আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
137 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম। এক বোনের বিয়ের কিছুদিন পর থেকে জ্বীন এর সমস্যা আছে।প্রথম বার বাচ্চা কন্সিভ করলে জ্বীনের সমস্যার জন্য নস্ট হয়ে যায়। তারপর ২ টা বাচ্চা সিজারে হয়ছে একটা ছেলে একটা মেয়ে ৩ বছরের ছোট বড়।দ্বিতীয় বাচ্চাটা হওয়ার সময় ডক্টর সিজার করার সময় বলেছিলেন যে এই বোনের পেট এর চামড়া অনেক কম সিজার করার সময় সেলাই দিতে পারছিল না।আর সিজার করার পর রক্ত কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছিল না।পরে ঠিক হয় আলহামদুলিল্লাহ। এজন্য ডক্টর তখন বারবার বলে দিয়েছিলেন আর যেন বাচ্চা না নেয়।আর  খিচুনি রোগ থাকায় ডক্টর স্ট্রিক্টলি বাচ্চা নিতে নিষেধ করেছেন।কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আজ ৪ সপ্তাহ হয়ছে এই বোন আবার কন্সিভ করেছে।এবং জ্বীনের সমস্যার জন্য লাস্ট ৪/৫ মাস খুবই খারাপ অবস্থা ছিল।এমন অবস্থা হতো মনে হতো মারায় যাবে।সেন্সলেস হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পরে থাকে।এরকম ও হয়েছে সারারাত সেন্সলেস হয়ে থাকে।এখন আলহামদুলিল্লাহ কিছুটা কম জীনের সমস্যা টা কিন্তু পুরাপুরি ঠিক হয়নি।মাঝে মাঝেই সমস্যা হচ্ছে।আর ছোট ছোট ২ টা বাচ্চা থাকায় এত রিস্ক নিয়ে এই বাচ্চা টা রেখে দিলে এই বোনের কিছু একটা হয়ে গেলে এদের অবস্থা কি হবে।আর তার শশুর বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় ভালোভাবে ট্রিটমেন্ট ও করাতে পারবেনা।এমনিতেই এই বোনের শশীরের অবস্থা খুবই খারাপ তেমন কাজ করতে পারেনা সারাদিন সুয়ে থাকে।

এখন এই বোন গতকাল রাতে ইস্তেখারা করছিল স্বপ্নে দেখেছে যে পিল খেয়ে বাচ্চা নস্ট করে ফেলতেছে।

এখন কি করা উচিত ডিসিশন নিতে পারছে না।তাই এই অবস্থায় কি করণীয়? এই বাচ্চা এবরশন করা জায়েয হবে কি?

1 Answer

0 votes
by (57,240 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

শরীয়তের বিধান হলো  যদি মহিলা অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক গর্ভপাত বৈধ হবে। মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা।

খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদির অভাবের কারণে সংসারকে সচ্ছল করার নিয়তে, দৈহিক সৌন্দর্য বা ফিগার ঠিক রাখার উদ্দেশ্যে ,কন্যাসন্তান জন্ম নেয়ার ভয়ে (যাতে পরবর্তীতে এদের বিয়ে শাদীর ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়),অধিক সন্তান নেয়াকে লজ্জার বিষয় মনে করে গর্ভপাত বিশেষত অভাবের কারণে সংসারকে সচ্ছল করার নিয়তে গর্ভপাত করলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা রিজিকের মালিক আল্লাহ।

কেননা, হাদিসের ভাষ্য থেকে জানা যায়, গর্ভস্থ সন্তানের বয়স চার মাস পূর্ণ হলে তার দেহে রূহ বা আত্মা ফুঁকে দেওয়া হয়। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

 

إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِيْ بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِيْنَ يَوْمَاً نُطْفَةً، ثُمَّ يَكُوْنُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ،ثُمَّ يَكُوْنُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ،ثُمَّ يُرْسَلُ إِلَيْهِ المَلَكُ فَيَنفُخُ فِيْهِ الرٌّوْحَ،وَيَؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ: بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيْدٌ

তোমাদের সকলের সৃষ্টি নিজের মায়ের পেটে চল্লিশ দিন যাবৎ শুক্ররূপে জমা হওয়ার মাধ্যমে শুরু হতে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন জমাট বাঁধা রক্তরূপে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন গোশতপিণ্ড রূপে থাকে, তারপর তার কাছে ফিরিশ্তা পাঠানো হয়। অতঃপর সে তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করায় এবং তাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য হুকুম দেয়া হয়- তার রুজি, বয়স, কাজ এবং সে কি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান।’ (বুখারি ৩২০৮)

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, উম্মতে মুসলিমার সকল ফুকাহা এ ব্যাপারে একমত, রূহ আসার পর গর্ভপাত করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। কারণ এটা الوأد (সূক্ষ সমাহিত) এর অন্তর্ভুক্ত; যে ব্যপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْযখন (কেয়ামতের দিন) জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে…….।’ (তাকবীর ৮-৯) (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ৪/২১৭ফাতাওয়া দারুল ইফতা; মিশর। তাং-১১ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ ইং)

চার মাসের পূর্বে বিশেষ কিছু কারণে শরীয়ত গর্ভপাতকে অনুমোদন প্রদান করে থাকে।

(ক) বর্তমানে কোলে দুধের একটি শিশু রয়েছে,অপরদিকে উক্ত মহিলার গর্ভাশয়ে নতুন সন্তানও উৎপাদিত হচ্ছে। গর্ভের দরুন দুধ একেবারে শুকিয়ে গেছে। অপরদিকে উক্ত সন্তানকে অন্যকোনো উপায়ে লালনপালন করা যাচ্ছেনা। মায়ের দুধ ব্যতীত অন্যকিছুতে সে মুখই দিচ্ছে না।এমতাবস্থায় চারমাস হয়নি এমন গর্ভকে গর্ভপাত করা বৈধ রয়েছে।

(খ) কোনো মুসলমান বিজ্ঞ ডাক্তার উক্ত গর্ভবতী মহিলাকে পরিদর্শন করে বলে যে, গর্ভপাত না করলে মহিলার জান বা কোনো অঙ্গ বিনাশের আশঙ্কা রয়েছে।

আরো জানুনঃ

https://ifatwa.info/4441/

https://ifatwa.info/446/

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তানের কারণে যদি গর্ভবতী মায়ের জীবন হুমকির মুখে পড়ে, বিষয়টি যদি নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে নির্দেশিত হয়, তাহলে গর্ভস্থ সন্তানের বয়স চার সপ্তাহ হওয়ার দরুন গর্ভপাত বৈধ হবে। তবে গর্ভস্থ সন্তানের মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই গর্ভপাত বৈধ নয়। তাই অনতিবিলম্বে দ্বীনদার অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উত্তম হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...