আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

–1 vote
2,657 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (45 points)
closed by
আসসালামু আলাইকুম,

ইসলামে স্বামীর দৈহিক সম্পর্কের ডাকে সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে যেমন কড়াকড়ি নির্দেশনা আছে, তেমনি ভাবে স্বামীর ক্ষেত্রে কি কিছু নেই? স্ত্রী যদি চায় কিন্তুু স্বামী অসম্মত হয়, এবং তার জন্য স্ত্রীর কষ্ট হয়, এক্ষেত্রে ইসলাম কি বলে?

ধন্য বাদ
closed

1 Answer

+1 vote
by (597,330 points)
selected by
 
Best answer

বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ-
বিয়ে করা অতপর বিয়ের মাধ্যমে একে অন্যর জন্য হালাল হওয়া এবং স্বামী-স্ত্রী পরস্পর ফায়দা গ্রহণ করা, উপভোগ করা, আল্লাহ তা'আলা অপূরণন্ত এক নিয়মাত।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন।
ﻭَﻣِﻦْ ﺁﻳَﺎﺗِﻪِ ﺃَﻥْ ﺧَﻠَﻖَ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦْ ﺃَﻧﻔُﺴِﻜُﻢْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟًﺎ ﻟِّﺘَﺴْﻜُﻨُﻮﺍ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢ ﻣَّﻮَﺩَّﺓً ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً ﺇِﻥَّ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ ﻟَﺂﻳَﺎﺕٍ ﻟِّﻘَﻮْﻡٍ ﻳَﺘَﻔَﻜَّﺮُﻭﻥَ
আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।(সূরা রূম-২১)

স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকবে, জীবনে ও মরণে।এজন্যই তো এ প্রবিত্র বিবাহের আয়োজন।বরংএ পদ্ধতি অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী একসাথে বসবাস করা মানবসভ্যতায় আদিকাল থেকে চলে আসছে।স্ত্রীর সাথে একান্ত সময় অতিবাহিত করা ও স্ত্রীর সকল সমস্যাকে নিজ দায়িত্বে সমাধান করে দেয়া একজন স্বামীর উপর শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব।
কেননা আল্লাহ তা'আলা স্ত্রীর সাথে সদ্ভাবে বসবাসের আদেশ দিয়েছেন-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﻻَ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﻥ ﺗَﺮِﺛُﻮﺍْ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻛَﺮْﻫًﺎ ﻭَﻻَ ﺗَﻌْﻀُﻠُﻮﻫُﻦَّ ﻟِﺘَﺬْﻫَﺒُﻮﺍْ ﺑِﺒَﻌْﺾِ ﻣَﺎ ﺁﺗَﻴْﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﻳَﺄْﺗِﻴﻦَ ﺑِﻔَﺎﺣِﺸَﺔٍ ﻣُّﺒَﻴِّﻨَﺔٍ ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻓَﺈِﻥ ﻛَﺮِﻫْﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﻓَﻌَﺴَﻰ ﺃَﻥ ﺗَﻜْﺮَﻫُﻮﺍْ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻓِﻴﻪِ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ
হে ঈমাণদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহন করা তোমাদের জন্যে হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও; কিন্তু তারা যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে! নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন।
(সূরা নিসা-১৯)

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন,
حدثني عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما، قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يا عبد الله، ألم أخبر أنك تصوم النهار، وتقوم الليل؟»، فقلت: بلى يا رسول الله قال: «فلا تفعل صم وأفطر، وقم ونم، فإن لجسدك عليك حقا، وإن لعينك عليك حقا، وإن لزوجك عليك حقا، وإن لزورك عليك حقا، وإن بحسبك أن تصوم كل شهر ثلاثة أيام، فإن لك بكل حسنة عشر أمثالها، فإن ذلك صيام الدهر كله»، فشددت، فشدد علي قلت: يا رسول الله إني أجد قوة قال: «فصم صيام نبي الله داود عليه السلام [ص: ٤٠] ، ولا تزد عليه»، قلت: وما كان صيام نبي الله داود عليه السلام؟ قال: «نصف الدهر»، فكان عبد الله يقول بعد ما كبر: يا ليتني قبلت رخصة النبي صلى الله عليه وسلم

