জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
সুরা আ'রাফের ১৯৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
خُذِ الۡعَفۡوَ وَ اۡمُرۡ بِالۡعُرۡفِ وَ اَعۡرِضۡ عَنِ الۡجٰہِلِیۡنَ ﴿۱۹۹
তুমি ক্ষমা প্রদর্শন কর এবং ভালো কাজের আদেশ দাও। আর মূর্খদের থেকে বিমুখ থাক।
আপনি জাহেল বা মূখদেরকে উপেক্ষা করুন। যারা জাহেল তাদের কাছ থেকে আপনি দূরে সরে থাকুন। মর্মার্থ এই যে, আপনি অত্যাচারের প্রতিশোধ না নিয়ে তাদের সাথে কল্যাণকর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করুন এবং একান্ত কোমলতার সাথে তাদেরকে সত্য ও ন্যায়ের বিষয় বাতলে দিন। কিন্তু বহু মূৰ্খ এমনও থাকে যারা এহেন ভদ্রোচিত আচরণে প্রভাবিত হয় না; বরং এমতাবস্থায়ও তারা মূর্খজনোচিত রূঢ় ব্যবহারে প্রবৃত্ত হয়।
,
এমন ধরনের লোকদের সাথে আপনার আচরণ হবে এই যে, তাদের হৃদয়বিদারক মূর্খ-জনোচিত কথা-বার্তায় দুঃখিত হয়ে তাদেরই মত ব্যবহার আপনিও করবেন না; বরং তাদের থেকে দূরে সরে থাকবেন। তাফসীরশাস্ত্রের ইমাম ইবনে-কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ দূরে সরে থাকার অর্থও মন্দের প্রত্যুত্তরে মন্দ ব্যবহার না করা। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের হেদায়াত করাও বর্জন করতে হবে। কারণ, এটা রিসালাত ও নবুওয়তের দায়িত্ব এবং মর্যাদার যোগ্য নয়।
এই আয়াত সংক্রান্ত বুখারী শরীফের ৪৬৪২ নং হাদীসে এসেছেঃ
بَاب :{خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِيْنَ}
أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِيْ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَدِمَ عُيَيْنَةُ بْنُ حِصْنِ بْنِ حُذَيْفَةَ فَنَزَلَ عَلَى ابْنِ أَخِيْهِ الْحُرِّ بْنِ قَيْسٍ وَكَانَ مِنْ النَّفَرِ الَّذِيْنَ يُدْنِيْهِمْ عُمَرُ وَكَانَ الْقُرَّاءُ أَصْحَابَ مَجَالِسِ عُمَرَ وَمُشَاوَرَتِهِ كُهُوْلًا كَانُوْا أَوْ شُبَّانًا فَقَالَ عُيَيْنَةُ لِابْنِ أَخِيْهِ يَا ابْنَ أَخِيْ هَلْ لَكَ وَجْهٌ عِنْدَ هَذَا الْأَمِيْرِ فَاسْتَأْذِنْ لِيْ عَلَيْهِ قَالَ سَأَسْتَأْذِنُ لَكَ عَلَيْهِ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَاسْتَأْذَنَ الْحُرُّ لِعُيَيْنَةَ فَأَذِنَ لَهُ عُمَرُ فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهِ قَالَ هِيْ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ فَوَاللهِ مَا تُعْطِيْنَا الْجَزْلَ وَلَا تَحْكُمُ بَيْنَنَا بِالْعَدْلِ فَغَضِبَ عُمَرُ حَتَّى هَمَّ أَنْ يُوْقِعَ بِهِ فَقَالَ لَهُ الْحُرُّ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى قَالَ لِنَبِيِّهِ صلى الله عليه وسلم (خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِيْنَ)وَإِنَّ هَذَا مِنَ الْجَاهِلِيْنَ وَاللهِ مَا جَاوَزَهَا عُمَرُ حِيْنَ تَلَاهَا عَلَيْهِ وَكَانَ وَقَّافًا عِنْدَ كِتَابِ اللهِ
