আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
96 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
উস্তাজ, আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। এবার IOM তে ভর্তি হয়েছি।পর্দা ইস্যু, ফ্রি-মিক্সিং সব মিলিয়ে আমি এখন চাকরি করতে চাচ্ছি না। কিন্তু আমার পরিবারকে কোনভাবে এটা বুঝতে পারছি না। আমার পরিবারের দ্বীনের বুঝ একদম নাই বললেই চলে। ওনারা এবং আমার আশেপাশের সবার এক কথা পর্দা করে সব করা যায়, আমি বেশি বেশি করতেছি। আমাদের পরিবারের ফিনানশিয়াল অবস্থা খুব একটা ভালো না। আব্বার যখন ৬ দিন তখন ওনার মা মারা যান, পরে আমার দাদাও ওনার দায়িত্ব নেননি। একটা সময় আব্বা তার চাচার সংসারে যায়। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে ২০১৪ সালে আমরা ওই সংসার থেকে চলে আসি। আমাদের খাবারের ধান টা ক্ষেত থেকে আসে। আর একটা গাভীসহ দুটা গরু আছে। আমার ছোট ভাই এবার এসএসসি দিচ্ছে। আমার আব্বার কথা ওনি ছোট থেকে অনেক কষ্ট, অনেক পরিশ্রম করেছেন, আর কিছু করতে পারবেন না। এখন চাকরি পেয়ে পরিবারের দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে যেহেতু আমি বড় মেয়ে। আব্বার হার্নিয়ার সমস্যা ছিল। এটার জন্য করে ওনি প্রায় ২/২.৬ বছর ধরে অমন কোন কাজের সাথে মানে ইনকামের সাথে যুক্ত না। এদিকে কিছু টাকা লোন ও নেয়া হয়ে গিয়েছে। আমি যখন বারবার বলি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে, ওনি উত্তম ব্যবস্থা করবেন, তখন আমাকে বলা হয় আল্লাহ তো গায়েবি ভাবে কিছু দিবেন না, কিছু তো করতে হবে। আমার পিছনে ওনারা ইনভেস্ট করছে এখন আমার দায়িত্ব তাদের দেখা। ওনাদের কথা, আমি এখন দ্বীন পালন করে জান্নাতে যাব ওনাদের রেখে, এটা হবে না। ওনাদেরও যেন নিয়ে যাই। ওনাদের কথা ওনারা আমার জন্য জমি বিক্রি করেছেন, ঋণ করেছেন, এখন এগুলা আমাকে ফিলাপ করতে হবে। কিন্তু ওনারা যেভাবে বলেন ব্যাপারগুলা এমন না। কলেজ লাইফ থেকে আমি বিভিন্ন বৃত্তি পেতাম আর এসএসসির ভাল রেজাল্টের জন্য কলেজের সব কিছু ফ্রি ছিল আমার জন্য। এডমিশনের কোচিং এর জন্য কোন খরচ হয়নি। জাস্ট ঢাকায় ৩ টা ইউনিভার্সিটি তে এক্সাম দেয়া আর ভর্তির যে খরচটা। এরপর ভার্সিটিতে আসার পর থেকে টিউশন করেই চলেছি। তবে মাঝে মাঝে কিছু টাকা নিয়েছি তবে সেটা খুবই কম। আবার আমিও দিয়েছি। ওনাদের কথা আমার পিছনে সব টাকা শেষ করেছেন। আদতে হয়ত সংসারে টাকাগুলা খাটানো হয়েছে।এখন টিউশন করে চলছি। পর্দার ইস্যু যেহেতু আছে, অনেক বেছে টিউশন করতে হয়। আমার টিউশন গুলা খুব দূরে।দেখা যায় টিউশনের টাইমের পর নিজে যে একটু ইলম অর্জনে টাইম দিব, সেটাও হচ্ছে না ওমন করে, এগুলা নিয়েও হতাশ লাগে। বাড়িতে চাকরি না করার সিদ্ধান্ত জানানোর পর অবস্থা এমন যে হয় আমাকে চাকরি করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে আর না হয় পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। ওনাদের কথা আমাদের তো টাকা পয়সা নাই, এতো ঋণ, ভাই ছোট, সব দায়িত্ব এখন আমার। আর এজন্য চাকরি করতেই হবে এবং সেটা সম্মানের, সরকারি কোন চাকুরি। আমি বলেছিলাম বাড়ির দিকো কোন কওমি মাদ্রাসা য় চেষ্টা করি, ওনারা এতেও রাজি না। আমার মাস্টার্স শেষ, হল ছাড়তে হবে। বাড়িতে গিয়ে থাকব এমন অবস্থা ও নেই। কারণ বাড়িতে গেলে ওনারা সিচুয়েশনে ফেলে আমাকে চাকরি করতে বাধ্য করবে।আমার পরিবার, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন সবাইআমার বিপক্ষে। এখন আমি মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি আমি কি বেশি বেশি করছি কিনা!
আর বিয়ের ব্যাপারে ওনারা খুঁজছেন সামাজিক ভাবে সম্মানিত, ভালো চাকরি। আমি বলছি দ্বীনকে প্রায়োরিটি দিয়ে, রিযিকের মোটামুটি ব্যবস্থা আছে এমন খুঁজতে।ওনাদের কথা জীবন চালাতে টাকা লাগে, আবেগে কিছু হয়না। অর্ধেক দ্বীনে বায়োডাটা দিতে দেয়না।হয়ত ভাবে তাহলে তাদের আশা গুলা অপূর্ণ থেকে যাবে।
লাস্ট মুহুর্তে বাড়িতে এমন পরিস্থিতি, আমাকে পারলে ত্যাজ্য করে দেয়, আমাকে বদদোয়া দিবে বলে ভয় দেখায় আরও অনেক উল্টা পাল্টা কথা বলে যেগুলো ইমানের সাথে সাংঘর্ষিক। আমি যখন থেকে বুঝতে পেরেছি ওনাদের বলে,বুঝিয়ে তেমন একটা ফায়দা হবে না, তখন থেকে সবসময়  চুপ থাকার চেষ্টা করেছি।সেটা নিয়েও কথা শুনতে হয়েছে। ওনাদের কথা, আমি যেহেতু এতো কঠোর ভাবে দ্বীন মানতে চাচ্ছি, আমি হয়ত জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছি, বৈরাগ্য নিয়েছি। আব্বা আম্মা আশেপাশে যাদের সাথে কথা বলেছে সবাই নাকি এমন ই বলে। পরিবারের বাহিরেও অন্য আত্মীয় স্বজন ফোন দিয়ে বিভিন্ন কথা বলে, আমি ভুল করছি এসব বুঝায়। লাস্টে একদম না পেরে, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বলেছি আমি চাকরির চেষ্টা করব। এটা শোনার পর কয়দিন শান্ত ছিল। এখন আবার বলে চেষ্টা করব বলে বসে থাকলে হবে না পেতে হবে। এদিক দিয়ে আমি বাড়ি থেকে কোন টাকা নেই না। কারণ মনে হয় টাকা না নিয়েই যে দায় আমার ওপর টাকা নিলে তো তখন দায়ের ভার আরও বাড়বে।টিউশন, ক্লাস, নিজের সব কাজ করার পর আমি আসলে চাকরি র পড়া পড়ার টাইম পাইনা। আর মনে হয় আমার তো ইচ্ছা নাই তাইলে এটা তো সময় নষ্ট। এর থেকে তো ইসলাম কেই জানিনা, ফরজ জিনিসের জ্ঞান নাই, এই দিকে বরং সময় দিলে আমার জন্য সেটা বেশি উপকারী।
এখন আমার কী করা উচিৎ আমি বুঝতেছি না। পরিবারের ফিনানশিয়াল অবস্থা ভালো না, এই জন্য করে কি আমি চাকরি তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিব! আমি কি পরিবারের উপর জুলুম করে ফেলতেছি! আমি কি তাদের হক নষ্ট করতেছি! আমি বুঝতেছি দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করাটার গুরুত্ব, কিন্তু নিজের রুজির ব্যবস্থা করতে গিয়ে সেটাও ঠিকঠাক হচ্ছে না। সব মিলিয়ে মাঝে মাঝে হতাশা গ্রাস করে। এখন শরীয়া অনুযায়ী আমার করণীয় কী,  উস্তাজ!!
জাযাকাল্লাহ খইরন।

