আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
135 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (12 points)
আসসালামু আলাইকুম।
হুজুর আমি প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি বিষয়টা একটু লম্বা হতে পারে এবং এলোমেলো হতে পারে।

আমি দ্বীনের বুঝ পাওয়ার আগে একটি হারাম সম্পর্কে জরিয়ে যাই। পরবর্তীতে আমার দ্বীনের বুঝ আসে। আমি হারাম থেকে বের হবার নিয়তে তাকে জানাই দ্বীনে ফিরে আসতে এবং বিয়ের জন্য অপেক্ষা করতে। আমরা দুইজন ৬ মাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করলেও আমরা ব্যর্থ হই। পরে আমরা আলেম এর থেকে পরামর্শ নিয়ে হানাফি মাযহাব মতে দুইজন স্বাক্ষী নিয়ে বিয়ে করি পরিবার কে না জানিয়ে। তারপর আমরা ধীরে ধীরে শরিয়ত এর সকল কিছু একটু একটু করে মানতে শুরু করি।

সমস্যা ছিলাম আমি। আমি শুরু থেকে দ্বীন সম্পর্কে অবুঝ ছিলাম বলে কিছু বাজে স্বভাব ছিলো। প্রচুর ঝগড়াটে ছিলাম। স্বামীর প্রতি সম্মান এর খেয়াল ছিলোই না। এদিকে সে পড়ালেখা করছে,পরিবার জানে না, আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব, তার ইনকাম এর প্রেশার, আমার বয়স,আমার পরিবার থেকে আমার দ্বীন পালনের জন্য নানান কটু কথা আরো আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে আমি অনেক ঝগড়া করতাম পেরেশানির জন্য। আমি খুব ই অস্থির টাইপের। সে ঠান্ডা আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে প্রায় ৩/৪ বছর কেটে গেলো।

এর মাঝে আমরা শারিরীক ভাবে মিলিত হই। সে রাজশা থাকে।আমি ঢাকা। আমাদের মেসেজ এ যোগাযোগ হতো, কখনো ফোনে।ইত্যাদি ইত্যাদি।
শেষ দিকে অর্থাৎ এই বছর এবং গত বছর টা আমি তাকে অতিরিক্ত প্রেশার দিয়ে ফেলি আমার অজান্তেই। কেননা আমিও অনেক স্ট্রেসড ছিলাম সবদিক মিলিয়ে যে আমাদের সংসার হবে কিনা। পরিবার মানাতে পারবো কিনা।যেহেতু আমার বয়স ২৩/২৪। পড়াশোনা শেষ এর দিকে। তার ইনকাম নেই তেমন।বাসায় বিয়ের প্রেশার।

এরমধ্যে আমরা তালাক সম্পর্কে কোনো ফতোয়া বা নিয়ম জানতাম না। তো আমি প্রায় ই ঝগড়া করলে রাগের মাথায়া বলি আমাকে ছেড়ে দাও। যদি আমি তোমার জন্য কষ্টের কারণ হই আমাকে মুক্ত করে দাও এসব এসব। শুরু থেকেই আমি এমন। আবার কিছুক্ষণ পর আমার রাগ কমে গেলে আমি আবার তার কাছে ক্ষমা চেয়ে সব ঠিক করে নিতাম। কিন্তু কিছুদিন পর আবার স্ট্রেসড হলে আবার সেই কাহিনির পুনরাবৃত্তি।
সে বিষয়টা জানতো। আমাকে বুঝতো। তাই ওইসব সময় সে কথা বাড়াতো না। আমি ক্ষমা চাইলে আবার সব কিছু ভুলে নরমাল হয়ে যেতো।

কিন্তু প্রায় সময় আমি বলতাম আমাকে তালাক দাও। রাগের মাথায় আমি বলতাম। সে বুঝাতো। অনেক সময় বলতো তোমার লাগলে তুমি তালাক দাও আমি পারবো না। বা বলতো আমাকে ছাড়া তুমি শান্তিতে থাকলে থাকো একা। মানে সে বিষয়টা আমার উপর ছেড়ে দিতো।

আমি তাকে বলতাম সিদ্ধান্ত দাও কারণ মেয়েরা তালাক দিতে পারেনা সেইটা আমি জানতাম। সে বলতো দেখা যাক।পরে বলবো। এভাবে ঘুরাতো।

