বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(a)
ইসলামি রাষ্ট্রর জন্য ওয়াজিব যে, রাস্তার পাশে ও বাস/রেল ষ্টেশনে নারী পুরুষের জন্য পৃথক পৃথক নামাযের স্থান বা মসজিদ নির্মাণ করে দিবে। সাথে সাথে নারীদের জন্যও ওয়াজিব যে,তারা নামাযের ওয়াক্তকে বিবেচনা করে ঘরের বাইরে বের হবে।
যদি কখনো ঘরের বাহিরে থাকাবস্থায় নামাযের সময় হয়ে যায়,তাহলে নির্জনে পবত্রতা অর্জন ও নামায পড়া যায়, এমন কোনো স্থানের তালাশ করতে হবে। সাথের মাহরামকে নিয়ে নামাযের শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত নির্জন স্থানের তালাশে লেগে থাকতে হবে। নিরাপদ স্থান দেখে কোনো বাসা বাড়িতে নামাযের জন্য উঠতে হবে।এবং তথায় পর্দার সাথে অজু ও নামায পড়তে হবে। এই চেষ্টা নামাযের শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত করতে হবে।
যদি শতচেষ্টার পরও কোনো মহিলা পর্দা সম্মত অজু ও নামাযের স্থান না পায়। এবং তখন অজুর তুলনায় তায়াম্মুমকে পর্দার জন্য সুবিধাজনক মনে হয়, তাহলে মহিলা তায়াম্মুম করে নামাযকে আদায় করে নিবে। যেহেতু পর্দা সম্মত নামাযের ব্যবস্থার চেষ্টা সে শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত করেছে, তাই তায়াম্মুম দ্বারা আদায়কৃত ঐ নামাযকে আর দোহড়াতে হবে না। বরং তা যিম্মা থেকে আদায় হয়ে যাবে।
কিন্তু যদি কেউ পর্দার সাথে অজু ও নামায পড়ার চেষ্টা ব্যতীত ওয়াক্তের প্রথমেই তায়াম্মুম করে নেয়,এবং ঐ তায়াম্মুম দ্বারা নামায আদায় করে নেয়, তাহলে এই তায়াম্মুম দ্বারা আদায়কৃত নামাযকে পানি দ্বারা অজু সহ আবার পূনরায় আদায় করতে হবে।
(b)
الْمَشْيُ فِي الصَّلَاةِ إذَا كَانَ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ لَا يُفْسِدُ إذَا لَمْ يَكُنْ مُتَلَاحِقًا وَلَمْ يَخْرُجْ مِنْ الْمَسْجِدِ وَفِي الْفَضَاءِ مَا لَمْ يَخْرُجْ مِنْ الصُّفُوفِ. كَذَا فِي الْمُنْيَةِ وَإِذَا اسْتَدْبَرَ الْقِبْلَةَ فَسَدَتْ. كَذَا فِي الظَّهِيرِيَّةِ
وَلَوْ مَشَى فِي صَلَاتِهِ مِقْدَارَ صَفٍّ وَاحِدٍ لَمْ تَفْسُدْ صَلَاتُهُ وَلَوْ كَانَ مِقْدَارَ صَفَّيْنِ إنْ مَشَى دَفْعَةً وَاحِدَةً فَسَدَتْ صَلَاتُهُ وَإِنْ مَشَى إلَى صَفٍّ وَوَقَفَ ثُمَّ إلَى صَفٍّ لَا تَفْسُدُ. كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ.
