বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত মৃত ব্যাক্তির অবাঞ্ছিত লোমগুলো কাটা/নেলপালিশ তুলে ফেলা যাবেনা।
শরীয়তের বিধান হলো মৃত ব্যক্তির নখ, চুল, ইত্যাদি বড় থাকলেও তা কাটা যাবে না। এমনকি মৃতের শরীরে কোন ধরনের সাজসজ্জা বা চুলে সিঁথি করতেও নিষেধ করা হয়েছে। তাই মৃতের নখ, চুল বড় থাকলেও তা না কেটে ঐ অবস্থায় তাকে দাফন করতে হবে । ইবনে সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি মৃতের নাভীর নিচের পশম এবং নখ কাটা অপছন্দ করতেন এবং বলতেন, অসুস্থ ব্যক্তির পরিবারের কর্তব্য হলো, মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ অবস্থায় তা পরিস্কার করে ফেলা ।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৭/ ১৩৯ .শরহুল মুনইয়াহ্ ৫৭৯, আদ্দুররুল মুখতার ২/ ১৯৮, আল বাহরুর রায়েক ২/১৭৩ ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৮.)
ইমাম মুহাম্মাদ রহ. বলেন,
لا نرى أن يسرح رأس الميت ، ولا يؤخذ من شعره ، ولا يقلم أظفاره وهو قول أبي حنيفة رحمه الله تعالى.
মাইয়্যেতের মাথা চিরুনী করা বা সিথি কাটা, তার চুল কিংবা নোখ কাটা কে আমরা সমীচীন মনে করি না।(জায়েজ নয়) আর এটাই ইমাম আবু হানীফার সিদ্ধান্ত। কিতাবুল আছার (হাদীস নং২২৭)
,
(০২)
জায়েজ নেই।
কারন এতে কালেমার অবমাননা হয়।
তাহা মাইয়্যিতের পা,হাটু,উরু ইত্যাদির উপরেও চলে আসে।
,
বিভিন্ন এলাকায় একটি বিষয় লক্ষ করা যায়। তা হল, মাইয়্যেতকে খাটিয়ায় রাখার পর কালিমা বা কুরআনের আয়াত খচিত কাপড় দিয়ে খাটিয়া ঢেকে দেওয়া হয়। এমন করা উচিত নয়। এর দ্বারা কালিমা বা কুরআনের আয়াতের অপব্যবহার হয়। এক্ষেত্রে সাধারণ চাদর দিয়ে ঢাকবে, কালিমা বা আয়াত খচিত কাপড় দ্বারা ঢাকবে না।
অনেক এলাকায় মসজিদের পক্ষ থেকে যেমন খাটিয়ার ব্যবস্থা থাকে তেমনি সাথে সাথে কালিমা বা আয়াত খচিত কাপড়ও থাকে, ফলে মানুষ মনে করে, এটা দিয়েই ঢাকা উচিত। মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিষয়টি খেয়াল রাখা চাই। তারা যদি কাপড়ের ব্যবস্থা রাখতেই চান তাহলে সাধারণ কাপড় বা চাদরের ব্যবস্থা রাখতে পারেন।
(০৩)
তাদের জানাযা নামাজ পড়া জায়েজ আছে।
তবে উলামায়ে কেরামদের না যাওয়াই ভালো।
,
(০৪)
সাধারণ লোকেরা তার জানাযায় অংশগ্রহন করবে,কারন সে মাইয়্যিতও মুসলিম।
তারও এই হক রয়েছে।
হাদিসে এসেছে : জাবির ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.)-এর দরবারে এক লোককে হাজির করা হয়, তীরের ফলা দ্বারা যে নিজেকে হত্যা করেছে। তখন তিনি তার ওপর নামাজ পড়েননি।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯৭৮)
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তাদের জানাজা হবে,এবং তাদের জানাযায় অংশ গ্রহন করা যাবে।
,
তাই আমির, আলিম উলামা ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা ওই ব্যক্তির জানাজায় শরিক হবেন না।
কারন যাতে করে লোকেরা সাবধান হয়ে যায় যে এহেন ঘৃণিত কাজ যেনো আর কেউ না করে।
বিস্তারিত জানুনঃ
,
(০৫)