আমার রাগ কমে গেলে আমি আবার মাফ চেয়ে নিতাম। ভুল স্বীকার করলে সে মাফ করে আমাকে আবার আপন করে নিতো।  আর তার থেকে বেশিদিন দূরে থাকলে এই ঝগড়া টা বেশি হতো।

তাই ঝগড়াঝাটি হলে সে ঢাকা আসতো। আমরা একটা হোটেল এ সবসময় দেখা করি। সেখানে একদিন থাকতাম। সব ঠিক হয়ে যেতো সে আবার রাজশাহী চলে যেতো।

কিছুদিন আগে আমাদের অনেক বড় একটা ঝগড়া হয়।

এবং সব ঝগড়া ই আমাদের মেসেজেই হতো। সেবার অনেক দিন কথা বন্ধ ছিলো তার পরিবার কে জানানো আমাদের বিয়ে এসব নিয়েই। আমার বাসায় আমাকে নানান ভাবে বুঝায় এই ছেলে আমাকে নিবে না। আমি কিছুটা ভড়কে যাই। তাকে সন্দেহ করে অনেক ঝগড়া করি।

সে অতিষ্ট হয়ে বলে, তাকে আমি অনেক কষ্ট দেই এসব বলে। তাকে মানসিক প্রেশার এ রাখি।আমি যেনো আরেকটা বিয়ে করে নেই। এ কথায় আমার কিছুটা হুশ আসে। আমি রাগ হয়ে মেনে নেই আবার বলি সে কি আরেকটা বিয়ে করবে আমাকে ছেড়ে.? সে জবাব দেয়, না অন্য মেয়েকে কখনো আর বিয়ে করবে না। এভাবে কলে কথা বলার পর আমি বলি আমি অন্য কাওকে বিয়ে করবো না। সে আমাকে অনেক বার জোর করে অন্য কোনো ভালো ছেলে খুজে বিয়ে করে নিতে। আমি রাজি হইনা। তাকে বলি সে কাওকে বিয়ে করে নেয় যেনো। তখন আমার স্বামী বলে তাহলে তুমি কি বিয়ে করে নিবে.?  আমি উত্তর দেই যে,আমি আর কাওকে বিয়ে করবো না। তখন সে বলে তাহলে তো সম্ভব না। তুমি অন্য কাওকে বিয়ে না করলে তো আমার কাছেই তোমাকে আনতে হবে। আর তুমি আমাকে অনেক পেরেশানি করো তুমি অন্য কাওকে বিয়ে করো।

এভাবেই চলতে থাকে। পরে আমি আর রাজি হইনি বলে সে বললো, ঠিক আছে তুমি অন্য কাওকে বিয়ে না করলে তো আমার কিছু করার নেই। তোমাকে আমি আমার কাছে আনবো আমার পরিবার কে মানানোর জন্য সময় দাও।

ওইটাই আমাদের লাস্ট ঝগড়া ছিলো। আমি এরপর থেক্ব একেবারে শুধুরে যাই আলহামদুলিল্লাহ। আমি আর কখনো এসব কথা তার কাচগে বলবো না নিজেকে নিজেই মানিয়ে নেই।

এখন আলহামদুলিল্লাহ সে আমার উপর সন্তুষ্ট, আমি শুরু থেকেই তার উপর সন্তুষ্ট ছিলাম কারণ সে খুব ই ভালো একজন মানুষ।  আমাদের দুই পরিবারে লোকজনের সাথেই দুইজনের কথা হয়েছে।

আল্লাহ চাইলে কোরবানি ঈদ এর পর হয়তো তারা এসে আমাকে নিয়ে যাবে। এর মাঝে তার পরিবার জানে না আমরা বিবাহিত। আমার পরিবারের কয়েকজন জানে কিন্তু সবাইকে আমি খোলাসা করে বলিনি যে আমরা বিয়ে করেছি সম্পর্ক টাকে হালাল করার জন্য।

এখন বেআহ কিছুদিন ধরেই আমার মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরছে, এতকিছুর মাঝে কোনো কথায় কি আমাদের তালাক হয়ে গেলো.??? আমরা তো জানিও না। আমরা তো মিলন করছি। যোগাযোগ রাখছি। কিছুদিন পর পর সে হোটেল এ আমার সাথে রাত্রীযাপন করছে। আমরা হালাল তো.??