নামাযে কিবলামূখী হাটার দরুণ নামায ফাসিদ হয় না।যখন তা পিছন ফিরে হবে না এবং মসজিদ থেকে বের হয়েও হবে না।এবং মসজিদের বাহিরে হলে,যতক্ষণ পর্যন্ত সফের সীমানা অতিক্রম করা হবে না,ততক্ষণ পর্যন্ত নামায ফাসিদ হবে না।তবে কিবলাকে পিছনে রেখে হাটা শুরু করলে নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।যদি কেউ নামাযে এক সফ অতিক্রম করে,তাহলে নামায ফাসিদ হবে না।তবে যদি কেউ এক সাথে দুই সফ অতিক্রম করে ফেলে,তাহলে তার নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।কিন্তু যদি কেউ এক সফ অতিক্রম করার পর এক রুকুন(তিন তাসবিহ) সমপরিমাণ সময় বিরতি নেয়,অতঃপর আবার অতিক্রম করা শুরু করে,তাহলে তার নামায ফাসিদ হবে না।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১০৩)
(c)না, এভাবে মাযহাবকে মিশিয়ে নিতে পারবেন না। হানাফি মাযহাবমতে রফে ইয়াদাইন মুস্তাহাব নয়। তাই কেউ যদি নিজেকে হানাফি বলে, আপনাকে রফে ইয়াদাইন করতে বলে,তাহলে তার অনুসরণ আপনি করতে পারবেন না। যে যে মাযহাবকে ফলো করবে,সর্বক্ষেত্রে ঐ মাযহাবকেই সে ফলো করবে। হ্যা ’মুজতাহিদ ফিল মাযহাব’ পর্যায়ের কোনো আলেমের কাছে নিজ মাযহাবের কোনো মাস'আলার দলীল অন্য মাযহাবের চেয়ে দুর্বল প্রমাণিত হলে, তখন উনার জন্য শক্তিশালী মাযহাবকে ফলো করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। নতুবা যে মাযহাবকে ফলো করা হচ্ছে,সেই মাযহাবের সকল মাস'আলা কে অনুসরণ করতে হবে, এবং করাটাই ওয়াজিব। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
https://www.ifatwa.info/1936
(d)
”সকল সুন্নাহ জীবনে একবার হলেও করা উচিত’ এটা সবার জন্য নয়। বরং যাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ রয়েছে।এবং যারা দ্বীন সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিজ্ঞ, শুধুমাত্র তারাই সকল সুন্নাহকে আ’মলে নিয়ে আাসবে।
(e)
প্রসিদ্ধ চার ইমাম সহ সমস্ত ফুকাহায়ে কেরামের মতে তিলাওয়াতে সিজদার জন্য পবিত্রতা শর্ত। যেভাবে নামাযের সিজদার জন্য পবিত্রতা শর্ত। ইমাম বোখারী রাহ,ইমাম শাওকানী রাহ,ইবনে হাযাম জাহেরী রাহ গণের মতে পবিত্রতা শর্ত নয়।
«وَقَال الْقُرْطُبِيُّ: لَا خِلَافَ فِي أَنَّ سُجُودَ الْقُرْآنِ يَحْتَاجُ إِلَى مَا تَحْتَاجُ إِلَيْهِ الصَّلَاةُ مِنْ طَهَارَةِ حَدَثٍ وَنَجَسٍ. . إِلَاّ مَا ذَكَرَ الْبُخَارِيُّ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا أَنَّهُ كَانَ يَسْجُدُ عَلَى غَيْرِ طَهَارَةٍ. وَذَكَرَهُ ابْنُ الْمُنْذِرِ عَنِ الشَّعْبِيِّ.» - «الموسوعة الفقهية الكويتية» (24/ 214)
(f)
আযান প্রচলনের হেকমত বা রহস্য হিসেবে চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ "আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় "বর্ণিত রয়েছে,
شُرِعَ الأَْذَانُ لِلإِْعْلاَمِ بِدُخُول وَقْتِ الصَّلاَةِ، وَإِعْلاَءِ اسْمِ اللَّهِ بِالتَّكْبِيرِ، وَإِظْهَارِ شَرْعِهِ وَرِفْعَةِ رَسُولِهِ، وَنِدَاءِ النَّاسِ إِلَى الْفَلاَحِ وَالنَّجَاحِ
তরজমাঃ- নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশ হয়েছে, একথা বোঝানোর জন্য আযানের প্রচলন শুরু হয়।শুধু তাই নয় বরং তাকবীরের মাধ্যমে আল্লাহর নামকে উচু করার স্বার্থে। এবং আল্লাহ তা'আলার বিধি-বিধানকে প্রকাশ করতে ও তার রাসূল সাঃ এর মর্যদাকে বৃদ্ধি করতে সর্বোপরি লোকদিগকে কল্যাণ ও কামিয়াবির দিকে ডাকতে আযানের প্রচলন শুরু হয়।(২/৩৫৯)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
ফুকাহায়ে কেরামদের উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা যায় যে,আযান হচ্ছে নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশের ঘোষক।কিন্তু যেহেতু আযানের পরপরই নামায শুরু করাটা সুবিধাজনক। তাই ওয়াক্ত প্রবেশের সাথে সাথেই আযান না দিয়ে বরং হাদীসে বর্ণিত মুস্তাহাব ওয়াক্তের কিছু পূর্বে আযান দেয়া হয়ে থাকে।সুতরাং প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেলে আযান হোক বা নাই হোক, শোনা যাক বা নাই যাক।নামায পড়ে নিলে নামায আদায় হয়ে যাবে। তবে প্রত্যেক নামাযের মুস্তাহাব ওয়াক্তেই নামায পড়া উত্তম।বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
https://www.ifatwa.info/3575
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
মহল্লার মসজিদে আযান না দিলেও বাসাতে সুন্নাত বা ফরয নামায পড়া যাবে,যদি নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায়।