আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
116 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)
আসসালামু 'আলাইকুম। আমার আম্মু মারা যায় প্রায় ১২ বছর আগে। মৃত্যুর আগে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ ছিল। আমি তখন ক্লাস ৬ এ পড়ি। আমি বড় মেয়ে। আমার ৪ বছর এর ছোট বোন আছে একজন। আমার বাবার আর্থিক অবস্থা এমন ছিল না যে উনি সেই ঋণ সোধ করতে পারবে। এমতোবস্থায় আমার খালা সেই ঋণ সোধ করে দেন কোনো রকম দাবি দাওয়া ছাড়াই।  পরে আমাদের তাকে দিয়ে দিতে হবে এমন কোনো কথাই তিনি বলেননি।

আমরা জয়েন্ট ফ্যামিলিতেই থাকতাম। বিভিন্ন কারণে যখন আমরা আলাদা হয়ে যাই। সেই দিনই প্রথমবার যখন ভাড়া নিজেরা বাড়িওয়ালাকে দিতে যাই, সেদিন জানতে পারি উনি ২ বছর ভাড়া বাবদ আমাদের থেকে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে এবং ৭ বছর আমাদের থেকে প্রতি মাসে ১২০০ টাকা করে বেশি নিয়েছে। (আম্মুর জীবদ্দশায় বেশি নিয়েছে কিনা সেটা উনি আর আল্লাহ জানে)। সে হিসেবে ৯ বছরে প্রায় ১,২৪,৮০০ টাকা আমাদের না জানিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে। এ টাকা দাবি করলে উনি দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

এখন উনি উনার ঋণ দেয়া ৫০,০০০ টাকা দাবি করছে। নিজে ডিরেক্টলি না চেয়ে ভাবি, মামা, মামিদের দিয়ে বলাচ্ছে। বলে এ দাবি সে ছাড়বে না। তাকে এ টাকা দিতেই হবে। আমি স্টুডেন্ট মানুষ।টিউশন করিয়ে জমানো কিছু টাকা আছে। আমার আব্বুর সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই। এই অবস্থায় আমার করণীয় কি?

জাযাকাল্লাহ খইরন।

1 Answer

0 votes
by (589,290 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কর্তব্য হ’ল ঋণ পরিশোধের ব্যপারে সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা করা। আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا،
 ‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট’ (ত্বালাক ৬৫/৩)। 
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيْدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللهُ عَنْهُ، وَمَنْ أَخَذَ يُرِيْدُ إِتْلاَفَهَا أَتْلَفَهُ اللهُ،
‘যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা গ্রহণ করে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করবেন’।(নদসহীহ বোখারী-২৩৮৭; সুনানু ইবনি মাজাহ-২৪১১)

ক্বিয়ামতের দিন সে চোর হিসাবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে।(ইবনু মাজাহ-২৪১০)
অন্যত্র তিনি বলেন,
مَنْ أَخَذَ دَيْنًا وَهُوَ يُرِيْدُ أَنْ يُؤَدِّيَهُ، أَعَانَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ،
‘যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের নিয়তে ঋণ গ্রহণ করে, আল্লাহ তাকে ঋণ পরিশোধে সহযোগিতা করেন’।(নাসাঈ-৪৬৮৭)

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ دَيْنٌ، فَلَيْسَ ثَمَّ دِينَارٌ، وَلَا دِرْهَمٌ، وَلَكِنَّهَا الْحَسَنَاتُ وَالسَّيِّئَاتُ،
‘কেউ ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে (ক্বিয়ামতের দিন) তার সেই ঋণ পরিশোধ করার জন্য কোন দীনার বা দিরহাম থাকবে না; বরং পাপ ও নেকীগুলোই অবশিষ্ট থাকবে’।(হাকেম-২২২২)


অর্থাৎ ক্বিয়ামতের ময়দানে নেকীর মাধ্যমে হ’লেও ঋণ পরিশোধ করতে হবে। যদি ঋণী ব্যক্তির কোন নেকী না থাকে, তাহ’লে ঋণ দাতার পাপ থেকে তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ كَانَتْ عِنْدَهُ مَظْلِمَةٌ لِأَخِيهِ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهَا، فَإِنَّهُ لَيْسَ ثَمَّ دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ، مِنْ قَبْلِ أَنْ يُؤْخَذَ لِأَخِيهِ مِنْ حَسَنَاتِهِ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ أَخِيهِ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ
‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের উপর যুলুম করেছে, সে যেন তার কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নেয়, তার ভাইয়ের পক্ষে তার নিকট হ’তে পুণ্য কেটে নেওয়ার আগেই। কারণ সেখানে কোন দীনার বা দিরহাম পাওয়া যাবে না। তার কাছে যদি পুণ্য না থাকে তবে তার (মাযলূম) ভাইয়ের গোনাহ্ এনে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে’।(বুখারী-৬৫৩৪; তিরমিযী-২৪১৯)

সুতরাং মৃত্যুর আগেই এই ভয়াবহ ঋণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা অবশ্য কর্তব্য।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার আব্বুর কাছে সত্যিই টাকা পায় কি না? সেটাকে ভালোভাবে তাহক্বীক করে নিতে হবে। যদি ঐ ব্যক্তি সত্যিই আপনার বাবার কাছে টাকা পায়, তাহলে পরিশোধ করে দিতে হবে। আর যদি ঋণ না পায়, তাহলে তো দেয়ার কোনো প্রয়োজনিয়তা নাই। যদি আপনাদের ভাড়া বাবৎ কিছু পাওনা থাকে, তাহলে সেটা উসূল করবেন। অথবা আপনার বাবার ঋণ বাবৎ কাটাকাটি করে নিবেন।যদি আপনারা সত্যিই ঋণ পান, আর ঐ ব্যক্তি অস্বীকার করে, তাহলে ঋণ পরিশোধ করার জন্য যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...