আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
158 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (13 points)
  • ইসলামে বিধবা বিবাহে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে কি? সহিহ আয়াত হাদিস সহ উল্লেখ করবেন প্লিজ।
  • একটা হাদিস আছে নিম্নরূপ: 

আমরা যখন মদিনার নিকটবর্তী হলাম, তখন আমি আমার বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যেতে চাচ্ছ? আমি বললাম, আমি একজন বিধবা মেয়েকে বিয়ে করেছি। তিনি বললেন, কুমারী কেন বিয়ে করলে না? সে তোমার সাথে কৌতুক করত এবং তুমি তার সাথে কৌতুক করতে? আমি বললাম, আমার আব্বা মারা গাছেন এবং কয়েকজন কন্যা রেখে গেছেন। আমি চাইলাম এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে, যে হবে অভিজ্ঞতা সম্পন্না এবং বিধবা। তিনি বললেন, তাহলে ঠিক আছে।

(বুখারি:২১৬০)

এখানে কি বিধবাদের বিবাহের প্রতি অনুৎসাহিত করা হয়েছে। যদি তা না করা হয়; তবে এর স্বপক্ষে যুক্তি কি?

  • নতুন বিবাহ করলে বিধবাদের সাথে ৩ দিন আর কুমারী মেয়ের সাথে ৭ দিন রাত যাপনের নিয়ম কেন? এটা কেন অসমতা নয়?

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

বিধবা নারীর বিয়ে শরিয়ত অনুমোদিত বিষয়। ক্ষেত্রবিশেষে সামাজিক, জাতীয় ও ধর্মীয় প্রয়োজনে বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করা শ্রেয় এবং তা অগ্রাধিকারের দাবি রাখে। এ ক্ষেত্রে সবার চিন্তা করা প্রয়োজন যে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর স্ত্রীদের মধ্যে হযরত আয়েশা (রা.) ব্যতিত অন্য সব স্ত্রী ছিলেন বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্তা।

রাসূলে কারীম (সা.) প্রথম বিয়ে করেন রাসূল (সা.) থেকে প্রায় অধের্ক বয়স বেশি ৪০বছর বয়স্কা বিধবা নারী আম্মাজান হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.) কে। খাদিজা (রা.) এর ইন্তেকালের পর ক্রমান্বয়ে দশজন নারীকে বিবাহ করেন। যাদের আটজনই ছিলেন বিধবা নারী। যথা-

১. হযরত হাফসা (রা.) ২. হযরত সওদা (রা.)। ৩. উম্মুল মাসাকীন হযরত জয়নব (রা.) ৪. হযরত উম্মে সালমা রাঃ ৫. হযরত জুআইরিয়া (রা.) ৬. হযরত উম্মে হাবীবা (রা.) ৭. হযরত মাইমুনা (রা.) ৮. হযরত সফিয়্যা (রা.)।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা, মানবিক কারণ, ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার-প্রসার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে তৎকালীন আরবের কুসংস্কার উচ্ছেদ করার জন্য এসব বিয়ে করেছিলেন।

বিধবা বিয়ে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কারীমে নানাভাবে উপদেশ ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। 

ইসলাম বলে, বিধবা নারী দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারবে। ইসলাম কোনো বিধবাকে ঘৃণা বা অবজ্ঞার চোখে দেখে না। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,

وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنْفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

‘আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং তাদের নিজেদের স্ত্রীদের রেখে যাবে, সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা (ইদ্দত পালন) করবে। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোনো পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।’ {সূরা আল বাকারা : ২৩৪}

