জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
শরীয়তের বিধান হলো যে স্থান একবার শরয়ী মসজিদ (ওয়াকফের মাধ্যমে) হয়ে যায়, তা কিয়ামত পর্যন্ত মসজিদ হিসেবেই বাকি থাকে,
তাই সেই জায়গা কিয়ামত পর্যন্ত মসজিদ হিসেবেই অক্ষুন্ন রাখতে হবে।
বহুতল ভবনের জন্য বা মেরামত সংস্কারের জন্য মসজিদ ভাঙ্গা যেতে পারে,তবে ভাঙ্গার পর সেটি মসজিদ হিসেবেই নির্মান করতে হবে।
কিয়ামত পর্যন্ত অন্য কোনো কিছুই বানানো যাবেনা।
,
মসজিদকে মার্কেট,ঘর বাড়ি,বাগান, রাস্তায় পরিণত করলে মসজিদের সম্মান বিনষ্ট হবে। তাই একাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
এটি কোনো ভাবেই জায়েজ নেই।
মসজিদের স্থলে মসজিদ রাখা একান্ত জরুরী।
মসজিদের জন্য যায়গা দেবার পর তাতে মসজিদ নির্মাণ করে নামায শুরু করার পর তা শরয়ী মসজিদে পরিণত হয়। উক্ত জায়গার উপর ওয়াকফকারীরও কোন মালিকানা বাকি থাকে না।
জায়গাদাতা বা অন্য কাহারো জন্য উক্ত স্থান নিজের অধিকারে নেয়া, বা করায়ত্ব করার কোন অধিকার নেই।
যদি তা আবার পুনর্দখল করে, তাহলে তা কবিরা গোনাহ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
যেই মসজিদ শরয়ী মসজিদ।
সেটির পুরো মসজিদ বা আংশিক ভেঙ্গে অন্য কিছু বানানো জায়েজ নেই।
এহেন ঘৃণ্য কাজ যিনি করবেন, তিনি কবিরা গোনাহে লিপ্ত।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَا ۚ أُولَٰئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ ۚ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ [٢:١١٤]
যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। [সূরা বাকারা-১১৪]
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ عُمَرَ تَصَدَّقَ بِمَالٍ لَهُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَ يُقَالُ لَهُ ثَمْغٌ وَكَانَ نَخْلًا، فَقَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي اسْتَفَدْتُ مَالًا وَهُوَ عِنْدِي نَفِيسٌ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَتَصَدَّقَ بِهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَصَدَّقْ بِأَصْلِهِ، لاَ يُبَاعُ وَلاَ يُوهَبُ وَلاَ يُورَثُ، وَلَكِنْ يُنْفَقُ ثَمَرُهُ»، فَتَصَدَّقَ بِهِ عُمَرُ،
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ে ‘উমার (রাঃ) নিজের কিছু সম্পত্তি সদাকাহ করেছিলেন, তা ছিল, ছামাগ নামে একটি খেজুর বাগান। ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি সম্পদ পেয়েছি, যা আমার নিকট খুবই পছন্দনীয়। আমি সেটি সদাকাহ করতে চাই।’ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘মূল সম্পদটি এ শর্তে সদাকাহ কর যে তা বিক্রি করা যাবে না, দান করা যাবে না এবং কেউ ওয়ারিস হবে না, বরং তার ফল দান করা হবে। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) সেটি এভাবেই সদাকাহ করলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৭৬৪]
على أنهم صرحوا بأن مراعاة غرض الواقفين واجبة (رد المحتار، كتاب الوقف، مطلب: مراعاة غرض الواقفين يصلح مخصصا-6/665)
সারমর্মঃ ওয়াকফ কারীদের উদ্দেশ্য এর প্রতি রিয়ায়াত করা ওয়াজিব।
شرط الواقف كنص الشراع أى فى المفهوم والدلالة ووجوب العمل به (الدر المختار، كتاب الوقف، مطلب فى قولهم شرط الواقف كنص الشارع، ومطلب بيان مفهوم المخالفة-6/649، الأشباه والنظائر، كتاب الوقف، الفن الثانى، الفوائد-2/106، تنقيح الفتاوى الحامدية-1/126
সারমর্মঃ ওয়াকফ কারীর শর্ত,শরীয়ত প্রনেতার শর্তের মতোই।
فإذا تم ولزم لا يملك ولا يملك ولا يعار ولا يرهن،
وفى رد المحتار: لا يكون مملوكا لصاحبه ولا يملك أى لا يقبل التتمليك لغيره بالبيع ونحوه لا ستحالة تمليك الخارج عن ملكه (الفتاوى الشامية، كتاب الوقف-6/539)
সারমর্মঃ যখন ওয়াকফ পূর্ণ হয়ে যাবে,তাহলে সেটি আর বিক্রয় পরিবর্তন, ইত্যাদি করা যাবেনা।
رجل له ساحة لا بناء فيها أمر قوما أن يصلوا فيها بجماعة أبدا أو أمرهم بالصلاة مطلقا ونوى الأبد ففى هذين الوجهين صارة الساحة مسجدا لو مات لا يورث عنه (الفتاوى الهندية، كتاب الوقف، الباب الحادى عشر فى المسجد وما يتعلق به-، قديم-2/255، جديد-2/409، المحيط البرهانى-8/157، رقم-11499
সারমর্মঃ ওয়াকফ কৃত মসজিদ টি আসমান পর্যন্ত কিয়ামত পর্যন্তের জন্য মসজিদ হিসেবেই থাকবে।
অন্য কোনো কিছু করা যাবেনা।
,
ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-২/৪৫৬-৪৫৭
ফাতওয়ায়ে শামী-৬/৫৭৪,৭৫৬
ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া-৫/৮৪১-৮৪২
আল বাহরুর রায়েক-৫/৪২৮
,
উলামায়ে কেরামগন আরো কিছু দলিল জমা করেছেনঃ
হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু্ আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা পবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে রাস্তা হিসেবে (অন্য কোন কাজে) ব্যবহার কোর না। বরং উত্তমভাবে সংরক্ষণ করো ।
(তাবারনী ১০/৪৫৩, ফায়জুল ক্বাদির ৫০২, মাসাবীহুত তানবীর ২৫, ফাতহুল কাবীর ৩/৩০০, দায়লামী শরীফ ৫/১৫, জামিউল আহাদীছ ১২/৭৫ সহ অসংখ্য হাদীছে এর উল্লেখ রয়েছে।)
হযরত ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণীত, রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ ততক্ষণ পর্যন্ত ক্বেয়ামত হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত মসজিদ ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ হবে না।”
(বায়হাকী ৩/১৬৩, মোস্তাদরেকে হাকীম ৪/৪৪৬, জামিউল আহাদীছ ১৬/২৮১, খাছায়েছুল কুবরা ২/২৪০,তাফসীরে সমরকন্দী ১/৮৬, খামীন ১/৭২
বাগবী শরীফ ১/১৫৭ তে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐ ব্যাক্তির চাইতে বড় জালিম কে আছে যে মসজিদ সংরক্ষণ না করে বন্ধ করে (ভেঙ্গে) দেয়। এবং তাদের রয়েছে দুনিয়াতেই লাঞ্চনা। (মাজহারী ১/১১৬)।
(০২)
উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে সতর্কতামূলক দফ বাজানো সম্পুর্ন নিষেধ।
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ""দফ ব্যবহার করা হয়েছে এমন নাশিদ শোনা যাবেনা।
দফ বাজানো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ
,
তবে কিছু ইসলামী স্কলারদের মতে এটি জায়েজ।
সুতরাং তাদের মতানুসারী গন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারেন।