এই প্রবন্ধটি শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা তাকী উসমানি (দা.বা.)[تكملة فتح الملهم ]'ফাতহুল মুলহিমের সম্পূরক গ্রন্থ' খন্ড-২,পৃষ্টা-১৫৫তে [مسئلة التصوير في الإسلام ]ইসলামে ফটো-ভাস্ককর্যের বিধান শিরোনামের অধীনে উল্লেখ করেছেন।মাওলানা আব্দুল্লাহ মায়মান এর উর্দু অনুবাদ করেন।মুফতী মুহাম্মদ তৈয়্যেব হোসাইন বাংলা ভাষায় এর ভাষান্তর করেন। www.fatwa.info এর পাঠকবর্গের ব্যাপক ফায়দার প্রতি লক্ষ্য রেখে
কিছু সংযোজনসহ এই প্রবন্ধকে আমি হুবহু উপস্থাপন করছি------
মুফতী ইমদাদুল হক
বিসমিহি তা'আলা
الحمد لله رب العالمين والعاقبة للمتقين والصلوة والسلام على رسوله الكريم ،و على اله و أصحابه أجمعين ،و على من تبعهم بإحسان إلى يوم الدين-
اما بعد!
বর্তমান যুগে সর্বত্রই ফটোর প্রচলন ব্যাপকহারে পরিলক্ষিত হচ্ছে।বক্ষমান প্রবন্ধে এই বিষয়টির ওপর বিস্তারিত আলোচনার অবতারণা করা হচ্ছে।মূল আলোচনার পূর্বে সর্বপ্রথম আমরা ফটোর নিষেধাজ্ঞা সম্ভলিত হাদীসে রাসূলগুলো উল্লেখ করব।এরপরই আমরা এ সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত এবং তাদের মাযহাব কী তার আলোচনা করব।
হাদীসে রাসূলে ফটোর নিষেধাজ্ঞা
যেসব হাদীসে ফটোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে নিম্নে সেইসব হাদীস তুলে ধরা হল।
হাদীস নং এক.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর(রা.)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَخْبَرَهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " إِنَّ الَّذِينَيَصْنَعُونَ هَذِهِ الصُّوَرَ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، يُقَالُ لَهُمْ: أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ "
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন,যারা ফটো বানায়, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদের উদ্দেশ্যে বলা হবে,যা তোমরা বানিয়েছ তাতে জীবন দাও।[সহীহ বুখারী-৫৯৫১]
হাদীস নং দুই.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عن عَبْدَ اللَّهِ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ القِيَامَةِ المُصَوِّرُونَ»
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন,যারা ফটো বানাবে,কিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।[সহীহ বুখারী-৫৯৫০]
হাদীস নং তিন.
হযরত আবু যুর'আ (রা.)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عَنْ أَبِي زُرْعَةَ، قَالَ: دَخَلْتُ مَعَ أَبِيهُرَيْرَةَ فِي دَارِ مَرْوَانَ فَرَأَى فِيهَا تَصَاوِيرَ، فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: «وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ خَلْقًا كَخَلْقِي؟ فَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً، أَوْ لِيَخْلُقُوا حَبَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوا شَعِيرَةً»
একবার আমি হযরত আবু-হুরায়রা (রা.)এর সঙ্গে (খলিফা)মারওয়ানের ঘরে প্রবেশ করলাম।হযরত আবু-হুরায়রা (রা.)মারওয়ানের ঘরে বেশকিছু ফটো দেখতে পেয়ে বললেন,আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ
কে বলতে শুনেছি,তিনি বলেন,আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন,ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালিম কে,যে আমার সৃষ্টিতুল্য সৃষ্ট? সুতরাং তার উচিৎ সে যেন অনু সৃষ্টি করে দেখায় এবং শস্যদানা সৃষ্টি করে দেখায় এবং যব সৃষ্টি করে দেখায়।
[সহীহ মুসলিম-২১১১]
হাদীস নং চার.
হযরত আবু তালহা (রা.)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন
عَنْ أَبِي طَلْحَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَاتَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلَا صُورَةٌ»
আমি রাসূলে কারীম ﷺ কে বলতে শুনেছি: 'ওই ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না,যে ঘরে কুকুর এবং ফটো রয়েছে।'[ সহীহ মুসলিম-২১০৬]
হাদীস নং পাচঁ.
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ تَمَاثِيلُ أَوْ تَصَاوِيرُ»
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, 'ফেরেশতারা ওই ঘরে প্রবেশ করে না,যাতে ফটো বা প্রতিমা স্থাপিত রয়েছে'[সহীহ মুসলিম-২১১২]
হাদীস নং ছয়.
ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عنﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : ( ﻣﻦ ﺻَﻮَّﺭ ﺻﻮﺭﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻛُﻠِّﻒ ﺃﻥ ﻳَﻨْﻔُﺦ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﺮُّﻭﺡ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻭﻟﻴﺲ ﺑﻨﺎﻓﺦ
আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি,তিনি বলেছেন,যে ব্যক্তি পৃথিবীতে কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করবে,কিয়ামত দিবসে উক্ত অঙ্কিত প্রাণীর ভিতর রূহ প্রদানের দায়িত্ব তাকে দেয়া হবে।কিন্তু কস্মিনকালেও তা তার জন্য সম্ভবপর হবে না।
{সহীহ বুখারী-৫৬১৮}
হাদীস নং সাত.
হযরত সাঈদ ইবনে আবিল হাসান রাহ, থেকে বর্ণিত,
ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ ﻗَﺎﻝَ : ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻧِّﻲ ﺭَﺟُﻞٌ ﺃُﺻَﻮِّﺭُ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺼُّﻮَﺭَ، ﻓَﺄَﻓْﺘِﻨِﻲ ﻓِﻴﻬَﺎ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ : ﺍﺩْﻥُ ﻣِﻨِّﻲ . ﻓَﺪَﻧَﺎ ﻣِﻨْﻪُ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﺩْﻥُ ﻣِﻨِّﻲ . ﻓَﺪَﻧَﺎ ﺣَﺘَّﻰَ ﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﻋَﻠَﻰَ ﺭَﺃْﺳِﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺃُﻧَﺒُّﺌُﻚَ ﺑِﻤَﺎ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ - ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - . ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ - ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻳَﻘُﻮﻝُ : " ﻛُﻞُّ ﻣُﺼَﻮِّﺭٍ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ، ﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻟَﻪُ ﺑِﻜُﻞِّ ﺻُﻮﺭَﺓٍ ﺻَﻮَّﺭَﻫَﺎ ﻧَﻔْﺴﺎً ، ﻓَﺘُﻌَﺬِّﺑُﻪُ ﻓِﻲ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ . " ﻭَﻗَﺎﻝَ : ﺇﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﻻَ ﺑُﺪَّ ﻓَﺎﻋِﻼً ﻓَﺎﺻْﻨَﻊِ ﺍﻟﺸَّﺠَﺮَ ، ﻭَﻣَﺎ ﻻَ ﻧَﻔْﺲَ ﻟَﻪُ ، ﻓَﺄَﻗَﺮَّ ﺑِﻪِ ﻧَﺼْﺮُ ﺑْﻦُ ﻋَﻠِﻲٍّ .
ﺭﻭﺍﻩُ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ( 2225 ) ، ﻭﻣﺴﻠﻢ ﻭﺍﺍﻟﻔﻆ ﻟﻪ
জনৈক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস (রা.) এর নিকট এসে বলল, আমি এসব ছবি অঙ্কন করে থাকি; তাই এ ব্যাপারে আপনি আমাকে ফাতাওয়া দিন। তিনি বললেন, তুমি আমার কাছে এসো। সে তার নিকটে এলে তিনি বললেন, (আরও) নিকটে এসো। সে (আরও) নিকটে এলো। পরিশেষে তিনি তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যা শুনেছি, তাই তোমাকে বলব। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি - প্রত্যেক ছবি প্রস্তুতকারী জাহান্নামের অধিবাসী হবে। তার তৈরিকৃত প্রতিটি ছবিতে জীবন দেয়া হবে, সে সময় জাহান্নামে তাকে ঐগুলো আযাব দিতে থাকবে। তিনি আরও বললেন, তোমাকে একান্তই যদি (তা) করতে হয়, তাহলে গাছ (পালা) এবং প্রাণহীন বস্তুর (ছবি) প্রস্তুত করো।
[ইমাম মুসলিম (রহঃ) এ হাদীস পড়ে শুনালে] নাসর ইবনু আলী (রহঃ) তার অনুমতি দিলেন।
সহীহ বুখারী-[২২২৫]সহীহ মুসলিম [৫৪৩৩]
হাদীস নং আট.
হযরত জুহাইফা (রা.)বর্ণনা করেন,
عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي جُحَيْفَةَ، عَنْ أَبِيهِ: أَنَّهُ اشْتَرَى غُلاَمًا حَجَّامًا، فَقَالَ: «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ، وَثَمَنِ الكَلْبِ، وَكَسْبِ البَغِيِّ، وَلَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ، وَالوَاشِمَةَ وَالمُسْتَوْشِمَةَ وَالمُصَوِّرَ»
রাসূলে কারীম ﷺ রক্তের মূল্য নেয়া এবং কুকুরের মূল্য নেয়া এবং অপকর্মকারিণীর উপার্জন থেকে নিষেধ করেছেন।তিনি সুদ নেয়া এবং সুদ দেয়া এবং ফটো নির্মাতাদের ওপর লানত বর্ষণ করেছেন।[সহীহ বুখারী-৫৯৬২]
হাদীস নং নয়.
