বিসমিহি তা'আলা
জবাবঃ-
হিজরা আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টিকর্ম।
হিজরা বানানো আল্লাহ তা'আলার অসীম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।এতে প্রমাণ হয়,আল্লাহ তা'আলা কতরকম সৃষ্টি করতে পারেন।
এক হাদিসে হিজরা জন্মের হেকমত উল্লেখপূর্বক আলোচনা এভাবে এসেছে যে,
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃকে একবার জিজ্ঞাসা করা হল,হিজরা কেন জন্ম নেয়?তদুত্তরে ইবনে আব্বাস বললেন,স্ত্রীর মাসিক চলা কালে যখন স্বামী তার সাথে সহবাস করে, তখন শয়তান ঐ যৌনমিলনে আগে আগে থেকে উক্ত ব্যক্তির সাথে যৌনকার্যে শরিক হয়,এবং শয়তানের বীর্য ঐ মহিলার গর্ভে গিয়ে পৌছে,যার ফলে হিজরা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে।
(ত্বরতুসী-কিতাবু তাহরীমিল ফাওয়াহিশ)
আজাইবুল মাখলুক্বাত-ইমাম সুয়ূতী রাহ।
হিজরাদের ব্যাপারে কোরআনে কারীম বা হাদীসে মারফুতে সরাসরি কোনো আলোচনা পাওয়া যায় না।
তবে হাদিস ও ফেকাহর কিতাবে তাদের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা রয়েছে,
হাদিসঃ-
عَنﺍﻟْﺤَﺴَﻦُ ﺑْﻦُ ﻛَﺜِﻴﺮٍ , ﺳَﻤِﻊَ ﺃَﺑَﺎﻩُ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺷَﻬِﺪْﺕُ ﻋَﻠِﻴًّﺎ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ، ﻓِﻲ ﺧُﻨْﺜَﻰ ، ﻗَﺎﻝَ " : ﺍﻧْﻈُﺮُﻭﺍ ﻣَﺴِﻴﻞَ ﺍﻟْﺒَﻮْﻝِ ، ﻓَﻮَﺭِّﺛُﻮﻩُ ﻣِﻨْﻪُ " .
ভাবার্থঃ-
হাসান ইবনে ক্বাসির তার বাবাকে বলতে শুনেছেন,তিনি বলেনঃআমি হযরত আলী রাঃ কে দেখেছি তিনি খুনছা(হিজরা)দের বিষয়ে বলেনঃ তোমরা প্রস্রাব প্রবাহিত হওয়ার স্থান দেখে তাদেরকে (পুরুষ-মহিলা রূপে সাব্যস্ত করো এবং)ওয়ারিছ বানাও।
(সুনানে বায়হাক্বী-১১৫৯১)
অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে
ﻓﻘﺎﻝ ﻋﻠﻲ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - : ﺇﻥ ﺑﺎﻝ ﻣﻦ ﻣﺠﺮﻯ ﺍﻟﺬﻛﺮ ﻓﻬﻮ ﻏﻼﻡ ، ﻭﺇﻥ ﺑﺎﻝ ﻣﻦ ﻣﺠﺮﻯ ﺍﻟﻔﺮﺝ ﻓﻬﻮ ﺟﺎﺭﻳﺔ .
হযরত আলী রাঃ বলেনঃ
যদি সে পুঃলিঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে তাহলে সে বালক,আর যদি সে স্ত্রীঃলিঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে তাহলে সে বালিকা।(আসসুনানুল কুবরা-১২১৮৬)
ইমাম শা'বী রাহ হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণনা করেন,
ﻋﻦﺍﻟﺸﻌﺒﻲ ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺨﻨﺜﻰ ﻗﺎﻝ ﻳﻮﺭﺙ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﻣﺒﺎﻟﻪ
(কোনো মুওরিছ মৃত্যুর পর)ওয়ারিছকে তার প্রস্রাব রাস্তার দিক বিবেচনায় ওয়ারিছ বানানো হবে।(সুনানে দারেমী-২৯৭০)
ফেক্বাহঃ-
চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ
"আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যাহ "(খন্ড নং২০, পৃষ্টা নং ২১-৩২) এ এসম্পর্কে বিশদ বর্ণনা রয়েছে,নিম্নে তার চুম্বোকাংশ তুলে ধরা হল।
ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻮﺳﻮﻋﺔ ﺍﻟﻔﻘﻬﻴﺔ :
ﺍﻟْﺨُﻨْﺜَﻰ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠُّﻐَﺔِ : ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻻَ ﻳَﺨْﻠُﺺُ ﻟِﺬَﻛَﺮٍ ﻭَﻻَ ﺃُﻧْﺜَﻰ، ﺃَﻭِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﻟِﻠﺮِّﺟَﺎﻝ ﻭَﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻨَﺚِ، ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟﻠِّﻴﻦُ ﻭَﺍﻟﺘَّﻜَﺴُّﺮُ، ﻳُﻘَﺎﻝ : ﺧَﻨَّﺜْﺖُ ﺍﻟﺸَّﻲْﺀَ ﻓَﺘَﺨَﻨَّﺚَ، ﺃَﻱْ : ﻋَﻄَّﻔْﺘُﻪُ ﻓَﺘَﻌَﻄَّﻒَ، ﻭَﺍﻻِﺳْﻢُ ﺍﻟْﺨُﻨْﺚُ , ﻭَﻓِﻲ ﺍﻻِﺻْﻄِﻼَﺡِ : ﻣَﻦْ ﻟَﻪُ ﺁﻟَﺘَﺎ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝ ﻭَﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ، ﺃَﻭْ ﻣَﻦْ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻪُ ﺷَﻲْﺀٌ ﻣِﻨْﻬُﻤَﺎ ﺃَﺻْﻼً، ﻭَﻟَﻪُ ﺛُﻘْﺐٌ ﻳَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻨْﻪُ ﺍﻟْﺒَﻮْﻝ . ﺍﻫــ .