যে নারীটির সমগ্র নির্ভরশীলতার জায়গা ছিল তার স্বামী, সেই স্বামীর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া তাকে যেন অথৈ সাগরে ফেলে দেয়। স্ত্রী খড়কুটো আঁকড়ে ধরে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখেন। হাল ধরেন সংসারের। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে পার করে দেন বছরের পর বছর। যেখানে একজন পুরুষের স্ত্রী মারা গেলে পরিবার ও সমাজের লোকদের আফসোস-সহানুভূতির সীমা থাকে না। বছর না ঘুরতেই তাকে বিয়ে করানোর তোড়জোড় চলে, তিনি যে বয়সেরই হোন না কেন। তাকে বিয়ে করায় পরিবার। একটু বয়স কম হলে তো কথাই নেই। সারাজীবন লোকটা থাকবে কী করে একা একা? সহানুভূতি সবার। পুরুষের একা থাকার কষ্টের চিন্তা সবার। কিন্তু কোনো নারীর স্বামী মারা গেলে তার একা থাকা নিয়ে ছিটেফোঁটা চিন্তা নেই অনেকের। চিরন্তন ভাবনা: একা থাকায় নারীর আবার কষ্ট কিসের? ছেলেমেয়ে আছে না! ওদের মানুষ করতে সময় কোথা দিয়ে পার হবে, টেরও পাবে না। একটু বয়স হওয়া, সন্তান বড় হয়ে যাওয়া মায়েদের পুনর্বিবাহের কথা ভাবাতো রীতিমতো অপরাধ।

বিধবা নারীর বিয়ের ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজনেরই বেশি আপত্তি লক্ষ্য করা যায়। বলা হয়, সন্তানরা বড় হয়ে যাচ্ছে, এখন এটা কীভাবে মানা যায়? আসলে এটা কোনো যুক্তিযুক্ত কথা নয়। বিধবা নারী তার জীবনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তিনি যদি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তা পূরণ করাই হবে যথার্থ কাজ। এখানে দেখতে হবে প্রয়োজন ও চাহিদা। বস্তুত প্রয়োজন ও চাহিদার কারণে এমন অনেক কাজই করতে হয়, যা আপাতদৃষ্টিতে অনেকের কাছে সামাজিক রীতিনীতি ও ভালোবাসা-বিরুদ্ধ মনে হতে পারে। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে কাজটিকে সামাজিক রীতি ও ভালোবাসার সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে হবে না। প্রয়োজনের সঙ্গে ভালোবাসা ও সামাজিক রীতির কিসের সংঘাত? এই প্রয়োজনের খাতিরেই তো হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পুনর্বিয়ে করেছিলেন এবং করেছিলেন তার সাহাবিরাও। কাজেই এটা তাদের সুন্নত। এতে আপত্তির কোনো অবকাশ নেই। বরং সুন্নত হিসেবে এ ব্যবস্থাকে সবার সাদরে গ্রহণ করা দরকার।

ইসলামে বিধবা নারীদের মর্যাদা

অনেক নারী এমন আছেন, যারা বিধবা হওয়ার পর দ্বিতীয়বার স্বামী গ্রহণে আগ্রহী হন না। কষ্ট হলেও একাকী জীবন যাপন করার পথকেই বেছে নেন। তাদের জন্য সান্ত¦না ও আখেরাতের খুশখবরী জানিয়ে আশ্বস্ত করেছেন রাসূল (সা:)। হাদীসে এসেছে-

عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا وَامْرَأَةٌ سَفْعَاءُ الْخَدَّيْنِ كَهَاتَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» وَأَوْمَأَ يَزِيدُ بِالْوُسْطَى وَالسَّبَّابَةِ امْرَأَةٌ آمَتْ مِنْ زَوْجِهَا ذَاتُ مَنْصِبٍ، وَجَمَالٍ، حَبَسَتْ نَفْسَهَا عَلَى يَتَامَاهَا

হযরত আউফ বিন মালিক আশজায়ী (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমি এবং কষ্ট ও মেহনতের কারণে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া মহিলা কিয়ামতের দিন দুই আঙ্গুলের মত নিকটবর্তী হবো। রাসূল (সা:) তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলীদ্বয় পাশাপাশি করে দেখালেন। তথা বংশীয় কৌলিন্য ও সৌন্দর্যের অধিকারিনী যে বিধবা নারী প্রয়োজন থাকা সত্বেও এতিম সন্তানদের লালন পালনের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়বার স্বামী গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে।{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৪৯}

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” أَنَا أَوَّلُ مَنْ يُفْتَحُ لَهُ بَابُ الْجَنَّةِ، إِلَّا أَنَّهُ تَأْتِي امْرَأَةٌ تُبَادِرُنِي فَأَقُولُ لَهَا: مَا لَكِ؟ وَمَا أَنْتِ؟ فَتَقُولُ: أَنَا امْرَأَةٌ قَعَدْتُ عَلَى أَيْتَامٍ لِي

হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন, আমিই ঐ ব্যক্তি যার জন্য সর্ব প্রথম জান্নাতের দরজা খোলা হবে। কিন্তু এক মহিলা এসে আমার আগে জান্নাতে যেতে চাইবে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করবো যে, তোমার কি হল? তুমি কে? তখন সে বলবে, আমি ঐ মহিলা যে স্বীয় এতিম বাচ্চার লালন-পালনের জন্য নিজেকে আটকে রেখেছে [বিবাহ করা থেকে]। {মুসনাদে আবী ইয়ালা,হাদীস নং-৬৬৫১}

যেসব বিধবা বিয়ের যোগ্য বয়সের নয়, আবার তাদের কোন সন্তানও নেই। সেসব বিধবাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়াকে অনেক বড় পূণ্যের কাজ বলে রাসূল (সা:) ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالمِسْكِينِ، كَالْمُجَاهِدِ فِي

سَبِيلِ اللَّهِ، أَوِ القَائِمِ اللَّيْلَ الصَّائِمِ النَّهَارَ»

হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, বিধবা এবং মিসকিনের সহযোগিতাকারী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর ন্যায়, বা সর্বদা রাতে নামাযরত ও দিনের বেলা রোযাদার ব্যক্তির মতো। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০৩৮,৫৩৫৩}

এরকম আরো অসংখ্য হাদীস প্রমাণ করে প্রতিটি সামর্থবান ব্যক্তি বিধবা নারীদের যথাযথ সম্মান ও প্রয়োজনে সহযোগিতা করা উচিত। এটাই ইসলামের দাবি এবং মানবতার দাবি। আসলে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা নারীর শোকে কাতর হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। নিরাপদ আশ্রয় ও মানবিক মর্যাদা হারানোর কারণে সমাজ-সম্প্রদায়ে পরিপূর্ণ অংশগ্রহণও তার পক্ষে আর সম্ভব হয় না। একজন বিধবা নারী তার উত্তরাধিকার সম্পত্তি, সন্তান, স্বামী, সংসার, দেনমোহর, নিরাপদে কাজ করা, সমাজের কাছে সাহায্য পাওয়া, সামাজিক মর্যাদাসহ সকল সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু তারা এই অধিকারগুলো পাচ্ছেন না। একজন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য যে ধরনের মর্যাদা প্রয়োজন তা বিধবা হওয়ার মধ্য দিয়ে হারাতে হয় এবং রাষ্ট্রীয় কোনো প্রচেষ্টাও তাদের জন্য পরিলক্ষিত হয় না। পরিবার এবং সমাজে তাদের প্রতি যে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি সে কারণে তারা নিজেরাও নিজেদের গুরুত্বহীন বলে মনে করেন, ভাগ্যকে দায়ী করেন। এমতাবস্থায় বিধবা নারীদের চাহিদা মোতাবেক তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের আর্থিক, সামাজিক এবং মানসিক দুরবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, বিধবা মানেই অভিশাপ নয়। একথা আমাদের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। অসহায় বিধবাদের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তির জন্যই জরুরী। 
(সংগৃহীত।)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আপনি যে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন,বিস্তারিত সেই হাদীসটি হলোঃ-