হযরত আ'য়েশা (রা.) বর্ণনা করেন,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي البَيْتِ قِرَامٌ فِيهِ صُوَرٌ، فَتَلَوَّنَ وَجْهُهُ ثُمَّ تَنَاوَلَ السِّتْرَ فَهَتَكَهُ، وَقَالَتْ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ أَشَدِّالنَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ القِيَامَةِ الَّذِينَ يُصَوِّرُونَ هَذِهِ الصُّوَرَ»
'রাসূলে কারীম ﷺ সবে সফর সেরে এসেছেন।ইতিপূর্বে আমি বাতির উপরে ফটোযুক্ত হালকা পর্দা সেট করে নিয়ে ছিলাম।রাসূল ﷺ এটি দেখার পর তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং ইরশাদ করলেন: রোজ কিয়ামতে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি ওইসব ব্যক্তির হবে,যারা আল্লাহর সৃষ্টি কার্যক্রমে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে।এরপর হযরত আয়েশা (রা.)বলেন,আমি ওই পর্দাটি কেটে এক বা দুইটি বালিশ বানিয়ে নেই।'[সহীহ বুখারী-৬১০৯]
হাদীস নং দশ.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)বলেন,
عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: " وَعَدَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جِبْرِيلُ، فَرَاثَ عَلَيْهِ، حَتَّى اشْتَدَّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَقِيَهُ، فَشَكَا إِلَيْهِ مَا وَجَدَ، فَقَالَ لَهُ: إِنَّا لاَنَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ صُورَةٌ وَلاَ كَلْبٌ "
'একদা হযরত জিব্রাঈল(আ.)রাসূলে কারীম ﷺ এর সঙ্গে (নির্দিষ্ট সময়ে সাক্ষাতের) অঙ্গীকার করে গেলেন।কিন্তু যথাসময়ে আগমনে হযরত জিব্রাঈল বিলম্ব হল।বিষয়টি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে বেশ পীড়াদায়ক মনে হল।(বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর)তিনি ঘর থেকে বের হলেন।বের হয়েই তিনি হযরত জিব্রাঈল (আ.)এর সাক্ষাত পেলেন।অপেক্ষার কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যে কষ্ট হয় হযরত জিব্রাঈল (আ.)এর নিটক তিনি সেই অভিযোগ করলেন। হযরত জিব্রাঈল(আ.) বললেন,আমি এমন ঘরে প্রবেশ করি না, যেখানে ফটো বা কুকুর থাকে' [সহীহ বুখারী-৫৯৬০]
হাদীস নং এগার.
হযরত জাবের (রা.)থেকে বর্ণিত
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصُّورَةِ فِي البَيْتِ، وَنَهَىعَنْ أَنْ يُصْنَعَ ذَلِكَ.
'রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘরে ফটো রাখতে এবং ছবি বানাতে নিষেধ করেছেন।' [সুনানে তিরমিযি-১৭৪৯]
হাদীস নং বার.
আবুল হাইয়্যাজ আসাদী(রাহ.)বলেন,
عَنْ أَبِي الْهَيَّاجِ الْأَسَدِيِّ، قَالَ: قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ: أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ «أَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّاسَوَّيْتَهُ»
আমাকে হযরত আলী(রা.)বলেন,আমি কি তোমাকে এমন কাজের প্রতি উৎসাহিত করব না,যা করার জন্য আমাকে রাসূল ﷺ উৎসাহিত করেছেন? আর তা হল,ফটো না মিটিয়ে তা হাত ছাড়া করবে না,এবং উঁচু কবরকে সমতল না করে ছাড়বে না।[সহীহ মুসলিম-৯৬৯]
হাদীস নং তের.
হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত ,রাসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করেছেন যে,
ﻭﻓﻲ ﻣﺴﻨﺪ ﺃﺣﻤﺪ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﻋﻠﻲ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﺃﻥ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻗﺎﻝ ﻟﻠﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇﻧﻬﺎ ﺛﻼﺙ , ﻟﻦ ﻳﻠﺞ ﻋﻠﻴﻚ ﻣﻠﻚ ﻣﺎ ﺩﺍﻡ ﻓﻴﻬﺎ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻨﻬﺎ : ﻛﻠﺐ , ﺃﻭ ﺟﻨﺎﺑﺔ , ﺃﻭ ﺻﻮﺭﺓ ﺭﻭﺡ . ﺍﻫـ
হযরত জিব্রাঈল বলেছেন,তিনটি জিনিষ এমন আছে,যতক্ষণ পর্যন্ত তা কোনো স্থানে থাকে, সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করেন না।(এক)কুকুর,(দুই) নাপাক ব্যক্তি(তিন) জীবের ফটো।
[মুসনাদে আহমদ-সূত্র ফাতহুল বারী:১৭/২৭৯]
হাদীস নং চৌদ্দ.
হযরত আ'য়েশা (রা.)বর্ণনা করেন,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: لَمَّا اشْتَكَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَتْ بَعْضُ نِسَائِهِ كَنِيسَةً رَأَيْنَهَا بِأَرْضِ الحَبَشَةِ يُقَالُ لَهَا: مَارِيَةُ، وَكَانَتْ أُمُّ سَلَمَةَ، وَأُمّ حَبِيبَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَتَتَا [ص: ٩١] أَرْضَ الحَبَشَةِ، فَذَكَرَتَا مِنْ حُسْنِهَا وَتَصَاوِيرَ فِيهَا، فَرَفَعَ رَأْسَهُ، فَقَالَ: «أُولَئِكِ إِذَا مَاتَ مِنْهُمُ الرَّجُلُ الصَّالِحُ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا، ثُمَّ صَوَّرُوا فِيهِ تِلْكَ الصُّورَةَ أُولَئِكِ شِرَارُ الخَلْقِ عِنْدَ اللَّهِ»
যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ অসুস্থ হয়ে পড়লেন,তখন কোনো কোনো স্ত্রীগণ খ্রিস্টানদের [كنيسة] উপাশনালয়[مارية] 'মারিয়া' সম্পর্কে আলোচনা করলেন।হযরত উম্মে সালমা (রা.) এবং হযরত উম্মে হাবীবা (রা.) উভয়ে ছিলেন(জন্মসূত্রে) হাবশা অধিবাসী। এজন্য তাঁরা খ্রিস্টানদের উপাশনালয়ের সৌন্দর্য এবং তার ভেতরে স্থপিত ফটোর বিষয়টিও আলোচনায় টেনে আনলেন।(এই অবস্থায়)রাসূলে কারীম ﷺ নিজের শির মোবারক উঁচু করে বললেন,এরা তো ওই সম্প্রদায়ভুক্ত, যারা নিজেদের কোনো ভালো মানুষ মারা গেলে তার কবরের উপর মসজিদ নির্মান করে দেয়,অতঃপর মসজিদের ভেতর ফটো টানিয়ে দেয়।আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টির মধ্যে এরা সবচেয়ে নিকৃষ্ট, অধম।[সহীহ বুখারী-১৩৪১]
উল্লিখিত সবগুলো হাদীসই [مرفوع ]'মারফূ'। সবকটি থেকেই এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল যে,ফটো নিষেধ।এক্ষেত্রে হুকুমের কোনো তারতম্য নেই যে,ছবিটি কি ভাস্কর্য(দেহ বিশিষ্ট), না কাপড়, কাগজ, প্লাস্টিক বা অন্য যে কোনো উপায়ে প্রস্তুতকৃত?অর্থাৎ সবধরনের ছবি ভাস্কর্যের ক্ষেত্রেই শরীয়তের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে।
ইসলামে ফটো-ভাস্কর্যের বিধান-২
ফটোর ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরামের অভিমত এবং তাদের কর্মপন্থাঃ
ফটো সম্পর্কে সাহাবায়ে কিরাম এবং তা'বেয়ী(রহ.)থেকে অসংখ্য[آثار] বর্ণিত হয়েছে।তাঁদের এসব বর্ণনা থেকেও ফটো হারাম হওয়ার বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।তাদের এসব বর্ণনার কতিপয় উদ্ধৃতি এখানে তুলে ধরা হল।
উদ্ধৃতি নং এক.
باب الصلاة في البيعة
وقال عمر رضي الله عنه: «إنا لا ندخلكنائسكم من أجل التماثيل التي فيها الصور» وكان ابن عباس: «يصلي في البيعة إلا بيعةفيها تماثيل»
'হযরত উমর (রা.)বর্ণনা করেন যে,তিনি খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন: 'আমি তোমাদের উপাশনালয়ে ওইসব প্রতিমার কারণে প্রবেশ করি না,যা প্রকৃত অর্থে ফটো।
ইবনে আব্বাস (রা.)বিধর্মীদের উপাশনালয়ে ও নামায পড়তেন,তবে যেখানে ফটো থাকত সেখানে পড়তেন না' [সহীহ বুখারী১/৯৩। ৪৩৪ নং হাদীসের পূর্বের বাব]
মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক এই [أثر ]বর্ণণাটি হযরত উমর (রা.) এর দাস আসলাম-এর সূএে এইভাবে নকল করেছেন :
عن أسلم : " أن عمر حين قدم الشام صنع له رجل من النصارى طعاما وقال لعمر : إني أحب أن تجيئني وتكرمني أنت وأصحابك - وهو رجل من عظماء النصارى - فقال عمر : " إنا لا ندخل كنائسكم من أجل الصور التي فيها يعني التماثيل " صححه الألباني في "آداب الزفاف" (ص)92
হযরত উমর (রা.)যখন সিরিয়া আগমন করেন, তখন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি তাঁর জন্য খাবার প্রস্তুত করেন। লোকটি খ্রিস্টান সম্পদায়ের অভিজাত শ্রেণীর ছিলেন। লোকটি হযরত উমর (রা.)এর কাছে আরজ করলেন, আমার আশা হল, আপনি আমার এখানে তাশরীফ এনে কৃতার্থ করবেন।হযরত উমর (রা.) লোকটির উদ্দেশ্যে বললেন, আমি তোমাদের উপাশনালয়ে ওইসব প্রতিমা অর্থাৎ ফটোর কারণে প্রবেশ করি না, যেগুলো সেখানে স্থাপিত আছে।(মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক-1611)
উদ্ধৃতি নং দুই
عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، أَنَّ عَلِيًّا قَالَ لِأَبِي الهَيَّاجِ الأَسَدِيِّ: أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي بِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَنْ لَا تَدَعَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ، وَلَا تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ
হযরত আলী (রা.) আবুল হাইয়্যাজ আসাদী (রা.) কে (কোথাও)প্রেরণের সময় তাঁর উদ্দেশ্যে বলেন, আমি কি তোমাকে এমন কাজের প্রতি উৎসাহিত করব না, যে কাজের প্রতি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উৎসাহিত করেছেন? আর তা হল কোনো ফটো না মিটিয়ে তা হাতছাড়া করবে না। '[সুনানু তিরমিযী: হাদীস নং১০৪৯, আবু-দাউদ শরীফ: হাদীস নং৩২২৮]
উদ্ধৃতি নং তিন.
