আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
42 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (16 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া তো ফরজে কেফায়া আর পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাক্তার তো রয়েছেই। তাহলে একজন দ্বীনদ্বারের জন্য কীভাবে জায়েজ হয় এসব পেশায় যুক্ত হওয়ার জন্য সহশিক্ষায় জড়ানো কিংবা বেদ্বীন পরিবেশে জ্ঞান অর্জন করা? সেখানে তো প্রতি মুহূর্তে পর্দা নষ্ট হয়। চোখ, অন্তর, জবান, চেহারা কিছুরই হেফাজত করা সম্ভব নয়। চোখের হায়া দিনদিন কমে যায়। এমনকি পরীক্ষায় পাশ করার জন্য গায়রে মাহরামের গুপ্তাঙ্গের পর্যন্ত চিকিৎসা করতে হয়। একমাত্র আমি ছাড়া যদি অন্য কেউ না থাকে আর তার প্রাণ সংকটময় হয় তাহলে তখনই না তার সতর আমার জন্য চিকিৎসা করা জায়েজ। তা নাহলে শুধু পরীক্ষায় পাশ করার জন্য কি এটা জায়েজ হয়????
ছেলেমেয়ে একসাথে ঘেষে সার্জারি দেখা, অপারেশন থিয়াটারে পুরুষদের সাথে সার্জারি করা, পরীক্ষায় পাশ করতে গায়রে মাহরাম রোগীকে ধরে চিকিৎসা করা, এডমিশন পরীক্ষা বা ভাইভাতে মুখ খুলতে বাধ্য করা, গায়রে মাহরামের সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলা, পড়ালেখায় শিরকি বিষয় থাকা, শিক্ষকদের বিভিন্ন ফেতনাময়ী কথাবার্তা এসব কিছু তো হারামের পর্যায়েই পড়ে। তাহলে এই পরিবেশে গিয়ে কি এই পেশায় যুক্ত হওয়া হালাল হয় আদৌ??? একটা হালাল পেশায় যুক্ত হয়ে সমাজে দাওয়াহ ছড়াতো গিয়ে কি এতগুলো হারামকে দেখেও না দেখার ভান করা যাবে? আমি কি একা সেই পরিবেশে ইমান নিয়ে টিকে থাকতে পারব? আমি যদিও সর্বোচ্চ পর্দাবৃত হয়ে থাকার চেষ্টা করি না কেন কোনো গায়রে মাহরামের যদি আমার দিকে তাকিয়ে কোনো খাহেশাত আসে তাহলে সেটার গুনাহও তো আমার কাঁধে নিতে হবে। আর সেই পরিবেশের তাহসীর তো আমার উপর পড়বেই। আমি নিজে ইমান নিয়ে শেষ পর্যন্ত ফিরতে পারবো কিনা তাও জানিনা। আগে তো নিজেকে বাঁচাব, অতঃপর পরিবার, পরে না হয় সমাজ। কিন্তু অন্যের ফিকিরে কি নিজেকে আগুনে ফেলে দেয়া ঠিক হবে? আমি সেই পরিবেশে এত গুনাহতে জর্জরিত থাকলে কি আল্লাহ আমার থেকে দ্বীনের খেদমত নিবেন? কিংবা আমাকে হেদায়েতের পথে টিকিয়ে রাখবেন? তাহলে দুনিয়াবি পড়ালেখা করতে গিয়ে কি এসব হারামে শিথিলতা পাওয়া যাবে??????

এখন নাকি পন্থা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এমন দ্বীনি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা যেখানে দুনিয়াবি পড়ালেখা কোনো ফেতনা ছাড়াই করা যাবে। আর যারা কিনা সমাজের উঁচু পদে আছেন তাদের দাওয়াহ দিয়ে দ্বীনের পথে ফেরানোর চেষ্টা করা। আর যারা কিনা ফতোয়া দেন এসব জায়েজ তাদের নসল তো আর ওইদিকে যাচ্ছে না। ওরা তো মাদ্রাসাতেই পড়ছে। তাহলে দাওয়াহর নিয়তে কেন ওলামাদের সন্তানেরা স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ছে না? সিস্টেমের ভিতরে ঢুকে তো আর সিস্টেম চেঞ্জ সম্ভব নয়। সমাধান তো আলেমা হওয়ার পর জেনারেল লাইনের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ইসলামি পদ্ধতি মেনে নানা উৎস থেকে জ্ঞানার্জন করে নিজেদের দক্ষতা বাড়ানো আর পরে দাওয়াহ দেয়া। কিন্তু আগে তো পরিবার, পরে প্রতিবেশী আর পরেই না সমাজ।

আমার মনে শুধু এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি কি মাদ্রাসার পথ বেছে নিব নাকি জেনারেল লাইন। আমার তো মনে হয়েছে জেনারেলের পথে পা বাড়ানো ঠিক হবে না। কিন্তু আপনাদের এসব পড়াশোনা জায়েজের ফতোয়া আমাকে জেনারেল লাইনের প্রতি একটা টান অনুভব করাচ্ছে। তাই আমার এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আমাকে এখন কী করা উচিত একটু পরামর্শ দেন শায়খ।

1 Answer

0 votes
by (704,440 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

প্রয়োজনঅপরাগতা কিংবা ঠেকায় পড়ার পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ অবস্থায় নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শরীয়ত তাদের ওপর এমন দায়িত্ব আরোপ করে নিযার কারণে তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। 

 

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)

 

রাসূলুল্লাহ  বলেন,

الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا

নারী গোপন জিনিসযখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)

 

