৫ ওয়াক্ত নামায ও ৩০ টা রোজা রাখা ফরজ হওয়া সংক্রান্ত কুরআন হাদীসে অসংখ্য দলিল রয়েছে।
মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিবরণ দিয়েছেন কুরআনে বিভিন্ন স্থানে:
মাগরিব ও ইশার সালাতঃ
فَسُبْحَانَ اللَّـهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ
“অতএব, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্মরণ কর সন্ধ্যায় ও সকালে।”
সূরা রুম, আয়াত-১৭-১৮
– সন্ধ্যা বলতে এখানে মাগরিব ও ইশার সালাত বুঝানো হয়েছে।
– আর সকালে বলতে ফরজ সালাত বুঝানো হয়েছে।
যোহর ও আসরের সালাতঃ
আল্লাহ তাআলা যোহর ওআসরের সালাতের বিষয়ে বলেনঃ
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ
“আর দিনের দুই প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশ সালাত প্রতিষ্ঠা করুন”
সূরা হুদ: ১১৪
দিনের দুই প্রান্তের মধ্যে একপ্রান্তে ফজর আর অন্য প্রান্ত যোহর ও আসর নামায উদ্দেশ্য আর রাতের কিছু অংশ সালাত বলতে মাগরিব ও ইশার সালাত উদ্দেশ্য।
ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার সালাতঃ
আল্লাহ তাআলা এ চার সময় সম্পর্কে বলেন:
أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا
“সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করুন এবং ফজরের কুরআন পাঠও। নিশ্চয় ফজরের কোরআন পাঠ মুখোমুখি হয়।”
সূরা ইসরা/ বানি ঈসরাইল: ৭৮
সূর্য ঢলে পড়ার পর হল যোহরের সালাত আর রাত্রির অন্ধকার নেমে আসার পর মাগরিব ও ইশার সালাত। আর ফজর সালাতের কথা তো স্পষ্টই।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَهْلِ نَجْدٍ ثَائِرَ الرَّأْسِ، يُسْمَعُ دَوِيُّ صَوْتِهِ وَلاَ يُفْقَهُ مَا يَقُولُ، حَتَّى دَنَا، فَإِذَا هُوَ يَسْأَلُ عَنِ الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَمْسُ صَلَوَاتٍ فِي اليَوْمِ والليلة، فقال: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهَا؟ قَالَ: لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَوَّعَ...
নাজ্দ অঞ্চলের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এল। উস্কোখুস্কো মাথা। তার বিড়বিড় আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল; তবে কী বলছিল বোঝা যাচ্ছিল না। কাছে এসে ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। সে জিজ্ঞেস করল, এছাড়া আর কোনো সালাত কি আমার উপর ফরয? তিনি বললেন, না; তবে ইচ্ছে করলে নফল আদায় করতে পার।... -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوا: لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ، قَالَ: فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا.
কী ধারণা- তোমাদের কারো দুয়ারে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচ বার গোসল করে, তার দেহে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবীগণ বললেন, না; তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না। তিনি বললেন, এটা হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্ত। এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা গোনাহসমূহ মোচন করে দেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৬৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৮
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন-
نُهِينَا أَنْ نَسْأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ شَيْءٍ، فَكَانَ يُعْجِبُنَا أَنْ يَجِيءَ الرَّجُلُ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ الْعَاقِلُ، فَيَسْأَلَهُ، وَنَحْنُ نَسْمَعُ، فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، أَتَانَا رَسُولُكَ فَزَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللهَ أَرْسَلَكَ، قَالَ: صدق قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ السَّمَاءَ؟ قَالَ: اللهُ، قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ الْأَرْضَ؟ قَالَ: اللهُ، قَالَ: فَمَنْ نَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، وَجَعَلَ فِيهَا مَا جَعَلَ؟ قَالَ: اللهُ، قَالَ: فَبِالَّذِي خَلَقَ السَّمَاءَ، وَخَلَقَ الْأَرْضَ، وَنَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، آللهُ أَرْسَلَكَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِنَا، وَلَيْلَتِنَا، قَالَ: صَدَقَ، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: نَعَمْ...
আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো (অপ্রয়োজনীয়) বিষয়ে প্রশ্ন করতে। তাই আমাদের আকাক্সক্ষা ছিল, গ্রাম্য বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করবে আর আমরা শুনব।
একবার এক গ্রাম্য লোক এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার দূত আমাদের কাছে এসে বলল, আপনি দাবি করেছেন- আল্লাহ আপনাকে (রাসূল হিসেবে) পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, সে সত্য বলেছে। লোকটি বলল, আকাশ কে সৃষ্টি করেছেন? বললেন, আল্লাহ। বলল, ভূমি কে সৃষ্টি করেছেন? বললেন, আল্লাহ। বলল, এই পাহাড়সমূহ কে প্রোথিত করেছেন এবং তাতে যেসব সৃষ্টি সেগুলো কে সৃষ্টি করেছেন? বললেন, আল্লাহ। লোকটি বলল, সেই সত্তার শপথ, যিনি আকাশ সৃষ্টি করেছেন, ভূমি সৃষ্টি করেছেন এবং পাহাড়সমূহ প্রোথিত করেছেন- আল্লাহ-ই কি আপনাকে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ।
বলল, আপনার দূত বলেছে, আমাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয। তিনি বললেন, সে ঠিক বলেছে। বলল, সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন- আল্লাহ-ই কি আপনাকে এই আদেশ করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ।.... -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২; সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩
★রমযান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ, মুকীম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং হায়েয-নেফাসমুক্ত প্রাপ্তবয়স্কা নারীর উপর পূর্ণ রমযান রোযা রাখা ফরয।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
(তরজমা) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার।-সূরা বাকারা (২) : ১৮৩
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন-
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
(তরজমা) সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে।- সূরা বাকারা (২) : ১৮৫
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কুরআন পূর্ণ রমজান মাস রোযা রাখার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং রমজান মাস যে কয়দিন হবে,সে কয়দিন রোযা রাখা ফরজ হবে।
এই আয়াত গুলি দ্বারা ৩০ টি রোযা ফরজ হওয়া স্পষ্ট আকারে সাব্যস্ত হয়।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إذا رأيتم الهلال فصوموا وإذا رأيتموه فافطروا، فإن غم عليكم فصوموا ثلاثين،
وفي رواية : صوموا لرؤيته وأفطروا لرويته، فإن عم عليكم فاكملوا العدد.
যখন তোমরা (রমযানের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা রাখবে আর যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা বন্ধ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন রোযা রাখবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১০৮০ (১৭-১৮)