وَرَأَى أَبُو مَسْعُودٍ، صُورَةً فِي البَيْتِ فَرَجَعَ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ ( রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি কোনো ঘরে ফটো দেখতে পেয়ে ফেরত চলে আসলেন। '(ঘরের ভেতরে তিনি প্রবেশ করেন নাই।)[সহীহ বুখারী শরীফ-৭/২৫ ]
উদ্ধৃতি নং চার.
عن أبي مَسعودٍ رضي الله عنه: (أنَّ رَجُلًا صنع له طعامًا فدعاه، فقال: أفي البيتِ صُورةٌ؟ قال: نعم، فأبى أن يَدخُلَ حتى كسَرَ الصُّورةَ، ثمَّ دخَلَ
হযরত আবু মাসঊদ আনসারী ( রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি তাঁর জন্য খাবার প্রস্তুত করে তাঁকে ( তার বাড়িতে) আমন্রণ জানাল। হযরত আবু মাসঊদ আনছারী (রা.) জানতে চাইলেন ( তোমার) ঘরে কি কোনো ছবি আছে? আমন্রক জানালেন হ্যা, আছে। তিনি তার ঘরে প্রবেশে অস্বীকৃতি জানালেন। এরপর ওই ব্যক্তি ছবিটি ভেঙ্গে ফেলেলই তিনি তার ঘরে প্রবেশ করলেন। [ সুনানে বায়হাকী : খণ্ড -৭, পৃষ্ঠা-২৬৮]
উদ্ধৃতি নং পাঁচ.
عن ابي هريرة انه رأي فرسا من رقاع في يد جارية ، فقال الا تري هذا؟ قال رسول الله صلي الله عليه وسلم انما يعمل هذا من لا خلاق له يوم القيامة
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে , তিনি একটি মেয়ের হাতে কাপড় দ্বারা প্রস্তুতকৃত ঘোড়ার একটি প্রতিকৃতি দেখে বললেন, তুমি কি এটিকে দেখতে পাচ্ছনা না? কেননা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এমন জিনিস সেই বানাতে পারে, কিয়ামতের দিন যার কোনো অংশ থাকবে না। '[ মুসনাদে আহমদ : খণ্ড - ২, পৃষ্ঠা -২৮৯]
উদ্ধৃতি নং ছয়.
عن شعبة مولي ابن عباس : « ان المسور بن مخرمة دخل علي عبدالله بن عباس يعوده ، فرأي ثوب استبرق، فقال : يا ابن عباس ما هذا الثوب؟ قال ابن عباس : وما هو؟ قال:الاستبرق، قال : انما كره ذلك لمن تكبر فيه. قال: ما هذه التصاوير في الكانون؟ فقال : لا جرم ، الم تر كيف احرقها بالنار؟ فلما خرج قال: انزعوا هذا الثوب عني، واقطعوا رؤوس هذه التصاويرالتي في الكانون، فقطعها
হযরত ইবনে আব্বাস ( রা.) এর খাদেম হযরত শুবা ( রা.) বর্ণনা করেন যে, একবার সেবা শশ্রুষার উদ্দেশ্যে হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা ( রা.) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা.) এর কাছে আসেন। এসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা.) এর দেহের উপর রেশমের একটি মোটা কাপড় দেখতে পেলেন। রেশমের কাপড়টি তাঁর দেহের উপড় দেখে তিনি বললেন, হে ইবনে আব্বাস! আপনার দেহের উপর রেশমের কাপর এটি আবার কী? হযরত ইবনে আব্বাস বললেন, এতে সমস্যা কী? তিনি বললেন, এটি তো রেশমের কাপড় দেখছি! হযরত ইবনে আব্বাস ( রা.) বললেন, এটি পরিধান তাদের জন্যই মাকরূহ ( নিষিদ্ধ) যারা এটি পরে অহংকার প্রকাশ করে। অত:পর তিনি ( হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রা.)) বললেন, আংটিতে যে ছবি আছে, এটি কেমন? হযরত ইবনে আব্বাস ( রা.) বললেন, এতেও কোনো গোনাহ নেই। তুমি কী দেখতে পাচ্ছনা না যে, আগুন এটিকে কীভাবে জ্বালিয়ে দিয়েছে? এরপর যখন হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরাম ( রা.) চলে গেলেন, তখন হযরত ইবনে আব্বাস ( রা.) বললেন, আমার উপর থেকে এই কাপরটি সরিয়ে নাও, আর আংটিতে যে ছবি আছে তার মাথা কেটে দাও। সুতরাং তা কেটে দেয়া হল। [ সুনানে বায়হাকী:খণ্ড-৭,পৃষ্ঠা-২৭০, মুসনাদে আহমদ:খণ্ড-১,পৃষ্ঠা-৩৫৩]
উদ্ধৃতি নং সাত.
عن قتادة ان كعبا رضي الله تعالي قال: « واما من آذي الله فالذين يعملون الصور، فيقال لهم: احبوا ما خلفتم»
হযরত কাতাদাহ (রা.) বর্ণনা করেন যে, হযরত কাআাব ( রা.) বর্ণনা করেছেন, যারা আল্লাহ তাআলাকে কষ্ট দিয়েছে, তারা ওইসব লোক যারা ফটো বানায়। ( কিয়ামতের দিন) তাদের উদ্দেশ্যে বলা হবে, যা তোমরা বানিয়েছ তাতে জীবন দান কর। [ মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : খণ্ড-১০,পৃষ্ঠা-৪০০, হাদীস নং-১৯৪৯২]
উদ্ধৃতি নং আট.
عن قتادة قال: « يكره من التماثيل ما فيه الروح ، فاما الشجر فلا بأس به»
হযরত কাতাদাহ ( রা.) বর্ণনা করেন, জীবনবিশিষ্ট প্রতিমা বানানো মাকরুহ (নিষিদ্ধ) আর বৃক্ষের প্রতিমা বানানোর ক্ষেএে কোনো সমস্যা নেই।[মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক:খণ্ড-১০, পৃষ্ঠা-৪০০, হাদীস নং-১৯৪৯৩]
উদ্ধৃতি নং নয়.
اخرج ابن سعد في طبقاته: ان سعيد بن مسيب كان لا يأذن لابنته في اللعب ببنات العاج. .[تكملة فتح الملهم/ج4/ص93
ইবনে সাআদ ( রহ.) তাবাকাত ' --এ উল্লেখ করেছেন, যে, হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব ( রহ.) নিজের মেয়েকে হাতির দাঁত দ্বারা প্রস্ততকৃত পুতুলের মাধ্যমে খেলাধুলার অনুমতি দেননি। [ তাবাকাতে ইবনে সাঅাদ : খণ্ড --৫,পৃষ্টা--১৩৪]
ইসলামে ফটো-ভাস্কর্যের বিধান-৩
ফুকাহায়ে কিরামের মাযহাব
উপরোল্লিখিত হাদীস এবং সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীনদের বর্ণনার কারণে জুমহুর ফুকহায়ে কিরাম ফটো বানানো এবং তা ঘরে টানানো হারাম হিসাবে অাখ্যায়িত করেছন। সেইসব ছবি ভাস্কর্য তা চিএের আকৃতিতে হোক কিংবা ভাস্কর্যহীন বা চিএহীন যে কোনো আকৃতিতেই হোক না কেন। ইতিপূর্বে হযরত আবু তালহা ( রা.)--এর বর্ণনায় চতুর্থ হাদীসটি যা মুসলিম শরীফের উদ্বৃতিতে দলীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, মুসলিম শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার আল্লামা নববী ( রহ.) সেই হাদীসেরর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন :
قال أصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة الحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لأنه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور في الأحاديث وسواء صنعه بما يمتهن أو بغيره فصنعته حرام بكل حال لأن فيه مضاهاة لخلق الله تعالى وسواء ما كان فى ثوب أو بساط أودرهم أو دينار أو فلس أو إناء أو حائط أو غيرها وأما تصوير صورة الشجر ورحال الإبل وغير ذلك مما ليس فيه صورة حيوان فليس بحرام هذا حكم نفس التصوير وأما اتخاذ المصور فيه صورة حيوان فإن كان معلقا على حائط أو ثوبا ملبوسا أو عمامة ونحوذلك مما لايعد ممتهنا فهو حرام وإن كان في بساط يداس ومخدة ووسادة ونحوها مما يمتهن فليس بحرام ولكن هل يمنع دخول ملائكة الرحمة ذلك البيت فيه كلام نذكره قريبا إن شاء الله ولافرق فى هذا كله بين ماله ظل ومالاظل له هذا تلخيص مذهبنا في المسألة وبمعناه قال جماهير العلماء من الصحابة والتابعين ومن بعدهم وهو مذهب الثوري ومالك وأبي حنيفة وغيرهم
আমাদের সাথীবর্গ এবং অন্যান্য উলামায়ে কিরামের অভিমত হল যে,প্রাণীর ফটো বানানো চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি কঠিন হারাম কাজ। এটি গুনাহের কবীরার অন্তুর্ভুুক্ত।কেননা এই কর্মের বিরুদ্ধে হাদীসে কঠোর সতর্কবাণী বর্ণিত হয়েছে। সেটি নগন্য কোনো বস্তু দ্বারা কিংবা অতিমূল্যবা্ন কোনো বস্তু দ্বারাই নির্মিত হোক না কেন। সর্বাবস্থায় এর চিএায়ন হারাম। কেননা এই কাজটি আল্লাহ তাঅালার কাজের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। কোনো জিনিসে ফটো বানানো থাকলে সেক্ষেএে বিধান হল, যদি ফটোটি এমন জিনিসের উপর চিএিত থাকে, যা কোনো দোয়ালে টানিয়ে দেয়া হয় অথবা এমন কাপড়ে চিএিত থাকে, যা পরিধান করা হয়, কিংবা পাগড়িতে তা চিএিত থাকে, কিংবা এমনিভাবে এমন কোনো জিনিসের উপর ফটো চিএিত থাকে, যাকে নিকৃষ্ট ভাবা হয় না, তাহলে এজাতীয় জিনিস রাখা হারাম। আর ফটো যদি এমন বিছানার ওপর চিএিত থাকে, যা পদদলিত করা হয় থাকে কিংবা ছোট বড় কোনো এমন বালিশের উপড় ছবি চিএিত থাকে যাকে একবারেই স্বাভাবিক জ্ঞান করা হয়, তাহলে এজাতীয় ফটো রাখা হারাম নয়। অবশ্য ফটো চিএিত কিনা সেই হিসেবে হালাল হারাম নির্নিত হয় না। উল্লিখিত বিশ্লেষণই আমাদের মাযহাবের সারকথা। জুমহুর সাহাবায়ে কিরাম, জুমহুরে তাবেয়ীন এবং তৎপরবর্তী জুমহুরে উলামায়ে কিরামের অভিমতও এটিই। ইমাম মালিক ( রহ.), ইমাম ছাওরী ( রহ.) ও ইমাম আবু হানিফা ( রহ.) সহ অন্যান্যদের মাযহাবও এটিই।
আল্লামা আইনী ( রহ.) ' উমদাতুল কারী' গ্রন্থে এজাতীয় অভিমতের কথাই উল্লেখ করেছেন।[দেখুন উমদাতুল কারী; খণ্ড-১০, পৃষ্ঠা-৩০৯]
এই আলোচনার মাধ্যমেই হানাফী এবং শাফেয়ী মাযহাবের অভিমত স্পষ্ট হয়ে যায়। আর হাম্বলী মাযহাবের অভিমতও এক্ষেএে অভিন্ন।এ প্রসঙ্গে আল্লামা মুরদাবী ( রহ.) উল্লেখ করেছেন :
« يحرم ما فيه روح، ولا يحرم تصوير الشحر ونحوه. والتمثال مما لا يشابه ما فيه روح ، علي الصحيح من المذهب . . . يحرم تعليق ما فيه صورة حيوان ، وستر الجدار به ، وتصويره علي الصحيح من المذهب ».