নারী মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ  বলেন,وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম।’ (আবু দাউদ ৫৬৭)


পর্দা রক্ষা করা ফরজ। 

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্ল াহ সাল্ল াল্ল াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল াম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

অসুস্থ্য মানুষদের সেবা করাও সওয়াবের কাজ। যেহেতু মহিলাদের  জন্য মহিলা ডাক্তারের প্রয়োজন। 
তাই মহিলাদের জন্য পর্দার বিধান পুরোপুরি ভাবে পালনের শর্তে ডাক্তারী শিক্ষা অর্জন করা জায়েজ আছে।  
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৪/২৫৬)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা (আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটি)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে,
قد تجد الطبيبة حرجا وصعوبات في تغطية وجهها عن غير المحارم أثناء عملها، فهل هذا يعتبر من الضرورة لكشفه؟
মহিলা ডাক্তার তার কর্মস্থলে ডিউটি করার সময় পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখতে সমস্যা ও কষ্ট হয়। সুতরাং চেহারা খোলা রাখার জন্য এটাকে জরুরত হিসেবে গণ্য করা যাবে কিনা?

তাঁরা উত্তর দিয়েছেন,
يحرم على المرأة كشف وجهها لغير محارمها، وليس هناك ضرورة لكشف الوجه في العمل
নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা হারাম। আর ডিউটি করার সময় প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চেহারা খুলে রাখার জরুরত বিদ্যমান নেই। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১৭/২৭৭)

বিস্তারিত জানুনঃ  

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
নারীদের নার্স হওয়া জায়েজ আছে।
তবে পরিপূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করতে হবে।
ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে।    
শুধুমাত্র নারীদের সেবা করতে হবে।  
সহকর্মীদের সাথে পর্দা মেইনটেইন করে কথা বলবে,অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে হেফাজতে থাকবে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য যদি বেপর্দা হতে হয়,শরীয়াহ বিরোধী কাজ করতে হয়,সেক্ষেত্রে বেপর্দা হওয়া এবং শরীয়াহ বিরোধী কাজ করার গুনাহ তো অবশ্যই হবে।

তদুপরি উলামায়ে কেরামগন বিশেষ জরুরতের স্বার্থে কিছু মুসলিমদেরকে ডাক্তার হওয়ার প্রতি উদ্ভুদ্ধ করেছেন,যাতে সমাজে পুরুষরা পুরুষের চিকিৎসা দিতে পারে, নারীরা নারীদের চিকিৎসা দিতে পারে, তদুপরি শিক্ষা অর্জন করতে গিয়ে শরীয়াহ বিরোধী কাজ হয়ে গেলে সেই কাজ করার গুনাহ তো অবশ্যই হবে।

তবে কোনো ভাবেই গুনাহ হতে বাঁচা সম্ভব না হলে মেডিক্যাল শিক্ষার পাশাপাশি ইস্তেগফার পাঠ করে যাওয়ারও পরামর্শ উলামায়ে কেরামগন দিয়ে থাকেন।

★সুতরাং আপনি সহ শিক্ষার শর্তাবলি মেনে জেনারেল লাইনে পড়তে পারলে আপনার প্রতি জেনারেল লাইনে পড়ারই পরামর্শ থাকবে। 

সহ শিক্ষার বিধান জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (16 points)
কিন্তু সমাজে ফিতনা নাকি চরম পরিমাণে বেড়ে গেলে পুরুষদের জন্যেও ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়? সেক্ষেত্রে নাকি মহিলাদের কোনোভাবেই বাইরে বের হওয়া উচিত না। কেননা দুনিয়াবি ইলম শিখতে গিয়ে একটা হালালের পিছনে হাজারটা হারামের সাথে জড়াতে হবে। আর দাওয়াহর নিয়তে হারাম পরিবেশে না গিয়ে নাকি হালাল পরিবেশ সৃষ্টি করার দিকে খেয়াল রাখা উচিত। আর এই দায়িত্ব নাকি নারী না পুরুষদের উপরে। নারীরা নাকি নিজ পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হবেন আগে। কেননা তাকে সমাজ নয় পরিবার সম্পর্কে জবাবদিহিতা করতে হবে। আর তার জান্নাত লাভের ৪টি কাজের মধ্যে পরিবার সামলানোটাই দায়িত্ব সমাজ নয়। 

আর আপনারা বলেছেন যে গুনাহ হবে। তার মানে আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে গিয়ে জীবনের একটা বড় সময় আল্লাহর নাফরমানিতে কাটাব? আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন কি এর জন্য? আমি আল্লাহর রহমত হতে মাহরুম হবো না তো?
by (704,440 points)

আপনি যাহা যাহা বলেছেন,তাহা সঠিক।
হ্যাঁ, নারীরা নিজ পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হবেন আগে। কেননা তাকে সমাজ নয় পরিবার সম্পর্কে জবাবদিহিতা করতে হবে। আর তার জান্নাত লাভের ৪টি কাজের মধ্যে পরিবার সামলানোটাই দায়িত্ব, সমাজ নয়। 

ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে গিয়ে জীবনের একটা বড় সময় যদি আল্লাহর নাফরমানিতে কাটাতে হয়,সেটার অনুমতি শরীয়ত দেয়না।

আপনার প্রতি পরামর্শ হলো,সহ শিক্ষার শর্তাবলি মেনে জেনারেল লাইনে পড়তে পারলে আপনার প্রতি জেনারেল লাইনে পড়তে পারেন।

সহ শিক্ষার শর্তাবলি মানা সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে জেনারেল লাইনে না পড়ারই পরামর্শ থাকবে। 


আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...