আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
43 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (68 points)

আসসালামু আলাইকুম, 
আমার কিছু প্রশ্ন নিচে দেয়া হলো। রেফারেন্স সহ উত্তর দিলে উপকৃত হব।

প্রশ্ন-১ঃ ঈমাম আবু হানিফা (রঃ) কি এমন কোনো কথা বলেছেন যে, আমার কথা যদি কোরআন বা সহিহ হাদিসের বাইরে যায় তাহলে আমার কথা দেয়ালে ছুড়ে মারো এবং কোরআন ও হাদিসই অনুসরণ করো?
বলে থাকলে তার কোন বইয়ের কত নামার অধ্যায়ে, কত নাম্বার পৃষ্ঠায় বলেছেন?

প্রশ্ন-২ঃ ঈমাম আবু হানিফা (রঃ) কোন দেশের নাগরিক ছিলেন?

প্রশ্ন-৩ঃ ঈমাম আবু হানিফা (রঃ) তার জীবনে কয়টি বই লিখেছেন? এবং ওই বই বা গ্রন্থগুলার নাম কী?
এবং ওই বই বা গ্রন্থগুলার কোন ভাষায় লেখা হয়েছিল?

প্রশ্ন-৪ঃ হানাফি মাজহাব কয়জন ঈমাম দ্বারা গঠিত ও পরিচালিত? 

প্রশ্ন-৫ঃ হানাফি মাজহাব কি ঈমাম আবু হানিফা নিজে নামকরণ করে গেছেন নাকি তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর অনুসারীগণ নামকরণ করেছেন? 

প্রশ্ন-৬ঃ হানাফি মাজহাব সৃষ্ঠির আগে ঈমাম আবু হানিফা নিজে কোন মাজহাব অনুসরণ করতেন? 

by (1 point)
+1
  • জী বলেছেন। “হাদীস যেটি সহীহ সেটাই আমার মাযহাব ” [রাদ্দুল মুখতার ১/১৫৪; মুকাদ্দিমাতু উমদাতুর রিয়ায়াহ- ১/১৪; হাশিয়াতু ইবনু আবেদীখ- ১/৬৩]
  • ইরাকের কুফা নগরী

  • অনেক অনেক ইমামদের দ্বারা । সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে এর বিস্তার।

  • তিনি নিজেই একজন মুজতাহিদ ছিলেন। তার কোনও মাজহাব অনুসরণের প্রয়োজন ছিল না। 

1 Answer

0 votes
by (704,440 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
ইমাম আবু হানিফা রাহ এর উক্ত কথা 'সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব' এই কথা সম্পর্কে ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রাহ, "ফাতাওয়ায়ে শামীর মিকাদ্দিমায়" বিশদ ব্যখ্যা করেছেন।

(قوله: إن توجه لكم دليل) أي ظهر لكم في مسألة وجه الدليل على غير ما أقول ط.
(قوله: فقولوا به) وكان كذلك، فحصل المخالفة من الصاحبين في نحو ثلث المذهب، ولكن الأكثر في الاعتماد على قول الإمام ط.
(قوله: فكان كل يأخذ برواية عنه) أي فليس لأحد منهم قول خارج عن أقواله؛ ولذا قال في الولوالجية من كتاب الجنايات قال أبو يوسف: ما قلت قولا خالفت فيه أبا حنيفة إلا قولا قد كان قاله. وروى عن زفر أنه قال: ما خالفت أبا حنيفة في شيء إلا قد قاله ثم رجع عنه، فهذا إشارة إلى أنهم ما سلكوا طريق الخلاف، بل قالوا ما قالوا عن اجتهاد ورأي اتباعا لما قاله أستاذهم أبو حنيفة. اهـ.
وفي آخر الحاوي القدسي: وإذا أخذ بقول واحد منهم يعلم قطعا أنه يكون به آخذا بقول أبي حنيفة، فإنه روى عن جميع أصحابه من الكبار كأبي يوسف ومحمد وزفر والحسن أنهم قالوا: ما قلنا في مسألة قولا إلا وهو روايتنا عن أبي حنيفة وأقسموا عليه أيمانا غلاظا فلم يتحقق إذا في الفقه جواب ولا مذهب إلا له كيفما كان، وما نسب إلى غيره إلا بطريق المجاز للموافقة. اهـ.
فإن قلت: إذا رجع المجتهد عن قول لم يبق قولا له، بل صرح في قضاء البحر بأن ما خرج عن ظاهر الرواية فهو مرجوع عنه وأن المرجوع عنه ليس قولا له. اهـ. وفيه عن التوشيح أن ما رجع عنه المجتهد لا يجوز الأخذ به، فإذا كان كذلك فما قاله أصحابه مخالفين له فيه ليس مذهبه، فحينئذ صارت أقوالهم مذاهب لهم، مع أنا التزمنا تقليد مذهبه دون مذهب غيره، ولذا نقول إن مذهبنا حنفي لا يوسفي ونحوه. مطلب صح عن الإمام أنه قال: إذا صح الحديث فهو مذهبي
قلت: قد يجاب بأن الإمام لما أمر أصحابه بأن يأخذوا من أقواله بما يتجه لهم منها عليه الدليل صار ما قالوه قولا له لابتنائه على قواعده التي أسسها لهم، فلم يكن مرجوعا عنه من كل وجه، فيكون من مذهبه أيضا، 

