আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
78 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (87 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি অয়া বারকাতুহু।


১/ ওজূ ভংগের কারণ গুলো জানতে চাই।

২/ নাভী দেখা গেলে কিংবা হাটু দেখা গেলে কি অজু ভেংংগে৷  যায়?

৩/ উলংগ হয়ে গোসল করা কি জায়েজ?
৪/ কেও উলংগ হয়ে যদি  সুন্নাহ পদ্ধতি তে  বা গোসলের ফরয পালন করে গোসল করে তবে কি তার আর অজূ করার প্রয়োজন আছে?

৫/ গোফ কতটুকু কাটা বাধ্যতামূলক? সৌন্দর্য এর জন্য গোফ অল্প কাটা যাবে কি? অর্থাৎ কিছু টা বড় রাখা।

৬/ গোফ, বিভিন্ন অংগের লোম কত দিন পর পর না কাটলে গুনাহ হয় এবং তা কি কবীরাহ গুনাহ?

৭/ চুল বড় রাখতে চাই এক্ষেত্রে যদি নাপিত কে বলি সামনে আর পিছনে বড় রেখে আসে পাসের যে অতিরিক্ত চুল এলমেলো হয়ে থাকে তা সুন্দর আকার করে দিতে এবং হাল্কা ছোট করতে যাতে এলোমেলো না থাকে এবং সামনের ও পিছনের চুল বড় থাকে তবে এভাবে কাটা কি জায়েজ হবে?

৮/ দুই গাল এর দুই পাশ এর দাড়ি কি কাটা জায়েজ? কতটুকু বড় হলে কাটা জায়েজ হবে ওই অংশের দাড়ি?

৯/শেইখ কেও যদি অনেক বেশি উত্তেজিত হয়, তবে যদি কোলবালিশ ব্যবহার করে বীর্যপাত করে কিংবা উত্তেজনা দমন এর চেষ্টা করে তবে তা কি হারাম বা কবীরাহ গুনাহ?


জাযাকাল্লাহু খইরন।

1 Answer

0 votes
by (566,490 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
https://ifatwa.info/8942/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
মৌলিকভাবে অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি। যথা-

১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া-১/৭)

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত,  নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّمَا الْوُضُوءُ مِمَّا خَرَجَ ، وَلَيْسَ مِمَّا دَخَلَ
শরীর থেকে যা কিছু বের হয় এ কারণে অযু ভেঙ্গে যায়, প্রবেশের দ্বারা ভঙ্গ হয় না। (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী ৫৬৮)

২.  রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া-১/১০)

أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا رَعَفَ، انْصَرَفَ فَتَوَضَّأَ

আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযি.-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝরতো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অযু করে নিতেন। (মুয়াত্তা মালিক ১১০)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يُفْتِي الرَّجُلَ إِذَا رَعَفَ فِي الصَّلَاةِ، أَوْ ذَرَعَهُ قَيْءٌ، أَوْ وَجَدَ مَذِيًّا أَنْ يَنْصَرِفَ فَيَتَوَضَّأُ

আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি যদি কারো নামাযরত অবস্থায় নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, বা বমি হতো, বা মজি বের হতো তাহলে তাকে ফিরে গিয়ে অযু করার ফাতওয়া প্রদান করতেন। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ৩৬১০)

৩. মুখ ভর্তি বমি অর্থাৎ বেশি পরিমাণে বমি হলে। 

مُغِيرَةُ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: سَأَلْتُهُ عَنِ الْقَلْسِ، فَقَالَ: ذَلِكَ الرَّسْعُ، إِذَا ظَهَرَ فَفِيهِ الْوُضُوءُ
ইবরাহীম নাখয়ী রহ.-কে বমির ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলেন মুগীরাহ রহ.। তখন তিনি উত্তরে বললেন, যদি তা মুখ ভরে হয়, তাহলে অযু করতে হবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৪৩৩)

৪. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।

عَنِ الْحَسَنِ فِي رَجُلٍ بَزَقَ فَرَأَى فِي بُزَاقِهِ دَمًا، أَنَّهُ لَمْ يَرَ ذَلِكَ شَيْئًا حَتَّى يَكُونَ دَمًا غَلِيظًا، يَعْنِي فِي الْبُزَاقِ

হাসান বসরী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার উপর অযু করা আবশ্যক হয় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩৩০)

عَنْ إِبْرَاهِيمَ فِي الرَّجُلِ يَبْزُقُ فَيَكُونُ فِي بُزَاقِهِ الدَّمُ، قَالَ: إِذَا غَلَبَتِ الْحُمْرَةُ الْبَيَاضَ تَوَضَّأَ، وَإِذَا غَلَبَ الْبَيَاضُ الْحُمْرَةَ لَمْ يَتَوَضَّأْ

ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে, তাহলে সাদার উপর লাল রঙ বেশি থাকে, তাহলে অযু করবে, আর যদি লালের উপর সাদার আধিপত্য থাকে, তাহলে অযু লাগবে না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩৩২)

