জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর আয়াত নাযিল হ’ল, وَأَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ ‘আর তুমি তোমার নিকটতম আত্মীয়-পরিজনকে সতর্ক কর’ (শো‘আরা ২৬/২১৪), তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সে যুগের নিয়ম অনুযায়ী একদিন সকালে ছাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সকলের উদ্দেশ্যে বিপদসংকেতমূলক ভাষায় ডাক দিয়ে বলেন, يا صَباحاه (প্রত্যুষে সকলে সমবেত হও!)। এভাবে রাসূল (ছাঃ) বিভিন্ন গোত্রের নাম ধরে ধরে ডাকতে থাকলেন। অতঃপর সবাই হাযির হ’লে তিনি বলেন,
أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ الْعَدُوَّ يُصَبِّحُكُمْ أَوْ يُمَسِّيكُمْ أَمَا كُنْتُمْ تُصَدِّقُونِى؟ قَالُوا بَلَى-
আমি যদি বলি এই পাহাড়ের অপর পার্শ্বে একদল শত্রুসেনা তোমাদের উপরে সকালে বা সন্ধ্যায় হামলার জন্য অপেক্ষা করছে, তাহ’লে কি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে না? সকলে সমস্বরে বলে উঠলো, অবশ্যই করব। কেননা, مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلاَّ صِدْقًا ‘আমরা এযাবত তোমার কাছ থেকে সত্য ব্যতীত কিছুই পাইনি’। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,
فَإِنِّىْ نَذِيْرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍ شَدِيْدٍ
‘আমি ক্বিয়ামতের কঠিন আযাবের প্রাক্কালে তোমাদের নিকটে সতর্ককারী রূপে আগমন করেছি’। অতঃপর তিনি আবেগময় কণ্ঠে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন,
يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ كَعْبِ بْنِ لُؤَىٍّ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ مَنَافٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ هَاشِمٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا عَبَّاسُ بْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ لاَ أُغْنِى عَنْكَ مِنَ اللهِ شَيْئًا، يَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ أَنْقِذِىْ نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ، فَإِنِّىْ لاَ أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئاً غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِماً سَأَبُلُّهَا بِبَلاَلِهَا -
‘হে কুরায়েশগণ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু কা‘ব বিন লুআই! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু আবদে মানাফ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু হাশেম! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু আব্দিল মুত্ত্বালিব! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব! আমি আল্লাহর আযাব থেকে তোমার কোনই কাজে আসব না। হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! তুমি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! কেননা আমি তোমাদের কাউকে আল্লাহর পাকড়াও হ’তে রক্ষা করতে পারব না’। তবে তোমাদের সঙ্গে আত্মীয়তার যে সম্পর্ক রয়েছে, তা আমি (দুনিয়াতে) সদ্ব্যবহার দ্বারা সিক্ত করব’। অন্য বর্ণনায় এসেছে,
يَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَلِيْنِىْ مَا شِئْتِ مِنْ مَالِىْ وَلاَ أُغْنِى عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئًا
‘হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার মাল-সম্পদ থেকে যা খুশী নাও। কিন্তু আল্লাহর পাকড়াও হ’তে আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারব না’।