ونظير هذا ما نقله العلامة بيري في أول شرحه على الأشباه عن شرح الهداية لابن الشحنة، ونصه: إذا صح الحديث وكان على خلاف المذهب عمل بالحديث، ويكون ذلك مذهبه ولا يخرج مقلده عن كونه حنفيا بالعمل به، فقد صح عنه أنه قال: إذا صح الحديث فهو مذهبي. وقد حكى ذلك ابن عبد البر عن أبي حنيفة وغيره من الأئمة. اهـ. ونقله أيضا الإمام الشعراني عن الأئمة الأربعة.
ولا يخفى أن ذلك لمن كان أهلا للنظر في النصوص ومعرفة محكمها من منسوخها، فإذا نظر أهل المذهب في الدليل وعملوا به صح نسبته إلى المذهب لكونه صادرا بإذن صاحب المذهب، إذ لا شك أنه لو علم ضعف دليله رجع عنه واتبع الدليل الأقوى؛ ولذا رد المحقق ابن الهمام على بعض المشايخ حيث أفتوا بقول الإمامين بأنه لا يعدل عن قول الإمام إلا لضعف دليله
«حاشية ابن عابدين = رد المحتار ط الحلبي» (1/ 67)

মর্মার্থ
যাদের দলীল বুঝার যোগ্যতা রয়েছে, তারা যদি আমার কোনো কথার বিরুদ্ধে সহীহ হাদীস পায়, এবং সহীহ হাদীস সম্পর্কে তারা নিজস্ব যোগ্যতা দ্বারা বুঝতে পারে যে, এটা সহীহ হাদীস এবং ওটা সহীহ নয়। তাহলে তাদের জন্য সহীহ হাদীসের উপর আ'মল করার রুখসত থাকবে।
(ফাতাওয়ায়ে শামী,মুকাদ্দমা ১/৬৭)

আরো জানুনঃ- 

(০২)
ইরাকের কুফা নগরী।

(০৩)
মৌলিকভাবে তার রচিত কিতাবকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। তথা-

১- তার সহস্তে সংকলিত কিতাব।

২-ছাত্রদের দ্বারা লিখিত কিতাব। অর্থাৎ তিনি বলতেন আর তার ছাত্ররা তা লিপিবদ্ধ করতেন। যেহেতু তার কথাই ছাত্ররা লিখতেন, তাই সেসব কিতাবও তার লিপিবদ্ধ করাই বলা যায় নির্ধিদ্ধায়।

স্বহস্তে লিখা কিতাব

১-কিতাবুল আসার

قال الحسن بن زياد قد انتخب ابو حنيفة “كتاب الأثار” من اربعين ألف حديث، (الخيرات الحسان-211 بحوالة مناقب ابى حنيفة للمرقى-84)

হাসান বিন যিয়াদ রহঃ বলেন-ইমাম আবু হানীফা রহঃ চল্লিশ হাজার হাদীস থেকে বাছাই করে “কিতাবুল আসার” নামক গ্রন্থটি সংকলন করেন। {আল খাইরাতুল হিসান-২১১}

قال الشيخ ابو الوفا اول كتاب ألف فى الحديث النبوى واثاره مرتبا على الأبواب كتاب الأثار للامام الأعظم- (علم المسلمين-5/291)

শায়েখ আবুল ওয়াফা রহঃ বলেন-রাসূল সাঃ এর হাদীস ও আসারে সাহাবাকে বিভিন্ন অধ্যায়ে সুবিন্যস্ত করে সর্ব প্রথম কিতাব হল ইমাম আযম রহঃ রচিত “কিতাবুল আসার”। {ইলমুল মুসলিমীন-৫/২৯১}

২-মুসনাদে ইমাম আবু হানীফা রহঃ।

এ কিতাবটি বর্তমানে পৃথিবী বিখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ এর তাহকীক সহ বর্তমানে পাওয়া যায়।

