ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির
রহমানির রহিম
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
https://ifatwa.info/86288/
নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى
وَإِن تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَى حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَلَوْ كَانَ
ذَا قُرْبَى إِنَّمَا تُنذِرُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالغَيْبِ
وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَمَن تَزَكَّى فَإِنَّمَا يَتَزَكَّى لِنَفْسِهِ وَإِلَى
اللَّهِ الْمَصِيرُ
কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর
ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না-যদি সে নিকটবর্তী আত্নীয়ও হয়। আপনি
কেবল তাদেরকে সতর্ক করেন,
যারা
তাদের পালনকর্তাকে না দেখেও ভয় করে এবং নামায কায়েম করে। যে কেউ নিজের সংশোধন করে, সে সংশোধন করে, স্বীয় কল্যাণের জন্যেই
আল্লাহর নিকটই সকলের প্রত্যাবর্তন। (৩৫:১৮)
من عرض نفسه للتهمة فلا يلومن من أساء الظن
به)) منها ما أخرجه ابن أبي الدنيا في الصمت من طريق عكرمة،
হযরত উমর/আলী রাযি বলেন,যে ব্যক্তি নিজেকে তুহমতের
জায়গায় নিক্ষেপ করলো,তার
ব্যাপারে লোকজনের ধারণা মন্দ হলে,সে যেন নিজকে ব্যতীত অন্যকে দোষারোপ না করে। (ইবনে আবি দুনিয়া)
সন্তানদেরকে ইসলামী সভ্যতা (তাহযীব) শেখানো, দ্বীন ও শরীয়তের মৌলিক
বিষয়াদি শেখানো এবং একজন দ্বীনদার-নামাযী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাও মা-বাবার
দায়িত্ব ও কর্তব্য।
হাদীস শরীফে এসেছে- ‘জেনে রেখ, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল
এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে
দায়িত্বশীল। তাদের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’ -সহীহ বুখারী ১/২২২ হাদীস ৮৯৩
সুসন্তান যেমন মা-বাবার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের
বড় সম্পদ এবং সদকা জারিয়া তেমনি সন্তান যদি দ্বীন ও শরীয়তের অনুগত না থাকে, দুর্নীতি ও গুনাহে লিপ্ত
হয়ে যায় তাহলে সে উভয় জগতেই মা-বাবার জন্য বিপদ। দুনিয়াতে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও পেরেশানির কারণ।
আর কবরে থেকেও মা-বাবা তার গুনাহর ফল ভোগ করতে থাকবে। আখিরাতে এই আদরের দুলালই আল্লাহ তাআলার দরবারে মা-বাবার বিরুদ্ধে
আপিল করবে যে,
তারা
আমাকে দ্বীন শেখায়নি। তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। তাই এই আমানতের হক আদায়ের প্রতি
খুবই যত্নবান হতে হবে।
সুতরাং আপনি যদি আপ্রান চেষ্টা করেন দ্বীনের পথা
চলানোর জন্য,তারপরেও
সন্তা না শোনে,তাহলে
পিতামাতার কোনো গুনাহ হবেনা কবরে গিয়ে তারা গুনাহের ভাগিদার হবেনা।
কুরআন শরীফে এসেছেঃ
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ
আল্লাহ তায়ালা
কাহারো গুনাহের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দিবেননা। (সুরা ফাতির ১৮)
ইসলাম বাবা-মার উপর দায়িত্ব দিয়েছেন যে, তারা যেন সাত বছর বয়স
থেকে তাদের সন্তানদেরকে নামাযের আদেশ দেয়, দশ বছর বয়সে নামাযের জন্য প্রহার করে।