(বুখারী হা/২৭৫৩; মুসলিম হা/২০৪, ২০৬; আহমাদ হা/৮৭১১; মিশকাত হা/৫৩৭৩ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়-২৬, ‘সতর্ক করা ও ভয় প্রদর্শন করা’ অনুচ্ছেদ-৮।)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, إلا ان تقولوا لآ اله الا الله ‘তবে যদি তোমরা বল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই)।
রাসূল (ছাঃ)-এর এই মর্মস্পর্শী আবেদন গর্বোদ্ধত চাচা আবু লাহাবের অন্তরে দাগ কাটেনি। তিনি চিৎকার দিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর মুখের উপর বলে দিলেন تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمِ ، أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا؟ ‘সকল দিনে তোমার উপর ধ্বংস আপতিত হৌক! এজন্য তুমি আমাদের জমা করেছ’? বলেই তিনি উঠে যান। অতঃপর অত্র সূরাটি (সুরা লাহাব) নাযিল হয়।
(বুখারী হা/৪৭৭০, ৪৯৭১; মুসলিম হা/২০৮; তিরমিযী হা/৩৩৬৩; কুরতুবী হা/৬৫১২)
এক বর্ণনায় এসেছে,আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম শুনলেন যে, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করেছেন। তিনি তাঁর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করব যা নবী ব্যতীত কেউ উত্তর দিতে পারে না। তারপর তিনি বললেন, কিয়ামতের প্রথম আলামত কি? জান্নাতিরা প্রথম কোনো খাবার খাবে? সন্তান কিভাবে পিতার মত এবং কিভাবে তার মাতুলদের মত হয়?তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,আমাকে এই মাত্র জিবরাঈল তা জানিয়েছে। তখন আব্দুল্লাহ বললেন, ইয়াহুদিদের নিকট এ ফেরেশতা তাদের শত্রু। তারপর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম আলামত হচ্ছে, একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে নিয়ে যাবে। আর জান্নাতিদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। আর সন্তান কারো সাদৃশ্য হওয়ার পিছনে যুক্তি হলো, যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য অগ্রণী হয় সন্তান পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে যদি স্ত্রীর বীর্য অগ্রণী হয় তখন সন্তান স্ত্রীর মত হয়। তখন তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আপনি আল্লাহর রাসূল। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহুদিরা মিথ্যুক জাতি, যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করার আগে আমার ইসলামের কথা তারা জেনে যায় তবে আমাকে মিথ্যুক বানিয়ে ছাড়বে। তারপর আব্দুল্লাহ ইয়াহুদিদের কাছে আসলেন এবং তাদের ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহুদিদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল: আমাদের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি এবং জ্ঞানী ব্যক্তির সন্তান। আমাদের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি এবং উত্তম ব্যক্তির সন্তান। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে ইসলাম গ্রহণ করে? তারা বলল, আল্লাহ তাকে এ ধরনের কাজ করা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বের হয়ে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্ ব্যতীত হক কোনো মা‘বুদ নেই, আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলল,সে আমাদের সবচেয়ে খারাপ লোক এবং খারাপ লোকের সন্তান। এভাবে তারা তার উপর আক্রমণাত্মক কথা বলতে লাগল ।আব্দুল্লাহ ইবন্ উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘‘ইয়াহুদিরা রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে এসে বলল: তাদের মধ্যে একজন পুরুষ ও মহিলা যিনা করেছে। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন: তোমরা কি তাওরাতে রজম সম্পর্কে কিছু পেয়েছ?তারা বলল: ‘‘তাদেরকে অপমানিত করব এবং তাদেরকে বেত্রাঘাত করা হবে।’’ তখন তাদের আব্দুল্লাহ ইবন্ সালাম বলেন: তোমরা মিথ্যা বলেছ, সেখানে রজমের কথা রয়েছে। তখন তারা তাওরাত নিয়ে এসে তা খুলে ধরল। অতঃপর তাদের একজন রজমের আয়াতের উপর হাত রেখে আগের ও পরের বাক্যাবলী পাঠ করল। তখন আব্দুল্লাহ ইবন্ সালাম বললেন: তুমি হাত উঠাও। অতঃপর যখন হাত উঠানো হলো তখনি সেখানে রজমের আয়াত দেখা গেল। তখন তারা বলল: হে মুহাম্মাদ! আপনি সত্য বলেছেন। এতে রজমের আয়াত রয়েছে। তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রজম তথা পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলেন। আর তাদেরকে পাথর মারা হলো।’’
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
বিভিন্ন সুত্র হতে পাওয়া তথ্য মতে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ হলো সাধারণত বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যকার সংলাপই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ। ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, সম্মান প্রদর্শনপূর্বক পারস্পরিক যে ধর্মীয় যে আলোচনা করা হয়; তাই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ।
তাদের বলা বিবরণ মতে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উদ্দেশ্য হলো পরস্পরকে জানা। এর উদ্দেশ্য অন্য ধর্মকে জয় করা নয়। অন্য ধর্মের সাথে সম্পূর্ণ একমত হয়ে বিশ্বজনীন ধর্ম প্রতিষ্ঠাও এর উদ্দেশ্য নয়। এর উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে অজ্ঞতাজনিত যে বিরোধ আছে তার মধ্যে সেতু বন্ধন রচনা করা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিকে অনুধাবন করা। যার ফলে প্রত্যেকেই তার নিজেদের ভাষায় নিজস্ব বক্তব্যকে ব্যক্ত করতে পারবে ।
বিভিন্ন ধর্মানুসারীর মধ্যে সংলাপের উদ্দেশ্য কোনো ধর্মকে জয় করা নয়, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা নয়, বা সামগ্রিক চুক্তি সম্পাদন বা সর্বজনীন ধর্মপ্রতিষ্ঠাও নয়; বরং বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যকার পারস্পরিক অজ্ঞানতা ও ভ্রান্ত ধারণার ফলে সৃষ্ট বিশাল শূন্যতার ক্ষেত্রে একটা সেতু নির্মাণ করে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করার ব্যবস্থা করা। বস্তুত, আন্তঃধর্মীয় সংলাপের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো, প্রত্যেককে তার নিজের কথা বলতে দেওয়া এবং নিজস্ব উক্তির মাধ্যমে স্ব স্ব অন্তর্দৃষ্টি বা মর্মকথা প্রকাশ করতে দেওয়া।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এর স্বপক্ষে অনেকে হাদিস থেকে কিছু দলিলও পেশ করে।
মূলত হাদীস গুলোতে কাফেরদেরকে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দাওয়াত দেয়ার কথা বিভিন্ন ভাবে উল্লেখ রয়েছে।
এখানে নিজ ধর্মের দিকে দাওয়াতের জন্য রাসুলুল্লাহ সাঃ তাদের সাথে বসেছেন,আলোচনা করেছেন,কোনো ভাবে তাদের ধর্মের কিছু মানা বা নিজ ধর্মে কোনো কিছু সংযোজন বিয়োজন করার উদ্দেশ্যে নয়।
সুতরাং নিজ ধর্মের দিকে দাওয়াতের জন্য এভাবে সংলাপে বসতে কোনো সমস্যা নেই।
তবে প্রচলিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এটা জায়েজ নয়।
তবে কোনো দেশে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ বা এক ধর্ম অবলম্বিদের সাথে অন্য ধর্ম অবলম্বিদের মারাত্মক সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে পারস্পরিক সংলাপ করা যাবে।
তবে কোনোভাবেই নিজ ধর্মকে বিসর্জন দিয়ে কিছু করা যাবেনা।
★আন্তঃধর্ম কি?