৩-আল ফিক্বহুল আকবার

এ গ্রন্থটিও মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ এর ব্যাখ্যাসহ মার্কেটে পাওয়া যায়।

এছাড়াও তার রচিত গ্রন্থাবলী হল-

৪-রিসালাতু আল-আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম।

৫-রিসালাতু ইলা উসমান আল বাত্তী।

৬-কিতাবু আর রাদ্দু আলাল ক্বাদরিয়া

৭-আল ইলমু শারকান ও গারবান ওয়া বাদান ওয়া কারবান।

এছাড়াও আরো অনেক গ্রন্থের নাম ওলামাদের বক্তব্যে এসেছে। এছাড়াও ইমাম আযম রহঃ এর লিখা আরো গ্রন্থ ছিল ফিক্বহের উপর। কিন্তু মূলত তাতারী বর্বরতা “বায়তুল হিকমাহ” রাজকীয় গ্রন্থাগার ও বাগদাদ নগরী ধ্বংসের সময় এ অমূল্য কিতাবসমূহরে পান্ডুলিপি দুর্লভ ও বিরল হয়ে পড়ে।

ছাত্রদের দ্বারা লিখিত কিতাব

ইমাম বুখারী যেমন তার সংকলিত বুখারী শরীফের পান্ডুলিপি লিখিয়েছেন তার ছাত্র মুহাম্মদ বিন ইউসুফ ফারাবরী রহঃ এর দ্বারা। তারপর থেকে বর্তমানে পাওয়া বুখারী শরীফ মূলত মুহাম্মদ বিন ইউসুফ ফারাবরী রহঃ এর লিখিত বুখারী শরীফের নাম। অথচ কিতাব বলা হয় ইমাম বুখারী রহঃ এরই। কারণ এর মূল সংগ্রাহক হলেন ইমাম বুখারী রহঃ। যদিও লিখেছেন তার ছাত্র ফারবরী। তারপরও তা ইমাম বুখারী রহঃ এর নামেই পরিচিতি পেয়েছে। অধিকাংশ মানুষ লিপিবদ্ধকারী ফারাবরী রহঃ এর নামই জানে না।

তেমনি ইমাম আবু হানীফা রঃ এর বলা ও উদ্ভাবন করা মাসআলাই তার ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ, ইমাম হাসান বিন যিয়াদ রহঃ, ইমাম কারখী রহঃ, তাদের কিতাবে সংকলিত করেছেন। তাই তাদের রচিত কিতাব মূলত ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর লিখিত কিতাবই।
(সংগৃহীত)

(০৪)
সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিঃ
তাবেয়ী হযরত আলকামা রহঃ।
তাবে তাবেয়ী হযরত ইবরাহিম নাখয়ী রহঃ।
ইমাম আবু হানিফা রহঃ।
ইমাম ইয়াকুব রহঃ।
ইমাম মুহাম্মদ রহঃ।
ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ।
ইমাম যুফার রহঃ।
ইমাম হাসান রহঃ।

আসাদ ইবনুল ফুরাত রাহ. (২১৩ হি.) বলেন, ‘ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর চল্লিশজন সঙ্গী গ্রন্থসমূহ (ফিকহে হানাফী) সংকলন করেছেন।

তাঁদের শীর্ষ দশজনের মধ্যে ছিলেন আবু ইউসুফ, যুফার, দাউদ ত্বয়ী, আসাদ ইবনে আমর, ইউসুফ ইবনে খালিদ ও ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া ইবনে আবী যাইদা। শেষোক্ত জন সিদ্ধান-সমূহ লিপিবদ্ধ করতেন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন।’-ইবনু আবিল ‘আওয়াম-এর সূত্রে যাহিদ হাসান কাওছারী-ভূমিকা, নসবূর রায়াহ ১/৩৮

★আবু হানিফা রহঃ ৪০ জন শাগরেদকে নিয়ে ফিকাহ বোর্ড কায়েম করেছিলেন,তারা ছিলেন ফিকহে হানাফি প্রারম্ভকারী।

এরপর যুগে যুগে দুনিয়ার অনেক বিজ্ঞ বিজ্ঞ মুজতাহি আলেম গন হানাফি মাযহাবের কায়েম করা উসুলের ভিত্তিতে অনেক অনেক মাসয়ালা উদ্ভাবন করেছেন।

(০৫)
জানা মতে তার মৃত্যুর পর এই নাম হয়েছে।

(০৬)
তিনি নিজেই একজন মুজতাহিদ ছিলেন। তার কোনও মাজহাব অনুসরণের প্রয়োজন ছিল না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...