আমি আমার স্বামীকে এ বিষয়ে নিয়ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, তোমাকে ছাড়ার নিয়ত আমার কখনোই ছিলো না। তবে রাগের মাথায় মানুষ কত কিছুই বলে। আমিও রাগের মাথায় বলছি যা বলার। তখন কি নিয়তে বলেছি তা ও আমার মনে নেই। তবে এতটুকু নিশ্চিত,তোমাকে আমি কখনো ছাড়তে চাইনি। আমি নিজ থেকে তো কোনো সিদ্ধান্ত দেইনি।তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে দিয়েছি।  তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবা না এটা আমি জানতাম তাই রাগ করে বলতাম। কিন্তু তুমি চলে গেলে আমি আটকে রাখতাম না। এই নিয়ত ছিলো আমার।

তাই সে বলছে এই সিচুয়েশনের ভিত্তিতে আমাদের তালাক হয়েছে কিনা বিষয়টা ক্লিয়ার হতে। আমিও নিশ্চিন্ত হতে চাই উস্তাজ। কেমন যেনো ভয় হয় আমরা অজান্তেই জেনায় লিপ্ত আছি কিনা। আমরা একে অপরকে নিয়ে সন্তুষ্ট আলহামদুলিল্লাহ। যা হয়েছে সব ই আমার নাদানির জন্য। আমি অবুঝ, আমার রাগ মেজাজ বেশি,আমি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গিয়েই তাকে অতিষ্ট করে দিতাম।

আবার ও ক্ষমা চাচ্ছি এত বড় হয়ে যাওয়ায়। আসসালামু আলাইকুম।
by
হুজুর উত্তর টা জানার ছিলো। যদি উত্তর টা জানাতেন উপকার হতো।

1 Answer

0 votes
by (598,050 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!

"ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া) তে বর্ণিত রয়েছে,
 لا يقع بها الطلاق إلا بالنية أو بدلالة حال كذا في الجوهرة النيرة. ثم الكنايات ثلاثة أقسام (ما يصلح جوابا لا غير) أمرك بيدك، اختاري، اعتدي (وما يصلح جوابا وردا لا غير) اخرجي اذهبي اعزبي قومي تقنعي استتري تخمري (وما يصلح جوابا وشتما) خلية برية بتة بتلة بائن حرامٌ
কেনায়া শব্দাবলী দ্বারা নিয়ত ব্যতীত বা তালাকের ব্যাপারে ইশরা ইঙ্গিত ব্যতীত তালাক পতিত হয় না।কেনায়া তালাক তিন প্রকার যথাঃ-
(১)
যে সমস্ত শব্দাবলী দ্বারা তালাক ব্যতীত ভিন্ন কিছু বুঝা যায় না।যেমন,তোমার বিষয় তোমার হাতে,তুমি পছন্দ করো,তুমি গণনা করো। (২) যে সমস্ত শব্দাবলী দ্বারা তালাক হওয়া এবং না হওয়া উভয়টি বুঝায়।যেমন,তুমু বের হও,তুমি চলে যাও,তুমি আমার কওম থেকে দূরে চলে চাও,তুমি নেকাব পরিধান করো,তুমি পর্দার আড়ালে চলে যাও,তুমি উড়না পরিধান করো। (৩) যা তালাক এবং গালির উভয়টির সম্ভাবনা রাখে। হারাম,বায়িন,মুক্ত,দায়মুক্ত, বাত্তাহ,বাতলাহ ইত্যাদি শব্দাবলি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- ১০৪৯ 


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার সমস্ত প্রশ্ন পড়েছি, প্রশ্নের বিবরণমতে তালাক হবে না। কেননা আপনি বলতেন, "আমাকে তালাক দাও" কিন্তু সে এর জবাবে কিছুই বলতো না। " সে আপনাকে আরেকটা বিয়ে কথা বলছে" কিন্তু তার আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে, তার তালাকের নিয়ত ছিলো না, তাই প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী তালাক পতিত হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...