কোন পিতামাতা যদি তাদের সন্তানদেরকে শৈশবকাল থেকে এভাবে নামাযে অভ্যস্ত করে তোলে তাহলে
আশা করা যায়,
তাদের
সন্তানরা কখনো বেনামাযী হবে না।
সেই সাথে প্রতিটি পিতামাতার উপর ফরজ দায়িত্ব হল, সন্তানদেরকে দ্বীনী শিক্ষা
প্রদান করা এবং ইসলামী জীবনযাপনে অভ্যস্ত করা।
এভাবে কাজ করলে আশা করা যায়, সন্তানরা বড় হয়েও নামাযী, সচ্চরিত্রবান, সুানগরিক, ও ভালো মানুষ হিসেব গড়ে
উঠবে। এত কিছু করার পরও যদি বড় হয়ে কোন সন্তান বেনামাযী হয় বা ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত
হয় তাহলে সেই এর দায় দায়িত্ব বহন করবে; পিতামাতা নয়।
পক্ষান্তরে পিতামাতা যদি সন্তানের উপর তাদের যথাযথ
দায়িত্ব পালন না করার কারণে সন্তান বেনামাযী হয় বা সন্তান অনৈসলামিক কর্মে লিপ্ত হয়
তারা কেউই এ গুনাহ থেকে মুক্তি পাবে না।
কিন্তু যদি এমন হয়, বাবা-মা প্রথম জীবনে ভালোভাবে
ইসলাম পালন না করার কারণে সন্তানদেরকে ইসলামের উপর গড়ে তোলেননি কিন্তু পরবর্তীতে তওবা
করে নিজেদেরকে সংশোধন করেছে এবং ইসলাম অনুযাযী তাদের জীবন সাজিয়েছে তাহলে এখন তারা
তাদের সন্তানদেরকেও তওবা করে ইসলামের পথে ফিরে আসার জন্য নির্দেশ দিবে। আর সন্তাদের
জন্য অপরিহার্য হল,
অতীত
জীবন থেকে তওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করা এবং ইসলামের পথে ফিরে আসা।
এখন যদি পিতামাতা নামায-রোযা ও ইসলামের পথে ফিরে
আসার নির্দেশ দেয়ার পরও তারা নামায-রোযা না করে বা ইসলামে ফিরে না আসে তাহলে পিতামাতা
গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। কিন্তু সন্তানরা তাদের কৃতকর্মের জবাবদাহী করবে
সন্তানের বয়স ১০ বছর হলে হাদীস শরীফে নামাযের জন্য
শাসন করার কথাও এসেছে। সাত বছর থেকে নামাযের জন্য এমনভাবে গড়ে তুলবে যেন ১০ বছর বয়সে
সন্তান নামাযে পূর্ণ অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফিকাহবিদগণ বলেন, ‘রোযার হুকুমও একই।’ অর্থাৎ
৭-৮ বছর বয়সী সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তাদেরকে ধীরে ধীরে রোযার প্রতি অভ্যস্ত
করে তুলতে হবে। এরপর ১০ বছর বয়সে উপনীত হলে যদি স্বাস্থ্যগতভাবে দুর্বল না হয় তাহলে
প্রয়োজনে রোযার জন্য শাস্তিও দেওয়া যাবে। -ফাতাওয়া শামী ২/৪০৯
সাহাবায়ে কেরাম রা. তাঁদের সন্তানদেরকে রোযা রাখার
ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। সাহাবিয়া রুবায়্যি বিনতে মুআওয়াজ রা. বলেন, ‘আমরা নিজেরা আশুরার রোযা
রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদেরকেও রোযা রাখাতাম। তাদের জন্য পশমের তৈরি খেলনা রাখতাম।
যখন বাচ্চাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদত তখন তাকে খেলনা দিতাম, এভাবে ইফতারের সময় হয়ে
যেত।’ -সহীহ বুখারী ১/২৬৩
শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুলে ভবিষ্যতে
সে নামাজের প্রতি যত্নবান হতে পারবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের
প্রতি যত্নবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’
(সুনানে বায়হাকি,
হাদিস
: ৫০৯৪)
এ ছাড়া শিশুর জীবনের গতিপথ নির্ধারণে পারিবারিক শিক্ষার