মাযহাবের সঠিক ও সহীহ অভিমত অনুযায়ী জীবের ছবি চিএন করা হারাম।বৃক্ষ ইত্যাদির ছবি চিএন করা এবং এমন ভাস্কর্য নির্মাণ করা যা কোনে জীবের নয়, তবে তা হারাম হবে না। সেইসঙ্গে মাযহাবের সঠিক অভিমত অনুযায়ী জীব চিএিত কোনো ছবি টানানো কিংবা দেয়ালে পর্দা হিসাবে ব্যবহার করা কিংবা জীবের কোনো ফটো চিএণ করা হারাম। [আল:ইনসাফ:মুরদাবী রচিত:খণ্ড-১ পৃষ্ঠা-৪৭৪]আল্লামা ইবনে কুদামাহ ( রহ.) 'আল -- মুগনী' গ্রন্থের সপ্তমখণ্ডের ৭ নং পৃষ্ঠায় এ অভিমতই তুলে ধরেছেন।
যেহেতু ফটোর মাসআলা প্রসঙ্গে ইমাম মালিক ( রহ.) থেকে বিভিন্ন অভিমত ব্যক্ত হয়েছে, এই জন্য মালিকী মাযহাব অনুসারী আলেমদের থেকে এবিষয়ে বিভিন্ন মতামত এসেছে।অবশ্য মালিকী মাযহাবের সববর্ণনা এবং অভিমতেই ভাস্কর্যকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে কাগজ বা কাপড় ইত্যাদির উপর চিএিত ছবি হারাম হওয়ার ক্ষেএে তাঁদের ভেতর মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লামা উবাই ( রহ.) মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন :
واختلف في تصثوير ما لا ظل له ، فكرهه ابن شهاب في اي صور من حائط او ثوب او غيرهما. واجاز ابن القاسم تصويره في الثياب لقوله ذفي الحديث الآتني « الا رقما في ثوب »
ছায়াহীন চিএিত ফটোর বিষয়ে মতভেদ রয়েছে । আল্লামা ইবনে শিহাব ( রহ.) এ জাতীয় ফটো চিএন মাকরুহ সাব্যস্ত করেছন। সেটি দেয়ালে টানানো থাকলেও, কাপড়ের উপড় হলেও কিংবা অন্য কোনো জিনিসের উপড় হলেও। অথচ আল্লামা ইবনে কাসেম ( রহ.) শুধু ওই ছবিকেই জায়েয সাব্যস্ত করেছেন, যা কোনো কাপড়ের উপড় চিএিত । কেননা হাদীস শরীফের বর্ণনায় [الا رقما في ثوب] এ জাতীয় ফটোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে।[আল্লামা উবাই (রহ.)এর শরহে মুসলিম :খণ্ড-৫,পৃষ্ঠা-৩৯৪]
একইভাবে আল্লামা মাউওয়াক ( রহ.) আল্লামা ইবনে আরাফা ( রহ.) থেকে ফটো হারামের হুকুম কেবলমাএ ভাস্কর্য জাতীয় প্রতিকৃতির ক্ষেএেই প্রযোজ্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন।[দেখুন আত-তাজুল ইকলীল:খণ্ড-৪,পৃষ্ঠা-৪]
আল্লামা দরদের ( রহ.) বলেন :
والحاصل ان تصاوير الحيوانات تحرم اجماعا ان كانت كاملة لها ظل مما يطول استمراره ، بخلاف ناقص عضو لا يعيش به لو كان حيوانا، و بخلاف ما لا ظل له كنقش في ورق او جدار . وفيما لا يطول استمراره (كما لو كانت من نحو قشر بطيخ): خلاف ، والصحيح حرمته».
সারকথা হল জীবপ্রাণীর ছায়াযুক্ত স্থায়ী পূর্ণাঙ্গ
ফটো ভাস্কর্য সর্বসম্মতভাবে হারাম। তবে ফটো যদি এমন অসম্পূর্ণ হয় যদি প্রকৃত অর্থেই সেটি প্রাণী হত, তাহলে অসম্পূর্ণ অঙ্গের কারণে সেটি জীবিত থাকতে অক্ষম হত। এছাড়া ছায়াহীন ছবি, যেমন কাগজ, দেয়ালে আঁকা চিএ। অবশ্য ওই ছবি ( ভাস্কর্য) যা স্থায়ী না হয় ( যেমন তরমুজের খোসা দ্বারা কিংবা মরুভূমির বালি দ্বারা কোনো প্রাণীর ছবি বানানো হল। এজাতীয়। অস্থায়ী ভাস্কর্যের বিষয়ে মতভেদ রয়ছে। তবে সঠিক অভিমত এটিই যে, এজাতীয় ভাস্কর্য হারাম [শরহে সগীর গ্রন্থের ছাবী (রহ.) কৃত টিকা:খণ্ড-২,পৃস্ঠা-৫০১]
মালিকী মাযহাবের গ্রন্থাবলীর উপড় নজর বুলানোর পর এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে যে, অধিকাংশ মালিকী আলেম ফটোর নিষিদ্ধতার দাবীদার। ছবি যদি ছায়াহীনও হয়। তবে যদি ছবি নিকৃষ্ট জায়গায় ব্যবহার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা খারেসী ( রহ.) লেখেন :
« قال في التوضيح: التمثال اذا كان لغير حيوان ، كالشجر : جائز، وان كان لحيوان فما له ظل ويقيم ، فهو حرام باجماع ، وكذا ان لم يقم ، كاعجين خلافا للصبغ . . . وما لا ظل له إن كان غير ممتهن فهو مكروه، وان كان ممتهنا فتركه اولي »
'আল্লামা খারাসী ( রহ.) ' তাওযীহ' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন : যদি অপ্রাণীর ছবি হয়, যেমন বৃক্ষ, তাহলে তা জায়েয আছে। যদি প্রাণীর প্রতিকৃতি হয়, আর তা যদি দেহবিশিষ্ট ছায়াযুক্ত এবং স্থায়ী হয়, তাহলে তা সর্বসম্মতভাবেই হারাম। আর তা যদি স্থায়ী পদার্থ দ্বারা প্রস্তুত না করা হয়।,যেমন আটার খামিরা দ্বারা, তাহলে তাও হারাম। এক্কেএে আসবাগ ( রহ.) ভিন্নমত পোষন করেছেন। আর যদি সেটা ছায়াহীন কোনো প্রতিকৃতি হয়, তাহলে সেটি যদি কোনো নিকৃষ্ট স্থানে না থাকে, তবে তা মাকরূহ। হ্যা যদি সেটি কোনো নিকৃষ্ট স্থানে থাকে, তাহলে সেটিও পরিহার করা উওম। ' [ খারাসী আলা মুখতাসিরিল খালীল : খণ্ড -- ৩, পৃষ্ঠা -- ৩০৩ ]
আল্লামা দরদের(রহ.)' শারহুল কাবীর' গ্রন্থেও এমনটিই উল্লেখ করেছেন। [দেখুন, দুসূকী : খণ্ড-২,পৃষ্ঠা-৩৩৮, আয-যারকানী আলা মুখতাসিরিল খালীল:খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৫৩ ]
সারকথা হল, দেহবিশিষ্ট ভাস্কর্য নির্মাণ করা চার ইমামের মতে সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। আর দেহবিশিষ্ট ভাস্কর্য না হয়ে যদি তা প্রতিকৃতি আকারে হয়, তাহলে তিন ইমামের এক অভিমত অনুযায়ী তা হারাম। অবশ্য অধিকাংশ মালিকী আলেমের গ্রহনযোগ্য ও উওম অভিমত হল যে, এ জাতীয় প্রতিকৃতিও মাকরূহ। কোনো কোনো মালিকী আলেম এজাতীয় প্রতিকৃতি জায়েয হওয়ার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন।
যেসব ফুকহায়ে কিরাম দেহহীন প্রতিকৃতি জায়েয হওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন, তাঁরা হযরত হযরত বুছর ইবনে সাঈদ ( রহ.)-- এর এই হাদীটি দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন :
« أن زيد ابن خالد الجهنيّ حدثه، ومع بسر عبيدالله الخولانيّ ، ان أبا طلحة حدثه أن رسول الله صلي الله عليه وسلم قال: لا تدخل الملائكة بيتا فيه صورة. قال بسر : فمرض زيد بن خالد ، فعدناه، فاذا نحن في بيته بستر فيه تصاوير . فقلت لعبيد الله الخولاني: ألم يحدثنا في التصاوير ؟ قال : إنه قال : إلا رقما في الثوب . ألم تسمعه؟ قلت: لا، قال : بلي ، قد ذكر ذلك».