حَدَّثَنَا الْمَكِّيُّ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، وَغَيْرِهِ،، يَزِيدُ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ، وَلَمْ يُبَلِّغْهُ كُلُّهُمْ رَجُلٌ وَاحِدٌ مِنْهُمْ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ، فَكُنْتُ عَلَى جَمَلٍ ثَفَالٍ، إِنَّمَا هُوَ فِي آخِرِ الْقَوْمِ، فَمَرَّ بِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " مَنْ هَذَا ". قُلْتُ جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ. قَالَ " مَا لَكَ ". قُلْتُ إِنِّي عَلَى جَمَلٍ ثَفَالٍ. قَالَ " أَمَعَكَ قَضِيبٌ ". قُلْتُ نَعَمْ. قَالَ " أَعْطِنِيهِ ". فَأَعْطَيْتُهُ فَضَرَبَهُ فَزَجَرَهُ، فَكَانَ مِنْ ذَلِكَ الْمَكَانِ مِنْ أَوَّلِ الْقَوْمِ قَالَ " بِعْنِيهِ ". فَقُلْتُ بَلْ هُوَ لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ " بِعْنِيهِ قَدْ أَخَذْتُهُ بِأَرْبَعَةِ دَنَانِيرَ، وَلَكَ ظَهْرُهُ إِلَى الْمَدِينَةِ ". فَلَمَّا دَنَوْنَا مِنَ الْمَدِينَةِ أَخَذْتُ أَرْتَحِلُ. قَالَ " أَيْنَ تُرِيدُ ". قُلْتُ تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً قَدْ خَلاَ مِنْهَا. قَالَ " فَهَلاَّ جَارِيَةً تُلاَعِبُهَا وَتُلاَعِبُكَ ". قُلْتُ إِنَّ أَبِي تُوُفِّيَ وَتَرَكَ بَنَاتٍ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَنْكِحَ امْرَأَةً قَدْ جَرَّبَتْ خَلاَ مِنْهَا. قَالَ " فَذَلِكَ ". فَلَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ قَالَ " يَا بِلاَلُ اقْضِهِ وَزِدْهُ ". فَأَعْطَاهُ أَرْبَعَةَ دَنَانِيرَ، وَزَادَهُ قِيرَاطًا. قَالَ جَابِرٌ لاَ تُفَارِقُنِي زِيَادَةُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم. فَلَمْ يَكُنِ الْقِيرَاطُ يُفَارِقُ جِرَابَ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ.

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমি ধীরগতি সম্পন্ন উটের উপর সাওয়ার ছিলাম, যার ফলে উটটা দলের পেছনে পড়ে গেল। এমনি অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ দিয়ে গেলেন এবং বললেন, এ কে? আমি বললাম, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ। তিনি বললেন, তোমার কি হল (পেছনে কেন)? আমি বললাম, আমি ধীরগতি সম্পন্ন উটে সাওয়ার হয়েছি। তিনি বললেন, তোমার কাছে কি কোন লাঠি আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, এটা আমাকে দাও। আমি তখন সেটা তাঁকে দিলাম। তিনি উটটাকে চাবুক মেরে হাঁকালেন। এতে উটটা (দ্রুত চলে) সে স্থান থেকে দলের অগ্রভাগে চলে গেল।

তিনি বললেন, এটা আমার কাছে বিক্রি করে দাও। আমি বললাম, নিশ্চয়ই ইয়া রাসূলাল্লাহ এটা আপনারই (অর্থাৎ বিনা মূল্যেই নিয়ে নিন)। তিনি বললেন, (না) বরং এটা আমার কাছে বিক্রি কর। তিনি বললেন, চার দ্বীনার মূল্যে আমি এটা কিনে নিলাম। তবে মদিনা পর্যন্ত এর পিঠে তুমিই সাওয়ার থাকবে। আমরা যখন মদিনার নিকটবর্তী হলাম, তখন আমি আমার বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যেতে চাচ্ছ? আমি বললাম, আমি একজন বিধবা মেয়েকে বিয়ে করেছি। তিনি বললেন, কুমারী কেন বিয়ে করলে না? সে তোমার সাথে কৌতুক করত এবং তুমি তার সাথে কৌতুক করতে? আমি বললাম, আমার আব্বা মারা গাছেন এবং কয়েকজন কন্যা রেখে গেছেন। আমি চাইলাম এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে, যে হবে অভিজ্ঞতা সম্পন্না এবং বিধবা। তিনি বললেন, তাহলে ঠিক আছে।

আমরা মদিনায় পৌঁছলে তিনি বললেন, হে বিলাল, জাবিরকে তার দাম দিয়ে দাও এবং কিছু বেশীও দিয়ে দিও। কাজেই বিলাল (রাঃ) তাকে চার দ্বীনার এবং অতিরিক্ত এক কীরাত (সোনা) দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দেওয়া অতিরিক্ত এক কীরাত সোনা কখনো আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হত না। তাই তা জাবির (রাঃ)-এর থলেতে সব সময় থাকত, কখনো বিচ্ছিন্ন হত না।
(বুখারী ২১৬০ ইসলামীক ফাউন্ডেশন)