বর্তমান সময়ে যেসব ফিতনা মুমিনদের ঈমান হরণে কাজ করছে তার মধ্যে অন্যতম হল আন্তঃধর্ম, যাকে আরবীতে বলা হয় ﻭﺣﺪﺓ ﺍﻷﺩﻳﺎن এবং এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে-interfaith .এটি একটি স্বতন্ত্র ও সক্রিয় মতবাদ ।এই মতবাদের মূল বিষয় হল-ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্মকেও ধর্মীয় সম-মর্যাদা দেয়া ও তার জন্য মুমিনদের অন্তরে ধর্মীয় সহানুভূতি প্রতিষ্ঠা করা। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোকে ইসলামী দিক থেকে সত্যায়ন করে নেয়া।আরো স্পষ্ট করে বললে-এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করা যে,ইসলাম হচ্ছে এমন ধর্ম যা বর্তমানে প্রচলিত সকল ধর্মকে সত্যায়ন করে।(নাউযুবিল্লাহ)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
মুক্তির জন্য ইসলাম ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।তাই দাওয়াত একমাত্র ইসলামের দিকেই হবে।অন্য কোন ধর্মের দিকে নয়।
আল্লাহ ﷻ কুরআন মাজীদে বলেনঃ
اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰہِ الۡاِسۡلَامُ
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।(সূরা আল ইমরান-১৯)
ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺒْﺘَﻎِ ﻏَﻴْﺮَ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﺩِﻳﻨًﺎ ﻓَﻠَﻦْ ﻳُﻘْﺒَﻞَ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﺎﺳِﺮِﻳﻦَ
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।(সূরা আল ইমরান-৮৫)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।(সূরা আল ইমরান-১০২)
রাসূল ﷺ বলেছেনঃ
وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِى أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِىٌّ وَلاَ نَصْرَانِىٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِى أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ
“মুহাম্মাদের জীবন যে সত্ত্বার হাতে, তার কসম করে বলছি, এই উম্মতের যে কেউ ইয়াহূদী হোক বা নাছারা হোক আমার কথা শোনে অথচ আমার রিসালাতের প্রতি ঈমান না আনা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সে হবে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত” (মুসলিম হা/১৫৩; মিশকাত হা/১০ আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে)
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ, أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكِتَابٍ أَصَابَهُ مِنْ بَعْضِ أَهْلِ الْكُتُبِ , فَقَرَأَهُ عَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَغَضِبَ , وَقَالَ : ” أَمُتَهَوِّكُونَ فِيهَا يَا ابْنَ الْخَطَّابِ , وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ , لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً , لَا تَسْأَلُوهُمْ عَنْ شَيْءٍ فَيُخْبِرُوكُمْ بِحَقٍّ فَتُكَذِّبُوا بِهِ , أَوْ بِبَاطِلٍ فَتُصَدِّقُوا بِهِ , وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ , لَوْ أَنَّ مُوسَى كَانَ حَيًّا , مَا وَسِعَهُ إِلَّا أَنْ يَتَّبِعَنِي
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) বর্ণনা করেছেন, একদা হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা) আহলে কিতাবদের একটি কিতাব (কিতাবের একটি পৃষ্ঠা) হাতে করে নবী করিম ﷺ -এর নিকট নিয়ে আসলেন। তারপর সেটি নবীকরীম ﷺ -এর সামনে পাঠ করায় তিনি রাগান্বিত হন। তারপর তিনি বললেন হে ইবনে খাত্তাব! তোমরা কি কোনো দিশেহারা? কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য খাটি ও নির্ভেজাল জিনিষ নিয়ে এসেছি।
কাজেই তোমরা তাদের (আহলে কিতাব) থেকে কিছু জিজ্ঞেস করবেনা। কেননা হয়ত (এমনও হতে পারে) তারা সত্য জিনিষ তোমাদের জানাল আর তোমরা তা মিথ্যা বললে, কিংবা তারা অসত্য কিছু জানাল আর তোমরা তা বিশ্বাস করে পেললে! সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, যদি মূসাও জীবিত থাকত তবে নিশ্চয় আমার আনুগত্য ছাড়া তাঁরও অবকাশ ছিলনা।” (মুসনাদে আহমদ, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং ১৪৮৫৯)।