হযরত বুছর ইবনে সাঈদ ( রহ.) বর্ণনা করেন যে, হযরত জায়েদ ইবনে জুহানী ( রহ.) বর্ণনা করেছেন এবং হযরত বুছর -- এর সঙ্গে উবাইদুল্লাহ খাওলানী ( রহ.) ও ছিলেন। হযরত আবু তালহা ( রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : ' যে ঘরে ছবি আছে, সেই ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। ' হযরত বুছর ইবনে সাঈদ ( রহ.) বলেন যে, হযরত জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী ( রহ.) অসুস্থ্য হয়ে গেলেন। আমরা তাঁর সেবাশশ্রুষার জন্য হাজির হই। যে ঘরে আমরা ছিলাম তাতে ছবিযুক্ত একটি পর্দা টানানো ছিল। আমি হযরত উবাইদুল্লাহ খাওলানী ( রহ.)-কে বললাম, তিনি কি ছবি সংক্রান্ত হাদীস বর্ণনা করেন নাই? হযরত উবাইদুল্লাহ খাওলানী(রহ.) বললেন, তিনি একথাও বর্ণনা করে ছিলেন
إلا رقما في الثوب
আপনি কি এই শব্দগুলো শুনেন নাই?
আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আপনি কেন শোনেননি, তিনি এই শব্দগুলো বলে ছিলেন। ' [ সহীহ মুসলিম শরীফ [
তিরমিযী শরীফেও এই হাদীসটি এই ভাষ্যে বর্ণিত হয়েছে :
عن عبيد الله بن عبدالله بن العتبة أنه دخل علي ابي طلحطةالانصاري يعوده ، قال: فوجدت عنده سهل بن حنيف . قال : فدعا ابوطلحة انسانا ينزع نمطا تحته، فقال له سهل: لم تنزعه؟ قال : لأن فيه تصاوير ، وقد قال فيه النبي صلي الله عليه وسشلم ما قد علمت . قال سهل : أولم يقل: الا كان رقما في ثوب؟ فقال : بلي ، ولكنه أطيب لنفسي».
হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ( রহ.) বর্ণনা করেন যে, তিনি হযরত আবু তালহা আনসারী ( রা.) এর সেবাশশ্রুষার জন্য তাঁর কাছে গেলেন। তিনি বলেন , সেখানে আমি হযরত সাহল ইবনে হানীফ ( রা.) কেও উপস্থিত পেলাম। তিনি বলেন যে, এসময় হযরত আবু তালহা আনসারী ( রা.) কোনো এক ব্যক্তিকে ডেকে তাঁর নিচের চাদরটি বের করার জন্য নির্দেশ দিলেন। হযরত সাহল ( রা.) তাঁর উদ্দেশ্যে বললেন, আপনি চাদরটি কেন বের করছেন? হযরত আবু তালহা ( রা.) বললেন, এতে ছবি আছে। আর ছবি সম্পর্কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু ইরশাদ করেছেন, সে সম্পর্কে আপনি অবগত রয়েছেন। হযরত সাহল ( রা.) বললেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি একথা বলেননি?
إلا رقما في الثوب
হযরত আবু তালহা ( রা.) বললেন, একথা নিশ্চয় বলেছেন।কিন্ত এটিকে বের করে দেয়াটাই আমার কাছে পছন্দীয়। [ তিরমিযী শরীফ : হাদীস নং -- ১৭৫০]
ইসলামে ফটো-ভাস্কর্যের বিধান-4
দেহহীন প্রতিকৃতি জায়েয হওয়ার স্বপক্ষে যারা, তারা এই দুইটি হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে বলে থাকেন, যে, এই উভয় হাদীসের দ্বারা একথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, কাপড়ের উপড় চিএিত ছবি হারাম-এর অন্তর্ভুক্ত নয় । সুতরাং এজাতীয় ছবি জায়েয।
জুমহুরে ফুকহায়ে কিরাম এই উভয় হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন :
الرقم في الثوب
এর দ্বারা ওই ছবি উদ্দেশ্য, যা কোনো বৃক্ষ বা প্রানীহীন বস্তুর ছবি হবে। এই যুক্তির স্বপক্ষে তাঁরা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা(রা.)-এর একটি হাদীস দলীল পেশ করে থাকেন। হযরত আয়েশা(রা.)বর্ণিত হাদীসের ভাষ্য হল :
دخل علي رسول الله صلي الله عليه وسلم وقد سترت سهوة لي بقرام فيه تماثيل ، فلما رآه هتكه، وتلوّنوجهه،وقال : يا عائشة ، اشد الناس عذابا عند الله يوم القيامة الذين يضاهون بخلق الله »
হযরত আয়েশা ( রা.) বলেন, একবার রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে তাশরীফ নিয়ে আসলেন। আমি ছবিযুক্ত একটি পর্দা আমার তাকটি ডেকে দিয়েছিলম। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এটি দেখে ছিড়ে ফেললেন। তার চেহারা মোবারক বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়েশা!কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি ওইসব লোকদের হবে,যারা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির কার্যক্রমে সাদৃশ্যপূর্ণ আচরণে লিপ্ত হয় । এই হাদীস দ্বারা বোঝা গেল যে, কাপড়ে প্রাণীর ছবি যদি জায়েয-ই হত, তা হলে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই পর্দায় অংকিত ছবির ক্ষেএে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করতেন না, অথচ এটিও তো কাপড়েরই পর্দা ছিল!
বর্তমান যুগের অনেক অাধুনিক পছন্দ লোক এমন দাবী ও করে থাকেন যে, ছবির নিষেধাজ্ঞা ইসলামের প্রথম যুগে ছিল। কেননা সেই যুগটা ছিল জাহিলিয়্যাতের এবয় মূর্তিপূজার যুগের একবারেই নিকটবর্তী। মানুষের অন্তরে তখনো একত্ববাদের বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা পায়নি। কিন্তু মানুষের অন্তরে যখন তাওহীদের বিশ্বাস একচ্ছএভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে: তখন আর ছবির নিষধাজ্ঞা বলবৎ থাকেনি। আধুনিক পছন্দ এসব লোকদের দাবীর স্বপক্ষে কুরআন -- সুন্নাহর কোনো দলীল বিদ্যমান নেই। যদি ছবির নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি রহিত হয়ে যেত, তাহলে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকাশ্যভাবেই তা রহিত করার ঘোষনা দিয়ে যেতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে ছবির বিষয়ে নিষেধ করতেন না
ইতিপূর্বে ( উল্লেখিত কোনো কোনো বর্ণনায়) ফকীহ সাহাবায়ে কিরাম এমন ঘরে প্রবেশ করা থেকে নিষেধ করেছেন, যাতে ছবি আছে। এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পরে।সুতরাং এই বিষয়টিও চূড়ান্তভাবে একথাই প্রমাণ করে যে, বর্তমানেও ছবি হারাম হওয়ার বিধানটি অবশিষ্ট ও কার্যকর রয়ছে। কোনোভাবেই এই বিধানটি রহিত হয়নি। আর কীভাবেই এই হুকুমটি রহিত হতে পারে? যেখানে স্বয়ং আল্লাহর নবী এর কারণ উল্লেখ করে বলেছেন যে, এটি আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি কার্যক্রমে সাদৃশ্যতা আবলম্বণতুল্য। এই কারণটি এমন একটি কারণ, যা কোনো কালের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় যে,কারণটি এই যুগে অবশিষ্ট থাকবে আর ওই যুগে অবশিষ্ট থাকবে না।
' শারহুল উমাদাহ ' গ্রন্থে আল্লামা ইবনে দাকীকুল ঈদ ( রহ.) উল্লেখ করেছেন :
« ولقد ابعد عاية البعد من قال : إن ذلك محمول علي الكراهة ، وأن التشديد كان في ذلك الزمان لقرب عهد الناس بعبادة الاوثان . وهذا الزمان حيث انتشر الاسلاموتمهدت قواعده فلا يساويه في هذا التشديد . . . وهذا القول عندنا باطل قطعا ؛ لانه قد ورو في الاحاديث والاخبار عن أمر الآخرة بعذاب المصورين ، وانهم يقال لهم : أحيوا ما خلقتم. وهذه علة مخالفة لما قاله هذا القائل . وقد صرحخ بذلك في قوله صلي الله عليه وسلم : « المشبهون بخلق الله » . وهذه علة عامة مستقلة مناسبة، ولا تخص زمانا دون زمان . وليس لنا أن نتصرف في النصوص المتظاهرة المتضا فرة بمعني خياليّ»
যারা ছবি 'হারাম' হওয়ার বিষয়টিকে ' মাকরূহ '- এর কাতারে এনে বিষয়টিকে হালকা হিসাবে বর্ণনা করেছেন, এবং যুক্তি হিসেবে একথা বলেছেন যে,ছবি হারাম হওয়ার কঠোর বিধানটি তৎকালীন যুগের জন্য ছিল ( যখন ইসলামের সুচনাকাল ছিল।) কেননা তৎকালীন যুগ ছিল মুর্তিপূজার একেবারেই কাছাকাছি যুগ। বর্তমানে যেহেতু ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং ইসলামের বিধিবিধানও সহজ হয়েছে। এই জন্য সেই বিধানের কঠোরতা এখন আর অবশিষ্ট নেই।
আমরা বলব, যারা এহেন খোড়াযুক্তি দাঁড় করিয়ে ইসলামের বিধান সহজায়নে সাহায্য করেছেন, তারা বাস্তবতা থেকে বহুদুরে অবস্থান করেছেন।, আমাদের কাছে তাদের এই অভিমত চূড়ান্তভাবে বাতিল হিসেবে গন্য
কেননা হাদীস সমূহে এবং সাহাবায়ে কিরামের বর্ণনায় আখেরাতে ফটো নির্মাতাদের কঠোর শাস্তি প্রদানের সতর্কবানী উচ্চারিত হয়েছে। কিয়ামতের দিন ফটো নির্মাতাদের উদ্দেশ্যে বলা হবে, তোমরা যা বানিয়েছ, তাতে জীবন দান কর।
