আসসালামু আলাইকুম হুজুর, আমার ছোট এ জীবনে এমন কিছু ভুল করেছি যার প্রায়শ্চিত এখন প্রতিমূহুর্তে গুনতে হচ্ছে। শ্রদ্ধেয় আমি আমার ঘটনাগুলো বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করছি যাতে করে আপনার বুজতে সহজ হয়।
আমার মোট ছয়টা ঘটনা।
আমার বিয়ের এক বছর পর স্ত্রীকে অনুষ্ঠান করে তুলে এনেছি। বিয়েটা পারিবারিকভাবে হয়েছে।
ঘটনা ০১ঃ তখনো আমি তাদের বাড়ি থেকে উনাকে অনুষ্ঠান করে তুলে আনিনি। একদিন আমি আমার স্ত্রীর সাথে মোবাইল ফোনে কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হালকা রেগে যায় আর উনাকে বলি "যাও তোমার আম্মাকে বলিও অনুষ্ঠান করা লাগবেনা"। জবাবে উনি আমাকে রিপ্লাই দিলো আচ্ছা। আমি উত্তর দিলাম একটু দুষ্টামি করে যেমন "ইশ হিতির কি শখ, অবশ্যই অনুষ্ঠান করবো"।
উপরোক্ত ঘটনায় যখন আমি বললাম "যাও তোমার আম্মাকে বলিও অনুষ্ঠান করা লাগবেনা" এটার বলার সময় তালাকের নিয়ত ছিলো কিনা আমি স্পষ্ট না। এমনকি আমি এটা শিওর না যে নিয়ত ছিলো। তবে আমার মনে হচ্ছে আমি ভয় দেখানোর জন্য বলেছিলাম "আর অনুষ্ঠান করা লাগবেনা মানি তোমাকে আর আনবোনা"। যখন বলার সাথে সাথে মনে হলো এটাতো তালাকের মতো হয়ে গেছে তখন বললাম "ইশ হিতির কি শখ, অবশ্যই অনুষ্ঠান করবো"।
তবে নিয়ত কি তালাকের ছিলো কিনা। আল্লাহর কসম করে বলছি নিয়ত কি ছিলো এ বিষয়ে আমি স্থির হতে পারছিনা । একবার মনে হয় নিয়ত ছিলোনা তবে ভয় দেখানো বা ধমক দেওয়ার জন্য বুজায়ছি আমি তোমাকে আনবোনা। আবার মনে হয় যদি ঐসময় নিজের অজান্তে নিয়ত থাকে বা আমি এখন ভুলে যায়।
ঐদিন থেকে আমরা আবার স্বাভাবিক থাকি, আমি ছুটিতে যায় স্বাভাবিক মেলামেশা হয়। তখন এটা নিয়ে এতো পেরেশানিও ছিলোনা।
ঘটনা ০২ঃ
২নং ঘটনা প্রথম ঘটনার প্রায় আটমাস পর। এর মধ্যে উনাকে আমাদের বাড়িতে অনুষ্ঠান করে নিয়ে আসছি ৪মাস হলো।
অনুষ্ঠানের পর থেকে দু পরিবার এর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জামেলা হয়, চারমাস ধরে আমি সবকিছু সমাধান করে আসছি। চারমাস পর আমি ১মাসের ছুটিতে বাড়িতে যাই এবং পারিবারিক বিভিন্ন কারণে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি।
একদিন আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায় ফেলি এবং নামাজ পড়া ছেড়ে দিই। কেউ (স্ত্রী বা আম্মা) নামাজের জন্য ডাকলে বলতাম নামাজ পড়ে কি হবে। যারা নামাজ পড়ে না তারাই ভালো আছে। আমি আল্লাহর উপর ভরসা হারায় ফেলছি। আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করছি আল্লাহ আমাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখায়ছে। আমার ছোট ভাইকে আম্মা নামাজের জন্য ডাকলে আমি বলতাম নামাজ পড়োস না কা? অবশ্যই নামাজ পড়ে কি হবে। আমকে নামাজের জন্য ডাকলে আমি বলতাম আমি নামাজ পড়বোনা।
