আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
135 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (15 points)
আসসালামু আলাইকুম
১) কুরআনে কি এমন কোনো আয়াত আছে যেখানে গান কে সরাসরি হারাম বলা হয়েছে? কারণ অনেক অতি পন্ডিত বলে যে গান হারাম এইটার রেফারেন্স হাদিস থেকে না দিয়ে কুরআন থেকে দিতে, তাই জানতে চাই।

২)  ফেসবুকে আমি নিম্নের লেখাটি পেলাম

 বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবুল ফারাজ আল-ইস্ফাহানি বর্ণনা করেন, রাসুল ﷺ এর বিখ্যাত সাহাবি এবং কবি হাসান বিন সাবিত সঙ্গীত উপভোগ করতেন।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আল আবু বকর আল-আদফাওই পঞ্চম খুলাফায়ে রাশেদিন ‘উমার বিন আব্দুল ’আযিয থেকে বর্ণনা করেন যে, খালিফ হওয়ার পূর্বে তিনি সঙ্গীত শুনতেন।
আল-আদফাওই আরও বলেন, মদিনাবাসীদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য ছিল না যে মদিনার কাযি ইবরহিম ইবন সা’দ সঙ্গীত শুনতেন এবং তা অনুমোদনযোগ্য বলতেন।
বিখ্যাত শাফি’ই আলেম ইবন মাহাসিন আল-রুইয়ানি, কাফআল থেকে বর্ণনা করেন, মালিকি মাযহাব অনুযায়ী সুর, বাদ্যযন্ত্র এবং সঙ্গীত অনুমোদিত, আবু মানসুর ফাওরানি এই বক্তব্য মালিকি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম মালিক থেকেও বর্ণনা করেছেন।
বিখ্যাত শাফি’ই আলেম আবু তালিব আল-মাক্কি তার গ্রন্থ কুতুল কুলুব এ বর্ণনা করেন, বিখ্যাত মুহাদ্দিস মানহাল ইবন আমর তার প্রাসাদে বাদ্যযন্ত্র উপভোগ করতেন।” [নায়েল আল-আওতার, অধ্যায়-৮, পৃষ্ঠা ১০৪-১০৫]

দেখা যাক আবু মুহাম্মাদ ইবন হাযাম তার আল-মুহাল্লা গ্রন্থে বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে কি বলেছেন:
“রাসুল বলেন: প্রতিটি কাজের বিচার সে কাজের নিয়ত অনুযায়ী হবে। তাই, কেউ যদি আল্লাহকে অমান্য করার উদ্দেশ্যে গান-বাজনা শুনে থাকে তবে সে একজন গুনাহগার হিসেবেই বিবেচিত হবে। সঙ্গীত ছাড়াও এটি সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর ইবাদতে উদ্যমী ও মনযোগী হওয়ার উদ্দেশ্যে নিজেকে শান্ত করার জন্য সঙ্গীত শুনে তবে একজন ভালো এবং বাধ্য বান্দা হিসেবে তার জন্য তা অনুমোদিত হবে। কিন্তু কেউ যদি ভালো খারাপ কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই সঙ্গীত শুনে থাকে তবে তা লাঘ্বও (অযথা কাজ) হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তা ক্ষমা ও উপেক্ষা করা হবে [আল্লাহ্‌ কর্তৃক]। এটি পার্কে হাঁটার মতো কাজ হিসেবেই [তানাযযুহ] বিবেচ্য হবে।”  [আল-মুহাল্লা, অধ্যায়-৯, পৃষ্ঠা ৬০]

সকল বিষয়ের প্রেক্ষিতে আমাদের মালিকি উস্তাদ সিদি মুহাম্মাদ ইকবাল বলেন:
“আমাদের মাযহাবের মাশহুর মত হচ্ছে, বিভিন্নি ক্ষেত্রে গান-বাজনা অনুমোদিত যেমন, সুন্নতে-খাতনা, বিয়ে, মেহমানদের স্বাগত জানাতে, ঈদ ইত্যাদি। তাই এইসকল আনুষ্ঠানিক উপলক্ষ ছাড়া এটি অপছন্দনীয়। কিন্তু, অনেক মালিকি উলামাই গান-বাজনা সম্পূর্ণরূপে হালাল বলেছেন যেমন, কাযি আবু বকর ইবন আল-আরাবি এবং প্রমুখ। আমি ব্যাক্তিগতভাবে, এই ব্যাপারে ইমাম জুনাইদ আল-বাগদাদি এর মত পছন্দ করি। যা হচ্ছে, সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে এবং সঠিক লোকজনের সাথে। আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।”

