আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
81 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (39 points)
আসসালামু আলাইকুম শায়েখ,
অনেক সময় ফ্যাক্সিলোড করতে গেলে মোবাইল কোম্পানি গুলো বিভিন্ন এমাউন্ট রিচার্জ করলে বিভিন্ন অফার দেয়। যেমন ১০৮ টাকা রিচার্জে ১ পয়সা প্রতি সেকেন্ড। এমতাবস্থায় ১০৮ টাকা রিচার্জ করতে চাইলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দোকানদারের নিকট ভাংতি থাকে না বলে ১১০ টাকা দিয়ে দেয়া হয়। এই অতিরিক্ত ২ টাকা কি সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে?

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
সুদ আদান প্রদান করা হারাম। এবং তা মারাত্মক পর্যায়ের গোনাহ।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻭَﺃَﺣَﻞَّ ﺍﻟﻠّﻪُ ﺍﻟْﺒَﻴْﻊَ ﻭَﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ 
(তরজমা) 
আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।
সূরা-বাক্বারা-২৭৫;

আল্লাহ তা'আলা বলেন-
ﯾٰۤﺎَﯾُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﯾْﻦَ ﺍٰﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠّٰﻪَ ﻭَ ﺫَﺭُﻭْﺍ ﻣَﺎ ﺑَﻘِﯽَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺑٰۤﻮﺍ ﺍِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻣُّﺆْﻣِﻨِﯿْﻦَ ﻓَﺎِﻥْ ﻟَّﻢْ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮْﺍ ﻓَﺎْﺫَﻧُﻮْﺍ ﺑِﺤَﺮْﺏٍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻠّٰﻪِ ﻭَ ﺭَﺳُﻮْﻟِﻪٖ ۚ ﻭَ ﺍِﻥْ ﺗُﺒْﺘُﻢْ ﻓَﻠَﻜُﻢْ ﺭُﺀُﻭْﺱُ ﺍَﻣْﻮَﺍﻟِﻜُﻢْ ۚ ﻟَﺎ ﺗَﻈْﻠِﻤُﻮْﻥَ ﻭَ ﻟَﺎ ﺗُﻈْﻠَﻤُﻮْﻥَ
(তরজমা) 
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে অংশই অবশিষ্ট রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও। যদি তোমরা মুমিন হও।
যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। আর তোমরা যদি তওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। তোমরাও কারো প্রতি যুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও যুলুম করা হবে না। 
-সূরা বাকারা ২ : ২৭৮-২৭৯

ﻳَﻤْﺤَﻖُ ﺍﻟﻠّﻪُ ﺍﻟْﺮِّﺑَﺎ ﻭَﻳُﺮْﺑِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟﻠّﻪُ ﻻَ ﻳُﺤِﺐُّ ﻛُﻞَّ ﻛَﻔَّﺎﺭٍ ﺃَﺛِﻴﻢٍ
(তরজমা) 
আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।
সূরা বাক্বারা-২৭৬

সুদের বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আরও কয়েক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।যেমন,
'‘হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেও না। আল্লাহকে ভয় করো। তাহলে তোমরা সফল হতে পারবে।’'
 -সূরা আল ইমরান: ১৩০


ﻓَﺒِﻈُﻠْﻢٍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫَﺎﺩُﻭﺍْ ﺣَﺮَّﻣْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻃَﻴِّﺒَﺎﺕٍ ﺃُﺣِﻠَّﺖْ ﻟَﻬُﻢْ ﻭَﺑِﺼَﺪِّﻫِﻢْ ﻋَﻦ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ-ﻭَﺃَﺧْﺬِﻫِﻢُ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻭَﻗَﺪْ ﻧُﻬُﻮﺍْ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﺃَﻛْﻠِﻬِﻢْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻝَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﻭَﺃَﻋْﺘَﺪْﻧَﺎ ﻟِﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﺃَﻟِﻴﻤًﺎ
(তরজমা) 
বস্তুতঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র বস্তু যা তাদের জন্য হালাল ছিল-তাদের পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা দানের দরুন।আর এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করতো অন্যায় ভাবে। বস্তুত; আমি কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব।
সূরা নিসা-১৬০-১৬১

ﻭَﻣَﺎ ﺁﺗَﻴْﺘُﻢ ﻣِّﻦ ﺭِّﺑًﺎ ﻟِّﻴَﺮْﺑُﻮَ ﻓِﻲ ﺃَﻣْﻮَﺍﻝِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺮْﺑُﻮ ﻋِﻨﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﺎ ﺁﺗَﻴْﺘُﻢ ﻣِّﻦ ﺯَﻛَﺎﺓٍ ﺗُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﻭَﺟْﻪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺄُﻭْﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤُﻀْﻌِﻔُﻮﻥَ
(তরজমা)
মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।
সূরা রূম-৩৯