সুতরাং আধুনিক পছন্দদের দাবীর সঙ্গে এই কারণটি একেবারেই বিপরীত মনে হয়। এছাড়া যে হাদীসে স্পষ্টভাষায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেছেন
المتشبهون بخلق الله
' ছবি নির্মাতারা আল্লাহর সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যে সাদৃশ্যপূর্ন চলে যায়, এই কারণটি ব্যাপক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বতন্দ্র এবং একটি যথাযথ কারণ। এটি কোনো কালের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। সুতরাং হস্তক্ষেপ করা জায়েয হবে না। কেননা এটি একটি স্পষ্ট কারণ।[শরহুল উমদাহ:খণ্ড-১,পৃষ্ঠা-১৭৬]
আল্লামা দাকীকুল ঈদ ( রহ.)-- এর উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আল্লামা আহমদ শাকের ( রহ.) বলেন :
« هذا ما قال ه ابن دقيق اليد منذ أكثر من 670 سنة يرد علي قوم تلاعبوا بهذه النصوص في عصره أو قبل عصره. ثم يءتي هؤلاء المفتون المضلون ، وأتباعهم المقلدون الجاهلون ، أو الملحدون الهدّامون ، يعيدونها جزعة، ويلعبون بنصوص الاحاديث كما لعب أولئكم من قبل. ثم كان من أثر هذه الفتاوي الجاهلة إن ملئت بلادنا بمظاهر الوثنية كاملة ، فنصبت التماثيل و ملئت بها البلاد تكريما لذكري من نسبت اليه وتعظيما! . . وكان من أثر هذه الفتاوي الجاهلة أن صنعت الدولة ، وهي تزعم إنها دولة اسلامية ، في امة اسلامية ما سمعته مدرسة الفنون الجميلة أو كلية الفنون الجميلة ، صنعت معهدا للفجور الكامل الواضح! ويكفي للدلالة علي ذلك أن يدخله الشبان الماجنون من الذكور والاناث إباحيين مختلطين ، لا يردعهم دين ولا عفاف ولا غيرة ، يصورون فيه الفواجر من الغانيات اللاتي لا يستحيين أن يقن عرايا، ويجلس عرايا، ويضطجعن عرايا . . . ثم يقولون لنا : هذا فن !! لعنهم الله!و لعن من رضي هذا منهم او سكت عليه ! »
[তালীকাতে আহমদ শাকের আলা মুসনাদে আহমদ : খণ্ড --১২, পৃষ্ঠা-- ১৫১, হাদীস নং-- ৭১৬৬]
আধুনিক পছন্দ কিছু কিছু লোক ছবি জায়েয হওয়ার স্বপক্ষে হযরত সুলাইমান ( আ.) এর ঘটনা প্রসঙ্গে কুরাআনে কারীমে নাযিলকৃত একটি আয়াত দ্বারা দলীল পেশের অপপ্রয়াস চালিয়ে থাকেন। কুরআনে কারীমের যে আয়াতটি দ্বারা তারা দলীল পেশ করে থাকেন,সেটি হল:
يعملون له ما يشاء من محاريب و تماثيل وجفان كالجواب و قدور راسيات
তিনি [হযরত সুলাইমান(আ.)] যা চাইতেন (জ্বিন সম্প্রদায়) তাঁর জন্য তাই তৈরি করে দিত। (যেমন সুরম্য প্রাসাদ, ( নানা ধরনের) ছবি, ( বড় বড়) পুকুরের মত থালা এ চুলার উপর স্থাপন করার জন্য বৃহদাকারের ডেগ। '[ সূরা সাবা:আয়াত-১৩]
আধুনিক পছন্দ লোকেরা এই আয়াতটির দ্বারা দলীল পেশ করে বলে থাকেন যে, কুরাআনের এই আয়াত দ্বরা বোঝা যায় যে, জ্বিন সম্প্রদায় হযরত সুলাইমান ( আ.) এর জন্য মূর্তি নির্মাণ করত। আর আল্লাহ তাআলা এই বিষয়টিকে পরোক্ষভাবে তাঁর নেয়ামত হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং বোঝা গেল, মুর্তি নির্মান করা হারাম নয়। কিন্তু তাদের এই দলীল উখাপন দুই কারণে সঠিক নয়। প্রথম কারণটি হল, আরবী অভিদানে
تمثال
প্রত্যেক ওই ছবি কে বলা হয়, অন্যকোনো বস্তুর আকৃতিতে নির্মিত হয়। যেমন আরভী অভিদান লিসানুল আরব ' ইত্যাদিতে স্পষ্টভাষায় একথাটি উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং এমনটি সম্ভাবনা রয়েছে যে, ওইসব
تماثيل
ছবি ভাস্কর্য যা জ্বিন সম্প্রদায় হযরত সুলাইমান (আ.) এর জন্য নির্মান করে ছিল, তা ছিল প্রানহীন বস্তুর ছবি-- ভাস্কর্য। যেমনটি আল্লামা যমখশরী ( রহ.) তাঁর ' তাফসীরে কাশশাফে' এই আয়াতের ব্যাখ্যার অধীনে উল্লেখ করেছেন :
« ويجوز أن يكون غير صور الحيوان ، كصور الاشجار وغيرها ؛ لان التمثال كل ما صور علي مثل صورة غيره من الحيوان أو غير حيوان »
এমনটির সম্ভাবনা রয়েছে যে, জ্বিন সম্প্রদায় হযরত সুলাইমান ( আ.) এর জন্য সে ছবি-ভাস্কর্য নির্মান করত, তা প্রানহীন বস্তু তথা বৃক্ষ্য ইত্যাদির ছবি- ভাস্কর্য ছিল।কেননা
تمثال
প্রত্যেক ওই ছবি ভাস্কর্যকে বলা হয়, যা অন্যকোনো বস্তুর আকৃতিতে নির্মান করা হয়। হতে পারে সেটি প্রাণযুক্ত বা প্রাণহীন বস্তুর। এর সমর্থন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ 'তাওরাত' এর উদ্বৃতি থেকেও পাওয়া যায়। সেখানে প্রাণীর ছবি-ভাস্কর্য হারাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি বর্তমান সময়ে আমাদের হাতে বিকৃত যে তাওরাত রয়েছে, তাতেও এই হুকুমটিই বিদ্যমান রয়েছে। যেমনটি বলা হয়েছে ' সফরুল খরুজ' গ্রন্থে :
« لاتصنع لك تمثالا منحوتا ولا صورة م مما في السماء من فوق ، واما في الارض من تحت، وما في الماء من تحت الارض»
আপনার জন্য অংকিত কোনো ছবি-ভাস্কর্য নির্মান করা হবে না। এমন কোনো বস্তুর নয়, যার অবস্থান আকাশের উর্ধ্বে বা এমন কোনো বস্তুর নয়, যার অবস্থান ভূমির তলদেশে, পানিতে।' [ ছফরুল খুরুজ' : খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২০]
এ প্রসঙ্গে 'সফরুত তাসনিয়্যাহ 'গ্রন্থের ভাষ্য হল :
« ائلا تفسدوا وتعملوا لانسكم تمثالا منحوتا صورة مثال ما شبه ذكر او أنثي ، شبه بهيمة ما مما علي الارض ، شبه طير ما ذي جناح مما يطير في السماء ، سبه دبيب ما علي الارض ، شبه سمك ما مما في الماء من تحت الارض »
যেন তোমরা ঝগড়া-বিবাদে না জড়িয়ে যাও, ( এইভাবে যে) তোমরা নিজের জন্য এমন অংকিত কোনো ছবি-ভাস্কর্য নির্মান কর, যা কোনো পু:লিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ন। কিংবা এমন কোনো চতুষ্পদ জন্তুর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ন যার অবস্থান ভূমির উপর। কিংবা এমন কোনো পাখির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ন যে, তার পাখার সাহায্যে আকাশে বিচরণ করে থাকে, কিংবা ভূমির উপর বিচরণ করে বেড়ায়, কিংবা ভূমির নিচে পানির ভেতর সাতার কাঁটা মাছের সাদৃশ্যপূর্ন হয়। '[ সফরুত তাসনিয়্যাহ:খণ্ড-৪,পৃষ্ঠা-১৮৬]
প্রসিদ্ধ আছে যে, হযরত সুলাইমান ( আ.) তাওরাতের অনুসারী ছিলেন। সুতরাং একথা স্বীকার করা কষ্ট কর যে, হযরত সুলাইমান( আ.) এমন ছবি-ভাস্কর্য নির্মানের নির্দেশ দিয়েছেন, যা তাওরাতে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে। সুতরাং একথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ওইসব ছবি-ভাস্কর্য জ্বিন সম্প্রদায় হযরত সুলাইমান ( আ.) এর জন্য নির্মান করেছিল, তা ছিল প্রানহীন বস্তুর ছবি-ভাস্কর্য। যেমন বৃক্ষরাজি, ফল-ফলাদি,এবং বিশ্ব জগতের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যাবলীর ছবি- ভাস্কর্য।
এই আয়াতের দ্বারা দলীল উখাপন সঠিক না হওয়ার দ্বিতীয় কারণটি হল এই যে,যদি একথাও মেনে নেয়া হয় যে, হযরত সুলাইমান (আ.) জীবের ছবি-ভাস্কর্য নির্মানের অনুমতি দিয়েছিলেন, তাহলেও মূলনীতি হল,পূর্বেকার শরীয়ত দ্বারা এমন বিষয়ে দলীল উখাপন করা সহীহ নয়, যা আমাদের শরীয়তের নির্দেশের বিপরীত। অাপনার ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছবি-ভাস্কর্যের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। আর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিষেধ আরোপ আমাদের জন্য তা দলীল ও হুজ্জত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:
لكل جعلنا منكم شرعة و منهاجا
'তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমি বিশেষ শরীয়ত এবং বিশেষ তরীকত নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। [ সূরা মায়িদাহ :আয়াত--৪৮]
ইসলামে ফটো-ভাস্কর্যের বিধান-5
ক্যামেরার ছবি বা ফটোগ্রাফির বিধান
ক্যামেরার ছবি যাকে আজকাল ফটোগ্রাফিও বলা হয়ে থাকে। এ জাতীয় ছবির বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী? এ জাতীয় ছবির ক্কেএেও কি ওই একই হুকুম যা হাতে অংকিত ক্কেএে উল্লেখ করা হয়েছে, না এর ভিন্ন কোনো হুকুম রয়েছে?
এ বিষয়ে সমকালীন উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্কিত হয়। মিসরের প্রখ্যাত মুফতী শায়খ আল্লামা মুহাম্মদ বুখাইত ( রহ.)