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ সাইয়িবা (তালাকপ্রাপ্তা) মহিলার অন্তর পূর্ব স্বামীর দিকে ঝুকে থাকে বিধায় তার পূর্ণ ভালোবাসা সে দিতে পারে না, যা কুমারী মহিলা দিতে পারে।  কুমারী মেয়েরা স্বামীর ক্ষেত্রে অধিক প্রেমময়ী হয়।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
যেহেতু হযরত জাবের রাঃ এর অভিভাবক মারা গিয়েছিলেন,সেজন্য তিনি অনেক দুঃখে কষ্টে ছিলেন। তাই তার জন্য একজন মুহাব্বতের মানুষ খুবই প্রয়োজনীয় ছিলো।
আর কুমারী মেয়েরা যেহেতু স্বামীর ক্ষেত্রে অধিক প্রেমময়ী হয়,( জাবের রাঃ গরিব হওয়ায় একাধিক বিবাহের জন্য আর্থিক ভাবে সক্ষমও ছিলেননা,) তাই রাসুলুল্লাহ সাঃ তাকে কুমারী নারী বিবাহে উৎসাহিত করেছিলেন।

এর দরুন সকল উম্মতকে কুমারী নারী বিবাহে উৎসাহিত করা হয়নি 
এই আহবান হযরত জাবের রাঃ এর সাথেই খাছ ছিলো।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আপনি সব শেষে একটি বিষয় জানতে চেয়েছেন,তাহা হলোঃ-
  • নতুন বিবাহ করলে বিধবাদের সাথে ৩ দিন আর কুমারী মেয়ের সাথে ৭ দিন রাত যাপনের নিয়ম কেন? এটা কেন অসমতা নয়?
এ সংক্রান্ত বিষয় হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَعَنْ أَبِي قِلَابَةَ عَنْ أَنَسٍ قَالَ: مِنَ السُّنَّةِ إِذَا تَزَوَّجَ الرَّجُلُ الْبِكْرَ عَلَى الثَّيِّبِ أَقَامَ عِنْدهَا سبعا وَقسم إِذا تَزَوَّجَ الثَّيِّبَ أَقَامَ عِنْدَهَا ثَلَاثًا ثُمَّ قَسَمَ

আবূ ক্বিলাবাহ্ (রহঃ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি [আনাস (রাঃ)] বলেছেনঃ সুন্নাত তরীকাহ্ হলো, কেউ যদি পূর্ব বিবাহিতা স্ত্রী থাকাকালীন কুমারী বিয়ে করে তার নিকট সাতদিন অবস্থান করে, পরে পালা বণ্টন করবে। আর যদি বিধবা (বা তালাকপ্রাপ্তা) বিয়ে করে তার নিকট তিনদিন অবস্থান করে, পরে পালাবণ্টন করবে।

বুখারী ৫২১৪, মুসলিম ১৪৬১, আবূ দাঊদ ২১২৪, তিরমিযী ১১৩৯, ইরওয়া ২০২৫।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রী থাকতে আরো একাধিক বিয়ে করতে চায় তাহলে সে যদি কুমারী নারীকে বিবাহ করে তাহলে অন্যান্য স্ত্রীদের সাথে পালাবণ্টনের পূর্বেই নববিবাহিতা কুমারী স্ত্রীর নিকট সাত দিন কাটাবে, অতঃপর পালাক্রমের আওতাভুক্ত হবে। আর যদি সায়্যেবাহ বা অকুমারী নারীকে বিয়ে করে তাহলেও অন্যান্য স্ত্রীদের সাথে পালাবণ্টনের আওতাভুক্ত হওয়ার আগে তার সাথে তিন দিন কাটাবে, এরপর পালার অন্তর্ভুক্ত হবে। কুমারী কিংবা অকুমারীকে বিবাহের পর পরই সাত কিংবা তিনের এই ভেদাভেদ মাত্র, এই দিনে অতিবাহিত হলে কুমারী-অকুমারী বা নতুন-পুরাতনের আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।

