 votes
by (566,100 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم 

দ্বীনী ইলম অর্জনের সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, আলিমগণের নিকট থেকে ইলম অর্জন করা।

হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন-
خُذُوا الْعِلْمَ قَبْلَ أَنْ يَذْهَبَ
‘ইলম অর্জন কর তা বিদায় নেওয়ার আগে’। সাহাবীগণ আরয করলেন-
وَكَيْفَ يَذْهَبُ الْعِلْمُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، وَفِينَا كِتَابُ اللَّهِ؟
আল্লাহর নবী! ইলম কীভাবে বিদায় নেবে, আমাদের মাঝে তো রয়েছে আল্লাহর কিতাব?
বর্ণনাকারী বলেন, এ কথায় তিনি রুষ্ট হলেন। এরপর বললেন-
ثَكِلَتْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ أَوَلَمْ تَكُنِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنْجِيلُ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمْ شَيْئًا؟ إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ، إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ
তোমাদের  মরণ হোক! বনী ইসরাইলের মাঝে কি তাওরাত ও ইঞ্জীল ছিল না, কিন্তু এতে তো তাদের কোনোই উপকার হল না! ইলমের প্রস্থানের অর্থ তার বাহকগণের প্রস্থান। -মুসনাদে আহমদ ৫/২৬৬; আদদারেমী ১/৮৬, হাদীস ২৪৫

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ
যে কেউ ইলমের খোঁজে কোনো পথে চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। -মুসনাদে আহমদ ১৪/৬৬
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলা বলেন-

لقد من الله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم، يتلو عليهم آياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمة، وان كانوا من قبل لفى ضلال مبين

‘আল্লাহ মুমিনদের ওপর বড়ই দয়া ও অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের থেকেই একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন।’ যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।-আলে ইমরান : ১৬৪

আল্লাহর প্রথম অনুগ্রহ হল -রাসূল প্রেরণ। দ্বিতীয় অনুগ্রহ, মানুষের মধ্য থেকে প্রেরণ। অর্থাৎ এমন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি মানবিক চাহিদাগুলো বোঝেন। তিনি বোঝেন কোন্ জিনিস মানুষের প্রয়োজন, মানুষের কী দরকার। কোনো ফেরেশতা পাঠাননি, যিনি পানাহার করেন না। এরপর আল্লাহ পাক নবী প্রেরণের চারটি উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন-

১. يتلو عليهم آياته ‘তাদেরকে কিতাব ও আয়াতসমূহ পড়ে শোনান।’

২. ويزكيهم ‘তাদেরকে পবিত্র করেন।’ অর্থাৎ তাদের চরিত্রকে পূতপবিত্র ও সুন্দর করেন, উত্তম ও শ্রেষ্ঠ বানান।

৩-৪. ويعلمهم الكتاب والحكمة ‘তাদেরকে কিতাব ও হিকমতের তালীম দেন।’

কুরআন তিলাওয়াত একটি পৃথক উদ্দেশ্য এ চারটি উদ্দেশ্য আল্লাহ পাক চার স্থানে উল্লেখ করেছেন। এতে এগুলোর গুরুত্ব বুঝা যায়। 

আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের আয়াতের তেলাওয়াতকে নবী প্রেরণের পৃথক একটি উদ্দেশ্য বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর কুরআন বোঝাও আলাদা আরেকটি উদ্দেশ্য। 

আরবীভাষীদের কিতাবুল্লাহর শিক্ষাদান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের উদ্দেশ্যাবলির মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে কিতাবুল্লাহ শিক্ষাদান। এ উদ্দেশ্যের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ويعلمهم الكتاب ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনদেরকে কিতাবের তালীম বা শিক্ষা দেন।’ কিতাবের তালীম দ্বারা কী উদ্দেশ্য? শুধু আয়াতের অনুবাদ বলে দিবেন? তিনি তো শিক্ষা দিবেন আবু বকর, উমর, উসমান, আলী রা.কে। তারা কি আরবী ভাষা জানেন না?

এদের প্রত্যেকেই তো আরবী ভাষায় দক্ষ ছিলেন। হযরত উমর ফারুক রাযিআল্লাহু আনহু আরবী ভাষায় এত দক্ষ ছিলেন যে, বড় বড় সাহিত্যিক পর্যন্ত তাঁর সামনে নিজেদের ‘কালাম’ পেশ করলে তা সংশোধন করতেন। আরবের মহিলারাও তো ছিলেন স্বভাবকবি। অপরদিকে কুরআনের ঘোষণা بلسان عربى مبين ‘কুরআন স্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে।’ তাহলে তো আরবী ভাষা শিক্ষা করার জন্য বা কুরআনের অর্থ বুঝার জন্য তাঁদের কোনো শিক্ষকের প্রয়োজন ছিল না।

কিন্তু দেখা যায়, এরপরও আল্লাহ পাক আরবী ভাষীদের কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য নবী প্রেরণ করেছেন।

