নিশ্চয়ই আমি এটি (কুরআন) নাযিল করেছিলাইলাতুল কদরে। ২. তোমাকেকিসে জানাবে লাইলাতুল ক্দর কি? ৩. লাইলাতুল ক্দর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। ৪. সেরাতে ফেরেশতারাও রূহ (জিবরাইল) তাঁদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়েঅবতরণ করেন। ৫. শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।” [সূরা আল কদর, ৯৭: ১-৫]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন :“(রমজানের শেষ) দশ রাত্রি শুরু হলে নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে নামতেন। তিনি নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তাঁর পরিবারবর্গকে (ইবাদাতের জন্য)জাগিয়ে দিতেন।” [সহীহ বুখারী (২০২৪) ও সহীহ মুসলিম (১১৭৪)]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লামবলেছেন: “রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতেলাইলাতুল ক্দর অনুসন্ধান কর।”[সহীহ বুখারী (২০১৭) ও সহীহমুসলিম (১১৬৯),
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামথেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে এবং প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল ক্দরেনামায পড়বে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”[সহীহ বুখারী (১৯০১) ও মুসলিম (৭৬০)]
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সারা বিশ্বে একরাতেই শবে কদর হবেনা।
আমরা নিজ দেশের রোজার সংখ্যা অনুযায়ী ও শবে কদরের আলামত অনুযায়ী শবে কদর তালাশ করবো।
সব দেশে একই রাতে শবে কদর হবেনা।
,
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যেঃ
তাহলে শবে কদর কয়টি?
জান্নাতের দরজা কয়বার খোলা হবে আর জাহান্নামের দরজা কয়বার বন্ধ করা হবে??
ইত্যাদি,,,,
,
আসলে ঊর্ধ্বজগতের বিষয়াদিকে নিম্নজগতের বিধিবিধানের সাথে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবেনা।
অদৃশ্য-জগতের বিষয়গুলোকে দৃশ্যজগতের উপর কিয়াস করছেন। ঐ জগতের কাজ আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের উপর অর্পণ করেছেন এবং সে কাজের জন্য যে তাকভীনী নিয়ম দিয়েছেন সে নিয়মেই তারা তা পালন করবেন। এর সাথে মানুষকে দেয়া শরীয়তী বিধানের কী সম্পর্ক?
,
এরপরও সহজতার জন্য হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (১৮৬৩-১৯৪৩ ঈ.)-এর বক্তব্য তুলে ধরা যেতে পারে।
তিনি শবে কদরের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন-
‘কিন্তু এ বিষয়ে কারো কারো মনে একটি প্রশ্ন জাগবে যে, এখন তো চাঁদের তারিখে ভিন্নতা আছে, কাজেই এখানে যা সাতাশের রাত কোনো কোনো জায়গায় তা আঠাশের রাত হবে তাহলে কি লাইলাতুল কদর দুইটা হচ্ছে আর যদি একটি হয়, তাহলে কার চাঁদ দেখা গ্রহণযোগ্য? এর জবাব হচ্ছে, আপনার কি জানা আছে, ওখানে (ঊর্ধ্বজগতে) দিন-রাত নেই। আর এ তো বিজ্ঞান যারা পড়েছে তাদের কাছে স্বীকৃত যে, রাত-দিন হচ্ছে সৌরজগতের ব্যাপার। ঊর্ধ্বজগতে তো রাত-দিনের ভাগ নেই বরং ওখানে এক অবস্থা।
...একারণে লায়লাতুল কদরের যে শান ও বরকত তা রাত-দিনের সাথে যুক্ত নয়; বরং তা আল্লাহ্র ইচ্ছার অধীন। আল্লাহ তাআলার প্রদত্ত শরীয়ত মোতাবেক যে আমল করবে, আল্লাহ তাআলা ঊর্ধ্বজগতে তার জন্য এমন ব্যবস্থা দিয়ে দেবেন যেন কেউ মাহরূম না হয়। সুতরাং নিশ্চিন্ত মনে নিজ নিজ তারিখ অনুযায়ী কাজ করুন। আল্লাহ তাআলা সবার নিয়ত ও আমল দেখেন। তিনি সবাইকে তাদের হিসাব অনুযায়ী লাইলাতুল কদরের বরকত দান করবেন। (বারাকাতে রমযান, ওয়াজ : ইকমালুল ইদ্দাহ, খুতবাতে হাকীমুল উম্মত, খ- : ১৬, পৃষ্ঠা : ৪২৭)
আরো কথা হচ্ছে, শুধু তারিখের অভিন্নতার দ্বারাই কি এই প্রশ্ন দূর হবে? মনে করুন, গোটা পৃথিবীতে রমযান একই তারিখে শুরু হল, কিন্তু শবে কদর কি সব জায়গায় একসময়েই হবে? বাংলাদেশের মুসলমান যখন সাতাইশের রাত অতিবাহিত করছেন তখন তো কানাডার অধিবাসীরা ২৬ তম রোযা রাখছেন। এই রোযা শেষ করে যখন শবে কদর শুরু করবেন তখন তো বাংলাদেশবাসীর শবে কদর শেষ। শবেকদর তো সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত, চব্বিশ ঘণ্টা তো নয়।
তো প্রশ্ন যদি কেউ এভাবে করে যে, আসল শবে কদর কোনটা? বাংলাদেশেরটা, না কানাডারটা। তাহলেএর জবাব
আল্লাহ তাআলা জাযায়ে খায়ের দান করুন হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ.-কে তিনি এই বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কারো যদি সংশয় জাগে যে, শবে কদর তো একবারই হয় এবং এক রাতেই হয়।
সময়ের ব্যবধান তো জানা কথা। কোথাও রাত থাকে আর কোথাও দিন। কিন্তু শবে কদর তো রাতের সাথেই সম্পৃক্ত। আর তা এক রাতেরই বিষয়। তো যেখানে রাত সেখানে শবে কদর, ঠিক আছে কিন্তু যেখানে দিন সেখানে শবে কদর কীভাবে হবে?
এর জবাব হল, শবে কদর প্রত্যেক স্থানের জন্য আলাদা আলাদা। যেমন আদালত খোলার সময় সকাল দশটায়। তো সব জায়গায় স্থানীয় সময় দশটা বাজেই আদালত খুলবে। কলকাতায় খুলবে কলকাতার সময় মোতাবেক, লন্ডনের সময় মোতাবেক লন্ডনে।
হুকুক ওয়া ফারায়েজ, ওয়াজ : আলওয়াক্ত, খুতুবাতে হাকীমুল উম্মত, খ- : ৪, পৃষ্ঠা : ৪১৮