বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)
যেহেতু আল্লাহ তাদেরকে আহলে কিতাব বলেছেন,তাই তারা আহলে কিতাব।
সকল অমুসলিমরাই কাফির তবে সব মুশরিক না।
ইহুদীরা শিরিকে লিপ্ত হওয়ার পরও আল্লাহ তাদেরকে মুশরিক না বলে আহলে কিতাব বলেছেন।
ইহুদিরা হযরত উযাইর আঃ কে আল্লাহর বেটা এবং খৃষ্টানরা হযরত ইসা আঃ কে আল্লাহর বেটা বলত।যেমন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলছেন,
وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللّهِ وَقَالَتْ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللّهِ ذَلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَاهِهِمْ يُضَاهِؤُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبْلُ قَاتَلَهُمُ اللّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ
ইহুদীরা বলে ওযাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র’। এ হচ্ছে তাদের মুখের কথা। এরা পূর্ববর্তী কাফেরদের মত কথা বলে। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন, এরা কোন উল্টা পথে চলে যাচ্ছে।(সূরা তাওবাহ -৯)
ইহুদী খৃষ্টানরা হল,অাহলে কিতাব।অর্থাৎ যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিলো, যাদের নিকট নবী প্রেরণ করা হয়েছিল।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلَّا كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ، وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ، ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ، وَيَفْعَلُونَ مَا لَا يُؤْمَرُونَ، فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الْإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ».
“আমার পূর্বে যে উম্মাতের কাছেই আল্লাহ নবী পাঠিয়েছিলেন তারই নিজ উম্মাতের মধ্য হতে সাহায্যকারী ও সাথী ছিল যারা তার সুন্নতকে গ্রহণ করতো ও তার আদেশের অনুসরণ করতো। আর তাদের (নবীদের) পর অনেক উত্তরসূরীদের জন্ম হবে তারা যা করবে না তা বলবে, যার আদেশ দিবে তা করবে না। সুতরাং যে তাদের বিরুদ্ধে হাত দিয়ে জিহাদ করবে সে মুমিন, আর যে তাদের বিরুদ্ধে মুখ দিয়ে জিহাদ করবে সেও মুমিন এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে অন্তর দিয়ে জিহাদ করবে সেও মুমিন তবে এর পর ঈমানের আর কোনো অংশ নেই।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
ইহুদি খৃষ্টান কাফির তবে মুশরিক(শিরিক কারী) নয়।কেননা শিরিক করার পরও আল্লাহ তাদেরকে অাহলে কিতাব বলেছেন।তবে হিন্দু বৌদ্ধরা মুশরিক ও কাফির।
(২)
যারা নিজেদেরকে সৃষ্টিকর্তা দাবী করে,সে তো আরো বড় কাফির।কেননা সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবী করছে।আর যে নাস্তিক, সেতো আল্লাহকেই মানছে না বরং অস্বীকার করছে।আল্লাহকে বা আল্লাহর কোনো গুণাগুণকে অস্বীকার করার নামই হল,কুফর।
(৩)
আসমানি কিতাব সর্বমোট কয়টি? এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো কথা কুরআন হাদীসের কোথাও বর্ণিত হয়নি।
কুরআনে পাঁচটি কিতাবের কথা উল্লেখ রয়েছে।আসমানি কিতাব সম্পর্কে যে সংখ্যার কথা পাওয়া যায় যে,তার সংখ্যা ১০৪ টি।এই হাদীসের সনদ বিশুদ্ধ নয়।
(৪)
বড় চারটি কিতাব
❖ ১) তাওরাত (মূসা আলাইহিস সালাম এর উপর অবতীর্ণ)
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ
“আমি মুসাকে কিতাব (তাওরাত) দিয়েছিলাম যাতে তারা সৎপথ পায়।” (সূরা মুমিনূন: ৪৮)
❖ ২) যাবুর (দাউদ আলাইহিস সালাম এর উপর অবতীর্ণ)।
আল্লাহ তাআলা বলেন: وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا
“আর আমি দাউদকে দিয়েছি যাবুর।” (সূরা ইসরা: ৫৫)
❖ ৩) ইঞ্জিল (ঈসা আলাইহিস সালাম এর উপর অবতীর্ণ)
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَقَفَّيْنَا عَلَىٰ آثَارِهِم بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ ۖ وَآتَيْنَاهُ الْإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ
“আমি তাদের পেছনে ঈসা ইবনে মরিয়মকে প্রেরণ করেছি। তিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়ন কারী ছিলেন। আমি তাঁকে ইঞ্জিল প্রদান করেছি। এতে হেদায়েত ও আলো রয়েছে। এটি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়ন করে পথ প্রদর্শন করে এবং এটি আল্লাহ ভীরুদের জন্যে হেদায়েত উপদেশ বানী।” (সূরা মায়িদা: ৪৬)
❖ ৪) আল কুরআন (শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি অবতীর্ণ)।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنجِيلَ – مِن قَبْلُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَأَنزَلَ الْفُرْقَانَ ۗ
“তিনি আপনার প্রতি কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন সত্যতার সাথে; যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাব সমুহের। নাযিল করেছেন তাওরাত ও ইঞ্জিল, এ কিতাবের পূর্বে, মানুষের হেদায়েতের জন্যে এবং অবতীর্ণ করেছেন ফুরকান [সত্য-মিথ্যা নিরূপণকারী গ্রন্থ আল কুরআন]।” (সূরা আলে ইমরান: ৩ ও ৪)
এ ছাড়াও ইবরাহীম ও মুসা আলাইহিমাস সালাম এর উপর অবতীর্ণ সহিফা (ছোট ছোট পুস্তিকা) সমূহের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। এগুলোর সংখ্যা কুরআন-হাদিসে বর্ণিত হয় নি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ هَـٰذَا لَفِي الصُّحُفِ الْأُولَىٰ -صُحُفِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ
“এটা লিখিত রয়েছে পূর্ববর্তী সহিফা (পুস্তিকা); ইব্রাহীম ও মুসার সহীফা (পুস্তিকা) সমূহে।” (সূরা আ’লা: ১৮ ও ১৯)
(৫)
কুরআনের মত তাওরাত,যবুর,ইঞ্জিল কিতাব সমূহ গায়রে মাখলুক।
তবে কুরআন ব্যতীত সবকিছুই বিকৃত। মূল তওরাত,যবুর,ইঞ্জিল ইত্যাদি গায়রে মাখলুক্ব।
মাখলুক্ব হলে যে অবিকৃত থাকবে আর গায়রে মাখলুক্ব হলে যে অবিকৃত থাকবে না, বিষয়টা এমন নয়।বরং আল্লাহর ইচ্ছা হলে গায়রে মাখলুক্ব হওয়ার পরও বিকৃত হতে পারে।এগুলো মূলত আল্লাহর হুকুমের সাথে নির্দিষ্ট।