الجواب الشافي في اباحة التصوير الفوتوغرافي
নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেছেন। ওই পুস্তিকায় তিনি একথা উল্লেখ করেছেন : 'ক্যামেরার ছবি তথা ফটোগ্রাফি মূলত :ছায়া সংরক্ষনের একটি বিশেষ পদ্ধতি। এই শিল্পের বিশেষজ্ঞারা বিশেষ পদ্ধতিতে এই ছায়া সংরক্ষনের পন্থা উদ্ভাবন করেছেন। এটি ওই ছবির পর্যায়ভুক্ত নয়, যে ছবির বিষয়ে শরীয়তে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। কেননা নিষেধাজ্ঞা ওই ছবির ক্ষেএে, যে ছবির অস্তিত্ব বা আবিস্কার ইতিপূর্বে ছিল না। আর ওই ছবিটি এমন প্রাণীর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে, যাকে আল্লাহ তাআলা সৃজন কারেছেন। অথচ এই বিষয়টি ফটোগ্রাফিতে অনুপস্থিত।
কিন্তু আরববিশ্বের অসংখ্য আলেম এবং হিদুস্তানের সব আলেম কিংবা এদের বড় অংশটিই এই ফতোয়া দিয়েছেন যে,ফটোগ্রাফি এবং হাতে অংকিত ছবির হুকুমে কোনো পার্থক্য নেই। আরববিশ্বের সমকালীন কোনো কোনো আলেমের উদ্বৃতি থেকে এই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
শায়খ মোস্তাফা আল-হাম্মামী (রহ.)তাঁর কিতাব
النهضة الاصلاحية
তে উল্লেখ করেছেন :
« واني احب ان تجزم الجزم كله ان التنصوير بآلة التصوير (الفوتوغرافية) كالتصوير باليد تماما، فيحرم علي المؤمن تسليطها للتصوير، ويحرم عليه تمكين مسلطها لالتقاط صورته بها ؛ لانه بهذا التمكين يعين علي فعل محرم غليظ ، وليس من الصواب في شيء ما ذهب اليه احد علماء عصرنا هذا من استباحة التصوير بتلك الآلة بحجة ان التصوير ما كان باليد ، والتصوير بهذه الآلة لا دخل لليد فيه فلا يكون حراما وهذا عندي اشبه بمن يرسل اسدا مفترسا فيقتل من يقتل ، اويفتح ييارا كهربائيا يعدم كل من مر به ، او يضع سما في طعام فيهلك كل من تناول من ذلك الطعام ، فاذا وجَّه اليه اتهام بالقتل قال: انا لم اقتل ، انما قتل السم والكهرباء والاسد. . . »
আমি এই বিষয়টি পছন্দ করি যে,এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা উচিত যে,ক্যামেরার মাধ্যমে তোলা ছবি, একেবারে হতে অংকিন করা ছবির মত। সুতরাং ছবি তোলার জন্য কোনো মুমিনের এটি ব্যবহার করা সম্পুর্ণরূপে হারাম। একইভাবে অন্য কাউকে নিজের ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়াটাও হারাম।কেননা ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়াটাও একটি চূড়ান্ত পর্যায়ের হারাম কাজে সহযোগিতার অন্তভুর্ক্ত । এ সময়কার কোনো একজন আলেম ক্যামেরার মাধ্যমে তোলা ছবি জায়েয হওয়ার স্বপক্ষে দলীল হিসেবে যে কথা বলেছেন যে,ছবি তাকেই বলা হবে, যেটি হাতে অংকন করা হবে। আর যে ছবি যন্ত্রের সাহায্যে তোলা হয় তাতে হাতের কোনো দখলদারিত্ব থাকে না। সুতরাং এ জাতীয় ছবি হারাম নয়। ' ওই আলেমের এহেন দাবী কোনোভাবেই সঠিক ও গ্রহনযোগ্য নয়। আমার কাছে তার এই খোরা যুক্তির উপমা এমন মনে হয় যে, কোনো ব্যক্তি ক্ষুধার্ত বাঘ ছেড়ে দিল,বাঘ ছাড়া পেয়ে কারো উপর আক্রমন করে ফেলল, কিংবা কোনো ব্যক্তি সংযোগসহ বিদ্যুতের তার চলাচলের পথে ফেলে রাখল, সেই তারে স্পর্শে কেউ মারা গেল, কিংবা কোনো ব্যক্তি খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দিল, সেই খাবার খেয়ে কেউ মারা গেল।এরপর যখন ওই হত্যায় তাকে অভিযুক্ত করা হল, তখন সে বলল, আমি তো হত্যা করি নি ; বরং তাকে তো হত্যা করেছে বিষ, বিদ্যুৎ এবং বাঘে। '[ আন--নুহদাতুল ইসলামিয়্যাহ :পৃষ্ঠা -- ২৬৪--২৬৫]
শায়খ মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন আলবানী ( রহ.) তাঁর
آداب الضفاف
আদাবুয যুফাফ 'গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন :
« وقريب من هذا تفريق بعضهم بين الرسم باليد و بين التصوير الشمسي ، يزعم انه ليس من عمل الانسان! وليس من عمله فيه الا امساك الظل فقط!كذا زعموا. اما ذلك الجهد الجبار الذي صرفه المخترع لهذه الآلة حتي استطاع ان يصور في لظة ما لا يستطيعه بدونها في ساعات ، فليس من عمل الانسان عند هؤلآء ! وكذلك توجيه المصور للآلة وتسديدها نحو الهدف المراد تصويره ، وقبيل ذلك تركيب ما يسمونه بالفلم ثم بعد ذلك تحميضه، وغير ذلك مما اعرفه، فهذا ايضا من عمل الانسان عند اولئك ايضا . . . و ثمرة التفريق عندهم انه يجوز تعليق صورة رجل مثلا في البيت اذا كانت مصورة بالتصوير الشمسي،[كما قاله أ.د.وهبة الزهيلي في كتابه فتاوي العصر/ص188] ولايجوز ذلك اذا كانت مصورة باليد !. . . اما انا فلم ار له مثلا الا جمود بعض اهل الظاهر قديما ، مثل قول احدهم في حديث : « نهي رسول الله صلي الله عليه وسلم عن البول في الماء الراكد» قال: فالنهي عنه هو البول في الماء مباشرة اما لو بال في إناء ثم اراقه في الماء فهذا ليس منهيا عنه» .
কেউ কেউ ( উপরে) বর্ণিত পার্থক্যের কাছাকাছিই হাতে অংকিত ছবি এবং ফটোগ্রাফির পার্থক্য উল্লেখ করেছেন। তাদের ধারণা হল, ফটোগ্রাফিতে মানুষের হস্তক্ষেপ নেই।এতে মানুষের কাজ এতটুকুই যে, সে শুধু ছায়াটিকে আটকে দিয়েছে। এটি তো তাদের ধারণা। অন্যথায় ক্যামেরার আবিস্কারক ক্যামেরা আবিস্কারে যে মেধাশ্রম ও চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতেই মানুষ মুহুর্তের মাঝে ফটো ওটাতে সক্ষম হচ্ছে, যা ক্যামেরা না থাকলে কয়েকঘণ্টা চেষ্টার পরও সম্ভবপর ছিলনা। এতসব কিছুর পরও এইসব লোকদের কাছে এতে মানুষের কার্যক্রমের দখল নেই বলাটা কোন যুক্তিতে, তা বোধগম্য নয়। ছবি তোলার ক্কেএে তো ফটোগ্রাফারের ভূমিকা, তার প্রস্ততি, যার ফটো তোলা হবে ক্যামেরা তার দিকে যথাযথভাবে তাঁক করা, ক্যামেরার ভেতর, ফিল্ম ইত্যাদি লাগানো, এছারা এমন আরো অনেক কাজ রয়েছে, সেসব কাজ সম্পর্কে আমার ধারণা নেই, এইসব কাজ-ই কি ওইসব ব্যক্তিদের কাছে মানুষের কার্যক্রম হিসেবে বিবেচ্য হয় না। তাদের কাছে এই দুই ধরণের
ছবির পার্থক্যের ফলাফর এই-ই দাঁড়াবে যে,কোনো মানুষের ক্যামেরাবন্দী ছবি ঘরে টানানো তাদের অভিমত অনুযায়ী জায়েয হবে, আর হাতে অংকিত ছবি টানানো জায়েয হবে না। আমি তো তাদের এই শুস্ক চিন্তাধারাকে ওইসব প্রাচীন আহলে যাহের-এর-চিন্তধারার সমতূল্য মনে করি, যেসব আহলে যাহের বলে বেড়ায় যে, হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থীর পানিতে পেশাব করতে বারণ করেছেন। নির্দেশটি মূলত: সরাসরি পানির ভেতর পেশাব করতে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি ( সরাসরি পানির ভেতর পেশাব না করে) কোনো পাএে পেশাব করে, অতঃপর পাএে সংরক্ষিত পেশাব যদি পানিতে প্রবাহিত করে দেয়া হয়, তাহলে ওই বিষয়টি এই হাদীসের মাধ্যমে নিষিদ্ধ নয়। '(আদাবুয যুফাফ :আলবানী রচিত)
শায়খ মোহাম্মদ আলী আসসাবুনী ( রহ.) তাঁর
حكم الاسلام في التصوير
এবং
تفسير آيات الاحكام
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন :
« إن التصوير الشمسي لا يخرج عن كونه نوعا من انواع التصوير .و فما يخرج بالآلة يسمي صورة والشخص مصورا، فهو وان كان لا يشمله النص الصريح لانه ليس تصويرا باليد ، وليس فيه مضاهاة لخلق الله ، الا انه لا يخرج عن كونه ضربا من ضروب التصوير ، فينبغي ان يقتصر في الاباحة علي حذد الضرورة ».
ফটোগ্রাফিও ছবির প্রকারসমূহের মধ্যে এক প্রকারের অন্তর্ভূক্ত। এই কারণেই তো যন্ত্রের ( ক্যামেরার) মাধ্যমে যে ছবি ওঠানো হয়, তাকেই ছবি-ই বলা হয় এবং যিনি তোলেন তাকে ' ফটোগ্রাফার বলা হয়। সুতরাং এটি যদিও
نص صريح
(শরীয়তের বিধানে সুনিদির্ষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক)-এর দ্বারা ছবি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় না, কেননা এটি হাত দ্বারা অংকিত ছবি নয়, আর এতে আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্যতাপূর্ন হওয়ার বিষয়টিও অনুপস্থিত থাকে। এতদসও্বে এটিকেও ছবির এক প্রকার হওয়া থেকে বাদ দেয়ার অবকাশ নেই। সুতরাং নিজস্ব প্রয়োজনের ক্ষেএেই এটিকে বৈধতা সীমারেখায় নেয়া উচিত।
শায়খ ডাক্তার মুহাম্মদ সাঈদ রমযান আলবতী ( রহ.) তাঁর
فقه السيرة
'ফেকহুস সীরাত 'গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন :
« والحق انه لا ينبغي تكلف اي فرق بين انواع التصوير المختلفة حيطة في الامر ، ونظرا ل اطلاق لفظ الحديث . هذا يتعلق بالتصوير . اما الاتخاذ ، فلا فرق بين الفوتوغرافي وغيره».