তখন অন্তরের অবস্থা কেমন ছিলো এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে স্পষ্ট না তবে মনে হচ্ছে এমনল ছিলো যে আরে পরে নামাজ পড়লে তওবা করলে ঠিক হয়ে যাবে। মানি একদম আল্লাহকে বিশ্বাস করিনা এমন ছিলোনা।
এভাবে ৫-৬ দিন চলতে থাকে। একদিন ফজরের নামাজ আমার স্ত্রী আমাকে রিকুয়েষ্ট করাতে আমি নামাজ পড়ি। তাহাজ্জুদও পড়ি ঐরাতে। হঠাৎ আমার মনে হলো। আমি যদি এসব কথার কারনে মুরতাদ হয়ে যায় সেতো আমার স্ত্রী হিসাবে থাকবে না। আর আমি হতাশ হয়ে যাই অনেক কান্নাকাটি করি আল্লাহর কাছে তওবা করি।
ঘটনা ০৩ঃ
২নং ঘটনার সময় যখন আমি নামাজ ছেড়ে দিই নামাজ নিয়ে বলি নামাজ পড়ে কি হবে। ঐ ৫-৬ এর মধ্যে আমি তাকে বলতাম " দেখো মেহেরুবা আমি গরীব মানুষ, তুমি আমার সাথে সুখী হতে পারবানা। তুমি বেটার কাউকে খুজে নাও চলে যাও"। একথাগুলো কয়েকদিন বলি। যখন তওবা করি নামাজ পড়া শুরু করলাম তখন থেকে আর বলিনি।
এ সময় নিয়ত ছিলোনা এটার দিকেই মনের জোক বেশি। আমার স্ত্রীর সাথে যেহুত সমস্যা নাই তাই এ কথাগুলো তাকে ইমোশনাল করার জন্য বলতাম। তারপরও মাজে মাজে আমার বুকের ভিতর ধুপুর ধুপুর করে যদি আমার অজান্তে নিয়ত থাকে। যদি এগুলো তালাক হিসাবে গণনা হয়।
ঘটনা ০৪ঃ
২নং ও ৩নং ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। ৭দিন পর চট্টগ্রাম চলে আসি।
একদিন উনার সাথে ফোনে তাদের বাড়ির ভুলগুলো নিয়ে রাগারাগি করতেছিলাম। এমন সময় উনি আমাকে বলেন "আপনি এমনিও ফ্যামিলি লাইফ আর পার্সোনাল লাইফের মধ্যে পার্থক্য করেন না"।
তখন আমি উনাকে জিগাস করি এটাকি তোমাকে তোমার ভাইয়া বলছে? সে বলল না। তখন আমার মনে হচ্ছে সে মিথ্যা বলতেছে তখন রাগ আরো বেড়ে যায়। তখন আমি রাগে বলে ফেলি" যদি এটা তোমার ভাইয়া বলে তাহলে তোমার সাথে সম্পর্ক শেষ"।
কথাটা বলে সাথে সাথে আমি চুপ হয়ে যায় আফসোস করতে থাকি। কথাটা বলার সময় নিয়ত কি ছিলো এখানেও ধোয়াশা। রাগে মুখ দিয়ে এরকম নিকৃষ্ট কথাটা বের হয়ে গেলো। আমি হুজুর কিছুই লুকাচ্ছিনা। আজ ঘটনার ৩মাস হলো। আমি প্রতিদিন চিন্তা করি নিয়ত কি তালাকের ছিলো নাকি রাগ আসছে বলে ফেলছি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি বুজাতে ছেয়েচি তোমার সাথে যে অন্যরকম আন্তরিকতার সম্পর্ক এটা শেষ। আবার মনে হয় যদি তালাকের নিয়ত থাকে তাহলেতো আমি জেনাকারী হয়ে হাশরে উঠবো। তখন অন্তর চুপসে যায়।
