সংগৃহিত আর্টিকেলটি প্রথমে পড়ুন।
মেসওয়াকের গুরুত্ব, ফজিলত ও পদ্ধতি।
মানুষের প্রতিটি কাজে রয়েছে সুন্নাতে নববির দিক নির্দেশনা।
মিসওয়াক করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত। মিসওয়াক করার মাঝে রয়েছে ইহ ও পরকালীন কল্যাণ ও উপকারিতা।
মিসওয়াক কি?
মিনওয়াক হলো গাছের ডাল বা শিকড়। যা দিয়ে দাঁত মাজা ও পরিষ্কার করা হয়। দাঁত মাজাকেও মিসওয়াক বলা হয়।
মিসওয়াকের গুরুত্ব!!
মেসওয়াকের মাধ্যমে দাঁত পরিস্কার করা আল্লাহ তাআলার নিকট অত্যান্ত পছন্দনীয় কাজ। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বিশেষ যত্নবান ছিলেন এবং উম্মতকে অনেক তাকিদ দিয়েছেন। এ প্রসংগে হযরত আবু উমামা (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য, তিনি বলেনঃ
عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ما جاءني جبريل قط إلا أمرني بالسواك حتى لقد خشيت أن أحفي مقدم فمي»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এমনটি কখনো হয়নি যে, জিবরাইল (আ) আমার নিকট এসেছেন আর আমাকে মেসওয়াকের আদেশ দেননি। এতে আমার আশংকা হচ্ছিল যে, (মেসওয়াকের কারণে) আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে না ফেলি।(আল মুযামুল কাবীর লিত তবারানী, হাদীস নং৭৮৪৭, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২২২৬৯)
অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
لولا أن أشق على أمتي أو على الناس لأمرتهم بالسواك مع كل صلاة»
আমি যদি উম্মতের উপর (কষ্ট হবার) আশংকা না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাজেই মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং৮৮৭, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং২৫২)
মিসওয়াক করার ফজিলত!!
মিসওয়াকের বহু ফজিলত হাদীসে বর্ণিত আছে। এব্যপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
السواك مطهرة للفم مرضاة للرب
মেসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায় (নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ৫)
অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «فضل الصلاة التي يستاك لها على الصلاة التي لا يستاك لها سبعين ضعفا» تفرد به يحيى بن معاوية بن يحيى الصدفي ويقال إن ابن إسحاق أخذه منه
মেসওয়াক করে যে নামাজ আদায় করা হয়, সে নামাজে মেসওয়াকবিহীন নামাজের তুলনায় সত্তরগুন বেশী ফযীলত রয়েছে।(শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদীস নং ২৫১৯)
এছাড়া আরো বহু উপকার রয়েছে।
ইহকালীন উপকার!!!
১) মিসওয়াক করার মধ্যমে আল্লাহর রিজামন্দি হাসিল হয়।
২) দারিদ্র্যতা দূর হয়ে।
৩) সচ্ছলতা আসে এবং উপার্জন বাড়ে।
৪) পাকস্থলী ঠিক থাকে।
৫) শরীর শক্তিশালী হয়।
৬) স্মরণশক্তি ও জ্ঞান বাড়ে। ৭) অন্তর পবিত্র হয়।
৮) সৌন্দর্য বাড়ে।
৯) ফিরিশতা তার সঙ্গে মুসাফাহা করেন।
১০) নামাজে বের হলে সম্মান করেন, নামাজ আদায় করে বের হলে আরশ বহনকারী ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
১১) শয়তান অসন্তুষ্ট হয়।
১২) ফুলসিরাত বিজলীর ন্যায় দ্রুত পার হবেন
১৩) ডান হাতে আমলনামা পাবে।
১৪) ইবাদতে শক্তি পাবে।
১৫) মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব হবে।
১৬) জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে।
১৭) জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা দেয়া হবে।
১৮) পূত-পবিত্র হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে।
১৯) দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়।
২০) মুখের দুরগন্ধ দূর হয় ইত্যাদি।
মিসওয়াক করার পদ্ধতি!
রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাইতুন ও খেজুর গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করেছেন। তাই এই দুটো হলে উত্তম। এছাড়া তিক্তস্বাধ যুক্ত গাছের ডাল হলেও ভাল। মেসওয়াক কাচা ও নরম গাছের ডাল হওয়া উচিত, এতে মেসওয়াকে বাড়তি ফায়দা হাসিল হয়।
মেসওয়াক নিজ হাতের আঙ্গুলের মত মোটা ও এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত। এতে মেসওয়াক করতে যেমন সুবিধা হবে তেমনি বেশী ফায়দাও পাওয়া যাবে।
অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে উযুতে হাত ধোয়ার পর কুলি করার পূর্বে মেসওয়াক করা উত্তম। তবে কোন কোন আলিম উযুর পূর্বে মেসওয়াক করার কথাও বলেছে। উযুর সময় ছাড়াও যে কোন সময় মেসওয়াক করা যাবে।
মেসওয়াক ধরার পদ্ধতি হল, ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি মেসওয়াকের নিচে থাকবে। মধ্যমা ও তর্জনী উপরে ও বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচে রেখে মেসওয়াক ধরা। এতে করে মুখের ভিতর ভালভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেসওয়াক করা যায়। এপদ্ধতিটি হযরত ইবনে মাসউদ রাযি থেকে বর্ণিত আছে।
মেসওয়াক করার মাসনূন পদ্ধতি হল, মুখের ডান দিক থেকে শুরু করা এবং উপর থেকে নিচে মেসওয়াক করা। আড়াআড়ি ভাবে না করা। মেসওয়াক করার সময় দাঁতের ভিতর বাহির সহ মেসওয়াক করা এবং জিহবাও গোড়া পর্যন্ত মেসওয়াক করা।
মেসওয়াসের মাঝে দুটি বিষয় সুন্নত, এক. মুখ পরিষ্কার করা। দুই. গাছের ডাল হওয়া। তাই গাছের ডাল ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে দাঁত মাজলে একটি সুন্নত আদায় হবে। অপরটি হবেনা। সুতরাং মেসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল ও শুকনো কাপড় দ্বারাও মেসওয়াক করা যেতে পারে। ব্রাশের মাধ্যমেও দাঁত মাজা যেতে পারে।
ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর ও ঘুমানোর পূর্বে, নামাজের আগে, মজলিসে উপস্থিত
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১)
মিসওয়াক দাড়িয়ে এবং বসে যেকোনো ভাবে করা যায়।কেউ কেউ বসে মিসওয়াক করার উপর একটি বর্ণনা নকল করেন,
يا علي لا تسوك قائما إذا كنت قائما فإنه يحصل منه مرض الركبة
তবে উক্ত বর্ণনার বিশুদ্ধতম কোনো সনদ পাওয়া যায়নি।সেজন্য বলা যায় যে,দাড়িয়ে বা বসে, যেকোনো ত্বরিকায় মিসওয়াক করা যাবে।
(২)
বাথরুম যেহেতু ময়লা আবর্জনার স্থান,তাই বাথরুমে মিসওয়াক করা মাকরুহ।(দুরারুল হুক্কাম-১/১০)
বাথরুমের বাহিরে মিসওয়াক করে,বাথরুমে থুথু ফেলা যাবে।এতে কোনো বিধিনিষেধ নেই।
(৩)
"খাবারের সাথে নিজের অজান্তে পিঁপড়া খেয়ে ফেললে ৭০ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যায়।" কথাটা সম্পূর্ণই বানোয়াট।
(৪)
বিয়ের আগের দিন কোনো ধরনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, স্টেইজ ইত্যাদির কোনো আয়োজন না করে শুধু বাড়ির মধ্যে নিকটাত্মীয়দের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে। এতে কোনো সমস্যা নাই।তবে ফ্রি মিক্সিং পরিবেশ যাতে সৃষ্টি না হয়,সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।