এ সকল আয়াত ও হাদীস দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল মুক্তির জন্য ইসলাম ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।তাই দাওয়াত একমাত্র ইসলামের দিকেই হবে।অন্য কোন ধর্মের দিকে নয়।
★আন্তঃধর্মীয় ঐক্য একটি কুফরি মতবাদ।তাওহীদ ও কুফরের সাথে কখনও ঐক্য হওয়া সম্ভব নয়।
আল্লাহ ﷻ কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেনঃ
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡا عَدُوِّیۡ وَ عَدُوَّکُمۡ اَوۡلِیَآءَ تُلۡقُوۡنَ اِلَیۡہِمۡ بِالۡمَوَدَّۃِ وَ قَدۡ کَفَرُوۡا بِمَا جَآءَکُمۡ مِّنَ الۡحَقِّ
হে ঈমানদারগণ! আমার ও তোমাদের দুশমনদের প্রতি আকর্ষণ দেখিয়ে তাদের বন্ধু বানিয়ে নিও না,যেহেতু তারা সে সত্যকে অস্বীকার করেছে,যা তোমাদের নিকট এসেছে। (সূরা মুমতাহিনা-১)
لَا یَتَّخِذِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الۡکٰفِرِیۡنَ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَلَیۡسَ مِنَ اللّٰہِ فِیۡ شَیۡءٍ اِلَّاۤ اَنۡ تَتَّقُوۡا مِنۡہُمۡ تُقٰىۃً ؕ وَ یُحَذِّرُکُمُ اللّٰہُ نَفۡسَہٗ ؕ وَ اِلَی اللّٰہِ الۡمَصِیۡرُ
মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।(সূরা আল ইমরান-২৮)
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوا الۡیَہُوۡدَ وَ النَّصٰرٰۤی اَوۡلِیَآءَ ۘؔ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّہُمۡ مِّنۡکُمۡ فَاِنَّہٗ مِنۡہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ
হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।(সূরা মায়িদাহ-৫১)
وَ لَوۡ کَانُوۡا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ النَّبِیِّ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡہِ مَا اتَّخَذُوۡہُمۡ اَوۡلِیَآءَ وَ لٰکِنَّ کَثِیۡرًا مِّنۡہُمۡ فٰسِقُوۡنَ
যদি তারা আল্লাহর প্রতি ও রসূলের প্রতি অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুরাচার।(সূরা মায়িদাহ-৮১)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تُطِيعُوا الَّذِينَ كَفَرُوا يَرُدُّوكُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ فَتَنقَلِبُوا خَاسِرِينَ
হে মু’মিনগণ! যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তোমরা যদি তাদের কথা মান,তবে তারা তোমাদেরকে তোমাদের পেছন দিকে (কুফরের দিকে) ফিরিয়ে দেবে। ফলে তোমরা উল্টে গিয়ে কঠিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।(সূরা আল ইমরান-১৪৯)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
من جامع الوشرك و سكن معه فانه مثله
“যে মুশরিকদের সাথে মিশে যায়/একত্রিত হয়/যোগ দেয়,এবং তাদের মাঝে বসবাস করে সে তাদের মতই।” (সুনানু আবি দাউদ,কিতাবুল জিহাদ,হা: ২৭৭৮; শাইখ আলবানীর(রাহঃ) মতে হাদিস হাসান,সহীহুল জামিঈস সগীর:২/২৭৯; হা:৬০৬২)
لا تساكنوا المشركين و لا تجامعوهم فمن ساكنهم او جامعهم فليس منا
“মুশরিকদের সাথে বসবাস করও না,তাদের সাথে মিশেও যেও না/যোগ দিও না। যে কেউ তাদের সাথে বসবাস করে বা মিশে যায়/যোগ দেয় সে আমাদের কেউ নয়।” (ইমাম হাকিম,আল মুস্তাদরাক:২/১৪১; ইমাম হাকিমের (রাহঃ) মতে ইমাম বুখারীর (রাহঃ) শর্তে সহীহ,ইমাম যাহাবী(রাহঃ) একমত পোষণ করেছেন)
أَنَا بَرِيءٌ مِنْ كُلِّ مُسْلِمٍ يُقِيمُ بَيْنَ الْمُشْرِكِينَ
“মুশরিকদের মাঝে অবস্থানরত /বসবাসরত প্রত্যেক মুসলিমদের প্রতি আমি রুষ্ট।” (ইমাম ইবন হাজার আসকালানী,বুলুগুল মা’আম মিন আদিল্লাতিল আহকাম,হা: ১২৬৪, ইমাম ইবন হাজারের(রাহঃ) মতে সনদ সহীহ)
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীসের বর্ণনাগুলো আমাদের স্পষ্টভাবে জানান দিচ্ছে যে,কাফেরদের সাথে মুসলিমদের কখনও ঐক্য হতে পারে না।যারা এর চেষ্টা করবে,তারা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।