গুরুত্ব অপরিসীম। ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, শিশু মা-বাবার কাছে আমানত এবং তার
অন্তর মূল্যবান মণিমুক্তাতুল্য। তা শূন্য ক্যানভাসের মতো পবিত্র ও নির্মল। তা যে কোনো
চিত্রের জন্যই উপযোগী এবং তাকে যে দিকে ইচ্ছা ফেরানো যায়। তাকে যদি ভালো কাজ শিক্ষা
দেওয়া হয়, তবে সে দুনিয়া ও আখিরাতের
সৌভাগ্যবান হবে।
আর যদি তাকে মন্দ কাজে অভ্যস্ত করা হয় বা পশুর মতো
অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করা হয়,
তবে
সে হতভাগ্য ও ধ্বংস হবে। শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ হলো তাকে আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও উন্নত চারিত্রিক
গুণাবলি শিক্ষা দেওয়া। (ইউসুফ আল হাসান, আল ওয়াজিজ ফিত-তারবিয়্যাহ, পৃষ্ঠা-২)
সন্তান বালেগ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাকে নামাজের
নির্দেশ দিতে বলেছে ইসলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের
সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও। তাদের বয়স ১০ বছর হওয়ার পর (প্রয়োজনে) নামাজের জন্য
প্রহার করো এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, সন্তান যখন ডান ও বাঁ
পার্থক্য করতে শেখে,
তখন
তাকে নামাজ শেখাও। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩৫০৪)
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘যে বড় ব্যক্তির অধীনে
কোনো ছোট মানুষ থাকে,
হোক
সে মালিকানাধীন দাস বা এতিম অথবা নিজের সন্তান এবং সে যদি ছোটকে নামাজের নির্দেশ না
দেয়, তবে তাকে শাস্তির মুখোমুখি
করা হবে এবং কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হয়েছে।’
(আল ফাতাওয়াল কুবরা : ২/৩২)
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
শরীয়ত যাদেরকে অভিভাবকের দায়িত্ব অর্পন করেছেন এবং
যে অভিভাবকত্ব সম্পর্কে আল্লাহ কিয়ামতের ময়দানে লোকদিগকে জিজ্ঞাসা করবেন, তারা যদি তাদের দায়িত্ব
সঠিক ভাবে পালন না করে,
তাহলে
তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে।
মাতাপিতা যদি সন্তানকে দ্বীন শিক্ষা না দেয়, তাহলে এ ত্রুটির জন্য
তাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত করা হবে। যদি মাতাপিতা সন্তানকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার পর ও
গুনাহের কাজ থেকে বাধা দেওয়ার পরও সন্তান গোনাহের কাজে জড়িয়ে যায়, ফরজ ও ওয়াজিব আহকাম আদায়
না করে তাহলে এক্ষেত্রে মাতাপিতা দোষী সাব্যস্ত হবেন না। বাবা মায়ের আমল নামায় গোনাহ
লিখিত হবে না। তবে তারা যদি দায়িত্ব আদায় না
করে তাহলে কেন আদায় করল না?
সেজন্য
তাদেরকে কাঠগড়ায় দাড় করানো হবে।
সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে বাবা-দাদা তাদের কৃত কর্মের ফল
ভোগ করবেন। কিন্তু একথা সঠিক নয় যে, তাদের কারণে সন্তানের স্ত্রী পরিবার বিপদে আছেন।
বরং সেই ভাইয়ের উচিত যাবতীয় গুনাহ পরিহার করা ও সালাত আদায়সহ শরীয়তে সমস্থ আহকাম পালনের প্রতি অধিক যত্নশীল
হওয়া। আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক হারে দোয়া করতে থাকা আল্লাহ তায়ালা যেন উক্ত বিপদ
থেকে হেফাজত করেন।