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে ‘আবদুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সওম পালন কর এবং সারা রাত সালাত আদায় করে থাক। আমি বললাম, ঠিক (শুনেছেন) হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে) সওম পালন কর আবার ছেড়েও দাও। (রাতে) সালাত আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হাক্ব রয়েছে, তোমার চোখের হাক্ব রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হাক্ব আছে, তোমার মেহমানের হাক্ব আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সওম পালন কর। কেননা নেক ‘আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের সওম হয়ে যায়। আমি (বললাম) আমি এর চেয়েও কঠোর ‘আমল করতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন ‘আমলের অনুমতি দেয়া হল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আরো বেশি শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃ তবে আল্লাহর নাবী দাঊদ (আঃ)-এর সওম পালন কর, এর হতে বেশি করতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নাবী দাঊদ (আঃ)-এর সওম কেমন? তিনি বললেনঃ অর্ধেক বছর। রাবী বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বৃদ্ধ বয়সে বলতেন, আহা! আমি যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত রুখসত (সহজতর বিধান) কবূল করে নিতাম! সহীহ বোখারী(শামেলা)-১৯৭৫
(১১৩১, মুসলিম ১৩/৩৩৫, হাঃ ১১৫৯, আহমাদ ৬৭৭৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ১৮৪৮)


স্বামী-স্ত্রী পরস্পর হকঃ
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের উপর অনেক হক রয়েছে।তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হক হল,সহবাসের হক।
স্ত্রীর উপর স্বামীর সহবাস হক কতটুকু?
উত্তরঃ স্বামী স্ত্রীকে সহবাসের জন্য তলব করলে স্ত্রীর জন্য তৎক্ষনাৎ স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব।শরয়ী উযর ব্যতীত জবাব না দেয়ার কোনো অপশন নেই।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত
عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا دعا الرجل امرأته إلى فراشه فأبت فبات غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح»
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে আর সে অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশ্তাগণ এমন স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত লা‘নত দিতে থাকে।(সহীহ বুখারী-৩২৩৭)


এখন সহসাই প্রশ্ন জাগে,
তাহলে স্বামীর নিকট স্ত্রীর সহবাস হক্ব কতটুকু?
এ সম্পর্কে উলামাদের কাছ থেকে বিরোধপূর্ণ বক্তব্য পাওয়া যায়।
(ক)
ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ বলেন,

ﻭﻳﺠﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺰﻭﺝ ﻭﻁﺀ ﺍﻣﺮﺃﺗﻪ ﺑﻘﺪﺭ ﻛﻔﺎﻳﺘﻬﺎ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻨﻬﻚ ﺑﺪﻧﻪ ﺃﻭ ﻳﺸﻐﻠﻪ ﻋﻦ ﻣﻌﻴﺸﺘﻪ ، .. ﻓﺈﻥ ﺗﻨﺎﺯﻋﺎ ﻓﻴﻨﺒﻐﻲ ﺃﻥ ﻳﻔﺮﺿﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻛﺎﻟﻨﻔﻘﺔ ﻭﻛﻮﻃﺌﻪ ﺇﺫﺍ ﺯﺍﺩ "
স্ত্রীর সন্তুষ্টি পর্যন্ত স্বামীর উপর স্ত্রীকে সহবাস করা ওয়াজিব(অর্থাৎ স্ত্রীর চাওয়া মাত্র স্বামীকে সহবাস করতে হবে)।যতক্ষণ না স্বামীর শরীর দুর্বল হচ্ছে বা স্বামীকে তার জীবিকানির্বাহ পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। সহবাসের পরিমাণ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হলে এক্ষেত্রে উচিৎ খোরপোষ ইত্যাদির মত সহবাসের পরিমাণকে বিচারক ঠিক করে দেবেন।(দৈনিক না সাপ্তাহিক? এইভাবে ঠিক করে দিবেন) ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ-২৪৬

(খ)
জুমহুর উলামায়ে কেরাম বলেন,প্রতি চার মাসে একবার স্বামীর উপর স্ত্রীকে সহবাস করা ওয়াজিব।(যখন স্ত্রী তা চাইবে) সে সম্পর্কে ইবনে আবেদীন শামী রাহ, লিখেন..

স্বামী-স্ত্রীর হক সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সহবাস, সুতরাং স্ত্রীর সাথে স্বামী কতদিন পর্যন্ত সহবাস না করে থাকতে পারবে সে বিষয়ে আলোকপাত করে বলেনঃ
وَيَجِبُ أَنْ لَا يَبْلُغَ بِهِ مُدَّةَ الْإِيلَاءِ إلَّا بِرِضَاهَا وَطِيبِ نَفْسِهَا بِهِ. اهـ
স্ত্রীর সন্তুষ্টি ব্যতীত স্বামী মুদ্দতে ই'লা তথা চার মাস এর বেশী সময় সহবাস ব্যতীত থাকতে পারবে না।অন্যকথায় চার মাসের ভিতরে স্ত্রীর সাথে একবার সহবাস করা স্বামীর উপর ওয়াজিব।তবে স্ত্রী সহবাস ব্যতীত সন্তুষ্ট থাকলে ভিন্ন কথা অর্থাৎ যতদিন ইচ্ছা সহবাস ব্যতীত স্বামী থাকতে পারবে।