পবিত্র হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সুদের ব্যাপারে স্পষ্ট কথা বলেছেন। যেমন, 
"মেরাজের রাতে আমি এমন একটি দল অতিক্রম করেছি যাদের পেট ঘরের মত (বড়)। ভিতরে অনেক সাপ। যা পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল। আমি বললাম, হে জিবরাইল! এরা কারা? তিনি উত্তর দিলেন, এরা আপনার উম্মতের সুদখোর লোক"। 
-ইবনে মাজাহ: ২২৭৩

অন্য এক হাদীসে সুদের ভয়াবহতাকে এভাবে বর্ণনা করা হয়
ﻭﻋﻦ ﺳﻤﺮﺓ ﺑﻦ ﺟﻨﺪﺏ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨّﺒﻲ ﺻﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠّﻢ : ( ﺭﺃﻳﺖ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺭﺟﻠﻴﻦ ﺃﺗﻴﺎﻧﻲ ﻓﺄﺧﺮﺟﺎﻧﻲ ﺇﻟﻰ ﺃﺭﺽ ﻣُﻘَﺪَّﺳﺔ، ﻓﺎﻧﻄﻠﻘﻨﺎ ﺣﺘﻰ ﺃﺗﻴﻨﺎ ﻋﻠﻰ ﻧﻬﺮ ﻣﻦ ﺩﻡ ﻓﻴﻪ ﺭﺟﻞ ﻗﺎﺋﻢ، ﻭﻋﻠﻰ ﻭﺳﻂ ﺍﻟﻨﻬﺮ ﺭﺟﻞ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻪ ﺣﺠﺎﺭﺓ، ﻓﺄﻗﺒﻞ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﻬﺮ، ﻓﺈﺫﺍ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺨﺮﺝ ﺭﻣﻰ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺑﺤﺠﺮ ﻓﻲ ﻓﻴﻪ، ﻓَﺮُﺩَّ ﺣﻴﺚ ﻛﺎﻥ ﻓﺠﻌﻞ ﻛﻠﻤﺎ ﺟﺎﺀ ﻟﻴﺨﺮﺝ ﺭﻣﻰ ﻓﻲ ﻓﻴﻪ ﺑﺤﺠﺮ ﻓﻴﺮﺟﻊ ﻛﻤﺎ ﻛﺎﻥ، ﻓﻘﻠﺖ : ﻣﺎ ﻫﺬﺍ؟ ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﻟﺬﻱ ﺭﺃﻳﺘﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﻬﺮ ﺁﻛﻞ ﺍﻟﺮّﺑﺎ-
আমরা (আমি, জিবরাইল ও মিকাইল) চলতে চলতে একটি রক্ত নদীর পাড়ে পৌঁছলাম। নদীর মাঝে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। তীরে দাঁড়িয়ে আছে আর এক জন। তার কাছে কিছু পাথর আছে। নদীর ভিতরের লোকটি তীরে এসে যখনই পাড়ে উঠার চেষ্টা করে তখনই তীরের লোকটি তার মুখ বরাবর পাথর ছোঁড়ে তাকে আগের জাগায় ফিরিয়ে দেয়। যত বার উঠার জন্য অগ্রসর হচ্ছে তত বারই মুখের ওপর পাথর ছোঁড়ে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমি বললাম, এ কে? তারা (জিবরাইল ও মিকাইল) উত্তর দিল, নদীর ভেতরের লোকটি একজন সুদখোর। 
-সহিহ বোখারি: ২০৮৫

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে
ﻭﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ : ( ﻟﻌﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠّﻢ : ﺁﻛﻞ ﺍﻟﺮّﺑﺎ، ﻭﻣﻮﻛﻠﻪ، ﻭﻛﺎﺗﺒﻪ، ﻭﺷﺎﻫﺪﻳﻪ ) ، ﻭﻗﺎﻝ : ﻫﻢ ﺳﻮﺍﺀ . 
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন সুদখোরকে, সুদ দাতাকে, সুদের লেখককে, সাক্ষীকে। এবং তিনি বলেছেন, এরা সকলে সমান অপরাধী। 
-সহিহ মুসলিম: ৪১৭৭

কোরআন এবং হাদীসের উপরোক্ত বাণী থেকে আমরা বুঝে নিয়েছি সুদ হারাম ও তা পরিত্যাজ্য একটি বিষয়।তো আমাদেরকে সুদ পরিত্যাগ করতে হলে প্রথমে সুদ সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
এজন্য সহসাই প্রশ্ন জাগে যে,
সুদ আসলে কি?
এ সম্পর্কে হেদায়া কিতাবের ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়ের সূচনালগ্নেই বর্ণিত রয়েছে,
ﺑﺎﺏ اﻟﺮﺑﺎ ﻗﺎﻝ:اﻟﺮﺑﺎ ﻣﺤﺮﻡ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻣﻜﻴﻞ ﺃﻭ ﻣﻮﺯﻭﻥ ﺇﺫا ﺑﻴﻊ ﺑﺠﻨﺴﻪ ﻣﺘﻔﺎﺿﻼ، ﻓﺎﻟﻌﻠﺔ ﻋﻨﺪﻧﺎ اﻟﻜﻴﻞ ﻣﻊ اﻟﺠﻨﺲ، ﺃﻭ اﻟﻮﺯﻥ ﻣﻊ اﻟﺠﻨﺲ، ﻗﺎﻝ: ﻭﻳﻘﺎﻝ: اﻟﻘﺪﺭ ﻣﻊ اﻟﺠﻨﺲ ﻭﻫﻮ ﺃﺷﻤﻞ، ﻭاﻷﺻﻞ ﻓﻴﻪ اﻟﺤﺪﻳﺚ اﻟﻤﺸﻬﻮﺭ
সুদ অধ্যায়ঃ
সুদ হারাম প্রত্যেক (লিটার)পরিমাপক ও প্রত্যেক (ওজন)পরিমাপক বস্তুতে যখন তা একজাতীয় বস্তুতে কমবেশ করে বিক্রি করা হয়।
আমরা হানাফিদের নিকট হারাম হওয়ার মূল কারণ হল,একজাতীয় বস্তু হওয়ার পাশাপাশি পরিমাপে বেশকম হওয়া।সুদ সম্পর্কীয় সেই হাদীসে মাশহুরকে এক্ষেত্রে মৌলিকত্বের স্থান দেয়া হয়।

ফুকাহায়ে কেরামদের পরিভাষায় সুদের সংক্ষিপ্ত রূপ হল,

ﻭﻓﻲ اﻟﺸﺮﻉ ﻓﻀﻞ ﻣﺎﻝ ﺑﻼ ﻋﻮﺽ ﻓﻲ ﻣﻌﺎﻭﺿﺔ ﻣﺎﻝ ﺑﻤﺎﻝ.
মালের বিনিময়ে মাল লেনদেন অনুষ্ঠানে বিনিময়হীন কিছু অতিরিক্ত মাল(আদান-প্রদান করাই সুদ)
মাবসুত কিতাবে বর্ণিত আছে,
اﻟﺮﺑﺎ ﻓﻀﻞ ﺧﺎﻝ ﻋﻦ اﻟﻌﻮﺽ اﻟﻤﺸﺮﻭﻁ ﻓﻲ اﻟﺒﻴﻊ.
ক্রয়-বিক্রয়ে বিনিময়হীন অতিরিক্ত মালের শর্তকে সুদ বলা হয়।

তাই আমাদের উলামায়ে কেরামগণ বলে থাকেন,
ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻠﻤﺎﺅﻧﺎ: ﻫﻮ ﻧﻮﻉ ﺑﻴﻊ ﻓﻴﻪ ﻓﻀﻞ ﻣﺴﺘﺤﻖ ﻷﺣﺪ اﻟﻤﺘﻌﺎﻗﺪﻳﻦ ﺧﺎﻝ ﻋﻤﺎ ﻳﻘﺎﺑﻠﻪ ﻣﻦ ﻋﻮﺽ ﺷﺮﻁ ﻓﻲ ﻫﺬا اﻟﻌﻘﺪ،
সুদ এমন এক লেনদেনকে বলা হয়,
যাতে চুক্তিকৃত বিনিময়হীন অতিরিক্ত মাল কারো মালিকানায় চলে আসা।
বেনায়া -৮/২৬০
(দারুল কুতুব আল-আ'লামিয়্যাহ, বাইরুত,লেবানল।১৪২০হি-২০০০ইং তে প্রকাশিত প্রথম সংস্করণ)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল,নিষিদ্ধ সুদ হওয়ার জন্য দুটি জিনিষ অত্যাবশ্যকীয়।
(১)জিনস তথা রদবদলযোগ্য উভয় জিনিষের জাত এক হওয়া।
(২)পরিমাপ-পরিমাণ সমান না হওয়া।
সুতরাং যদি উভয় জিনিষের মধ্যে কোনো একটি না থাকে তাহলে নগদে নগদে হলে সুদ হবে না।
যেমনঃ-
জাত ভিন্ন অথবা পরিমাপ সমান তাহলে সুদ হবে না।
সুতরাং এক কেজি চালের বিনিময়ে দু কেজি গম লেনদেন জায়েয।কেননা এখানে জাত ভিন্ন।ঠিকতেমনিভাবে পরিমাপ-পরিমাণ সমান হওয়ার ধরুণ এক কেজি চালের বিনিময়ে এক কেজি চাল ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।