অনেক হানাফী ‘আলিমসহ ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) অত্র হাদীসের ভিত্তিতে এই মতের প্রবক্তা; পক্ষান্তরে নিম্নের মুতালাক বা সাধারণ নির্দেশসূচক দু’টি হাদীসের ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবের আরেক দল ‘আলিম বলেন, কুমারী-অকুমারী বা নতুন-পুরাতনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। 

সূরা আন্ নিসার ৩ নং আয়াত এবং ১২৯ নং আয়াতকেও তারা দলীল হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন, সেখানে উল্লেখ হয়েছে: ‘‘যদি তোমরা আশংকা কর যে, (স্ত্রীদের মধ্যে) ন্যায় বিচার করতে পারবে না।’’ (সূরাহ আন্ নিসা ৪ : ৩)

আল্লাহ আরো বলেন, ‘‘তোমরা কক্ষনো (স্ত্রীদের মধ্যে) ন্যায় বিচার করতে সক্ষম হবে না।’’ (সূরাহ আন্ নিসা ৪ : ১২৯)

এখানে স্ত্রীদের অধিকার সমানরূপে বলা হয়েছে। এটা কুরআন, যা অকাট্য, আর হাদীস হলো খবরে ওয়াহিদ যা অকাট্য নয়, সুতরাং তা দ্বারা অকাট্য বস্তুকে রহিত করা যাবে না।

সে হাদীস দুটি হলোঃ-

عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِين تَزَوَّجَ أُمَّ سَلَمَةَ وَأَصْبَحَتْ عِنْدَهُ قَالَ لَهَا: «لَيْسَ بِكِ عَلَى أَهْلِكِ هَوَانٌ إِنْ شِئْتِ سَبَّعْتُ عِنْدَكِ وَسَبَّعْتُ عِنْدَهُنَّ وَإِنْ شِئْتِ ثَلَّثْتُ عِنْدَكِ وَدُرْتُ» . قَالَتْ: ثَلِّثْ.

আবূ বকর ইবনু ’আব্দুর রহমান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-কে বিয়ে করার পর তাঁর খিদমাতে থাকাকালীন ভোরে উঠে বললেন, তুমি তোমার বংশের নিকট সম্মানহানী হবে না; যদি তুমি ইচ্ছা কর তবে আমি তোমার নিকট সাতদিন অবস্থান করব। এভাবে অন্য স্ত্রীগণের নিকটও সাতদিন করে থাকব। আর যদি তুমি ইচ্ছা কর তবে তোমার নিকট তিনদিন অবস্থান করব এবং তিনদিন করে পালা বণ্টন করব। তিনি [উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)] বললেন, তবে তিনদিন করে পালা বণ্টন করুন।

(মুসলিম ১৪৬০, সহীহাহ্ ১২৭১, সহীহ আল জামি‘ ৫৩৮৬।)

عَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقْسِمُ بَيْنَ نِسَائِهِ فَيَعْدِلُ وَيَقُولُ: «اللَّهُمَّ هَذَا قَسْمِي فِيمَا أَمْلِكُ فَلَا تَلُمْنِي فِيمَا تَمْلِكُ وَلَا أَمْلِكُ»

’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের মাঝে ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে পালা বণ্টন করতেন এবং বলতেন, ’’হে আল্লাহ! আমার সাধ্যমত (এই বিষয়ের) বণ্টন করলাম, আর যে ব্যাপারে তোমার আয়ত্তে ও আমার সাধ্যাতীত (মনের দুর্বলতা ও ভালোবাসার দরুন), সে বিষয়ে তুমি আমাকে অপরাধী করিও না’’।

(আবূ দাঊদ ২১৩৪, নাসায়ী ৩৯৪৩, তিরমিযী ১১৪০, ইবনু মাজাহ ১৯৭১, দারিমী ২২৫৩)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
যেহেতু বিষয়টি মতবিরোধ পূর্ণ একটি মাসয়ালা,অনেক ফুকাহায়ে কেরামদের মত এক্ষেত্রে কুমারী-অকুমারী বা নতুন-পুরাতনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
তাই এর দ্বারা ইসলামের উপর প্রশ্ন আরোপ করা যাবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...