সঠিক কথা হল যে, হাদীসের সাধারণ ভাষ্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করে এবং হুকুমকে ব্যাপকতর করার লক্ষ্যে ছবির বিভিন্ন প্রকারে পার্থক্য নির্ণয়ের অপচেষ্টা করা অনুচিত। শরীয়তের এই হুকুম তো সব ছবির ক্ষেএেই । আর ছবি চিএণের বিষয়টি হতে পারে সেটি ক্যামেরাবন্দী ছবি আবার হতে পারে সেটি হাতে অংকিত ছবি। এতে পার্থক্য সৃষ্টির কার কোনো হেতু নেই। '[ ফিকহুস সীরাত : পৃষ্ঠায়-৩৮০]
প্রকৃত সত্য হল, চিএণ এবং অংকনের মাধ্যমে নির্মিত ছবি এবং ক্যামেরাবন্দী ছবি এ দু'য়ের মাঝে যে পার্থক্য রয়েছে, মূলত : এর মজবুত কোনো ভিওি নেই। শরীয়তের নীতি হল এই যে, যে জিনিস মৌলিকভাবে হারাম এবং শরীয়ত অসমর্থিত, যন্ত্র পরিবর্তনের কারণে তার হুকুমে পরিবর্তন হয় না। যেমন শরাব হারাম, হতে পারে এটি প্রস্তত করা হয়েছে, আবার এমনও হতে পারে যে, এটি আধুনিক মেশিনারীর সাহায্য প্রস্তুত করা হয়েছে। অথবা হত্যা করা হারাম, হতে পারে হত্যা কার্যক্রম সংঘটিত হয়ে চাকু-ছূরির সাহায্যে, আবার হতে পারে তা বন্দুকের গুলির সাহায্যে। ছবির বিষয়টি ঠিক এমন-ই। শরীয়ত ছবি বানানো এবং সংরক্ষন নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে। সুতরাং ছবির নির্মাতা এই ছবি তুলির সাহায্যে প্রস্তত করেছে, না ক্যামেরাবন্দি করে করেছে, তাতে হুকুমের ক্ষেএে কোনো ফরাক হবে না।
والله سبحانه وتعال اعلم
ইসলামে ফটো-ভাস্কর্যের বিধান-6
প্রয়োজনের সময় ছবি তোলা
উপরের আলোচনায় শরীয়তে ছবির বিধান কী?
সেই বিষয়টি বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।বিশেষ কোনো প্রয়োজনে ছবি তোলার বিষয়টি যেমন পাসপোর্টের জন্য কিংবা ভিসাপ্রাপ্তির জন্য কিংবা ন্যাশনাল পরিচিতি কার্ড সংগ্রহের জন্য ছবি তোলা কিংবা এমন বিশেষ কোনো মুহূর্তে ছবি তোলা যেখানে মানুষের মুখমণ্ডল শনাক্ত করা অপরিহার্য হয়, এ জাতীয় নিতান্ত প্রয়োজনের সময় ছবির অনুমতি দেয়া সমীচীন বলেই মনে হয়। কেননা ফুকহায়ে কিরামও প্রয়োজনের ক্ষেএে হারাম হওয়ার হুকুমটি শিথিল হিসেবে গন্য করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মদ ( রহ.) 'সিয়ারুল কাবীর 'গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন:
« وإن تحققت الحاجة له الي استعمال السلاح الذي فيه تمثال فلا بأس باستعماله»
যাতে কোনো ছবি অংকিত আছে,এমন কোনো বস্তু ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে কোনো সমস্যা নেই। '
ইমাম সারাখসী ( রহ.) এই ভাষ্যের অধীনে তাঁর ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন :
« لانت المواضع الضرورة
কেননা প্রয়োজনের মুহুর্তে হারাম-এর হুকুম রহিত হয়ে থাকে, যেমন প্রয়োজন হলে মৃতপ্রাণী আহার করা। '[ শরহুস সারাখসী : খণ্ড-২, পৃষ্ঠা- ২৭৮]
ইমাম সারাখসী ( রহ.) একথাও বলতেন :
« إن المسلمين يتبايعون بدراهم الاعاجم فيها التمثال بالتيجان، ولا يمنع احد عن المعاملة بذلك »
নিশ্চয়ই মুসলিম জনগোষ্ঠী অনারবীদের এমন টাকাকড়ির মাধ্যমে বেচাকেনা করে থাকেন, যেসব টাকা-পয়সায় মুকুট পরিহিত সম্রাটের ছবি অংকিত থাকে। এসব টাকা-পয়সার মাধ্যমে লেনদেন করতে কেউ নিষেধ করেন না। '[শরহুস সারাখসী :খণ্ড-২,পৃষ্ঠা -- ২৭৮]
অন্য একস্থানে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন :
« لا بأس بان يحمل الرجل في حال الصلاة دراهم العجم ، وان كان فيها تمثال الملك علي سريره وعليه تاجه»
আজমীদের (অনারবীদের) টাকা-পয়সা সঙ্গে নিয়ে মানুষের জন্য নামায আদায়ে কোনো সমস্যা নেই।যদিও সেই টাকা-পয়সায় সিংহাসনে আরোহিত মুকুটধারী সম্রাটের ছবি অংকিত থাকে। '[শরহুস সারাখসী:খণ্ড-৩,পৃষ্ঠা-২১২]
এছারা সহীহ হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত আছে যে,হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়েশা সিদ্দিকা ( রা.)-কে কাপড়ের পুতুল দ্বারা খেলাধুলা করার অনুমতি দিয়েছেন।এছাড়া ফুকহায়ে কিরামও সাক্ষ্য দেয়ার সময় মহিলাদেরকে তাদের মুখমণ্ডল খোলার অনুমতি দিয়েছেন।
টিভি এবং ভিডিও
টিভি এবং ভিডিও'র বিষয় দু'টি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, নব আবিষ্কৃত এই দু'টো মাধ্যমে নিষিদ্ধ ক্রিয়াকর্মের সয়লাব বয়ে দেয়া হচ্ছে। বেহায়াপনা, নোংরামী মহিলাদের সাজগোজ করিয়ে অর্ধালোঙ্গ অবস্থায় উখাপন করা ছাড়াও সীমাহীন অপসংস্কৃতি ও নোংরামীর মাধ্যমে সমগ্র দুনিয়ার পরিবেশকে চরমভাবে দূষিত করা হচ্ছে। এসব বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য করলে এই দু'টো যন্ত্র ব্যবহার নিঃসন্দেহে হারাম। কিন্তু যন্ত্র দু'টো যদি উপরোক্ত দোষগুলো থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকে, তাহলে কি এ দু'য়ের মাধ্যমে প্রদর্শিত ছবির ওপর হুকুম আরোপ করে একথা বলা হবে যে, ছবি হওয়ার ভিওিতে এগুলো দেখা হারাম?
এ বিষয়ে অামার সংশয় দ্বিধা রয়েছে। কেননা ছবি ওটিই হারাম যা এমনভাবে চিএিত বা অাংকিত হবে কিংবা এমনভাবে নির্মিত হবে, যা কোনো জিনিসের উপর স্থীর এবং স্থীয়ী হবে। আর কাফেররা এজাতীয় ছবিকে কেন্দ্র করেই পূজা-আর্চনা ও উপাশনায় মেতে ওঠত। কিন্তু যে ছবি স্থীর ও স্থীয়ী নয় এবং যে ছবি কোনো বস্তর উপর স্বতন্ত্রভাবে চিএিত নয়,এজাতীয় ছবি ছবির পরিবর্তে প্রতিবিম্ব বা ছায়ার সঙ্গেই বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ। এ বিষয়টি একবারেই স্পষ্ট যে, টিভি এবং ভিডিওর মাধ্যমে প্রদশির্ত ছবি কোনোভাবেই স্থীর এবং স্থীয়ী চিএ নয়। এসব ফিল্মের সাহায্যে সংরক্ষিত থাকে। কেননা যে অবস্থায় ক্রীনে সরাসরি মানুষের চিএ প্রদর্শিত হয়ে থাকে, তখন ( জীবন্ত) মানুষ ক্যামেরার অপর দিকে উপস্থিত থাকে। এই অবস্থাতে মানুষের ছবি ক্যামেরায় যেমনিভাবে স্থীর ও স্থীয়ী থাকে না, তেমনিভাবে তা স্ক্রীনেও স্থীর ও স্থীয়ী থাকে না। প্রকৃতঅর্থে এগুলো বিদ্যুতের পারমাণিক ক্রিয়ার ফল বিশেষ। যা পর্যায়ক্রমে ক্যামেরা থেকে স্ক্রীনের দিকে প্রত্যাবর্তিত হতে থাকে। অতঃপর পূর্বেকার সেই সিরিয়াল অনুযায়ী স্ক্রীনের ওপর ভেসে ওঠে।এরপর সেই পরমাণুগুলো নিজে নিজেই নিঃশেষ হয়ে যায়।
আর যে অবস্থাতে ছবিগুলোকে ভিডিও ক্যাসেটে ধারণ করে সংরক্ষন করা হয়ে থাকে, ওই অবস্থাতেও এই ক্যাসেটের ফিতায় ছবিগুলো অংকিত বা চিএিত থাকে না ;বরং সেগুলো বিদ্যুতের পারমণিক ক্রিয়া।যাতে কোনো ছবির অস্তিত্ব থাকে না। অবশ্য যখন পরমাণুগুলো স্ক্রীনের ওপর ভেসে ওঠে, তখন পুনরায় পূর্বেকার সিরিয়াল অনুযায়ী তা দর্শনের আওতায় এসে যায়। কিন্তু তারপরও সেগুলো স্ক্রীনে স্থীর এবং স্থীয়ী হয় না ;বরং একবার ভেসে ওঠার পর তা পুনরায় নিঃশেষ হয়ে যায়। সুতরাং কোনো পর্যায়েই একথা সাব্যস্ত করা যায় না যে, ওই ছবিগুলো স্থায়ীভাবে চিএিত বা অংকিত হয়ে আছে। সুতরাং এজাতীয় ছবির ক্ষেএে স্থায়ী ছবির হুকুম আরোপ করা একটি কঠিন বিষয়।
رحم الله امرا هداني للصواب في ذلك ،والله سبحانه أعلم