ইবনে আবেদীন শামী রাহ আরো বলেনঃ
وَفِي الْبَدَائِعِ: لَهَا أَنْ تُطَالِبَهُ بِالْوَطْءِ لِأَنَّ حِلَّهُ لَهَا حَقُّهَا، كَمَا أَنَّ حِلَّهَا لَهُ حَقُّهُ، وَإِذَا طَالَبَتْهُ يَجِبُ عَلَيْهِ وَيُجْبَرُ عَلَيْهِ فِي الْحُكْمِ مَرَّةً وَالزِّيَادَةُ تَجِبُ دِيَانَةً لَا فِي الْحُكْمِ عِنْدَ بَعْضِ أَصْحَابِنَا وَعِنْدَ بَعْضِهِمْ تَجِبُ عَلَيْهِ فِي الْحُكْمِ. اهـ

বাদায়েয়ুস সানায়ে  কিতাবে বর্ণিত আছে,সহবাস চাওয়ার অধিকার স্ত্রীরও রয়েছে,কেননা স্বামী উক্ত স্ত্রীর জন্য হালাল হওয়াটা স্ত্রীর অধিকারের অন্তর্ভূক্ত হবে। যেমন স্ত্রী স্বামীর জন্য হালাল হওয়াটা স্বামীর অধিকারের অন্তর্ভূক্ত হয়।সুতরাং যখন স্ত্রী স্বামীর কাছে সহবাসকে তলব করবে,তখন জবাব দেয়াটা স্বামীর উপর ওয়াজিব।এমনকি প্রথম একবারের জন্য স্বামীকে কোর্ট বিচারের মাধ্যমে মজবুর(নিরুপায়) করা হবে । এবং একবাবের বেশী সহবাস সম্পর্কে কিছুসংখ্যক উলামায়ে কেরামদের মতে দিয়নাতান ওয়াজিব করে থাকেন।(এবং তাও অাবশ্যকীয়)আর কিছুসংখ্যক উলামায়ে কেরামদের মতে বৈচারিক তথা কোর্ট বিচারের মাধ্যমে দাবী করাও ওয়াজিব হবে।{রদ্দুল মুহতার;৩/২০৩}

ইবনে আবেদীন শামী রাহ আরো একটু এগিয়ে লিখেনঃ
চার মাসের ভিতর কমপক্ষে একবার স্ত্রীর সাথে সহবাস করা ওয়াজিব তা বর্ণনা করতে যেয়ে তিনি উমর রাযি এর নিম্নোক্ত নির্দেশনামা উল্লেখ করে লিখেন,
وَيُؤَيِّدُ ذَلِكَ أَنَّ عُمَرَ - رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ - لَمَّا سَمِعَ فِي اللَّيْلِ امْرَأَةً تَقُولُ: فَوَاَللَّهِ لَوْلَا اللَّهُ تُخْشَى عَوَاقِبُهُ لَزُحْزِحَ مِنْ هَذَا السَّرِيرِ جَوَانِبُهُ فَسَأَلَ عَنْهَا فَإِذَا زَوْجُهَا فِي الْجِهَادِ، فَسَأَلَ بِنْتَه حَفْصَةَ: كَمْ تَصْبِرُ الْمَرْأَةُ عَنْ الرَّجُلِ: فَقَالَتْ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ، فَأَمَرَ أُمَرَاءَ الْأَجْنَادِ أَنْ لَا يَتَخَلَّفَ الْمُتَزَوِّجُ عَنْ أَهْلِهِ أَكْثَرَ مِنْهَا، وَلَوْ لَمْ يَكُنْ فِي هَذِهِ الْمُدَّةِ زِيَادَةُ مُضَارَّةٍ بِهَا لَمَا شَرَعَ اللَّهُ تَعَالَى الْفِرَاقَ بِالْإِيلَاءِ فِيهَا.
অনুবাদঃউমর রাযি রাত্রে একদিন এক মহিলাকে বিরহের কবিতা গাইতে শুনলেন,যে কবিতার মাধ্যমে সে বলতেছিলো..........
"আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহর শাস্তির ভয় না থাকতো,তাহলে এখন আমার খাটের চারপাশ  প্রকম্পিত হতো"
উমর রাযি ঐ মহিলাকে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন,তখন ঐ মহিলা জানালো যে তার স্বামী বর্তমানে জিহাদে আছে,তখন উমর রাযি উনার মেয়ে হাফসা রাযি কে জিজ্ঞাসা করলেন,একজন মহিলা স্বামী ব্যতীত কতদিন পর্যন্ত সবর করতে পারে?হাফসা রাযি বললেনঃ চার মাস।এর পর সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের কাছে সংবাদ প্রেরণ করলেন,কোনো বিবাহিত মুজাহিদ সেনা যেন চার মাসের বেশী সময় নিজ পরিবার(স্ত্রী) থেকে দূরে না থাকে।(অতঃপর ইবনে আবেদীন শামী রাহ আরেকটি কিয়াস উল্লেখ করে বলেনঃ)তাছাড়া যদি সহবাস ব্যতীত চার মাস কষ্টকর না হতো,তাহলে কেন আল্লাহ ই'লা (চার মাস সহবাস না করার শপথ করা)এর কারণে বৈবাহিক সম্পর্ককে বিচ্ছেদযোগ্য করবেন।{রদ্দুল মুহতার;৩/২০৩}