৫. ঘুমানো- চিৎ হয়ে; কাত হয়ে; হেলান দিয়ে কিংবা কোনো কিছুর সঙ্গে ঠেস দিয়ে ঘুমালে যা সরিয়ে ফেললে ঘুমন্ত ব্যক্তি পড়ে যাবে। 

ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত,  রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لَيْسَ عَلَى مَنْ نَامَ سَاجِدًا وُضُوءٌ، حَتَّى يَضْطَجِعَ، فَإِنَّهُ إِذَا اضْطَجَعَ، اسْتَرْخَتْ مَفَاصِلُهُ
সেজদা অবস্থায় ঘুমালে অযু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা, চিৎ বা কাত হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে]।  (মুসনাদে আহমাদ ২৩১৫ আবু দাউদ ২০২)

৬.পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে। 
عَنْ حَمَّادٍ قَالَ: إِذَا أَفَاقَ الْمَجْنُونُ تَوَضَّأَ وُضُوءَهُ لِلصَّلَاةِ
হাম্মাদ রহ. বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ হয়, তখন নামাযের জন্য তার অযু করতে হবে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ৪৯৩)

৭. নামাযে উচ্চস্বরে হাসি দিলে। 

 ইমরান বিন হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে,
مَنْ ضَحِكَ فِي الصَّلَاةِ قَرْقَرَةً ، فَلْيُعِدِ الْوُضُوءَ وَالصَّلَاةَ
যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।
,
(০২)
না,এতে অযু ভেঙ্গে যায়না।

(০৩)
জায়েজ আছে।
তবে বিবস্ত্র অবস্থায় গোসল করা হতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

(০৪)
প্রয়োজন নেই।

(৫.৬)
গোঁফ চেঁছে ফেলা এবং ছোট করে রাখা উভয়ই জায়েজ। উভয় সুরতই সুন্নতে রাসূল বলে প্রমানিত। 
উলামাদের একটি দল গোঁফকে একেবারে মুণ্ডন করাকে উত্তম বলেছেন, আরেকটি দল গোঁফ মুণ্ডন না করে ছোট করে রাখাকে উত্তম বলেছেন।

তাই একবার চেঁছে একবার ছোট করে উভয় সুন্নতের উপর আমল করা যায়। তবে কোনটি উত্তম এ ব্যপারে মতবিরোধ আছে। এক্ষেত্রে সঠিক ফায়সালা হলো-যে ব্যক্তির গোঁফ যেভাবে কেটে রাখলে সুন্দর দেখায় সেভাবে কেটে রাখতে পারবে। প্রতি সপ্তাহে গোফ কাটা সুন্নাত।

তবে চল্লিশ দিনের বেশি সময় গোঁফ না কাটা মাকরুহ। 

তাই চল্লিশ দিনের বেশি সময় গোঁফ না কেটে রাখা যাবেনা। 

এতে সে শরীয়তের পক্ষ থেকে ধমকির হকদার হবে।

এ মর্মে সাহাবী আনাস রাযি. বলেন,

وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ، وَنَتْفِ الإِبِطِ، وَحَلْقِ الْعَانَةِ، أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ يَوْماً

অর্থাৎ, গোঁফ ছোট রাখা , নখ কাঁটা, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা এবং নাভীর নিচের লোম চেঁছে ফেলার জন্যে আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল যেন, আমরা তা করতে চল্লিশ দিনের অধিক দেরী না করি। (মুসলিম ২৫৮)

গোফ কাঁটা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 

(০৭)
জায়েজ নেই।
সব দিকে এক সমান রাখতে হবে।

(০৮)
দাড়ির চৌহদ্দি হলো গালের শেষ ভাগে এবং গলার শুরু ভাগে বাম কান থেকে ডান কান পর্যন্ত বিস্তৃত লম্বা হাড্ডিতে গজানো চুল হলো দাড়ির সীমারেখা। বাকিটা দাড়ি নয়। থুতনির উপরের ছোট চুল কাটাও উচিত নয়।

 (  وفى المعجم الوسيط- (اللحي ) منبت اللحية من الإنسان وغيره وهما لحيان والعظمان اللذان فيهما الأسنان من كل ذي لحى (المعجم الوسيط – باب اللام 

যার সারমর্ম হলো হাড্ডির উপরে গজানো অংশ দাড়ি,তার দুই পার্শে যা আছে,সেটা দাড়ির সীমানার বাহিরে অন্তর্ভুক্ত ।   
,
সুতরাং হাড্ডির উপরে গজানো অংশ ছাড়া গালের উপর গজানো দাড়ি কাটা জায়েজ আছে।
তবে কিছু উলামায়ে কেরামগন গালের উপরিভাগের এ অংশটুকুকেও কাটতে নিষেধ করেছেন।  

বিস্তারিত জানুনঃ 

(০৯)
এর দরুনও কবীরাহ গুনাহ হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...