শরীয়তের বিধান হলো কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে ফিস যদি না থাকে,এবং যদি শরীয়ত বিরোধী কোনো কর্মকান্ড তাতে না থাকে,
তাহলে ছেলেদের জন্য তাতে অংশ গ্রহন জায়েয। তবে যদি ফিস থাকে,তাহলে জায়েয হবে না। কেননা তখন এটা জুয়া হয়ে যাবে,যা পরিস্কার হারাম।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا [٢:٢١٩]
তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে,তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। [সূরা বাকারা-২১৯]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٥:٩٠]
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ [٥:٩١]
হে মুমিনগণ,এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।
শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? [সূরা মায়িদা-৯০-৯১]
আরো জানুনঃ
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছেঃ-
পিকনিকে আমাদের সবার বেতন থেকে থেকে পিকনিকের নির্দিষ্ট একটি চার্জ কেটে নেয়া হয়েছে।
★সুতরাং উপরোক্ত বিবরণ মতে বুঝা যায় যে আপনাদের খেলায় বিজয়ীদের পুরুস্কার ৩য় কেউ দিবেনা,বরং আপনাদের বেতন থেকে কেটে নেয়া টাকা হতেই দেয়া হবে।
সুতরাং উপরোক্ত খেলাধুলায় অংশগ্রহন জায়েজ হবেনা।
(০২)
জায়েজ হবেনা।
(০৩)
জায়েজ হবেনা।
(০৪)
আমোদ-প্রমোদ, বিনোদন ও অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে নোংরা ও অশ্লীল-পরিবেশে ভ্রমণ করা জায়েয নেই। কেননা, মুমিন গুনাহর পরিবেশ থেকে নিজেকে দূরে রাখার ব্যাপারে আদিষ্ট।
ইসলামী স্কলারগন বলেনঃ
ভ্রমণ যদি হয় মহৎ কোনো উদ্দেশ্য তাহলে ইসলামে ভ্রমণের অনুমতি আছে; বরং ক্ষেত্র বিশেষ ভ্রমণ একপ্রকার ইবাদতও বটে। যেমন,
১. হজ ও ওমরাহর উদ্দেশ্যে ভ্রমণ। হজের ভ্রমণ হয় হজের মাসগুলোতে আর ওমরাহর ভ্রমণ হতে পারে সারা বছর।
২. ইসলামের দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ। এ উদ্দেশ্যে ভ্রমণ নবী-রাসুলগণ, সাহাবায়ে কেরাম কিংবা নেককারগণ করেছেন। যাদের ভ্রমণ-কাহিনি আজও ইসলামের ইতিহাসের শোভা বৃদ্ধি করে যাচ্ছে এবং মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে। বরং বলা যায়, এই জাতীয় নেক-ভ্রমণের উসিলাতেই ইসলাম আজ সারা দুনিয়ায় বিস্তৃত।
৩. জিহাদের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ। যেমন, এ মর্মে হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ سِيَاحَةَ أُمَّتِي الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
নিশ্চয় আমার উম্মতের ভ্রমণ হল, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। (আবু দাউদ ২৪৮৬)
৪. ইলম শেখা, শেখানো ও আত্নশুদ্ধির উদ্দেশ্যে ভ্রমণ। বিশেষত এ ভ্রমণের উসিলাতেই আমরা হাদিসের বিশাল ভাণ্ডার পেয়েছি। এমনকি খতিব বাগদাদি রহ. এ শ্রেণীর ভ্রমণ-কাহিনি নিয়ে الرحلة في طلب الحديث (হাদিস অন্বেষণে ভ্রমণ) নামক বিশাল কিতাবও লিখেছেন।
৫. শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ। যেমন, এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُجْرِمِينَ
বলুন, পৃথিবী পরিভ্রমণ কর এবং দেখ অপরাধীদের পরিণতি কি হয়েছে। (সূরা নামল ৬৯)
৬. আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি সম্পর্কে যে বিবরণ দিয়েছেন তা অবলোকন করে ঈমান ও আমলকে মজবুত করাএবং দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ بَدَأَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللَّهُ يُنشِئُ النَّشْأَةَ الْآخِرَةَ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম। (সূরা আনকাবুত ২০)
★এটা কারো অজানা নয় যে, বর্তমানের পর্যটন কেন্দ্রগুলো প্রকাশ্য অশ্লীলতা, অবাধ শরীর প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা, নেশাখোরদের আড্ডাসহ বিভিন্ন নোংরা ও বিব্রতকর পরিবেশ দ্বারা ভরপুর। সুতরাং সন্দেহ নেই, এধরণের পর্যটন কেন্দ্রগুলো কাফেরদের সাদৃশ্যতা, তাদের কথিত চরিত্র ও সভ্যতার প্রতিনিধিত্ব করছে। তাছাড়া নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। সুতরাং এ জাতীয় ভ্রমণ ও পর্যটন মানে নিঃসন্দেহে কাফেরদের অনুসরণ ও টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা (২৬/২২৪)-তে বলা হয়েছে,
إذا كانت هذه السياحة مشتملة على تسهيل وتيسير فعل المعاصي والمنكرات والدعوة إليها : فإنه لا يجوز لمسلم يؤمن بالله واليوم الآخر أن يكون عوناً على معصية الله ومخالفة أمره ، ومن ترك شيئاً لله عوَّضه الله خيراً منه
‘যদি ভ্রমণটি হয় এমন যে, এর কারণে গুনাহ ও নাফরমানি সহজ হয় এবং গুনাহর প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় তাহলে যে মুসলিম আল্লাহ ও আখেরাত দিবসকে বিশ্বাস করে তার জন্য জায়েয নেই, আল্লাহর অবাধ্যতা ও তাঁর হুকুমের বিরোধিতা করার কাজে সহযোগিতা করা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোনো কিছু ছেড়ে দিবে আল্লাহ এর পরিবর্তে তাকে এর চাইতে উত্তম জিনিস দান করেন।’
এধরণের ভ্রমণ সম্পর্কে ইমাম আহমদ রহ. জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন,
ما السياحة من الإسلام في شيء ، ولا من فعل النبيين ولا الصالحين
এধরণের ভ্রমণ ইসলামে নেই। নবীগণ কিংবা নেককারগণ এধরণের ভ্রমণ করেন নি। (তালবীসে ইবলীস ৩৪০)
,