জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو بَكْرِ بْنُ نَافِعٍ وَاسْمُهُ أَبُو بَكْرٍ مَوْلَى زَيْدِ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ قَالَتْ عَمْرَةُ: قَالَتْ عَائِشَةُ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: أَقِيلُوا ذَوِيِ الْهَيْئَاتِ عَثَرَاتِهِمْ.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ত্রুটি-বিচ্যুতিকে তুচ্ছ জ্ঞান করো।
(আল আদাবুল মুফরাদ ৪৬৭)
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أقيلوا ذَوي الهيآت عثراتهم إِلَّا الْحُدُود»
’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সম্মানিত লোকেদের দণ্ডযোগ্য অপরাধ ব্যতীত সাধারণ ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দাও।
আবূ দাঊদ ৪৩৭৫, আহমাদ ২৫৪৭৪, সহীহাহ্ ৬৩৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৮৫, মিশকাত ৩৫৬৯)
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যাঃ-
(أَقِيْلُوْا) ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখো, (ذَوِى الْهَيْئَاتِ) সম্মানিত ব্যক্তি ও প্রশংসিত স্বভাবের অধিকারী ইবনু মালিক বলেনঃ যে সকল মানুষ সুন্দর চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত।
(إِلَّا الْحُدُوْدَ) ‘যা হাদ্দকে ওয়াজিব করে’ সম্বন্ধে ব্যক্তিরা হলো শাসক ও অন্যান্যরা যাদের ওপর শাস্তি ও বিচার প্রয়োগ করা অপরিহার্য।
(عَثَرَاتِ) দ্বারা উদ্দেশ্য পদস্খলনের কারণে আল্লাহর অধিকারসমূহের কোনো অধিকার নষ্ট করার মাধ্যমে বা মানুষের কোনো অধিকার নষ্টের মাধ্যমে। আবার কারো মতে সগীরাহ্ গুনাহ বা ছোট গুনাহ উদ্দেশ্য। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৩৬৮)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
যে সকল মানুষ সুন্দর চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত,এ সমস্ত সম্মানিত লোকেদের দণ্ডযোগ্য অপরাধ ব্যতীত সাধারণ ভুল-ত্রুটি যাহা অসতর্ক বশত আকস্মিক ভাবে হয়,তাহা ক্ষমা করে দেয়ার পরামর্শ হাদীসে দেয়া হয়েছে। যাতে করে লোক সম্মুখে তাদের সম্মানহানি না হয়। কেননা এতে সামাজিকভাবে বিশৃংখলা তৈরী হতে পারে।
(এটি স্রেফ পরামর্শ।
এটি ফরজ/ওয়াজিব কোনো বিধান নয়।)
(০২)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا حَرَمِيُّ بْنُ حَفْصٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ كَثِيرِ بْنِ عُبَيْدٍ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، فَقَالَتْ: أَمْسِكْ حَتَّى أَخِيطَ نَقْبَتِي فَأَمْسَكْتُ فَقُلْتُ: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ، لَوْ خَرَجْتُ فَأَخْبَرْتُهُمْ لَعَدُّوهُ مِنْكِ بُخْلاً، قَالَتْ: أَبْصِرْ شَأْنَكَ، إِنَّهُ لاَ جَدِيدَ لِمَنْ لاَ يَلْبَسُ الْخَلَقَ.
কাসীর ইবনে উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি বলেন, একটু অপেক্ষা করো। আমি আমার মুখাভরণটি একটু সেলাই করে নেই। আমি অপেক্ষা করলাম। আমি বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আমি যদি বাইরে গিয়ে লোকজনকে অবহিত করি তবে তারা এটাকে আপনার কৃপণতা বলবে। তিনি বলেন, তুমি নিজের অবস্থার দিকে তাকাও। যে ব্যক্তি পুরাতন কাপড় পরিধান করে না তার জন্য নতুন কাপড় নয়।
(আল আদাবুল মুফরাদ ৪৭৩)
★ এখানে হযরত আয়েশা (রাঃ) নিজের পোশাক যেহেতু সেলাই করতে চেয়েছেন,এ কাজটিকে ইবনে উবায়দুল্লাহ (রহঃ) কৃপণতা বলেছেন। কেননা সেটি পুরাতন হয়ে ছিড়ে গিয়েছিলো।
যে ব্যক্তি পুরাতন কাপড় পড়ে না তার জন্য নতুন কাপড় নয়।
তিনি যেহেতু অনেক বুযুর্গ ব্যাক্তি ছিলেন,দুনিয়াত্যাগী ছিলেন,তাই সে জায়গা তিনি উক্ত কথা বলেছেন।
এর অর্থ হলো,
জামা পুরাতন না করে নতুন জামা না নিতে।
এমন অনেক সময় হয় যে জামা পুরাতন হয়নি,তবুও সেটি অনেকে ক্যান্সেল করে দিয়ে নতুন জামা নেয়।
এ কাজ হতে তিনি বারন করেছেন।
(০৩)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