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

প্রয়োজন, অপরাগতা কিংবা ঠেকায় পড়ার পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ অবস্থায় নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শরীয়ত তাদের ওপর এমন দায়িত্ব আরোপ করে নি, যার কারণে তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا
‘নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)

নারী মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ ‘তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম।’ (আবু দাউদ ৫৬৭)

নারী চাকরির খাতিরে ঘর থেকে বের হতে পারবে। তবে এর জন্য কিছু নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। নিয়ম ও শর্তগুলো মেনে চললে নারীর জন্য ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয হবে; অন্যথায় নয়। 
যেমন,
– যদি সত্যিকারে তার চাকরি করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হবে।
– চাকরিটা তার দৈহিক, মানসিক স্বভাব ও রুচির সঙ্গে সামন্জস্যশীল হতে হবে। যেমন, ডাক্তারি, নার্সিং, শিক্ষা, সেলাই কিংবা এ জাতীয় পেশা হতে হবে।
– কর্মক্ষেত্রে পর্দার পরিপূর্ণ পরিবেশ থাকতে হবে। অন্যথায় জায়েয হবে না।
– চাকরির কারণে যাতে পরপুরুষের সঙ্গে সফর করতে না হয়।
– কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে যাতে কোন হারাম কাজ করতে না হয়। যেমন, ড্রাইভারের সঙ্গে একাকী যাওয়া, পারফিউম ব্যবহার করা ইত্যাদি।
– নারীর প্রধান কাজ ও দায়িত্ব হচ্ছে স্বামীর খেদমত করা, তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা ও মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করা। যদি চাকরি করতে গিয়ে এসব দায়িত্ব পালনে ব্যাপক অসুবিধা হয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হবে না। (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৯৮১ ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৫৯)

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরন মতে উপরোক্ত শর্ত পূর্ণ ভাবে মেনে আপনি চাকুরী করতে পারেন।
পাশাপাশি দ্রুত বিবাহের আমল করবেন।

উপরোক্ত দুটির যেকোনো একটি দ্রুত হয়ে গেলেই আশা করা যায়,আপনার পরিবারের সমস্যা গুলোর সমাধান হয়ে যাবে,ইনশাআল্লাহ। 

দ্রুত বিবাহের আমল জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...