ভাবার্থঃ-
শাব্দিক অর্থ বিবেচনায় খুনছা বলা হয়,যার একক কোনো পুঃলিঙ্গ বা স্ত্রীঃলিঙ্গ নেই।
অথবা যার পুঃলিঙ্গ ও স্ত্রীঃলিঙ্গ উভয়টি-ই রয়েছে।خنثى শব্দটা خنث শব্দ থেকে নির্গত।যার অর্থ হচ্ছে নরম,ভাঙ্গা।পরিভাষায় খুনছা(হিজড়া)বলা হয়,যা পুঃলিঙ্গ ও স্ত্রীঃলিঙ্গ উভয়-ই রয়েছে।অথবা যার মূলত কোনোটিই নেই।বরং তার একটি ছিদ্র রয়েছে যা থেকে প্রস্রাব বাহির হয়।(২০/২১)
ﻳَﻨْﻘَﺴِﻢُ ﺍﻟْﺨُﻨْﺜَﻰ ﺇِﻟَﻰ ﻣُﺸْﻜِﻞٍ ﻭَﻏَﻴْﺮِ ﻣُﺸْﻜِﻞٍ :
ﺃـ ﺍﻟْﺨُﻨْﺜَﻰ ﻏَﻴْﺮُ ﺍﻟْﻤُﺸْﻜِﻞ : ﻣَﻦْ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦُ ﻓِﻴﻪِ ﻋَﻼَﻣَﺎﺕُ ﺍﻟﺬُّﻛُﻮﺭَﺓِ ﺃَﻭِ ﺍﻷْﻧُﻮﺛَﺔِ، ﻓَﻴُﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻧَّﻪُ ﺭَﺟُﻞٌ، ﺃَﻭِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ، ﻓَﻬَﺬَﺍ ﻟَﻴْﺲَ ﺑِﻤُﺸْﻜِﻞٍ، ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻫُﻮَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻓِﻴﻪِ ﺧِﻠْﻘَﺔٌ ﺯَﺍﺋِﺪَﺓٌ، ﺃَﻭِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧِﻠْﻘَﺔٌ ﺯَﺍﺋِﺪَﺓٌ، ﻭَﺣُﻜْﻤُﻪُ ﻓِﻲ ﺇِﺭْﺛِﻪِ ﻭَﺳَﺎﺋِﺮِ ﺃَﺣْﻜَﺎﻣِﻪِ ﺣُﻜْﻢُ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَﺕْ ﻋَﻼَﻣَﺎﺗُﻪُ ﻓِﻴﻪِ .
ﺏ ـ ﺍﻟْﺨُﻨْﺜَﻰ ﺍﻟْﻤُﺸْﻜِﻞ : ﻫُﻮَ ﻣَﻦْ ﻻَ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦُ ﻓِﻴﻪِ ﻋَﻼَﻣَﺎﺕُ ﺍﻟﺬُّﻛُﻮﺭَﺓِ ﺃَﻭِ ﺍﻷْﻧُﻮﺛَﺔِ، ﻭَﻻَ ﻳُﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻧَّﻪُ ﺭَﺟُﻞٌ ﺃَﻭِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ، ﺃَﻭْ ﺗَﻌَﺎﺭَﺿَﺖْ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟْﻌَﻼَﻣَﺎﺕُ ﻓَﺘَﺤَﺼَّﻞ ﻣِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﺃَﻥَّ ﺍﻟْﻤُﺸْﻜِﻞ ﻧَﻮْﻋَﺎﻥِ :
ﻧَﻮْﻉٌ ﻟَﻪُ ﺁﻟَﺘَﺎﻥِ، ﻭَﺍﺳْﺘَﻮَﺕْ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟْﻌَﻼَﻣَﺎﺕُ، ﻭَﻧَﻮْﻉٌ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻪُ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓٌ ﻣِﻦَ ﺍﻵْﻟَﺘَﻴْﻦِ، ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻟَﻪُ ﺛُﻘْﺐٌ . ﺍﻫــ
খুনছা(হিজড়া)দুই প্রকার যথাঃ-
(১)মুশকিল
(২)গায়রে মুশকিল।
গায়রে মুশকিল হল,যার মধ্যে অনায়াসে পুরুষ বা মহিলা নির্ণায়ক আলামত বিদ্যমান রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বুঝা যায় যে, সে পুরুষ বা মহিলা।এটা নির্ধারণ করা এত মুশকিল ব্যাপার নয়।
বরং সে এমন একজন পুরুষ যাতে অতিরিক্ত সৃষ্ট রয়েছে।অথবা সে এমন একজন মহিলা যাতে কিছু অতিরিক্ত সৃষ্ট রয়েছে।এ সমস্ত হিজড়াদের ওরাছত বা সম্পদপ্রাপ্তিসহ বিবিধ হুকুম-আহকাম প্রযোজ্য করার ব্যাপারে তার কাছ থেকে প্রকাশিত(নারী-পুরুষ নির্ণায়ক) আলামতই এক্ষেত্রে ধর্তব্য হবে।
★খুনছা মুশকিলঃ
যার কাছে পুরুষ বা মহিলার কোনো আলামত প্রকাশ হয়নি।এবং এটাও জানা যায়নি যে,সে আসলে পুরুষ নাকি মহিলা?
অথবা উভয় আলামত-ই তাতে বিদ্যমান রয়েছে।