উসুলে হাদীসের পরিচয় — এমন একটা ইলম বা জ্ঞানকে উসুলে হাদীস বলা হয়, যার মাধ্যমে হাদীসের সানাদ বা বর্ণনাধারা এবং মাতান বা হাদীসের মূল অংশের গ্রহনযোগ্যতা ও অগ্রহনযোগ্যতা সম্পর্কে জানা যায়।
প্রতিটা হাদীস গ্রহণ করার আগে সেই হাদীসের দুটো অংশকে আমাদের যাচাই করতে হয়।
১. উক্ত হাদীসের সানাদ বা রিজাল বা রাবী বা বর্ণনাকারীর পরিচয়। এখানে আমাদের দেখতে হবে বর্ণনাকারী মুসলিম কিনা, আহলুস সুন্নাহের অন্তর্ভুক্ত কিনা, সত্যবাদী হিসেব প্রমানিত কিনা, তাঁর স্মরণশক্তি মজবুত কিনা ইত্যাদি৷
২. উক্ত হাদীসের মূল বক্তব্য। এক্ষেত্রে আমাদের জন্য লক্ষণীয় এই হাদীসের বক্তব্য শরিয়তের অন্য স্পষ্ট বিধান তথা কুরআনের ভাষ্য ও বিখ্যাত বা প্রমানিত হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা ইত্যাদি।
এই বিচারপর্ব শেষে একটা হাদীস যদি গ্রহনযোগ্যতার পরিক্ষায় উত্তির্ন হয় তবে সেটা আমরা গ্রহণ করবো বা সেই হাদীস মাক্ববুল হিসেবে বিবেচিত হবে, নচেৎ উক্ত হাদীস মারদুদ বা অগ্রহনযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে৷
তো এই হাদীসের গ্রহণযোগ্যতার বিচারের বিস্তারিত পদ্ধতি জ্ঞানই হচ্ছে উসুলে হাদীস৷
উসুলে হাদীসের আলোচ্য বিষয় — উসুলে হাদীসের আলোচ্য বিষয় হলো হাদীসের সানাদ বা বর্ণনাধারা ও সেটার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গ এবং মাতান তথা হাদীসের মূল বক্তব্য।
উসুলে হাদীসের উদ্দেশ্য — উসুলে হাদীসের মূল উদ্দেশ্য হলো অগ্রহণযোগ্য বর্ণনাকে ত্যাগ করে গ্রহণযোগ্য বর্ণনার ভিত্তিতে আমাল করে পথভ্রষ্টতা থেকে নিজেকে হিফাযাত করা৷
ইলমুল হাদীস তথা উলুমুল হাদীস এর পারিভাষিক পরিচয় : ইলমুল হাদিস এর পারিভাষিক পরিচয়ের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসিনে কেরামের বিভিন্ন উক্তি পাওয়া যায়।
যথা : ১. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি রহ. বলেন, علم الحديث هو علم يعرف به اقوال رسول الله صلى الله عليه وسلم و افعاله واحواله .
অর্থাৎ ইলমে হাদিস এরুপ এক শাস্ত্রের নাম, যদ্বারা রাসুল সা. এর বাণী, কর্ম ও হাল বা অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
২. ইমাম সাখাভি রহ. বলেন,
معرفة ما اضيف الى النبي صلى الله عليه و سلم قولا له او فعلا او تقريرا .
অর্থাৎ নবি (সা.) এর বাণী, কর্ম,অনুমোদন ও বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানার নাম ইলমুল হাদিস।
৩. কতিপয় হাদিসবিশারদ বলেন,
معرفة ما اضيف الى رسول الله صلى الله عليه وسلم او الى صحابى او الى من دونه ممن يقتدى بهم فى الدين قولا او فعلا او صفة او تقريرا .
অর্থাৎ নবি সা.এর বাণী,কর্ম,অনুমোদন ও বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানা তেমনিভাবে কোন সাহাবী বা তার পরবর্তী এমন কারও বাণী সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা,দ্বীনের ব্যাপারে যিনি অনুসরণযোগ্য, এসবগুলোই ইলমুল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত।
ইলমুল হাদিসের প্রকারভেদ : ইলমুল হাদিস প্রধানত দুই প্রকার - ১. ইলমু রিওয়াতিল হাদিস ২. ইলমু দিরায়াতিল হাদিস
১. ইলমু রিওয়াতিল হাদিস এর পরিচয় :
هو علم يشتمل على نقل احواله صلى الله عليه وسلم قولا و فعلا او تقريرا او صفة.
যে শাস্ত্রে রাসুল সা. এর আহওয়াল তথা সামগ্রিক অবস্থা বা জীবনপ্রণালী বর্ণনা করা হয়; চাই তার বাণী হোক বা কর্ম কিংবা অনুমোদন কিংবা কোন গুণ, তাই ইলমু রিওয়াতিল হাদিস।
২. ইলমু দিরায়াতিল হাদিস এর পরিচয় :
هو علم بقوانين يعرف بها احوال السند والمتن من صحة وحسن و ضعف و رفع و وقف و قطع و علو و نزول و كيفية التحمل و الاداء و صفات الرجال و ما اشبه ذلك.
অর্থাৎ এম কতক নিয়মাবলী জানা, যার দ্বারা সহিহ, হাসান, জয়ীফ, মারফু, মাওকুফ, মাকতু, উচ্চসনদ, নিম্ন সনদ- এর দিক দিয়ে সনদ ও মতনের অবস্থা জানা যায়, হাদিস শিক্ষা গ্রহণ এবং শিক্ষা প্রদানের অবস্থা জানা যায় এবং হাদিসের রাবীদের গুণাবলি ও এ জাতীয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়, তাই ইলমু দিরায়াতিল হাদিস। মোট কথা, কোন হাদিস সম্পর্কে জানা যে, এটি কোন কোন কিতাবে কি কি সনদে এবং কি কি শব্দে বর্ণিত হয়েছে। এরপর এর অর্থ বুঝা ও এর থেকে বিভিন্ন বিধান চয়ন করা, এসবই হল ইলমু রিওয়াতিল হাদিস। অপরদিকে কোন হাদিসের সনদ সম্পর্কে আলোচনা করা যে এটি কোন পর্যায়ের হাদিস, সহিহ না হাসান, মাকবুল না মারদুদ, সনদের রাবীদের অবস্থা কিরুপ, ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা ইলমু দিরায়াতুল হাদিস এর অন্তর্ভুক্ত। সাধারণভাবে উলুমুল হাদিস বলতে ইলমু দিরায়াতুল হাদিসকে বুঝানো হয়ে থাকে।
উলুমুল হাদিস এর আলোচ্য বিষয় :
السند والمتن من حيث القبول والرد
অর্থাৎ গ্রহণ ও বর্জণের দিক দিক থেকে হাদিসের সনদ ও মতন নিয়ে আলোচনা কর।
উলুমুল হাদিসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
১. গায়রে সহিহ থেকে সহিহ হাদিস জানা। ২. হাদিসের পারস্পরিক স্তর জানা।