আমার প্রশ্ন হচ্ছে উপরোক্ত কথাগুলো কি সঠিক বা নির্ভরযোগ্য? নাকি এইগুলো সব ভিত্তিহীন বা বানোয়াট কথা?

1 Answer

0 votes
by (575,580 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَہۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّ یَتَّخِذَہَا ہُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ ﴿۶﴾ 

আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য আসার বাক্য কিনে নেয়  জ্ঞান ছাড়াই এবং আল্লাহর দেখানো পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
(সুরা লুকমান ০৬)

উক্ত আয়াতের শানে নুযূলে বলা হয়েছে যে, নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাঁদী খরিদ করে এনে তাকে গান-বাজনায় নিয়োজিত করল। কেউ কুরআন শ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবং বলত মুহাম্মদ তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে নামায, রোযা এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা বলে। এতে শুধু কষ্টই কষ্ট। তার চেয়ে বরং গান শোন এবং জীবনকে উপভোগ কর।-মাআরিফুল কুরআন ৭/৪

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াত নাযিল করেন।

(০২)
উপরোক্ত বিষয় গুলিতে গান উদ্দেশ্য নয়। বাদ্য-বাজনা উদ্দেশ্য নয়।
এখানে দফ বাজানো উদ্দেশ্য। 
,
বর্তমানে অধিকাংশ উলামায়ে কেরামদের মতে দফ বাজানো জায়েজ নেই।

নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দফ নিষিদ্ধ হওয়া পরিস্কার প্রমাণিত হয়।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ: «الدُّفُّ حَرَامٌ، وَالْكُوبَةُ حَرَامٌ، وَالْمِزْمَارُ حَرَامٌ

হযরত আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দফ হারাম। বাদ্যযন্ত্র হারাম। মদের পেয়ালা হারাম। বাঁশী হারাম। [সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৩৫৯, সুনানে কুরবা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২১০০০] 

حَدَّثَنَا أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَيَّانَ قَالَ: ثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ قَالَ: ثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعِيدٍ الْجَوْهَرِيُّ قَالَ: ثنا يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ سَالِمٍ، عَنْ حَسَّانَ بْنِ أَبِي سِنَانٍ قَالَ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُمْسَخُ قَوْمٌ مِنْ أُمَّتِي فِي آخِرِ الزَّمَانِ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ»، قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَيَشْهَدُونَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّكَ رَسُولُ اللهِ، وَيَصُومُونَ؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قِيلَ: فَمَا بَالُهُمْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: «يَتَّخِذُونَ الْمَعَازِفَ وَالْقَيْنَاتِ وَالدُّفُوفَ، وَيَشْرَبُونَ الْأَشْرِبَةَ، فَبَاتُوا عَلَى شُرْبِهِمْ وَلَهْوِهِمْ، فَأَصْبَحُوا قَدْ مُسِخُوا قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শেষ জমানায় আমার উম্মত বানর ও শুকরে রূপান্তরিত হবে। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! তারা সাক্ষি দিবে যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল এবং রোযা রাখার পরও?
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, হ্যাঁ।
বলা হল, তাদের অপরাধ কি?
বললেন, তারা বাদ্য, গায়িকা এবং দফের বাজনা গ্রহণ করবে। মদ খাবে, রাতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ঘুমাবে। আর সকালে দেখবে তারা বানর ও শুকরে পরিণত হয়ে গেছে। [হিলয়াতুল আওলিয়া-৩/১১৯] 
,
তবে কিছু উলামায়ে কেরামগন বিশেষ ক্ষেত্রে  শর্তসাপেক্ষে জায়েজ বলেছেন।  

বিস্তারিত জানুনঃ


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...