এ থেকে বুঝা গেল যে, কেবল অনুবাদ পড়ে নিলে অথবা শুধু আরবী ভাষা জেনে নিলে কিতাবুল্লাহর বুঝ ও কুরআনের ইলম অর্জন হয় না; বরং কুরআনকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে কোনো শিক্ষক বা মুরবিবর অবশ্যই প্রয়োজন। 

মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর স্বভাবগত পার্থক্য আল্লাহ মানুষের প্রকৃতিই এমন বানিয়েছেন যে, তারা শুধু গ্রন্থ পাঠের দ্বারা কোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারে না; দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষক বা মুরব্বির অবশ্যই প্রয়োজন পড়ে। 

কুরআন বলে, ولقد يسرنا القرآن للذكر فهل من مدكر ‘আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি।’ অতএব কেউ আছে কি যে উপদেশ গ্রহণ করবে? 

কেউ কেউ বলে, আমরা কুরআন থেকেই কুরআনের অনুবাদ নিজে বুঝব এবং এর উপর আমল করব। 

যারা এমন কথা বলে, তারা এ আয়াতের মর্মই বুঝেনি। 

খুব ভাল করে মনে রাখতে হবে যে, কুরআনের বিষয়বস্ত্তসমূহ দুই প্রকার : প্রথম প্রকার : কিছু আয়াত এমন রয়েছে যেগুলোতে আল্লাহপাক মানুষকে উপদেশ দিয়েছেন যে, আল্লাহ এক, আখিরাত সম্পর্কে বলেছেন যে, একদিন তোমাদের সকলকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এ উপদেশ একজন সাধারণ মানুষ শুধু অনুবাদ পড়ে গ্রহণ করতে পারবে। এ কারণেই তো কুরআন স্পষ্ট বলেছে, উপদেশ গ্রহণের ক্ষেত্রে সহজ। 

দ্বিতীয় প্রকার : দ্বিতীয় প্রকারের বিষয়বস্ত্ত, যেগুলোতে আল্লাহ পাক আহকাম ও আমছাল বা উপমা পেশ করেছেন। এসব হুকুমের ব্যাপারে আল্লাহ নিজে বলেন- وتلك الامثال نضربها للناس وما يعقلها الا العالمون ‘আমি এসব উপমা মানুষের উপকারার্থে প্রদান করে থাকি তবে তা কেবল ইলমওয়ালারাই বুঝবে।’ আর ইলম তা-ই যা সাহাবায়ে কেরাম অর্জন করেছিলেন। যদি চৌদ্দশ বছর পর এখন কেউ বলে, আমি নিজে গবেষণা করে কুরআনের ব্যাখ্যা বলব, এ পর্যন্ত যা তাফসীর করা হয়েছে তা আমার বুঝে আসছে না, এগুলো আমি মানি না, বরং আমি আমার বুদ্ধি দিয়েই বুঝব, তাহলে ওই ব্যক্তি পদে পদে ভুল করবে? 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকনির্দেশনা ও সাহাবায়ে কেরাম রা. থেকে বর্ণিত তাফসীর ছাড়া নিজের বুদ্ধি দিয়ে শুধু অনুবাদের সাহায্যে কুরআনের তাফসীর আরম্ভ করলে ভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর কোনো সীমা থাকবে না। কুরআন বুঝতে আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন এ কারণেই কুরআনের কোনো কোনো স্থানে ويعلمهم الكتاب এর পূর্বে ويزكيهم এসেছে। অর্থাৎ প্রথমে তাদের পরিশুদ্ধ কর, পাক-পবিত্র কর, তাদের চরিত্র গঠন কর, ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাত পয়দা কর। এরপর অর্থ শিক্ষা দিলে ফায়দা হবে। এ কারণেই কুরআন শরীফের আয়াত-ولا يمسهم الا المطهرون-এর এক তাফসীর এও করা হয় যে, কুরআনকে পাক পবিত্র না হয়ে স্পর্শ করো না। অর্থাৎ যারা খারাপ আখলাক থেকে পাক সাফ হয়, তাদের মধ্যে ইখলাস ও তলব পয়দা হবে তখন তারা কুরআন শিক্ষায় মনোযোগী হবে। প্রথমে আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন পাক-পবিত্র করে দেন এবং ইখলাস ও হকের তলব পয়দা করে দেন। এরপর শিক্ষক ও মুরবিবর নিকট থেকে তা শিক্ষা করুন। তাহলে কুরআনের নূর হাসিল করা সম্ভব হবে। নতুবা গোমরাহীর দ্বার উন্মুক্ত হবে। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
হক্কানী নির্ভরযোগ্য আলেমদের লিখিত তাফসীরের কিতাব একা একি পড়া যাবে,হক্কানী নির্ভরযোগ্য আলেমদের লিখিত তাফসীরের কিতাব পড়ে কুরআন শিক্ষক ছাড়াই বুঝা যাবে।

তবে কুরআনের শুধুমাত্র অর্থ জেনে নিজে নিজে তাফসীর করা যাবেনা,নিজে নিজে কুরআন বুঝার চেষ্টা করা যাবেনা।
এতে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...