সূদ হারাম হওয়ার কিছু হেকমত।যা গুণীজনের বিবেচনায় রাখা অবশ্যই উচিত।
ﺃﺳﺒﺎﺏ ﺗﺤﺮﻳﻢ ﺍﻟﺮّﺑﺎ
ﻣﻦ ﺃﻫﻢّ ﺍﻷﺳﺒﺎﺏ ﺍﻟﺘﻲ ﺗﺪﻋﻮ ﺇﻟﻰ ﺗﺤﺮﻳﻢ ﺍﻟﺮّﺑﺎ :
ﺃﻥّ ﺍﻟﺮّﺑﺎ ﻓﻴﻪ ﻇﻠﻢ ﻛﺒﻴﺮ، ﻭﺃﻥّ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰّ ﻭﺟﻞّ ﺣﺮّﻡ ﺍﻟﻈﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﻋﺒﺎﺩﻩ .
ﺃﻥّ ﺍﻟﻤﻘﺼﺪ ﻣﻨﻪ ﻫﻮ ﻗﻄﻊ ﺍﻟﻄﺮﻳﻖ ﻋﻠﻰ ﻛﻞّ ﻣﻦ ﻛﺎﻧﺖ ﻧﻔﺴﻪ ﻣﺮﻳﻀﺔً .
ﺃﻥّ ﺍﻟﺮّﺑﺎ ﻓﻴﻪ ﻏﺒﻦ .
ﺃﻥّ ﺍﻟﻬﺪﻑ ﻫﻮ ﺍﻟﻤﺤﺎﻓﻈﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺳﺎﺱ ﺍﻟﺬﻱ ﺗﻘﻮﻡ ﺑﻪ ﺍﻟﺴّﻠﻊ .
ﺃﻥّ ﺍﻟﺮّﺑﺎ ﺿﺪّ ﻟﻜﻞّ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻓﻲ ﻣﻨﻬﺞ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ 
সুদে জুলুম-নির্যাতন নিহিত রয়েছে,আর আল্লাহ তা'আলা জুলুম-নির্যাতন করা বান্দারের উপর হারাম করেছেন।
অন্তরের সমস্ত প্রকার বক্রতাকে সমূলে নির্মূল করা।
সুদে প্রকাশ্য ক্ষতি নিহিত রয়েছে।
সুদ হারাম উল্ল্যেখযোগ্য কারণ হল, বাজরে স্থীতিশীলতা বজায় রাখা।
সুদ আল্লাহ তা'আলা কর্মপরিধির সম্পূর্ণ খেলাফ।


সুদ সম্পর্কে জানার পর এখন আমাদেরকে এর আনুষাঙ্গিক দুয়েকটি মাস'আলা জানা অত্যন্ত জরুরী।
এর মধ্য থেকে একটি মাস'আলা
ফ্লেক্সিলোড করে ফ্লেক্সিকৃত অর্থের চেয়ে বেশী গ্রহণ করা কি জায়েয?

উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে 
এ সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন।
ফ্লেক্সিলোড করে ফ্লেক্সিকৃত অর্থের চেয়ে বেশি টাকা গ্রহণ করা ব্যবসায়ীর জন্য জায়েয। 
এরূপ করা সুদ নয়। কেননা এটা মূলত কম টাকার বিনিময়ে বেশি টাকা গ্রহণ নয়। বরং এটা হচ্ছে, নির্ধারিত অঙ্কের আউটগোয়িং সেবা যা বিক্রয়যোগ্য। তাই এটা নির্ধারিত অঙ্কের বেশিতে লেনদেন করা সুদ নয়। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে লোডকারী ব্যবসায়ীকে যেহেতু নির্ধারিত হারে কমিশন দেওয়া হয় এবং গ্রাহক থেকে এ বাবদ কোনো টাকা লওয়া কোম্পানি কর্তৃক নিষিদ্ধ তাই ব্যবসায়ীর জন্য ফ্লেক্সিকৃত অর্থের চেয়ে বেশি লওয়া উচিত নয়। 
[ফতহুল কাদীর, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১৫৯ তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৪০০]
(সুত্র-মুবাইল ফোন ব্যবহারঃবৈধতার সীমারেখা কতটুকু-২৩)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...