পরিচ্ছেদঃ ৬৫/৭/৬. আল্লাহর বাণীঃ তুমি ক্ষমা করার অভ্যাস কর, ভাল কাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞ-মূর্খদের থেকে দূরে সরে থাক। (সূরাহ আল-‘আরাফ ৭/১৯৯)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ‘‘উয়াইনাহ ইবনু হিসন ইবনু হুযাইফাহ এসে তাঁর ভাতিজা হুর ইবনু কাইসের কাছে অবস্থান করলেন। ‘উমার (রাঃ) যাদেরকে পার্শ্বে রাখতেন হুর ছিলেন তাদের একজন। কারীগণ, যুবক-বৃদ্ধ সকলেই ‘উমার ফারূক (রাঃ)-এর মজলিসের সদস্য এবং উপদেষ্টা ছিলেন। এরপর ‘উয়াইনাহ তাঁর ভাতিজাকে ডেকে বললেন, এই আমীরের কাছে তো তোমার একটা মর্যাদা আছে, সুতরাং তুমি আমার জন্য তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে দাও। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি তাঁর কাছে আপনার প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করব।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, এরপর হুর অনুমতি প্রার্থনা করলেন উয়াইনাহর জন্যে এবং ‘উমার (রাঃ) অনুমতি দিলেন। উয়াইনাহ ‘উমারের কাছে গিয়ে বললেন, হ্যাঁ আপনি তো আমাদেরকে অধিক অধিক দানও করেন না এবং আমাদের মাঝে সুবিচারও করেন না। ‘উমার (রাঃ) রাগান্বিত হলেন এবং তাঁকে কিছু একটা করতে উদ্যত হলেন। তখন হুর বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! আল্লাহ তা‘আলা তো তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছেন, ‘‘ক্ষমা অবলম্বন কর, সৎকাজের আদেশ দাও এবং মূর্খদেরকে উপেক্ষা কর’’ আর এই ব্যক্তি তো অবশ্যই মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর কসম ‘উমার (রাঃ) আয়াতের নির্দেশ অমান্য করেননি। ‘উমার আল্লাহর কিতাবের বিধানের সামনে চুপ হয়ে যেতেন। [৭২৮৬] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৮৪)
,
শায়েখ মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ দাঃবাঃ বলেছেন যে এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে আপনি মূর্খদের উপেক্ষা করুন। অর্থাৎ মূর্খদের আচরণে ভ্রূক্ষেপ করবেন না।
,
এটা অনেক বড় মূলনীতি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু অনেক বড় দায়িত্বের অধিকারী। তাঁর দায়িত্ব অনেক বিস্মৃত। সেই দায়িত্ব পালনের জন্য অনেক রকমের মানুষের সাথে অনেক ধরনের আচরণের মুখোমুখী তাঁকে হতে হবে সেজন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি বলে দিলেন যে, মূর্খদের উপেক্ষা করুন। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর অনেক ব্যাখ্যা হতে পারে। যেমন, মূর্খদের সাথে মূর্খতাসূলভ আচরণ থেকে বিরত থাকা। তাদের সকল কথার জবাব না দেয়া। কত জবাব দেয়া হবে?
মূর্খতার তো কোনো সীমা নেই। মূর্খতাসূলভ আচরণেরও কোনো শেষ নেই। আর জবাব তো হয় ঐসকল বিষয়ের, যেখানে কোনো ভুল বুঝাবুঝি আছে কিংবা কোনো অস্পষ্টতা আছে। ভুল শুধরে দেয়ার জন্য, ভ্রান্তি নিরসনের জন্য কিংবা কোনো বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য জবাব দেয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু যে বুঝেশুনে মূর্খতাসূলভ আচরণ করে, মূর্খতাসূলভ কথা বলে তাকে কোনো জবাব দেয়ার দরকার নেই। এ প্রসঙ্গে ইমাম শাফেয়ী রাহ. থেকে কিছু পংক্তি বর্ণনা করা হয়:
قالوا سكت وقد خوصمت قلت لهم + إن الجواب لباب الشر مفتاح
فالعفو عن جاهل أو أحمق ادب + نعم وفيه لصون العرض اصلاح
إن الأسود لتخشى وهى صامتة + والكلب يحثى ويرمى وهو نباح
তারা বলল, বিবাদ-বিদ্ধ হয়েও তুমি চুপ রইলে! আমি বললাম, জবাব তো মন্দের দুয়ার খোলে। মূর্খ আর বুদ্ধিহীনকে এড়িয়ে যাওয়াই তো আদব। আর হ্যাঁ, মর্যাদা রক্ষার কারণে এতেই তো হয় সম্পর্করক্ষা। দেখ, সিংহ যখন নীরব তখনও সে ভীতপ্রদ। আর কুকুর যখন চিৎকার করে তখনও ধিকৃত ও বিতাড়িত। (দলীলুল ফালিহীন ৩/৯৯)