সাময়িক সমাধানঃ
পরেরদিন কাছের এক হুজুরের কাছে যায় ১নং ঘটনা বাদে বাকি সব ঘটনা খুলে বলি( তখন ১নং ঘটনা মনে ছিলোনা)। উনি আমাকে কলেমা পড়ায় বলে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে আসেন বিয়েটা পড়ায় দিই বললাম এখন আনতে পারছিনা। মাসে খানেক পরে নিয়ে আসি উনি বললেন এতোদিন অপেক্ষা ঠিক হবেনা। উনার ঐখানে একজনকে বলে আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলায় দিতে। লোকটা ফোনে আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলে এবং ঐ মুফতি হুজুর খুতবা দেয় এবং ঐ লোকটা বলে আমি অমুকের মেয়ে অমুককে এত টাকা মোহরানার বিনিময়ে বিবাহ দিলাম। আমি বললাম তিনবার আলহামদুলিল্লাহ কবুল। ঐখানে আরো সাত আটজন মানুষ ছিলো।
ঐখান থেকে আসার পর মনটা ফুরফুরা ভালোমতো ইবাদাত করতেছি দোয়া করতেছি। সব নরমাল।
তারপর ৭ দিন পর আবার আরেক ঘটনা ঘটে।
ঘটনাঃ ০৫
২বছরের সংসার জীবনে এ প্রথম উনি আমার সাথে তর্ক করে। যেটা মেনে নিতে পারিনি। আমি ভয় পাচ্ছিলনাম যদি আবার কিছু বলে ফেলি। আবার টেনশানে থাকবো। কথা কাটাকাটি করতে করতে বলি দিই যে "তোমার সাথে সংসার করতে পারবো না। আমি বাড়িতে এসে দু-চারজন নিয়ে বসে একটা ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিবোই"। একথাটা বলে সাথে সাথে তারে বলি আসতাগফিরুল্লাহ আসতাগফিরুল্লাহ আমি অন্য কিছু বুজায়নি। অর্থাৎ তালাক নিয়ত নিয়ে বলিনি।
এবারও নিয়ত ছিলোনা বরং উনি তর্ক করতেছে ভয় দেখানোর জন্য বলছি এটার প্রতি মন বেশি জোকে। তারপরও প্রচুর ভয়ে থাকি বলার সময় যদি নিয়ত থাকে। আমিতো জানিনা।
ঘটনা ০৬ঃ
আমি ফোনে আম্মার সাথে কথা বলছিলাম। কথা বলতে বলতে বললাম আম্মা আমনেরা যে ঘরের ভিতর জামেলা করেন আপনিতো জানেন আমি একটু রাগী, যদি রাগের মাথায় ক কে বলে দিই "ক তোমাকে ---- দিয়েছি" তাহলে কি হইতো।
"ক" বলতে আমার স্ত্রীর নাম উল্লেখ করছিলাম এবং ---- এখানে তালাক শব্দ উচ্চারণ করেছিলাম।
আমার এখন ভয় লাগতেছে তাই ঐখানে ---- রাখচি।
এ কথা আম্মাকে ফোনে বলেছি। আমার স্ত্রী ছিলোনা তখন।
যেহুত তালাক দুষ্টমী করে বললেও হয়, নিয়ত ছাড়া বললেও হয়। এজন্য এটা নিয়ে পেরেশানি।
এখন আমার প্রশ্ন আমার সম্পর্ক কি হারাম হয়ে গেছে বা তালাক হলে কয়টা হয়েছে। এখন আমার করণীয় কি? বিবাহটা শুদ্ধ হয়েছে? বিষেশ করে আমার করণীয়গুলো আমাকে জানাবেন। নিশ্চিতে কি সংসার করতে পারি। সন্তান নিতে হবে মনে আসলে বুকটা ধুপুর ধুপুর করে।
আমি ঐসব বিষয়ে এখন খুব সতর্ক থাকি।