এতে কোনো সমস্যা নেই।
,
(৬.৭)
কবরের উপর কাঁচা খেজুরের ডাল,বাশ,ডাল না গেড়ে দেওয়াই উত্তম।
কারন হাদীস শরীফে রাসুল সাঃ এর যেই ঘটনা এসেছে,উলামায়ে কেরামগন বলেন যে এটা রাসুল সাঃ এর সাথেই খাছ।
তাই সতর্কতামূলক ইহা থেকে বেঁচে থাকা দরকার।
ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম ৫/২৮২
তবে কেউ যদি জরুরি মনে না করে এটা গেড়ে দেয়,তাহলে এটাকে নাজায়েজ বলা যাবেনা।
,
বিস্তারিত জানুনঃ
,
(০৮)
চিৎ করে শুইয়ে মুখ কেবলার দিকে ঘুরিয়ে দিলেও হবে।
তবে পশ্চিম দিকে নিচে কিছু খুড়ে পুরো শরীর কিবলার দিকে করা গেলে আরো ভালো হয়।
,
(০৯)
মহিলার কাফন পড়ানোর সুন্নাহ পদ্ধতি-
প্রথমে চাদর বিছাতে হবে। তারপর সিনা বরাবর সিনাবন্দ (খিরকাহ) বিছাতে হবে তারপর ইজার বিছাতে হবে।
তার পর জামা পরিয়ে মৃতের চুল দু’ভাগ করে বা বেনি করে ডানে ও বাঁমে জামার উপর অর্থাৎ বক্ষের উপর রেখে দিবে।
মাথাবন্ধ দিয়ে মাথা পেচিয়ে মুখের উপর রাখবেট. তারপর মৃত ব্যক্তিকে ইজারের উপর শোয়াতে হবে।
ইজার এমনভাবে জড়াতে হবে যেন, ডান পাশ বাম পাশের উপর পড়ে। অনুরূপভাবে সিনাবন্ধ এবং সর্বশেষ চাদর জড়াতে হবে।
,
مراقی الفلاح :
"كفن الرجل سنة" ثلاثة أثواب "قميص من أصل العنق إلى القدمين بلا دخريص وكمين "وإزار" من القرن إلى القدم "و" الثالث "لفافة" تزيد على ما فوق القرن والقدم ليلف بها الميت وتربط من أعلاه وأسفله ... وتزاد المرأة" على ما ذكرناه للرجل "في" كفنها على جهة "السنة خمارا لوجهها" ورأسها "وخرقة" عرضها ما بين الثدي إلى السرة وقيل إلى الركبة كيلاينتشر الكفن بالفخذ وقت المشي بها "لربط ثدييها" فسنة كفنها درع وإزار وخمار وخرقة ولفافة..." الخ ( حاشية الطحطاوي علي المراقي، باب أحكام الجنائز، ص: ٥٧٥ - ٥٧٨)
সারমর্মঃ মহিলাদের কাফনে মোট ৫ টি কাপড় লাগবে।
চাদর,খিরকাহ,ইযার,জামা,মাথা বন্দ।
,
(১০)
মায়্যিতের খাটিয়া বহন করার সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হল, চার ব্যক্তি খাটিয়ার চার পায়া ধরে উঠাবে। এবং সম্ভব হলে প্রত্যেকে সবগুলো পায়া কাঁধে নিবে। আর সবগুলো পায়া ধরার নিয়ম ফকীহগণ এভাবে বলেছেন যে, প্রথমে একজন সামনের ডান পায়া কাঁধে নিবে।
এরপর পেছনের ডান পায়া ডান কাঁধে, তারপর সামনের বাম পায়া বাম কাঁধে, সর্বশেষ পেছনের বাম পায়া বাম কাঁধে নিবে। আর লাশ বহনের সময় তিনবার থামা সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়।
তবে প্রতিবার কাঁধ পরিবর্তন করার প্রয়োজনে যদি দাঁড়াতে হয় তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এটিকে সুন্নত বা সওয়াবের কাজ মনে করা যাবে না।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪৭৮; মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা, বর্ণনা ১১৩৯৯; আলজামেউস সগীর, ইমাম মুহাম্মাদ পৃ. ১১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৬৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬০৫; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৯২; রদ্দুল মুহতার ২/২৩১)