হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
উম্মে হানি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে,
‘একদিন রাসূলুল্লাল্লাহ (সা.) তার ঘরে প্রবেশ করে পানি চাইলেন। তখন রাসূল (সা.) নিজে পানি পান করলেন এবং উম্মে হানি (রা.)কেও পানি দিলেন। তখন উম্মে হানি (রা.) পানি পান করেন। এরপর বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তো রোযাদার ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন: নফল রোযাদার নিজেই নিজের কর্তা। ইচ্ছা করলে সে রোযা সমাপ্ত করতে পারে; আবার ইচ্ছা করলে রোযা ভেঙ্গে ফেলতে পারে।’
[আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৩৮৫৪) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন:
‘একদিন নবী (সা.) আমার কাছে (ফজরের পর থেকে দীর্ঘ বেলা পর্যন্ত দাওয়া কাজ সেরে) সে বললেন: তোমাদের কাছে কোনো কিছু আছে? আমরা বললাম: না। তখন তিনি বললেন: তাহলে আমি রোযাদার। এরপর অন্য একদিন আসলেন। আমরা বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাদের কাছে ‘হাইস’ (খেজুরের সাথে ঘি ও পনিরের মিশ্রনে তৈরী খাবার) হাদিয়া পাঠানো হয়েছে। তখন তিনি বললেন: আমাকে দেখাও তো; আমি তো রোযা অবস্থায় দিন শুরু করেছি। অতপর তিনি তা খেয়েছেন।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৫৪)]
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘নফল রোযাদার নিজের আমীর। ইচ্ছা হলে সে রোযা থাকতে পারে, আবার ইচ্ছা না হলে সে তা ভাঙ্গতেও পারে।’’
(মুসনাদে (আহমাদ, মুসনাদ ৬/৩৪১, তিরমিযী, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৪৩৯, বাইহাকী ৪/২৭৬ প্রমুখ, সহীহুল জামে’ ৩৮৫৪নং)
আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাঁর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমাদের কাছে (খাবার) কিছু আছে কি?’’ বললেন, ‘জী না।’ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, ‘‘তাহলে আজকে আমি রোযা থাকলাম।’’ অতঃপর আর একদিন আমাদেরকে হাইস (খেজুর, পনীর ও ঘি একত্রিত করে প্রস্ত্তত খাদ্য বিশেষ) উপহার দেওয়া হয়েছিল। আমি তার থেকে কিছু অংশ তাঁর জন্য লুকিয়ে রেখেছিলাম। আর তিনি হাইস ভালোবাসতেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আজ আমাদেরকে হাইস উপহার দেওয়া হয়েছে। আর আমি আপনার জন্য কিছুটা লুকিয়ে রেখেছি।’ তিনি বললেন, ‘‘আমার কাছে নিয়ে এস। আমি সকাল থেকে রোযা অবস্থায় ছিলাম।’’ এ কথা বলে তিনি তা খেলেন এবং বললেন, ‘‘নফল রোযাদারের উদাহরণ ঐ লোকের মত যে নিজ মাল থেকে (নফল) সাদকাহ বের করে। অতঃপর সে চাইলে তা দান করে, না চাইলে রেখে নেয়।’’
(মুসনাদে (আহমাদ, মুসনাদ ৬/৪৯, ২০৭, মুসলিম ১১৫৪, আবূ দাঊদ ২৪৫৫, নাসাঈ ২৩২১, ইবনে মাজাহ ১৭০১, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ২১৪১নং, দারাকুত্বনী, সুনান, বাইহাকী ৪/২৭৫)
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর জন্য খাবার তৈরী করলাম। তিনি তাঁর অন্যান্য সহচর সহ আমার বাড়িতে এলেন। অতঃপর যখন খাবার সামনে রাখা হল, তখন দলের মধ্যে একজন বলল, ‘আমার রোযা আছে।’ তা শুনে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘তোমাদের ভাই তোমাদেরকে দাওয়াত দিয়ে খরচ (বা কষ্ট) করেছে।’’ অতঃপর তিনি তার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘‘রোযা ভেঙ্গে দাও। আর চাইলে তার বিনিময়ে অন্য একদিন রোযা রাখ।’’
(বাইহাকী ৪/২৭৯, ত্বাবারানী, মু’জাম, ইরওয়াউল গালীল,)
জিলহজ্ব এর রোযা গুলি নফল রোযার অন্তর্ভুক্ত। দাওয়াতের নিমন্ত্রণের ক্ষেত্রে নফল রোজাদার সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছাধীন। সে চাইলে রোযা ভাঙ্গতেও পারে কিংবা রোযা অব্যাহত রেখে নিমন্ত্রণকারীর জন্য দোয়াও করতে পারে।
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি রোযা বাদ দিয়ে দ্বীনি বোন উনার বাসায় দাওয়াত খেতে যেতে পারবেন।