জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামে প্রাণীর প্রতি মমতা প্রদর্শনের আদেশ করা হয়েছে।
জাহিলিয়াত এর যুগে আরবরা জীবজন্তুর ওপর অতিমাত্রায় বোঝা চাপাত। পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হতো না। সারা দিন নির্দয়ভাবে খাটাত। নির্মমভাবে শাস্তি দিত এবং যেভাবে ইচ্ছা যত্রতত্র ব্যবহার করত। নবীজী (সা.) এসব নিষ্ঠুর প্রথা দূর করেন। তিনি জীবজন্তু ও পশুপাখির দুঃখে ব্যথিত হন এবং তাদের কষ্টে বিচলিত হয়ে জীবজন্তু ও পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ করার আদেশ দেন।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
একবার নবীজী (সা.) একটি উটের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। দেখলেন ক্ষুধার তাড়নায় উটের পিঠ পেটের সঙ্গে লেগে গেছে। অনাহারে অপুষ্টিতে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ দৃশ্য দেখে রহমতের নবীর ভীষণ মায়া হলো। সাহাবিদের ডেকে বললেন, ‘এসব বাকশক্তিহীন প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। সুস্থ অবস্থায় এগুলোতে আরোহণ করো, সুস্থ অবস্থায় আহার করো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪৮)
প্রাণীকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি অনেক মন্দ। পৃথিবীতে কোনোভাবে পার পেয়ে গেলে পরকালে ছাড় পাওয়া যাবে না। প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা রাখলে মিলবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার। অযথা কষ্ট দিলে অবশ্যই এর শাস্তি ভোগ করতে হবে জাহান্নামের আগুনে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
নবীজী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো চড়ুইকে অযথা হত্যা করল, তা কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালার নিকট উঁচুস্বরে ফরিয়াদ করে বলবে, ইয়া আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমাকে হত্যা অযথা করেছিল, সে কোনো লাভের জন্য আমাকে হত্যা করেনি।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৪৪৪৬)
বিড়ালকে কষ্ট দেওয়ার কারণে এক মহিলাকে জাহান্নামে যেতে হয়েছিল।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
নবীজী (সা.) বলেন, ‘এক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে আজাব দেওয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। ওই অবস্থায় বিড়ালটি মারা যায়। মহিলাটি ওই কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে খাবার-পানীয় কিছুই দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকতে পারত।’ (বোখারি, হাদিস : ৩৪৮২)
ইসলামে প্রাণীর প্রতি মমতা প্রদর্শনের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পশুপাখি ও জীবজন্তুর প্রতি সহনশীল আচরণ ও মমতা দেখিয়ে একজনের বেহেশতে যাওয়ার ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। ঘটনাটি হলো, রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে এক ব্যক্তির ভীষণ পিপাসা লাগে। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এর পর সে বের হয়ে দেখতে পেল একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল, কুকুরটারও আমার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে ওপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহতায়ালা তার আচরণ কবুল করেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলেও কি আমাদের সওয়াব হবে? তিনি বললেন, প্রতিটি প্রাণীর উপকার করলেও রয়েছে পুণ্য। (বোখারি, হাদিস : ২৩৬৩)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم مُرَّ عَلَيْهِ بِحِمَارٍ قَدْ وُسِمَ فِي وَجْهِهِ فَقَالَ " أَمَا بَلَغَكُمْ أَنِّي قَدْ لَعَنْتُ مَنْ وَسَمَ الْبَهِيمَةَ فِي وَجْهِهَا أَوْ ضَرَبَهَا فِي وَجْهِهَا " . فَنَهَى عَنْ ذَلِكَ .
মুহাম্মদ ইবন কাসীর .... জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট দিয়ে মুখমন্ডলে পোড়া দাগ দেয়া একটি গাধা অতিক্রম করার সময় তিনি বলে উঠলেন, তোমাদের নিকট কি এ খবর পৌঁছায়নি যে, আমি ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছি, যে পশুর মুখমন্ডলে পোড়া লোহা দ্বারা দাগ লাগায় বা এর মুখের উপর আঘাত করে। এ বলে তিনি তা নিষেধ করলেন।
(আবু দাউদ ২৫৫৬)
قال الخادمي الحنفي في البريقة المحمودية: يجوز ضرب الحيوان إلا وجهه. وقال أيضا: فيضربه على قدر تأديبه بلا مبالغة. وقال ابن عابدين في العقود الدرية: ضارب الحيوان ينهى عن ضربه حال كونه ضربه لا على وجهه الذي أباحه الشارع، بأن ضرب الدابة على العثار مثلا، لأن العثار من سوء إمساك الراكب اللجام لا من الدابة، فينهى في هذه الحالة ضارب الحيوان عن ضربه
সারমর্মঃ-
প্রানীকে (বৈধ কারনে) চেহারা ছাড়া অন্যত্রে আঘাত করা জায়েজ আছে। তবে আদব দেয়া সমপরিমাণ মারা যাবে,অতিরিক্ত অতিরঞ্জন করা যাবেনা।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রানী যদি বাহন হয়,সেক্ষেত্রে তাকে পর্যাপ্ত খাবার দেয়া,অতিরিক্ত কাজ না নেয়া,সুস্থ থাকা সত্ত্বেও সে চলাচলে অলসতা করলে সেক্ষেত্রে আদব দেয়ার জন্য পরিমিতভাবে আঘাত করা যাবে,এটি শরীয়তে অনুমোদিত। তবে কোনোক্রমেই চেহারাতে আঘাত করা যাবেনা।