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
অাল্লাহ তা'আলা স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে বিশেষকরে স্বামীকে নির্দেশ দিয়েছেন যে,আপন স্ত্রীর সাথে সদ্ব্যবহার করতে(সূরা নিসা-১৯)।স্ত্রীর সকল হাজত পূর্ণ করা এই সদ্ব্যবহারের আওতাধীন।
সুতরাং যেভাবে স্বামীর আহবানে সাড়া দেয়া স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব।ঠিকতেমনি স্ত্রীর আহবানেও সাড়া দেয়া স্বামীর জন্য উচিৎ ও তার নৈতিক দায়িত্বের আওতাধীন।যদিও সাধারণ পরিস্থিতিতে ওয়াজিবের হুকুম আরোপিত হয় না।
কিন্তু যদি পরিস্থিতি এমন হয় যে, স্বামী সাড়া না দিলে, স্ত্রী গোনাহে পতিত হতে পারে,এমন সম্ভাবনা রয়েছে অনদিকে স্বামীর শরয়ী কোনো উযরও নেই,তাহলে এমন পরিস্থিতিতে স্বামীর জন্যও সাড়া দেয়া দিয়ানাতান তথা নৈতিকভাবে ওয়াজিব হবে।(দিয়ানাতান এর অর্থ হল, এমন হক যে হকের ইস্যু তৈরী করে কোর্টে বিচার দায়ের করা যায় না)

হযরত উমর রাযি নিজ মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে,একজন স্ত্রী তার স্বামীর সঙ্গহীন ভাবে কতদিন ধর্য্য ধরতে পারে?উত্তরে উম্মুল মু'মিনিন হযরত হাফসা রাযি চার মাসের কথা বলেছিলেন।সুতরাং এত্থেকে বুঝা গেল যে,স্ত্রীর ধর্য্যহীন পরিস্থিতিতে স্বামীর জন্য স্ত্রীর ডাকে সাড়া দেয়া স্বামীর উপর নৈতিক ওয়াজিব।স্বামী পাশে থাকাবস্থায় সহবাসহীন থাকা স্ত্রীর হয়তো এক দিন/সাপ্তাহও অসম্ভব হতে পারে?তাই স্বামীর শারীরিক সক্ষমতা থাকাবস্থায় স্ত্রীকে সঙ্গ দিয়ে স্ত্রীর প্রয়োজনকে পূর্ণ করা নৈতিকভাবে স্বামীর উপর ওয়াজিব হবে।

মোটকথাঃ
জিহাদ বা এর মত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ শরয়ী উযরের কারণের স্বামী তার স্ত্রী থেকে সর্বোচ্ছ চার মাস পর্যন্ত দূরে থাকতে পারবে।কিন্তু বিশেষ কোনো উযর না থাকলে স্বামীর শারিরিক সক্ষমতা এবং শারিরিকভাবে উদ্যোমী ও উৎফল্ল থাকাবস্থায় স্ত্রীকে পরিতৃপ্ত করা পর্যন্ত স্ত্রীকে সঙ্গ দেয়া স্বামীর উপর নৈতিকভাবে ওয়াজিব।

প্রশ্ন হতে পারে,
যেভাবে স্বামীর ডাকে স্ত্রীকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দেয়া ওয়াজিব হয় সেভাবে কেন স্ত্রীর ডাকে স্বামীকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব হয় না? কেনইবা দিয়ানাতান ওয়াজিব বলা হয়?
উত্তরে বলা হবে যে,
স্ত্রীকে আল্লাহ এমনভাবে তৈরী করেছেন যে,সে যেকোনো পরিস্থিতিতে স্বামীর ডাকে সাড়া দিতে পারে।এক্ষেত্রে সে শরীরিকভাবে উদ্যোমী থাকুক বা নাই থাকুক,সে পারে।কিন্তু স্বামীকে আল্লাহ তা'আলা এমনভাবে তৈরী করেছেন যে,তার শারীরিক উদ্যোমতা ও মনে প্রফুল্লতা না থাকলে সে স্ত্রীর ডাকে সাড়া দিতে পারে না।এজন্যই মূলত এই পার্থক্য।তাছাড়া তার অন্য স্ত্রীও থাকতে পারে বা জিহাদ ইত্যাদির মত গুরুত্বপূর্ণ কাজও তার হাতে থাকতে পারে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...