আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
56 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম শেখ্,

আশা করি আল্লাহ সুভানা-হুয়া-তালা আপনাদের ভালো এবং নিরপদে রেখেছেন। আমি আপনাদের কাছে আপনাদের ইল্ম এর আলোকে সাহায্য কামনা করছি আল্লাহতালা সহজ করে দিক।

আমি গত ৪ মে ২০২২ সাল এ বিয়ে করি। কিন্ত আমার আর আমার স্ত্রীর মাঝে বেশ কিছু  অমিল এবং অশান্তি থাকায় বিয়ের পর থেকেই সবসময় ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত।

এর মাঝে আমি আমার স্ত্রী কে বাংলাদেশে রেখে ১১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে এক বছরের জন্য বিদেশে যাই। বিদেশে থাকা অবস্থায়ও আমাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই ছিল।

এর প্রেক্ষিতে আমি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো আমার স্ত্রী কে  wahtsapp এর মাধ্যমে তালাক লিখে পাঠাই (বিদেশে থাকা অবস্থায়)।  পরবর্তীতে আমাদের মাঝে ঝগড়া মিটমাট হয়ে গেলে সে আমাকে জানায় আমি তাকে যখন প্রথব বার তালাক দেই তখন সে ১ মাসের অন্ত:সত্ত্বা  ছিল (পরবর্তীতে বাচ্চা হয়নি)।

এর পর ২০২৩ সালের মার্চে আমার স্ত্রীর উপর বিভিন্ন কারনে অসন্তুষ্ট হয়ে আমি দ্বিতীয় বার ফোন-এর মাধ্যমে মুখে উচ্চারণ করে তালাক দেই (বিদেশে থাকা অবস্থায়)। এর একমাস পর সমস্যা মিটমাট হয় এবং আমার পুনরায় সম্পর্ক উন্নয়নের চেস্টা করি।

কিন্তু আবার সম্পর্কের অবনতি হলে ২০২৩ সালে জুন মাসে আমাদের মাঝে ফোনে তুমুলঝগড়া হয় এবং আমি রাগের মাথায় তাকে তৃতীয়বারের মত ফোনের মাধ্যমে উচ্চারন করে তালাক দেই।

উল্লেখ্য এই ৩ তালাক এর মাঝে একবারও আমি দেশে আসি নাই এবং আমাদের একসাথে থাকা হয় নাই এবং ৩টা তালাকই আমি বিদেশ থেকে মেসেজ দিয়ে অথবা ফোন-এর মাধ্যমে দিয়েছি।

এছাড়াও তৃতীয় তালাকটি আমি ঝগড়ারত অবস্থায় প্রচন্ড রাগের মাথায় দেই। দেয়ার পর পরই আমি সম্বিত ফিরে পাই এবং তওবা ইস্তেগফার করি, টানা ৩ দিন সাওম পালন করি।
উপরিউক্ত ঘটনার ক্ষেত্রে আমার নিম্নোক্ত প্রশ্ন গুলোর ব্যাখ্যা দিলে অনেক বড় মেহেরবানি হবে। আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব ইন শা আল্লাহ।
১। আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ কি সম্পন্ন হয়েছে?

২। বিবাহ বিচ্ছেদ পরিপূর্ণ হয়ে থাকলে তা কি অফেরতযোগ্য?
৩। স্ত্রী কে ফেরত নেয়ার কোন সুযোগ আছে কি না?

1 Answer

0 votes
by (556,680 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

সুরা বাকারার ২২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آَتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلَّا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (229)

"এ তালাক দু'বার, অতঃপর স্ত্রীকে হয় বিধিসম্মতভাবে রাখবে অথবা সদয়ভাবে বিদায় দেবে। আর স্ত্রীকে দেয়া কোন কিছু ফেরৎ নেয়া তোমাদের পক্ষে উচিত নয়। তবে যদি তাদের উভয়ের আশংকা হয় যে তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না এবং তোমরা যদি আশংকা কর যে তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না, তবে (সে অবস্থায়) স্ত্রী কোন কিছুর বিনিময়ে (স্বামী থেকে) নিষ্কৃতি পেতে চাইলে তাতে (স্বামী-স্ত্রীর) কারো কোনো পাপ নেই। এসব আল্লাহর সীমারেখা। কাজেই তা লংঘন কর না। যারা আল্লাহর (নির্দিষ্ট) সীমারেখা লংঘন করে তারাই অত্যাচারী।" (২:২২৯)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَبُعُولَتُهُنَّ أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَلِكَ إِنْ أَرَادُواْ إِصْلاَحًا

আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। (সূরা বাকারা ২২৮)

★কয়েকটি জিনিস এমন রয়েছে, যেগুলো ইচ্ছা, অনিচ্ছায় বা না বুঝে করা হলেও সর্বাবস্থায় সেগুলো কার্যকর হয়ে থাকে।

হাদিস শরিফে এসেছে,

ثَلاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ : النِّكَاحُ ، وَالطَّلاقُ ، وَالرَّجْعَةُ

‘রাসূল (সা.) বলেছেন, তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা গোস্বায় হোক বা হাসি ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকরী হয়ে থাকে। বিবাহ, তালাক ও রজয়াত।’ [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২১৯৪; সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ১১৮৪]

★স্পষ্ট বাক্যে এক তালাক বা দুই তালাক দেয়ার পর স্বামীর অধিকার থাকে, স্ত্রীকে ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রাজআত করা তথা স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনা। 

রাজআত দু’ভাবে হতে পারে–
১. কথার মাধ্যমে ইদ্দতের ভেতর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো। যেমন সরাসরি অথবা ফোনে অথবা কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে একথা বলা যে, ‘তোমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলাম’। একথার মাধ্যমে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পুনঃবহাল হয়ে যাবে।
২. কর্মের মাধ্যমে ইদ্দতের ভেতর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো। অর্থাৎ স্ত্রীর সঙ্গে এমন কোনো আচরণ দেখানো যা একজন স্বামী একজন স্ত্রীর সঙ্গেই দেখাতে পারে। যেমন তাকে চুমো দেয়া কিংবা তার সঙ্গে সহবাস করে নেয়া ইত্যাদি। এজাতীয় কর্মের মাধ্যমেও তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পুনঃবহাল হয়ে যাবে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ২০২৩ সালের মার্চে আপনি যে দুটি তালাক দিয়েছেন,সেগুলো নিঃসন্দেহে পতিত হয়েছে।

এখন লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো ২০২৩ সালের মার্চে যে আপনি তালাক দিয়েছিলেন,তারপর কি স্ত্রীকে "ফিরিয়ে নিলাম" এই জাতীয় বাক্য বলে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন?
বা ২০২৩ সালের মার্চে যে আপনি তালাক দিয়েছিলেন,তারপর থেকে ২০২৩ সালে জুন মাসে যে তালাক দিয়েছিলেন,এর মাঝে কি স্ত্রীর পূর্ণ ৩ হায়েজ অতিক্রম হয়েছিলো?

২০২৩ সালের মার্চে যে আপনি তালাক দিয়েছিলেন,তারপর কি স্ত্রীকে "ফিরিয়ে নিলাম" এই জাতীয় বাক্য বলে থাকেন,অর্থাৎ স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে থাকেন এবং 
২০২৩ সালের মার্চে যে আপনি তালাক দিয়েছিলেন,তারপর থেকে ২০২৩ সালে জুন মাসে যে তালাক দিয়েছিলেন,এর মাঝে স্ত্রীর পূর্ণ ৩ হায়েজ অতিক্রম না হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে আপনার স্ত্রীর উপর ৩ তালাক পতিত হয়েছে।
এখন শরয়ী হালালাহ ব্যাতিত তাকে ফিরিয়ে নেয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।

★আর যদি ২০২৩ সালের মার্চে যে আপনি তালাক দিয়েছিলেন,তারপর কি স্ত্রীকে "ফিরিয়ে নিলাম" এই জাতীয় বাক্য না বলে থাকেন,স্ত্রীকে ফিরিয়ে না নিয়ে থাকেন এবং 
২০২৩ সালের মার্চে যে আপনি তালাক দিয়েছিলেন,তারপর থেকে ২০২৩ সালে জুন মাসে যে তালাক দিয়েছিলেন,এর মাঝে স্ত্রীর পূর্ণ ৩ হায়েজ অতিক্রম হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে আপনার স্ত্রীর উপর শুধুমাত্র দুই তালাকই পতিত হয়েছে।

উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রজ'আত করে স্ত্রীকে নিয়ে পুনরায় ঘর সংসার করতে পারবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...