عَن ذِي مِخبَرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: سَتُصَالِحُونَ الرُّومَ صُلْحًا آمِنًا فَتَغْزُونَ أَنْتُمْ وَهُمْ عَدُوًّا مِنْ وَرَائِكُمْ فَتُنْصَرُونَ وَتَغْنَمُونَ وَتَسْلَمُونَ ثُمَّ تَرْجِعُونَ حَتَّى تَنْزِلُوا بِمَرْجٍ ذِي تُلُولٍ فَيَرْفَعُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ النَّصْرَانِيَّةِ الصَّلِيبَ فَيَقُولُ: غَلَبَ الصَّلِيبُ فَيَغْضَبُ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ فَيَدُقُّهُ فَعِنْدَ ذَلِكَ تَغْدِرُ الرُّومُ وَتَجْمَعُ لِلْمَلْحَمَةِ وَزَادَ بَعْضُهُمْ: «فَيَثُورُ الْمُسْلِمُونَ إِلَى أَسْلِحَتِهِمْ فَيَقْتَتِلُونَ فيكرم الله تِلْكَ الْعِصَابَة بِالشَّهَادَةِ»
যূ-মিখবার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, অদর ভবিষ্যতে তোমরা রূমকদের (রোমানদের) সাথে একটি শান্তিচুক্তি সম্পাদন করবে। অতঃপর তোমরা ও তারা একসঙ্গে অপর একটি শত্রুদলের মোকাবিলা করবে। তাতে (আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে) তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে, তোমরা গনীমতও লাভ করবে এবং নিরাপদে থাকবে। তারপর তোমরা (উভয় দল) ফিরে আসবে, অবশেষে তোমরা টিলাযুক্ত একটি প্রশস্ত ও সুজলা-সুফলা স্থানে অবতরণ করবে। সেখানে খ্রিষ্টানদের এক ব্যক্তি একটি ক্রুশ উঁচু করে বলবে, ক্রুশের বরকতে আমরা বিজয় লাভ করছি। এটা শুনে মুসলিমদের এক ব্যক্তি ক্ষুদ্ধ হয়ে ক্রুশটি ভেঙ্গে ফেলবে। ফলে রূমক খ্রিষ্টানরা চুক্তি ভঙ্গ করে ফেলবে এবং ভীষণ যুদ্ধের জন্য বিরাট সেনাবাহিনী একত্রিত করবে। কোন কোন বর্ণনাকারী অতিরিক্ত বলেছেন, তখন মুসলিমগণ সাথে সাথে আপন অস্ত্রসমূহ ধারণ করবে এবং যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা এ দলকে শাহাদাতের দ্বারা সম্মানিত করবেন।
(আবূ দাউদ ২৭৬৭, সহীহুল জামি' ৩৬১২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৭০৯, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ৪১১২।)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এখানে উল্লেখ রয়েছে যে, খ্রিষ্টানদের এক ব্যক্তি একটি ক্রুশ উঁচু করে বলবে, ক্রুশের বরকতে আমরা বিজয় লাভ করছি। এটা শুনে মুসলিমদের এক ব্যক্তি ক্ষুদ্ধ হয়ে ক্রুশটি ভেঙ্গে ফেলবে। ফলে রূমক খ্রিষ্টানরা চুক্তি ভঙ্গ করে ফেলবে এবং ভীষণ যুদ্ধের জন্য বিরাট সেনাবাহিনী একত্রিত করবে।
এখানে তো মুসলিমরা আগ বাড়িয়ে কোনো খ্রিস্টানকে হত্যা করবেনা। বরং খ্রিষ্টানরা চুক্তি ভঙ্গ করে ভীষণ যুদ্ধের জন্য বিরাট সেনাবাহিনী একত্রিত করলে তখন মুসলিম গন সেই যুদ্ধে অংশ গ্রহন করবে।
সেই যুদ্ধে কিছু মুসলিমও মারা যাবে,কিছু খ্রিস্টানও মারা যাবে।
(০৪)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
وَعَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَنْ يَجْمَعَ اللَّهُ عَلَى هَذِهِ الْأُمَّةِ سَيْفَيْنِ: سَيْفًا مِنْهَا وسَيفاً منْ عدُوِّها
’আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা এ মুসলিম উম্মাতের ওপর দুই তলোয়ার একত্রিত করবেন না। এক তলোয়ার মুসলিমদের পক্ষ হতে এবং অপর তলোয়ার শত্রুদের পক্ষ হতে।
(আবু দাউদ ৪৩০১, সহীহুল জামি' ৫২২১।)
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা হলোঃ- এই উম্মতের ওপর একসাথে শত্রু ও নিজেদের তরবারি একত্র হবে না, যা তাদের মূলোৎপাটনের কারণ হয়। নিজেদের বিরুদ্ধে নিজেদের তরবারি, এর সাথে শত্রুদের তরবারির আক্রমণ একটি জাতির সমূলে ধংসের কারণ। উম্মতে মুহাম্মাদীর ওপর এমন পরিস্থিতি আসবে না। তারা যদি পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তখন দেখা যাবে শত্রু তাদের ওপর চড়াও হয়ে উঠবে। শত্রু চড়াও হতেই তারা পরস্পর লড়াই বাদ দিবে। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ একসাথে তাদেরকে দু'টি লড়াই করতে হবে না। নিজেদের মাঝে লড়াই হলে কাফিরদের সাথে লড়াই হবে না। আর কাফিরদের সাথে যখন লড়াই হবে তখন নিজেদের মাঝে লড়াই হবে না। এভাবে এই উম্মাত শত বাধার মাঝে কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে। তারা সমূলে ধ্বংস হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)